নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রধান বিরোধী জোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের তৃতীয়বারের মত ক্ষমতায় বসার পর বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সারির নেতা-কর্মী গুম ও খুনের অভিযোগ, বেশ কিছু ক্রসফায়ারের মত অপ্রীতিকর ঘটনা, নব-নিযুক্ত দলীয় কয়েকজন এমপি-মন্ত্রীদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, সামান্য বিরতিতে আল-কায়েদা নেতা আইমান আল জাওয়াহিরির পক্ষ থেকে ‘নাস্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষ’ সরকারের বিরুদ্ধে ইসলাম প্রিয় সাধারণ মানুষের প্রতি জেহাদের আহ্বান এবং সর্বশেষ নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি’র পুলিশ হত্যা করে তিন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ছাড়া দেশ রাজনৈতিকভাবে মোটামুটি এক প্রকার স্থিতিশীল ও নিরুত্তাপই ছিল বলা যায়। অবশ্য এ সময়ে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশের প্রতিবাদে এক দিনের হরতাল পালিত হয়েছে। তাছাড়া ভাগে ভাগে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে সংঘর্ষ, ক্ষমতাসীনদের সমর্থিত নেতা-কর্মীদের দ্বারা বেশ কিছু কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, তদুপরি বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের জয়-জয়কারই রাজনৈতিক জগতের বর্তমান আলোচ্য বিষয়। অন্যদিকে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় প্রধান বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জনের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে ঐ একতরফা নির্বাচনের বৈধতার ব্যাপারে ক্ষমতাসীনগণ পুরোপুরি সমর্থন লাভ করতে সক্ষম হয়নি। বিশেষ করে শুরু থেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার মত মোড়ল রাষ্ট্রগুলো অনেকটাই বেঁকে বসে। তবে শেষ পর্যন্ত এদের পক্ষ থেকে সরকারের সাথে কাজ চালিয়ে নেওয়ার মত মৌন সম্মতি পাওয়া গেলেও পুরোপুরি মন জয় করে তারা এখন পর্যন্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সক্ষম হয়নি। প্রায়শঃই তাদের পক্ষ থেকে দফায় দফায় ‘গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের উপর চাপ আসছে। এমনকি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং মানবাধিকারের মত স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে বার বার প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে।
তবে আওয়ামী লীগ যে বৈদেশিক সম্পর্কের ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন, তা নয়। ক্ষমতার মেয়াদের নির্ধারিত পাঁচ বছর নির্বিঘ্নে পার করার জন্য বৈদেশিক গ্রহণযোগ্যতা ও সমর্থন একান্ত আবশ্যক তা তারা দেরিতে হলেও বুঝতে পারছে। এ জন্য ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের যৌক্তিকতা ও এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান বিদেশিদের কাছে ব্যাখ্যা করতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সব দূতাবাস ও হাই কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে অগ্রাধিকার পাবার সম্ভাবনা রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতি। বিপরীত দিকে তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় আপাতত অনেকটা সফল মনে হলেও বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন। আভ্যন্তরীণভাবে তারা ক্রমশ জনসমর্থন হারাতে বসেছে। পূর্ববর্তী বিভিন্ন জরিপ ও চলমান উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল থেকে অন্তত সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত জরিপে বিএনপি নির্বাচনে এলেও আওয়ামী লীগই বিজয়ী হবে ঘোষণাটিকে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে তাল মেলানো জরিপ বলেই মনে করছেন। সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাচনেও দেখা গেছে বিএনপি এবং জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীগণ তুলনামূলকভাবে আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক বেশি ভাল ফলাফল করেছে। বিএনপির দাবী- সরকার ভোট ডাকাতি না করলে তাদের ফলাফল আরো অনেক বেশি ভাল হতো। তারা প্রথম দফায় ৯৭টি উপজেলার মধ্যে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ৪৩টিতে, জামায়াত ১৩টিতে আর আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে ৩৪টি উপজেলায়। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনেও অনুরূপভাবে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরাই এগিয়ে আছে। এতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী চেয়ারম্যান হিসেবে বিজয়ী হয়েছে ৫১টিতে, আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে ৪৪টিতে এবং জামায়াত জয় পেয়েছে ৮টি উপজেলায়। নির্বাচনের ফলাফল থেকে দেখা গেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যখন যুদ্ধাপরাধসহ বিভিন্ন অভিযোগে কোণঠাসা অবস্থায় তখনও জামায়াত বেশ ভাল ফলাফল করেছে। এত কিছুর পরেও কেন তারা ভাল ফলাফল করতে পেরেছে এ প্রশ্নের জবাব আওয়ামী লীগের জানা নেই। অন্ততপক্ষে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে এ ব্যাপারে কোন তথ্যই নেই। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে জনগণ কেন জামায়াতকে ভোট দিয়েছে তা আমার জানা নেই।’
