নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভোট বাঁচে তো জান বাঁচে না- এমন ভোটের দরকার কী?

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৩৫

প্রিয় পাঠক, গতকাল ১৫ মার্চ দৈনিক আমাদের সময়ে প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ইমদাদ হকের লেখা ঐ সংবাদটির শিরোনাম ‘ভোট বাঁচে তো জান বাঁচে না-সহিংসতার আশঙ্কা নিয়েই আজ ৮১ উপজেলায় নির্বাচন’। সংবাদটির সাথে একটি কার্টুন চিত্র ছাপা হয়েছে যাতে উপজেলা ভোট পরিবহন নামক একটি খাটিয়ায় করে হাতে কাফনের কাপড় নিয়ে চারজনের কাঁধে সওয়ার হয়ে একজন ভোটার উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিতে যাচ্ছেন। সাধারণত আমরা জানি, কাফনের কাপড় হাতে মানেই নিশ্চিত মৃত্যুর পরোয়ানা। সংবাদ শিরোনামের সাথে কে. মাহমুদের আঁকা এই কার্টুন চিত্রটির অসাধারণ সমন্বয় হয়েছে। পাঠক, আমি শিরোনামটির সাথে আরো একটু অংশ জুড়ে দিয়েছি- ‘ভোট বাঁচে তো জান বাঁচে না- এমন ভোটের দরকার কী?’ এই অংশটি কেন যোগ করলাম তার ব্যাখ্যা দিতেই আমাদের আজকের সংবাদ বিশ্লেষণ।



আমাদের দেশে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য কয়েক দফায় নির্বাচন হয়। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে গিয়ে একদিনে প্রায় ৩০০ আসনের লাখ লাখ কেন্দ্রে ভোটের অনুষ্ঠান করা হয়। প্রতিটি প্রধান শহরের জন্য সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে একজন সিটি মেয়র ও শত শত কাউন্সিলর নির্বাচিত করা হয়। এরপরেই রয়েছে উপজেলা নির্বাচন। উপজেলা নির্বাচনের পরিধি এত ব্যাপক যে- সব ক’টি উপজেলা নির্বাচন একদিনে সামাল দিতে বেগ পোহাতে হবে বিধায় নির্বাচন কমিশন এবার কয়েক ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে বাধ্য হচ্ছে। এর পরেই আছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এর পরিধি আরও ব্যাপক। এছাড়াও বছরে এ মাথা থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত সারা দেশেই বিভিন্ন স্কুল, কলেজের পরিচালনা কমিটির নির্বাচন, ছাত্র সংগঠনের নির্বাচন, বাজার কমিটির নির্বাচন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও শ্রমিক সংগঠনের নির্বাচন, স্থানীয় নানা সভা-সমিতির নির্বাচন, বড় বড় শহরে বিভিন্ন আঞ্চলিক সমিতির নির্বাচন লেগেই থাকে। এখানে শুধুমাত্র উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আমাদের সময়ে প্রকাশিত উক্ত সংবাদ থেকে আমরা কিছু অংশ তুলে ধরছি।

‘স্থানীয় সরকারের চলতি উপজেলা নির্বাচনের ভেটগ্রহণ ও সহিংসতা হাত- ধরাধরি করে চলছে। এতে ধারাবাহিক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবারও কয়েকটি জেলায় সহিংস ঘটনা ঘটে। ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পর উপজেলা নির্বাচনের আজ শনিবার তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণেও সহিংসতার আশঙ্কা দানা বেঁধেছে ভোটারদের মনে।’

এতে আরো বলা হয়, সহিংসতার কারণে ইতোমধ্যে গাজীপুুরের শ্রীপুর উপজেলার নির্বাচন বন্ধ রাখা হয়েছে, একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন থেকে তৃতীয় ধাপের এই নির্বাচনে বাড়তি সহিংসতার আশঙ্কা করা হয়েছে। উক্ত সংবাদে নির্বাচন অনুষ্ঠান কতটা সুষ্ঠুভাবে হবে তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্যে স্ববিরোধিতা ও আস্থাহীনতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

