নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কারা স্বদেশি আর কারা বিদেশি?

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৪

বহির্দেশ থেকে ইংরেজসহ যে সকল জাতি ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছেন, এদেশের মানুষকে শাসন করেছেন তাদের সবাইকে এক বাক্যে পরসম্পদলোভী বিদেশি লুটেরা বলে প্রচার করা হয়। কি গানে, কি কবিতায়, কি সাহিত্যে, কি ইতিহাস বইয়ে কোথাও এর ব্যত্যয় নেই। আর জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারায় যারা এক ধাপ এগিয়ে তারা ‘বিদেশি’দের চলে যাওয়ার পরও সেই একইরকম মনোভাব পোষণ করে ঐ ‘বিদেশি’দের বর্তমান প্রজন্মকে এদেশ থেকে উৎখাত করতে অতিশয় তৎপর। এই ভূ-খণ্ডে যতগুলো সাম্প্রদায়িক সংঘাত ঘটেছে তার পেছনে এই শ্রেণিটার এমন মনোভাব অনেকটাই দায়ী। তবে ব্যতিক্রম যে একেবারেই নেই তা নয়। বিশিষ্ট ঐতিহাসিক গোলাম আহমাদ মোর্তজা তার ‘চেপে রাখা ইতিহাস’ বইটিতে কারা স্বদেশি এবং কারা বিদেশি তার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘আর্য এবং মুসলমান জাতি যারা নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষায় ভারতে এসে এখানে বাস করছেন, উন্নতি ও অবনতির শেষ ফল অর্র্থাৎ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ-সম্পত্তি ভারতেই রেখে শ্মশান কিংবা কবরের মাটিতে নিজেদের মিশিয়ে দিতে চেয়েছেন তাঁরাই স্বদেশি। আর ইংরেজ, তারাই এসেছিলে ভাগ্য পরীক্ষা করতে। তাঁরা বণিকের বেশে তুলাদণ্ড রাজদণ্ডে পরিণত করে ভারত দখল করে ভারতের সম্পদ, শস্য, অর্থ যতটা সম্ভব নিংড়ে নিয়ে চলে গেছেন নিজেদের দেশে। তারা বৃটেনকে করেছেন অধিকতর সমৃদ্ধশালী। অতএব তাঁরা বিদেশি হলেও কোনক্রমেই মুসলমান ও আর্যজাতি বিদেশি নয় (চেপে রাখা ইতিহাস- পৃষ্ঠা-১৮)।’



কারা দেশি আর আর কারা বিদেশি এই প্রশ্নের জবাবে আমরা জনাব গোলাম মোর্তজার এই মতটি একটি চরম সত্যকেই প্রতিভাত করে। আর্য, মুঘল, তাতার, তুর্কি ও পাঠানরা বিদেশি নয়, কারণ তারা এদেশে এসে আর ফিরে যান নি। নিজেদের মেধা, শ্রম সবকিছুকে উজাড় করে দিয়ে তারা এদেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। সেই সাথে তারা এদেশের বুকেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে এ দেশের মাটির সাথেই মিশে রয়েছেন। অন্যদিকে প্রবল জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীদের তত্ত্বকে আমরা এই জন্য বর্জন করবো যে তারা নিজেরা অতি দেশপ্রেমিক সেজে বাইরে থেকে আগত সকলকেই এক কাতারে ফেলে পরসম্পদলোভী বিদেশি শক্তি আখ্যা দিয়ে থাকেন এবং নিজেদের জাতীয় উন্নতিতে সকলের অবদানকে অস্বীকার করে বসেন।



ইংরেজরা ছিল প্রকৃতই বিদেশী স্বার্থান্বেষী। তাদের মূল সরকার ছিলে ব্রিটেনেই। সেখান থেকেই নিয়োগ দেওয়া হত বড় লাট, ছোট লাট, বিভিন্ন সরকারী বিভাগের কর্মকর্তা ইত্যাদি হিসেবে। তারা এদেশে এসে বাণিজ্য, শাসন-শোষণ, লুটপাট করে অর্থ কামিয়ে নিজেদের দেশকে উন্নত করেছে। আবার প্রায় সবাই দায়িত্ব থেকে অবসর নিয়ে নিজ দেশে গিয়েই মৃত্যুবরণ করেছে। তাই নিঃসন্দেহে যারা এই তালিকায় পড়ে অর্থাৎ যারাই এদেশে এসে ধন-সম্পদ কামিয়ে আবার নিজ দেশে চলে গেছে তারাই বিদেশি। আবার যারা এখানে এসে আর কখনোই নিজেদের জন্মভূমিতে ফিরে যান নি তারা এদেশীয়দের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছেন। কেননা তারা এদেশ থেকে পাচার করে নিজ দেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন নি।



