নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক জাতি এক দেশই হোক আমাদের শ্লোগান

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৪

আল্লাহ যে সকল প্রাকৃতিক নিয়ম দ্বারা সৃষ্টিজগত পরিচালনা করেন তার মধ্যে একটি অপরিবর্তনীয় ও অলঙ্ঘনীয় নিয়ম হচ্ছে অনৈক্যের উপর ঐক্য সর্বদাই বিজয়ী। একশ জন অনৈক্য লোক যতই শক্তিশালীই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে মাত্র দশজন ঐক্যবদ্ধ লোক বিজয়ী হবে। এটা হাজার হাজার বছর আগে যেমন সত্য ছিল তেমনি হাজার হাজার বছর পরেও একই রকম সত্য থাকবে। ঐক্য প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষায়ই আমরা একটি গল্প পড়েছিলাম। গল্পটি এরকম যে, একদা মৃতুপথযাত্রী এক বৃদ্ধ কৃষক তার দশজন সন্তানকে ডেকে আনলেন। তিনি একসাথে দশটি লাঠির আঁটি বেঁধে প্রত্যেককে ভাঙতে দিলেন। কিন্তু ছেলেদের কেউই তা ভাঙতে পারলো না। কিন্তু আঁটি থেকে খুলে প্রত্যেকের হাতে যখন একটি করে লাঠি দিলেন তখন ছেলেরা পটাপট লাঠিগুলো ভেঙ্গে ফেললো। বাবা জিজ্ঞেস করলেন এ থেকে তোমরা কি বুঝলে? ছেলেরা কেউ কোন জবাব দিতে পারলো না। তখন পিতা ছেলেদের কাছে নিজেই ব্যাখ্যা করলেন। তিনি বললেন, আমি হয়তো আর বেশি দিন বাঁচবো না। আমার মৃত্যুর পর যদি তোমরা এক সাথে এই আঁটির ন্যায় ঐক্যবদ্ধ থাকো তাহলে কেউ তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। কিন্তু তোমরা যদি ঐক্যহীন হয়ে পড় তাহলে শত্র“রা তোমাদেরকে সহজেই পরাজিত করে ফেলবে। সেই সাথে তোমরা আমার রেখে যাওয়া সম্পত্তিও হারাবে। জানিনা বর্তমানের শিক্ষা-ব্যবস্থায় এখন এই নীতি শিক্ষা দেওয়া হয় কি না। আবার হলেও বিদ্যার্জন শুধুমাত্র পরীক্ষায় পাশ কিংবা সনদ পাওয়ার অনুষঙ্গ হয়ে ওঠায় অর্জিত বিদ্যা তাদের আত্মায় গাঁথতে পারছে না। অথচ জাতির বর্তমান এই সঙ্কটময় মুহূর্তে এই শিক্ষা খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।



আমরা এক সময় নিজেদের অনৈক্য ও অকর্মন্যতার কারণে ব্রিটিশদের গোলামী করেছি প্রায় সুদীর্ঘ দুইশত বছর। অনেক ক্ষয়-ক্ষতির বিনিময়ে তাদের প্রত্যক্ষ শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে আবার পড়েছি পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে। সেখান থেকেও ১৯৭১ সালে এই ভূ-খণ্ডের সাত কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে দীর্ঘ নয় মাসের এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর দীর্ঘ ৪২ বছর যদি এই জাতি তাদের একতা ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য না হারিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারত তাহলে জাতির অবস্থান আজ কোথায় থাকতো তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সমসাময়িক মালয়শিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়ার দিকে তাকালেই আমরা সে অবস্থাটা বিবেচনা করতে পারি। আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে তাদের অবস্থা মোটেও আমাদের চেয়ে ভাল ছিল না। কিন্তু আজ তারা কোথায় আর আমরা পড়ে আছি কোথায়!



দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, স্বাধীনতা প্রাপ্তির কিছুদিন পরেই আমরা যে দৃঢ় প্রত্যয়, ঐক্য আর ত্যাগের শপথে বলীয়ান হয়ে দেশের স্বাধীনতা এনেছিলাম তা হারিয়ে ফেলি। তৎকালীন সরকার তাদের ব্যর্থতার কারণেই হোক, অযোগ্যতার কারণেই ে হাক কিংবা অন্যদের ষড়যন্ত্রের কারণেই হোক তাদের জনসমর্থন হারিয়ে ফেলে। দেশে দেখা দেয় ব্যাপক অরাজকতা ও অনৈক্য। এই সুযোগে পাশ্চাত্য প্রভুরা আমাদেরকে গোলামীর শেকল গণতন্ত্র গেলানোর জন্য সর্বোতভাবে চেষ্টা করতে থাকে। আমরাও তাদের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে গণতন্ত্র নামের এই জগা-খিঁচুড়ি জীবন-ব্যবস্থার চর্চা করতে করতে আমরা ৪২টি বছর কাটিয়ে দিয়েছি। এই দীর্ঘ ৪২ বছর আমাদের ইতিহাস শুধু ব্যর্থতা আর গ্লানীর ইতিহাস। অথচ শুরুতে আমরা ন্যায়-নীতি ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য যতটা অবিচল ছিলাম আজ তার ছিটে ফোটাও আর অবশিষ্ট নেই।



এই সময়টিতে পাশ্চাত্য প্রভুরা তাদের শত শত প্রচার মাধ্যম দিয়ে কোটি কোটি বার গণতন্ত্রের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা করে, ক্ষেত্র বিশেষে জোর প্রয়োগ করে আমাদেরকে দিয়ে গণতন্ত্র গিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। অথচ আমরা একটি বারের জন্যও চিন্তা করে দেখিনি যে এই প্রভুরাই যখন আমাদের দেশ জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে আমাদেরকে গোলাম বানিয়ে দীর্ঘ দুইশত বছর শাসন করেছে তখন একটি বারের জন্যও তারা এই ভূ-খণ্ডে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেনি। তাদের কোন ভাইসরয় কিংবা লাট সাহেবরা একবারের জন্যও নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন নি। এমনকি তাদের নিজেদের দেশেও তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। যদি তাই পারতো তাহলে এখন পর্যন্ত তাদের দেশে রাজতন্ত্র বহাল থাকতে পারে না। মনে রাখতে হবে তারা এখনো তাদের দেশকে একটি রাজ্য বা ‘কিংডম’ বলেই মানে।



যাই হোক, বাস্তবতা হচ্ছে গণতন্ত্র এমন একটি ব্যবস্থা যা একমাত্র গোলামদের জন্যই প্রযোজ্য, অনুগত দাসদের বিদ্রোহ করার পরিবর্তে গোলামীতে ব্যস্ত রাখতে এটি ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এ জন্যই এটি সাম্রাজ্যবাদীরা বার বার তাদের কাক্সিক্ষত ভূ-খণ্ডে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।



জাতির উন্মেষকালে আমরা সংখ্যায় ছিলাম মাত্র সাত কোটির মত। আজকে আমরা বাড়তে বাড়তে প্রায় ষোল কোটিতে পৌঁছেছি। কিন্তু আমাদের ভূ-খণ্ড একটুও বাড়েনি। অপরদিকে এই তথাকথিত গণতন্ত্রের নামে বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নেতাদের মধ্যে কামড়া-কামড়ি চলতে লাগলো তখন তারা ক্রমেই বিদেশী শক্তির কৃপা লাভের আশায় তাদের দ্বারস্থ হতে শুরু করলো। ক্রমে ক্রমে এরা প্রভুদেরকে কে কার চাইতে বেশি খুশি করতে পারে তার প্রতিযোগিতা শুরু করলো। ফলে বিভিন্ন প্রকাশ্য ও গোপন চুক্তির মাধ্যমে তাদের হাতে আমাদের এই সীমিত সম্পদের সিংহভাগ চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে জীবন যাত্রার মান-উন্নয়নের নামে তারা দাতা সেজে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে তারা আমাদের ঋণ দিচ্ছে, অথচ সেই শর্ত মোতাবেক আমাদের কাছ থেকে লভ্যাংশ তো উঠিয়ে নিচ্ছেই, মাঝ দিক দিয়ে আমাদেরকে তাদের কাছে ঋণী করে রাখছে। সুদখোর মহাজনের কাছে খাতকের যে অবস্থা হয় পাশ্চাত্যের কাছে আমাদের অবস্থাও আজ তাই হয়েছে।