‘নির্বাচন কমিশন-সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে বলা হয় প্রথম দফা নির্বাচন কিছুটা শান্তিপূর্ণ হলেও দ্বিতীয় দফায় সহিংসতার মাত্রা চরমে উঠে। ২৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে সহিংসতায় নোয়াখালী সদর উপজেলার ১১৭টি কেন্দ্রসহ কয়েকটি উপজেলার আরও ৩৪টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে কমিশন। ১৯ ফেব্র“য়ারি প্রথম দফা নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ও পেপার ছিনতাই, ব্যালট প্যাপার পুড়িয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে ৫ জেলার ১০টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। তৃতীয় ধাপের ভোট উপলক্ষেও সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।’ ইতোমধ্যে অর্থাৎ এই প্রতিবেদন লেখার সময়েই আমাদের কাছে চলমান উপজেলা নির্বাচনে নানা স্থানে সহিংসতায় হতাহত, এমনকি সাংবাদিকদের উপর আক্রমণের খবর পাচ্ছি। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের আলোকে আমাদের শঙ্কা হচ্ছে এ সহিংসতা ও হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। স্থানীয় প্রতিনিধি নির্বাচনে এই হচ্ছে একটি উপজেলা নির্বাচনের অবস্থা। একইভাবে সারা বছর জুড়ে উপরোক্ত নির্বাচনগুলোর কারণে সারা দেশে এই সহিংস অবস্থা বিদ্যমান থাকে। তাই উপরোক্ত সংবাদ শিরোনামটি অনেক অংশেই স্বার্থক। অর্থাৎ মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে ভোটকেন্দ্রে ভোটারের যাত্রা- লক্ষ্য নেতা নির্বাচন।

নির্বাচনে সহিংসতা, প্রাণহানি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারানো ছাড়াও আরো একটি ক্ষতিকর দিক রয়েছে। সেটা হচ্ছে অর্থনৈতিক ক্ষয়-ক্ষতি। গত ৫ই জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে দৈনিক দেশেরপত্রে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদে বলা হয়েছিল যে, জাতীয় নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় খরচের পরিমাণ প্রায় ৫ শত কোটি টাকা! আর যায়যায়দিন সূত্রে জানা যায় যে, আগামী পৌরসভা নির্বাচনেসরকারি খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৭১০ কোটি টাকা। এছাড়া প্রার্থীদের পক্ষ থেকে অবৈধ পন্থায় ভোট ক্রয়, প্রচার-প্রচারণা ইত্যাদি বাবদ কি পরিমাণ খরচ হয় তা হিসেব করে বের করা এক প্রকারে প্রায় অসম্ভব কাজ।

একদিকে সহিংসতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, প্রাণহানি, রাহজানি, দলাদলি, অনৈক্য- অন্যদিকে ব্যাপক অর্থের অপচয়- এই দুই মিলিয়ে আমরা নেতা নির্বাচনের এই প্রহসন চালিয়ে যাচ্ছি যুগের পর যুগ। কিন্তু এর বিনিময়ে আমরা কি পাচ্ছি? যারা এসকল বৈতরণী পাড়ি দিয়ে নেতা হোন, তারা সত্যিকার অর্থে কতটা গণমানুষের নেতা হোন তাও তো আমরা আজ নিজেদের চোখেই দেখতে পাচ্ছি। মূলত নির্বাচনী এই সিস্টেমের মাধ্যমে আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাল মানুষদেরকে নির্বাচিত করার সুযোগ পাচ্ছি না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুঃশ্চরিত্রবান, লুটেরা ও অবৈধ পথে অর্জিত অর্থ-বিত্তের মালিকগণ প্রতিদ্বন্দ্বিকে নির্মূল করে নেতা নির্বাচিত হোন। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতায় গিয়ে তারা জনগণের আশা-আকাক্সক্ষাকে পদদলিত করে নিজেদের স্বার্থোদ্ধারে সদা তৎপর থাকছেন।

