নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজরা যখন নিজেদের ঘর গোছাতে ফিরে গেল, তখন তারা এ দেশের নেতৃত্বভার দিয়ে গেল তাদের শিক্ষায় শিক্ষিত ও তাদের অনুগত শ্রেণিটির কাছে। ইংরেজদের নির্দেশনায় এই শ্রেণিটির হাত ধরেই উপমহাদেশে গণতন্ত্রের গোড়াপত্তন। সাম্রাজ্যবাদীদের ও তাদের এ দেশীয় তাবেদারদের সীমাহীন অত্যাচারে অতীষ্ঠ মানুষগুলোকে যখন গণতন্ত্র নামক জীবনব্যবস্থাটির কথা বলা হলো, তারা রীতিমত লুফে নিল। অতঃপর নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া স্বাধীন বাংলাদেশেও জীবনব্যবস্থা হিসেবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেল। আজ স্বাধীনতার ৪২ বছর পরেও গণতন্ত্রের যে রূপ আমরা দেখতে পাচ্ছি তাতে দেশের বিজ্ঞ, সুশীল, বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিতরা বলে থাকেন, এদেশে আজও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় নি, গণতন্ত্র এদেশে আজও শিশু রয়ে গেছে।
তারা তাদের ক্ষীণদৃষ্টির কারণে বুঝতে পারেন না যে, তারা গণতন্ত্রের যে যৌবনরূপ কল্পনা করে থাকেন তা এই দেশে কোন দিন বাস্তব রূপ লাভ করবে না। কারণ গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় ত্র“টি হচ্ছে, এই জীবনব্যবস্থাটি একটি জাতিকে স্বার্থ ও আদর্শগত উভয় দিক থেকে টুকরো টুকরো করে ফেলে। ৩০০ বছর গোলামীর জিঞ্জিরে বাঁধা এই জাতিটি স্বাধীনতা পাওয়ার পর যখন এই জীবনব্যবস্থাটি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করলো তখন এই ত্র“টিই কাল হয়ে দাঁড়ালো। জাতি বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের রক্ত পান করতে শুরু করলো। ক্রমাগত বাড়তেই থাকলো অনৈক্য, বিশৃংখলা, দলাদলি, স্বার্থ ও ক্ষমতার কাড়াকাড়ি, আন্দোলনের নামে সহিংসতা, নৃশংসতা, বিপরীতে সরকারের দমন-পীড়ন ইত্যাদি। এই অস্থিতিশীলতা আজ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মানুষের দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এমন একটি দিন যাচ্ছে না যেদিন কেউ না কেউ এই জীবনব্যবস্থার বলি হচ্ছে না। গণতন্ত্রের এই ব্যর্থতা ঢাকতে দেশের বিজ্ঞজন বলে পরিচিত সেই শ্রেণিটি দায় দিয়ে আসছে রাজনৈকিতক দলগুলোর উপর। তারা দেশে প্রচলিত রাজনীতি ও গণতন্ত্রকে আলাদা করার প্রয়াস পান এবং একই মুখে একদিকে গণতন্ত্রের জয়গান করেন আরেকদিকে হিংসার রাজনীতির নিন্দা করেন। তারা মানুষকে সবসময়ই বুঝিয়ে এসেছেন’ আজকের সমস্ত সমস্যার কারণ আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো ও নেতাদের দলীয় ও ব্যক্তিগত চরিত্র ও মানসিকতা, এর জন্য গণতন্ত্র দায়ী নয়। সত্য বললে তারা গোস্সা করবেন জেনেও বলতে হচ্ছে, তাদের এই প্রচেষ্টার কারণ এই দেশে তারাই পশ্চিমা প্রভুদের সবচেয়ে গুণগ্রাহী, আস্থাভাজন ও তাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত স্তাবকশ্রেণি। তাদের এই প্রতারণার ফলে সাধারণ মানুষ বিপর্যয়ের প্রকৃত কারণ খুুঁজে পাচ্ছে না।
তাদের সমস্ত ঘৃণা ধাবিত হল নেতা-নেত্রীদের প্রতি, গণতন্ত্রের প্রতি নয়। অথচ প্রকৃত সত্য হল, আজকের সমস্ত সমস্যার মূল কারণ গণতন্ত্র নামক ভারসাম্যহীন এই জীবনব্যবস্থাটিই।
দীর্ঘ দিনের গোলামী থেকে মুক্ত হয়ে এই জাতিটির প্রথমেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল যে, আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে এমন একটা জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করা যা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল করবে। স্বধীনতার এত বছর পর আজ বোঝা যাচ্ছে, কেন ইংরেজরা আমাদের উপর গণতন্ত্র চাপিয়ে দিয়ে গেল। কারণ তারা চেয়েছে এই জাতিটি যেন কোনভাবেই ঐক্যবদ্ধ, সু-শৃঙ্খল, শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হতে না পারে। যেন এই জাতির মধ্যে সারাক্ষণ মারামারি, হানাহানি, অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা লেগে থাকে। সে ক্ষেত্রে বাহ্যিক স্বাধীনতা পেলেও এই জাতি চিরকালই মানসিকভাবে তাদের গোলামই রয়ে যাব। আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সবচেয়ে উপযোগী জীবনব্যবস্থা হিসেবে তারা চাপিয়ে দিয়ে গেল এই গণতন্ত্রকে।
আজ তাদের সেই পরিকল্পনা সফল হয়েছে। সত্যিকার অর্থেই আজও আমরা মানসিকভাবে তথা পরোক্ষভাবে পশ্চিমা প্রভুদের গোলামই রয়ে গেছি। তবে আশার কথা হচ্ছে এই যে, কিছু মানুষ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারছে। টকশো, মন্তব্য কলাম ইত্যাদিতে ইদানীং অনেকেই প্রচলিত জীবনব্যবস্থার প্রতি তাদের অনাস্থা ও ঘৃণা জানাচ্ছেন। তারা বুঝতে পারছেন শুভঙ্করের ফাঁকিটা কোথায়। এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য এই ফাঁকি সবাইকে অনুধাবন করতে হবে। জাতিকে অনুধাবন করতে হবে, আজ আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যে জীবনব্যবস্থা আমাদের ঐক্যকে নষ্ট করেছে, ভাইয়ের রক্তে অপর ভাইয়ের হাতকে রঞ্জিত করেছে, আমাদের এক জাতিসত্ত্বাকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে, পরস্পরের মধ্যে বিভেদের সুবিশাল প্রাচীর দাঁড় করিয়েছে, সেই জীবনব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আজ আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং তা হতে হবে ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে, হকের পক্ষে, সুন্দরের পক্ষে। আর তাহলেই ঐক্যবদ্ধ এই জাতির উপর পৃথিবীর কোন শক্তিই মোড়লিপনা করতে পারবে না।
©somewhere in net ltd.