নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বামপন্থী আর ডানপন্থী হোক, বাংলাদেশের সবগুলি রাজনৈতিক দল আজ পা তুলে দিয়েছে কথিত গণতন্ত্রের ঘাড়ে। এমনকি ধর্মীয় দলগুলির মূল আদর্শও এখন গণতন্ত্র। তারা নিজেদের দাবী করে গণতন্ত্রের সেবক হিসেবে। যাই হোক, সবগুলি দলের ‘ক্বেবলা’ যখন এক তখন আশা করা যেত যে, তাদের উদ্দেশ্যও একই হবে। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যায় যে তাদের একেক জনের অবস্থান একেক দিকে। কারো লক্ষ্য মাশরেক, কারো লক্ষ্য মাগরেব। কারো লক্ষ্য উত্তর মেরু আর কারো লক্ষ্য দক্ষিণ মেরু।
কিন্তু সবাই দাবী করছে তারা গণতন্ত্রেরই পূজারী। কিন্তু এটা কোন ধরনের গণতন্ত্র তা বুঝে ওঠা বোধে আসছে না। স্বয়ং আব্রাহাম লিক্সকনও যদি মাটির নিচ থেকে উঠে এসে গণতন্ত্রের এই দশা দেখতেন তাহলে ভিমরী খেয়ে পড়তেন। বাম, ডান, ধর্মব্যবসায়ী এবং নব্য কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা সব মিলে আজ গণতন্ত্রের এমন একটা কিম্ভূতকিমাকার মূর্তি দাঁড় করিয়েছেন যে, ঘোড়া-গাধার সম্মিলনে খচ্চরের জন্ম হলেও বহুবিধ আদর্শগুলির মিলিত ফল গণতন্ত্র হয়েছে জগাখিচুড়ির ন্যায়। আর এতে লবণ পানি, মশলার উপাত্তের ভিন্নতা থাকায় এই খিচুড়ি এখন খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে গেছে। খাদকরা (আমজনতা) এটা ভক্ষণ করে বমি করে দিচ্ছে।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে তাকালে সর্বত্র তারই চিত্র ফুটে উঠে। রাজনৈতিক দলগুলোর এখন নির্দিষ্ট কোন আদর্শ নেই। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে যোগ হয়েছে ফ্যাসিবাদ, নৈরাজ্যবাদ, ধর্মান্ধতা, ধর্মব্যবসা ইত্যাদি সকল অন্ধকার দিক। সব মিলিয়ে আজ দেখতে পাচ্ছি রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব। এই সুযোগে বৈদেশিক শক্তিগুলো এবং তাদের প্রতিনিধি অর্থাৎ কূটনীতিকরা কে কিভাবে স্বার্থ হাসিল করবে তা নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। সা¤প্রতিক বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটে কার কী ভূমিকা হবে তা নিয়ে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্বই তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
বাংলাদেশের রাজনীতিকদের এই দেউলিয়াত্বের কারণে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা নিয়ে দেখা যাচ্ছে অনিশ্চয়তা। ঔপনৈবেশিক আমলে বিশ্বমোড়লরা দেশ দখল করতো অস্ত্রের বলে। কিন্তু বর্তমান সাম্রাজ্যবাদীরা তা করে না। তারা এখন গণতন্ত্র রফতানি করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বহুদলের সূত্রপাত ঘটায়। বহুদল, বহুমত চর্চা করে দেশের জনগণ ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে অনৈক্য সৃষ্টি হয়। এর কোন কোনটা ক্ষমতা দখলের জন্য বিশ্ব মোড়লদের দ্বারস্থ হয়। এই সুযোগে মোড়লরা দেশীয় অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাবার সুযোগ পায়। তারা বিভিন্ন কলাকৌশল প্রয়োগ করে পছন্দনীয় ও অনুগত দলটিকে ক্ষমতায় বসায়। তারা দেশীয় স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে বিদেশীদের স্বার্থরক্ষা করে যায়। তখন মোড়লদের আর শারীরিকভাবে দেশ দখল করতে হয় না। গণতন্ত্রের বটিকা খাইয়ে দেওয়াই যথেষ্ট। আমাদের দেশের রাজনীতিকরা এখন সেই বটিকা খেয়ে বিকারগ্রস্থ হয়ে আছেন। সমস্যা হচ্ছে তাদের কাউকে এককভাবে দোষ দেওয়া যায় না। সবাই সমান অপরাধী, ক্ষমতাসীন দল যেমন মিথ্যা বলে, অন্যায় করে, বিরোধীদের উপর বলপ্রয়োগ করে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায় তেমনি বিরোধী দলও অস্তিত্ব ও ক্ষমতাহীন অবস্থায় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গিয়ে গণতন্ত্র নামক বটিকার অন্য ধারা গ্রহণ করে। হরতাল, মিটিং-মিছিল, জ্বালাও-পোড়াও, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে সংঘর্ষ ইত্যাদি হচ্ছে সেই ভিন্ন বটিকার উৎপাদিত ফসল। উভয়ই সেই গণতন্ত্রের অংশ। শাসক দল আর বিরোধী দল উভয়ই যার যার অবস্থান থেকে এর সদ্ব্যবহার করে মাত্র। এর শেষ নির্যাসটুকু গলধকরণ করে নাগরিকগণ। তাই বলি আহ! গণতন্ত্র, বাহ! গণতন্ত্র!
আরো বলতে হয় গণতন্ত্রের ভাষা যতই মধুর হোক, যতই উদারতা থাকুক, আমাদের দেশে এই গণতন্ত্র অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কারণ এই গণতন্ত্র আমাদের জাতিকে ঐক্যের পরিবর্তে বিভক্ত করেছে, শান্তির বদলে অশান্তি তৈরি করেছে, রাজনীতিবিদদের চোর বানিয়েছে, জনগণকে করেছে দিশেহারা।
©somewhere in net ltd.