নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সিরিয়ায় প্রতিষ্ঠিত আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে সে দেশের বিদ্রোহী বাহিনী ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’ গত প্রায় তিন বছর যাবৎ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের উত্থানের কিছু দিন পরই তারা বিশ্বশক্তিগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। অপরদিকে পাশ্চাত্য শক্তিগুলোর সাথে আগের মত সু-সম্পর্কের পরিবর্তে বৈরিতা দেখা দেওয়ায় ফাটল সৃষ্টি হয় আসাদ সরকারের। তাই আসাদ সরকারকে উচ্ছেদের লক্ষ্যে বিদ্রোহী বাহিনীকে অর্থ ও অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় পশ্চিমা শক্তিশালী দেশগুলো। অনেক জল ঘোলা করার পর অবশেষে কৌশলে আসাদ সরকার নতি স্বীকারের মাধ্যমে তাদেরকে আশ্বস্ত করতে সক্ষম হয় যে আসাদ সরকার পশ্চিমা শক্তির স্বার্থের অন্তরায় নয়। বরং যারা আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে নেমেছে তারা পশ্চিমা শক্তি বিরুদ্ধশক্তি। এরা প্রকৃতপক্ষে আল-কায়েদার উদ্দেশ্যকেই বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। পশ্চিমা শক্তিগুলো যে তা আগে বুঝতো না তা নয়। তারা জেনে শুনেই উগ্রবাদী দলগুলোকে সাহায্য করেছে। কিন্তু যখনই উপযুক্ত সময় এসেছে তখনই তারা বিদ্রোহীদেরকে ক্ষুধার্ত ব্যাঘ্রের ন্যায় আসাদ বাহিনীর মুখে ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে।
এখন দেখা যাক ফ্রি সিরিয়ান আর্মি নামে সিরিয়ায় কারা আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে নেমেছিল। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে সংঘাতরত বড় একটি দল হচ্ছে আন-নুসরাহ। আন-নুসরাহ হচ্ছে বিশ্বময় জঙ্গিবাদের উদ্গাতা ওসামা বিন লাদেনের সংগঠন আলকায়েদার অঙ্গ-সংগঠন। এই আল-কায়েদাকে ধ্বংস করার জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন দেশ ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ নামে একটি দীর্ঘ ও বড় ধরনের যুদ্ধ চালিয়ে পৃথিবীর বহুদেশের সার্বভৌমত্ব কেড়ে নিয়েছে, পঙ্গু করে দিয়েছে। ঐ সব দেশগুলোর আকাশসীমা ও স্থলসীমা লঙ্ঘন করে দেশের অভ্যন্তরে সামরিক হামলা চালিয়েছে। আফগানিস্তান ও ইরাকের মত দুটি দেশ তারা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। পাকিস্তান, ইয়েমেনের আকাশসীমায় প্রবেশ করে ড্রোন হামলা চালিয়ে জঙ্গিদের পাশাপাশি বহু সাধারণ মানুষ হত্যা করছে। শুধু আন-নুসরাহ নয়, সিরিয়া যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কথিত জেহাদীগণ একত্রিত হয়েছে ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে। বলাবাহুল্য এসব যোদ্ধাদের অনেকেই সত্য সত্যই প্রকৃতই আল্লাহ এবং রসুলের জন্য, দীন প্রতিষ্ঠার মানসে নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করার লক্ষ্যে সেখানে একত্রিত হয়েছেন। অস্তিত্বগতভাবেই এরা পাশ্চাত্য শক্তির বিরোধী। কিন্তু নিয়তির কি পরিহাস, এই এরাই কিনা পাশ্চাত্য শক্তির সাহায্য- সহযোগিতা নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছে।
আসলে জেহাদের নাম ভাঙ্গিয়ে পশ্চিমারা তাদের বিরোধী শক্তি বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হওয়া উগ্রবাদীদেরকে সিরিয়ার ময়দানে একত্রিত করেছে। প্রথমে তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলেছে। কিন্তু যখনই তাদের সংখ্যাটা কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছেছে তখন তারা বিপদের মুখে ফেলে আলগোছে সটকে পড়ে সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতার হাত উঠিয়ে নিয়েছে। এখন যদি দেখা যায় পশ্চিমারা আসাদ সরকারকেই সাহায্য-সহযোগিতা করে এই জঙ্গিদের দমন করতে শুরু করে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ, ইতোপূর্বে আফগানিস্তানের ক্ষেত্রেও আমরা দেখেছি আগ্রাসী সোভিয়েত ইউনিয়নকে আফগানিস্তান থেকে সরানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মোজাহেদদেরকে রিক্রুট করেছে। ডলার, সামরিক প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র-শস্ত্র, গোয়েন্দা