বরং ইউরোপীয় বিদেশিদের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ যখন বিদ্রোহ করেছিলো তাদের মধ্যে অগ্রগামী ছিলেন আগে থেকে স্থায়ী হওয়া ‘বিদেশী’রাই। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। এই সিপাহী বিদ্রোহের নেপথ্যে হাত ছিলো পারস্য থেকে আগত মুঘলদের শেষ উত্তসূরি বাহাদুর শাহ জাফরের। কিন্তু কথিত স্বদেশিদের অনেকেই সেদিন ব্রিটিশরাজের বিপক্ষে অস্ত্রধারণ করতে ভয় পেয়ে তাদের আনুগত্য মেনে নিয়েছে। পরবর্তীতে বিদ্রোহে সম্পৃক্ততা থাকার কারণে বাহাদুর শাহকে রেঙ্গুনে নির্বাসনে পাঠানো হয়। সেখানে তার কবরে যে এপিটাফ লেখা হয় তাতে নিজ ভূমি ভারতের প্রতি যে ভালবাসা ও প্রবল আকুলতা ফুটে উঠে তা ভেবে যে কোন কঠোর হৃদয়ের মানুষও বেদনায় আপ্লুত হতে বাধ্য।



হায় জাফর! এতোই হতভাগ্য তুমি।

দাফনের জন্য হিন্দুস্থানে দু’গজ জায়গা পেলে না তুমি!

যেখানে ঘুমিয়ে আছে আমার শত প্রিয়জন,

যেখানে কেটেছে আমার সুখ জীবন যৌবন।

এই করুণ আর্তি কি কোন ‘বিদেশি’ লোকের হতে পারে?



এখন দেখা যাক আমাদের যারা রাজনৈতিক নেতা তারা স্বদেশি-বিদেশির সংজ্ঞায় কোন দলে পড়েন। যারা আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির রাজনৈতিক হর্তাকর্তা, রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত তাদের অনেকেই অবৈধ উপায়ে অর্থ-কড়ি উপার্জন করে একটু জাতে উঠতে পারলেই দেশের সম্পদ পাচার করে বিদেশে বাড়ি-গাড়ি ক্রয় করেন। প্রতিবারই ক্ষমতার মেয়াদ পার হওয়ার আগেই নতুন সরকারের হাতে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার ভয়ে বিদেশে পাড়ি জমান। এছাড়া নিজেরা রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও, স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে রাজনীতি, দলাদলি, মারা-মারি, ছুরি চালানো, বোমা ফাটানোর মত কাজকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে বৈধতা দান করলেও তাদের নিজেদের ছেলে-মেয়েদেরকে ঐসব দেশীয় স্কুল-কলেজগুলোতে পড়া-লেখা করান না, ছাত্র-রাজনীতিতেও জড়িত হতে দেন না। তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করে পড়া-লেখা করান বিদেশের স্কুল-কলেজগুলোতে।



একাধিক বাড়ি-গাড়ি আগেই তারা বিদেশে করে রেখেছেন। ইংরেজরা যেমন তাদের শাসনকালে নিজেদের দেশ থেকে বেড়িয়ে আসতেন তেমনি তারা কিছুদিন পর পর সম্ভব হলে সরকারের কোষাগার থেকে খরচে সেসব দেশ থেকে বেড়িয়ে আসেন। ব্রিটিশরা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নিজেদের দেশের আদলে এদেশীয় অবকাঠামো গড়ার প্রয়াস পেতেন। অনুরূপ আমাদের ‘দেশী’য় রাজনীতিবিদগণ বিদেশের আদলে এদেশের হোটেল, বাড়ি-গাড়ি, অবকাঠামো গড়ে তুলতে চান। এদেশীয় শিল্পকলা, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র থেকে সে সব দেশের শিল্পকলা, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে বেশি ভালবাসেন। বিদেশিদের মতবাদ, বিদেশিদের চালচলন সবই তারা হুবহু কপি করার চেষ্টা করেন এবং দেশে সেগুলোই প্রয়োগ করতে চান। এটাই কি তাহলে তাদের দেশপ্রেমের পরিচয়!



সুতরাং যারা আজ আমাদেরকে শাসন করছেন তাদের মধ্যে আর লুটেরা বর্গি, ঠগি, ইংরাজ, ফিরিঙ্গিদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ওরা যেমন ছিল এরাও ঠিক একই রকম। সুতরাং চেহারার আড়ালে কিংবা গায়ের রঙে এদেশীয় হলেও তারা চরিত্রগত দিক থেকে প্রকৃত অর্থেই বিদেশি। সুতরাং তাদের ব্যাপারে প্রকৃত স্বদেশিদের সাবধান হওয়া একান্ত জরুরি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:১৮

হতাশ নািবক বলেছেন: চরম হইছে।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৪৪

উড়োজাহাজ বলেছেন: হতাশ নাবিককে ধন্যবাদ।

২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:০০

বাংলার ঈগল বলেছেন: ভালো লাগলো। আরো তথ্য ভিত্তিক আলোচনা দরকার.........

১২ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৫৬

উড়োজাহাজ বলেছেন: কিছু হিন্টস দেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.