তাই আমাদেরকে এখন ভাবতে হবে আমরা এই প্রহসন আর কতদিন চালিয়ে যাব। সেই সাথে আমাদেরকে ভাবতে হবে এর বিকল্প পথ কী। আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে আমরা জান বাঁচাবো না ভোট বাঁচাবো। ভাবতে হবে এ দু’টোর কোনটা আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতা আমাদের প্রয়োজন, কিন্তু জাতীয় ঐক্য, সামগ্রিক শান্তি, শৃঙ্খলা ইত্যাদি আরো বেশি প্রয়োজন। সুতরাং দেশের সুশীল সমাজ, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান- অনৈক্য সৃষ্টিকারী, প্রাণ হন্তারক, আতঙ্ক সৃষ্টিকারী, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়কারী নেতা নির্বাচনের এই ভোট ভোট খেলার বিকল্প উপায় বের করতে একসাথে বসুন, আলোচনা করুন। মানুষকে এই অহেতুক বিশৃঙ্খলা ও ক্ষয়-ক্ষতি থেকে রক্ষা করুন।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:৩১

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আমাদের "জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধীদের" নির্বাচন করতে ৫বছরে না হয় জীবনের ঝুকি আর কোটি টাকা ব্যয়ই করলাম। কি আসে যায় তাতে?? দেশকে রক্ষার নামে এই সামান্য ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা কৃপনতা করবো কেন? যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা দূর্নীতিবাজ রাজনীতিবাজরা অহরহ লুট করে বিদেশের এ্যাকাউন্ট মোটা করছে!! আর মৃত্যু? প্রতিদিনের হত্যা,গুম,আর এ্যানকাউন্টারেতো এর চেয়েও বেশীলোক মারা যাচ্ছে। সেখানে এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে এতো চিন্তা কেন ব্রাদার?? so নো চিন্তা do ফুর্তি। বড়কষ্ট "গনতন্ত্র" নামক এই ভন্ডামী দেখে।
বাস্তবতা নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ।

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ ভোর ৪:৪০

উড়োজাহাজ বলেছেন: ফূর্তি আসে না, ফূর্তি পাই না মনে। শুধুই ক্রোধ জাগে, দ্রোহ জাগে প্রাণে। আচ্ছা, এসবের কোন মানে আছে! কোন কাজে আসবে এইসব দ্রোহ কিংবা ক্রোধগুলো?

নিশ্চয়ই কোন মানে আছে হয়তো।

২| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৪১

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: শুধু শুধু ডাকাত অথবা সন্ত্রাসী খেতাব নিয়ে অকালে মারা যাবেন,জেলে যেতে পারবেন আর ভাগ্যটা একটু ভাল হলে হুলিয়া মাথায় নিয়ে আন্ডার ওয়াল্ডে স্যরি গ্রাউন্ডে। ক্লিয়ার।

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:০২

উড়োজাহাজ বলেছেন: আমি জানি সেটা। কিন্তু তার জন্য বসে থাকা যাবে না। সেই পথ আমি পেয়েছি যা এই সভ্যতা দিয়ে সভ্যতাকে আঘাত করা যায়। তার জন্য সন্ত্রাসী হতে হবে না, এমনকি জেলে ও যেতে হবে না। অর্থাৎ কৈ এর তেলে কৈ ভাজা।

৩| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:২৭

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: সিক্রেটটা ৩৫৪০বছর আগে দিলেতো পুরো সমাজটাকেই আমুল বদলে দিতাম। এখন আর জানতেও চাইবো না।দুঃখিত হবন না যেন।

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৩৫

উড়োজাহাজ বলেছেন: আমার বোধ হয় সময় আছে। এখন আমার বয়স মাত্র ৩০ এর কাছাকাছি।

৪| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৪৬

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: যুদ্ধে যাবার এটাই তো সময়।। আপাততঃ বিদায়। একটু কাজ আছে। সময়টা ভাল কাটলো। ধন্যবাদ।

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:০৬

উড়োজাহাজ বলেছেন: হুম! সেরে আসুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.