তথ্য ইত্যাদি দিয়ে তাদেরকে সোভিয়েত বাহিনীকে উচ্ছেদ করার কাজে নামিয়ে দিয়েছিলো। এই মোজাহেদদেরই অন্যতম একজন ছিলেন সৌদি আরবের ধনাঢ্য লাদেন পরিবারের ছেলে ওসামা বিন লাদেন। আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত রাশিয়া চলে যাওয়ার পর দেখা গেল সেখানে মোজাহেদদের সমন্বয়ে গড়ে উঠলো তালেবান বাহিনী। ওসামা বিন লাদেনও তখন আল-কায়েদাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে তুললেন, আর উভয় মিলে গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের সরকারকে উচ্ছেদ করে তালেবানি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলো। পরবর্তীতে এই আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করেই বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনা করতে লাগলো। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এই তালেবানি সরকারই যুক্তরাষ্ট্রের শত্র“তে পরিণত হয়। টার্গেটের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন ওসাম বিন লাদেন। এরপরের ইতিহাসতো আমাদের সকলেরই জানা। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’র নামে আফগানিস্তানকে মিত্র বাহিনী তছনছ করে দিলো। এক যুগ যাবৎ চললো তালেবান, আল-কায়েদাকে নিধন অভিযান। অতঃপর এককালে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু ওসামা বিন লাদেনকে আকাশসীমা লঙ্ঘন করে পাকিস্তানের এ্যাবোটাবাদে পালিয়ে থাকা অবস্থায় রাতের অন্ধকারে বিশেষ অভিযান চালিয়ে হত্যা করা হয়।
অনুরূপভাবে সিরিয়ায় যোদ্ধাদেরকে জমায়েত করে এখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার দোসর যুক্তরাজ্য নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছে। এখন যদি এতদিন বিরোধিতা করা একনায়ক বাশার আল আসাদ বাহিনীকেও জেহাদীদেরকে ধ্বংস কাজে সাহায্য করা শুরু করে তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ, এটাই ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের আসল চরিত্র। এমনি করে শত্র“ ধ্বংস করা তাদের একটি অতি পরিচিত কৌশল, যদিও তথাকথিত যোদ্ধারা এই ফাঁদে বার বার পা দিচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশের প্রেক্ষিতেও বিষয়টি এখন খুব প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। দেশে রাজনৈতিক বিভক্তি চরম আকার ধারণ করেছে। এ নিয়ে দেশের ভেতরে যতটা না আলোড়ন তুলেছে তার চাইতে দেশের বাইরেও আলোড়ন কম নয়। বিশ্ব মোড়লরা দেশের রাজনীতি নিয়ে যথেষ্ট মাথা ঘামাচ্ছে। বিভক্তির সুযোগে এখন যদি তারা কোন একটা পক্ষকে ব্যবহার করার জন্য বাড়িয়ে তোলে এবং পরবর্তীতে তাদেরকেই দমন করার নামে সামরিক সমাবেশ ঘটায় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সুতরাং সিরিয়া পরিস্থিতি থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন আছে।
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫২
উড়োজাহাজ বলেছেন: রাসায়নিক হাতিয়ারের জন্য আলকায়েদাকে সমর্থন! যাদের বিরুদ্ধে কি না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ ১২ বছর লড়াই করলো, আফগানিস্তানকে ধ্বংস করে দিলো?
২| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৭
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেন: জাহাঙ্গীর জান বলেছেন: আমেরিকা বসার আল আসাদ সরকারের কাছ থেকে রাসায়নিক অস্ত্র উদ্ধার করে নিয়েছে সেটাই তাদের মূলত লক্ষ ছিলো প্রি সিরিয়ান যুদ্ধা আমেরিকার সৃষ্টি শুধু রাসায়নিক হাতিয়ারএর জন্যে ।----- সহমত
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৩
উড়োজাহাজ বলেছেন: রাসায়নিক হাতিয়ারের জন্য আলকায়েদাকে সমর্থন! যাদের বিরুদ্ধে কি না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ ১২ বছর লড়াই করলো, আফগানিস্তানকে ধ্বংস করে দিলো?- ওটা ছিল একটা অজুহাত মাত্র।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩১
জাহাঙ্গীর জান বলেছেন: আমেরিকা বসার আল আসাদ সরকারের কাছ থেকে রাসায়নিক অস্ত্র উদ্ধার করে নিয়েছে সেটাই তাদের মূলত লক্ষ ছিলো প্রি সিরিয়ান যুদ্ধা আমেরিকার সৃষ্টি শুধু রাসায়নিক হাতিয়ারএর জন্যে ।