অন্যদিকে জনপ্রিয়তার উচ্চতায় থেকেও বিএনপির অবস্থা তথৈবচ। ক্ষমতাসীনদের একতরফা এবং যাচ্ছেতাই আচরণের পরিপ্রেক্ষিতেও তারা কার্যকর কোন ভূমিকাই গ্রহণ করতে পারছে না। তাদের সম্মুখ সারির নেতৃত্ব্ অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছে। অনেকে আছেন জেলবন্দী এবং অনেকেই নিস্ক্রিয় অবস্থায়। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর তারা এক প্রকার ধরেই নিয়েছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে তারাই ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছে। তাই তারা কৌশলে নিজেদের গা বাঁচিয়ে এগোতে চেয়েছেন।
আন্দোলনে নিচের সারির কর্মীদেরকে মাঠে নামিয়ে দিয়ে নিজেরা আত্মগোপন করেছেন। এ নিয়ে বেগম জিয়া বার বার নেতাদেরকে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। সুতরাং প্রবল ঝড়ের সময় তারা দিগি¦দিক দিশা হারিয়ে এখন আম-ছালা দুইই হারিয়ে বসে আছেন। নির্বাচনে না যাওয়ার কারণে একদিকে তারা যেমন ক্ষমতায় যেতে পারেনি, তেমনি সংসদে বিরোধী দলের অবস্থানেও নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ অবশ্য বিএনপির নির্বাচন বর্জনের পেছনে ‘নির্বাচনে অযোগ্য’ ঘোষিত জামায়াত এর সাথে অতিরিক্ত সংশ্লিষ্টতাকেই দায়ী করেছেন। সব মিলিয়ে বিএনপি এখন জনসমর্থনে ভারাক্রান্ত ক্ষমতাহীন মেদভারী দলে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের কাছে আত্মসমর্পন করে অনুগত বিরোধী দলের আসন গ্রহণ করে নিজেদের স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়েছে।
বাস্তবিকপক্ষে বর্তমানে রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টির বিশেষ কোন ভূমিকা আছে বলে মনে হয় না। পৌরসভা নির্বাচনে তাদের প্রতিনিধিত্বহীনতা অন্তত তাই প্রমাণ করে। এদিকে রাষ্ট্র পরিচালনায় আওয়ামী লীগকে আপাতত দেখতে হৃষ্ট-পুষ্ট ও স্বাস্থ্যবান মনে হলেও জন-সম্পৃক্ততাহীন দূরারোগ্য রোগ তাদের শরীরে বাসা বেঁধেছে। এদেশের ধর্মাশ্রয়ী মানুষের সামনে আওয়ামী লীগকে ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ এবং ‘নাস্তিক তোষণকারী’ হিসেবে ভালভাবেই পরিচয় করাতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী বিরোধীরা। তারা এর যথোচিত পাল্টা জবাব দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ। বর্তমানে তারা প্রায়শঃই মসজিদ এবং ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলগুলোতে উত্তেজিত জনতা দ্বারা প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছেন, অনেক স্থানে ঘটেছে জুতা ছুড়ে মারার মত ন্যক্কারজনক ঘটনাও। সেই সাথে অভ্যন্তরীণভাবে রয়েছে দলীয় নেতা-কর্মীদের আদর্শ বিচ্যুতি, পারস্পরিক অনৈক্য, কোন্দল, অঙ্গ-সংগঠন ছাত্রলীগের বেপরোয়া দৌরাত্ম্য এবং এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সমূহ অভিযোগ। জনসমর্থনহীন এই অবস্থায় রাষ্ট্রীয় শক্তি ও কিছু কিছু অতি প্রশংসাকারী মিডিয়ার উপর ভর করে আওয়ামী লীগ কত দিন টিকে থাকতে পারে তাই এখন দেখার বিষয়। অবশ্য বিএনপিরও ক্ষমতা নেই যে তারা সরকারকে ধাক্কা দিয়ে ক্ষমতা থেকে ফেলে দেবে। বিএনপি’র অতীত আন্দোলনগুলো তাই প্রমাণ করেছে।
এই হচ্ছে প্রথম সারির প্রতিটি রাজনৈতিক দলের বাস্তব অবস্থা। শক্তির ভারসাম্যহীনতার এই দোলাচলের মধ্য দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে চলেছে দেশ। এ পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে পারে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নৈতিক পরিশুদ্ধি, নিজেদের মধ্যে ঐক্য এবং ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীটির অপপ্রচারের সঠিক জবাব দান, আর বিএনপির দরকার নিজেদেরকে সঠিক আদর্শের ভিত্তিতে দাঁড় করিয়ে ব্যাপক জনসমর্থনকে নিজেদের পক্ষে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা। - সূত্র:
০৭ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৯
উড়োজাহাজ বলেছেন: হাল্কা পাতলা ইয়ার্কি, রসাত্মক লেখা লেখেন পাঠক পাবেন, লুলীয় লুলীয় কমেন্ট পাবেন। দুই লাইনের পোস্টে শতাধিক কমেন্ট পড়বে। আসলে ব্লগে সিন্ডিকেট চলে।
কিন্তু এসবের পাঠক কই ভাই? আসলেই আমাদের মেধা দিন দিন পাতলা থেকে পাতলা হয়ে যাচ্চে। যাক, কে ভাল বললো কে খারাপ বললো তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আপনার ভাল লেগেছে তাই ধন্যবাদ জানাই।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৭
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: অন্ততঃ রাজনীতি নিয়ে যে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করেন তা ষ্পষ্ট। বিশ্লেষনও ভাল লাগছে।কার কাছে কেমন তা জানার দরকার নেই।আমারটা আমি বললাম। ধন্যবাদ।