নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক দিন আগে থেকেই দেশের সাধারণ মানুষ রাজনীতিবিদদের দায়িত্বজ্ঞাহীন কর্মকাণ্ড দেখে আতঙ্কিত হয়ে বর্তমান পরিস্থিতির আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলো। কিন্তু এতে তাদের আসলে কোন বোধোদয় ঘটেনি। এসব করে আমাদের নেতা-নেত্রীগণ মানুষকে শুধু হতাশই করেননি, তাদের প্রতি অনাস্থা বৃদ্ধিতে সহায়তাও করেছেন। শুধু তাই নয়, এসব করে করে তারা গণতান্ত্রিক নিয়মে ‘জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস’ বাক্যটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলিও দেখিয়েছেন। ফলে জনগণ বুঝতে পেরেছে এই মোহময়ী বাক্য শুধু সাধারণ মানুষকে ধোকা দিতেই রাজনীতিবিদগণ ব্যবহার করেন। প্রকৃতপক্ষে জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে শুধু একজন ভোটারের বেশি কিছুই নয়। সাধারণ মানুষ যে এই সত্যটি উপলব্ধি করে না তা নয়। তারাও জানে এবং বুঝে। কারণ, তারা আগের মত এখন আর এতটা উদাসীন নয়। অন্তত আমাদের নেতা-নেত্রীগণ যতটা মনে করে থাকেন ততটা নয়। কিন্তু জনতা গণতান্ত্রিক সিস্টেমের একটি জালে আবদ্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়েই তারা এই ব্যবস্থাকে মেনে নিয়েছে। কিন্তু কোন একটা বিকল্প সুযোগ যদি তাদের সামনে উপস্থিত হয় তাহলে তাকে সমাদরে লুফে নেবে। সা¤প্রতিক আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টির উত্থানই তার বড় প্রমাণ। মাত্র কিছুদিন আগে জন্ম নেওয়া এই দলটি প্রচলিত ধারার গণতান্ত্রিক দলগুলোর কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যাত্রা শুরু করে। প্রথমবারের মত নির্বাচনে অংশ নিয়েই তারা ব্যাপক চমক দেখায়। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন না করতে পারলেও ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দলকে ব্যাপক ব্যবধানে পরাভূত করে বিজয়ী হয়। লোকসভা নির্বাচনের এই ফলাফল আমাদেরকে বার্তা দেয় যে, সাধারণ মানুষ প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অসন্তুষ্ট। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এই বার্তা গ্রহণ করতে রাজী নয়। তাই তারা একরোখা মনোভাব বজায় রেখে এখনো কূটিল রাজনীতি চালিয়ে যেতে সাহস পাচ্ছেন।
এহেন পরিস্থিতিতে যাদের চোখ আছে তারা একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবে- হাওয়া কিন্তু উল্টে যাচ্ছে, বিভক্তির রাজনীতি থেকে সাধারণ মানুষের মন উঠে যাচ্ছে। তারা নেতাদের কাছে চাইছে দেশের মানুষকে যেন ঐক্যবদ্ধ করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত করা হয়। জনগণ দল ও মতের ভিন্নতার নামে ভ্রাতৃঘাতী ও মানুষ হত্যার রাজনীতি হোক তা কিছুতেই চায় না। কারণ, তারাই অনৈক্যের রাজনীতির কুফল ভোগ করেছে বেশি। রাজনীতিবিদদের ক্ষতি তেমন একটা হয় নি। তারা এখন আর বিশ্বাস করেন না যে রাজনীতিবিদগণ জনতার জন্যই রাজনীতি করেন। তারা বুঝে নিয়েছেন অধিকাংশ নেতারা নিজের আখের গোছানোর জন্য মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের মত রাজনীতিতে অর্থ বিনিয়োগ করেন, যা দিয়ে তারা পরবর্তী পাঁচ বছরের একটি মৌসুমের বিনিময়েই সারা জীবন নিশ্চিন্তে বেঁচে থাকার মত অর্থ আয় করে নিতে পারেন।
স্বাধীনতার ৪২ বছর পার হয়ে গেছে। ৪২ বছর সময় একটি জাতির জন্য মোটেই কম সময় নয়। তারা এই সময় থেকে ব্যাপক শিক্ষা লাভ করেছে। তারা এখন ঘুরে দাঁড়াতে চায়। ঐক্যবদ্ধ হতে চায়। তাই একটি সুর উঠে গেছে যে, ’৭১ এ সাত কোটি মানুষ যেমন প্রবলভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলা- ঠিক আজ ২০১৩ কিংবা ২০১৪ সালেও তারা চাইছে ১৬ কোটি মানুষ যেন অনুরূপ ঐক্যবদ্ধ হয়। কারণ ঐক্য ছাড়া একটি জাতি টিকে থাকতে পারে না।
রাজনীতিবিদদের মনে রাখা উচিৎ, একটি জাতির দৃষ্টি এবং ধ্যান-জ্ঞান যখন একটি নির্ধারিত লক্ষ্যে নিবদ্ধ হয় তখন তা বাস্তবায়িত হয়ই হয়। কোন শক্তি তাদের বাঁধা দিয়ে ধরে রাখতে পারে না। সুখের কথা এই যে, ঐক্যের গুঞ্জণ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। গণমানুষের এই আবেগের সাথে রাজনীতিবিদগণ যদি সাড়া দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হোন তাহলে তারাও সাদরে গৃহিত হতে পারেন। এমনকি এর মাধ্যমে তাদের ব্যাপক ভূমিকা রাখারও সুযোগ রয়েছে। কারণ তারা রাজনৈতিক বিষয়ে সাধারণ মানুষ থেকে অনেক বেশি অভিজ্ঞ ও পারদর্শী। অপরদিকে তারা যদি সামনে এগিয়ে না এসে এ পথের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান তাহলে হয়তো তাদের ভবিষ্যৎ ভিন্নরকমই হবে। মোদ্দাকথা হচ্ছে তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে নিজেদের কর্মের উপরেই। যে যে ভূমিকা পালন করবে তার ভবিষ্যৎ তেমনই হবে। তাই তাদের ভেবে দেখা উচিৎ কোন পথ বেছে নেয়া যায়। গণমানুষের চাওয়া পাওয়া পূর্ণতা পাবেই।
©somewhere in net ltd.