কিন্তু এবার বোধ হয় আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এই পর্যায়ে এসে আমরা এক কঠিন অবস্থার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি। গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে যে যার ইচ্ছামত যখন যা খুশি তাই করছে, কেউ আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করছে, বাড়ি-গাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে অন্যদিকে ক্ষমতাসীনদের হুকুমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধীদেরকে বল প্রয়োগ করে দমন করতে গিয়ে সমস্যা দিন দিন আরো বাড়িয়েই চলেছে। এসব করে কার্যত দেশটি এখন একটি অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ নিয়েছে। হরতাল-অবরোধ-আন্দোলনের নামে রাজধানী থেকে দেশকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। এই অবস্থা গৃহযুদ্ধের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। এমতবস্থায় জাতিকে টিকে থাকতে হলে এখন এই জগাখিঁচুড়ি মার্কা জাতি ভাগাভাগির গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠাতে হবে। দলমত নির্বিশেষে যার যার অবস্থান, দল, জোট বাদ দিয়ে একটি প্লাটফর্মে দাঁড়াতে হবে। বর্তমান চলমান সঙ্কটে কার কতটুকু দোষ, কার কি ভূমিকা তা না খুঁজে উচিৎ ঐকবদ্ধ হওয়া। কারণ এখন আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জাতি যদি অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে তবে কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি কে জাতীয় পার্টি ইত্যাদি দাবি করে কী লাভ?



দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বলতে চাই, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই, এক থাকি- তাহলে কারো চোখ রাঙ্গানি আমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তারা আমাদের দেশের পোশাক আমদানী করবে না, আমাদের দেশের মানব-সম্পদ আমদানী করবে না এই হুমকি দিয়ে লাভ হবে না। ষোল কোটি মানুষের বত্রিশ কোটি হাত যদি এক হয়ে একটি নেতৃত্বের অধীনে কাজ করি তাহলে আল্লাহই আমাদের জন্য দুনিয়া উন্মুক্ত করে দেবেন। মনে রাখতে হবে আমাদের যেমন বৈদেশিক বাণিজ্য প্রয়োজন তেমনি টিকে থাকতে হলে বিশ্ব মোড়লদেরও আমাদের দ্বারস্থ হতেই হবে। আমরা যদি লৌহ কঠিন প্রাচীরের মত একমত, একপথ হই তখন এ জাতির পায়ের তলায় পৃথিবী লুটিয়ে পড়বে। আর তা যদি না হয় তবে বুঝতে হবে স্রষ্টার প্রাকৃতিক নিয়মই মিথ্যা; যা কখনো সম্ভব নয়। তাই আমাদের এখনকার শ্লোগান হতে হবে আমাদের একটি দেশ, আমরা একটি জাতি, আমাদের ষোল কোটি মানুষের একটি জোট। ন্যায়, সত্য ছাড়া আমাদের কারো কোন আলাদা কোন মত নেই, পথ নেই। আমরা নিজেদের কল্যাণে ব্রতী হবো এবং মানবজাতির কল্যাণ করবো।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৫

ইউরো-বাংলা বলেছেন: এক নেতা, এক দেশ - এক রাইতে সব শেষ।

জানেন না ?

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩১

উড়োজাহাজ বলেছেন: ইমোটা দিতে পারছি না। নইলে একটা কঠিন ইমো দিতাম।

২| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫২

ইউরো-বাংলা বলেছেন: ইমো দেওয়া সহজ :-B

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২৭

উড়োজাহাজ বলেছেন: :-P X( X( X( আরে হচ্ছে তো!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.