নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক্ষমতার নিরঙ্কুশতার প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সামনে আপাতত কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। বিরোধী দল এখন কার্যত মৃত। নিজেদেরকে গুছিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনের সূচনা করা ভবিষ্যতের ব্যাপার। তবে আপাতত তারা যে গতিতে চলছে এবং গত জাতীয় নির্বাচনের আগে তুঙ্গে উঠা আন্দোলনের সময় প্রধান সারির নেতৃত্ব যে ভূমিকা গ্রহণ করেছিলো তাতে মনে হয় না হঠাৎ ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে চমকপ্রদ কোন একটা কিছু করে ফেলতে পারবে। তাদেরকে সম্বন্ধে এমনটা ভাবার কারণ হচ্ছে আত্মরক্ষামূলক ও গা বাঁচানো সিদ্ধান্ত, ত্যাগ করার মানসিকতাহীনতা। এটা শুধু আমার মতই নয়, অনেক রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিরও জোড়ালো অভিমত এমনটাই। এছাড়া সরকারের জন্য হুমকিস্বরূপ আভ্যন্তরীণ অন্যান্য যে সকল বিষয় আছে সেগুলো অনুগত প্রশাসন আর অভিজ্ঞ আওয়ামী নেতৃত্বের কাছে নস্যি। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহলে কি হচ্ছে সেটা সঠিকভাবে জানার আপাতত কোন উপায় নেই। তবে নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মোড়ল রাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের জন্য সুখকর বলে মনে হচ্ছে না। প্রধান রাজনৈতিক প্রতিক্ষের প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন বিগত ৫ই জানুয়রির নির্বাচনকে অগ্রহণযোগ্য আখ্যা দিয়ে প্রায়শঃই তারা সমঝোতার ভিত্তিতে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজন করার আহ্বান করে আসছে। তাদের আহ্বানই অনেক সময় আমাদের কাছে আদেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই সরকার এসব চাপ কিভাবে মোকাবেলা করবে তা তাদের একান্তই নিজেদের ব্যাপার। তবে আপাতত বিদেশিরা সরকারের সাথে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং পাশ্ববর্তী উদীমান পরাশক্তি ভারত পাশে থাকায় সরকার একপ্রকারে নিশ্চিন্তেই আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের উপর আঘাতটা আসছে ভেতর দিক থেকে। এ বিষয়টি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং আওয়ামী লীগের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
আসন্ন স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২৬ মার্চ সমবেত লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে রেকর্ড করার উদ্যোগে জামায়াতে ইসলামী নিয়ন্ত্রিত, দলটির অন্যতম আর্থিক উৎস হিসাবে পরিচিত ইসলামি ব্যাংকের কাছ থেকে তিন কোটি টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে সা¤প্রতিক প্রশ্নের মুখে পড়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে সরকারে থাকা একজন মন্ত্রী বলেছেন টাকা নেওয়া হয়নি, আরেক মন্ত্রী বলেছেন তাদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আতাউর রহমান জানিয়েছেন, ‘লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত আয়োজনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা তিন কোটি টাকা অনুদানের চেক দিয়েছি। তবে সরকার এই টাকা কোথায় ব্যয় করবে তা আমরা জানি না।’ তিনি আরো বলেন, ‘চেক হস্থান্তরের সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে চেক তুলে দেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মুস্তাফা আনোয়ার।’ অনলাইনে এ সংক্রান্ত একটি ছবিও প্রকাশ হতে দেখা গেছে। অবশ্য গতকাল এই বিতর্কের মুখে পড়ে সরকার উক্ত তিন কোটি টাকার চেক ইসলামী ব্যংককে ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে।
ধর্মনিরপেক্ষ এবং একাত্তরের চেতনায় উজ্জীবিত আওয়ামী লীগের বর্তমান উদ্যোগ হচ্ছে দেশ থেকে স্বাধীনতা বিরোধিদের নির্মূল করা। এ আদর্শের স্বপক্ষে আওয়ামী লীগ দেশের একটি বিশাল অংশের মানুষের সমর্থন পেয়েছে। আদর্শিক কারণে এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারে না। ইনিয়ে বিনিয়ে হলেও স্বয়ং বিএনপিকেও স্বাধীনতা বিরোধীদের বিপক্ষে কথা বলতে হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নিজেরাই কিছু কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে তাদের আদর্শিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। অনেকেই মন্তব্য করছেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের অর্থ নিয়ে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার আয়োজন করা যেন নোংরা পানি দিয়ে ওজু করার মত। সরকার-বিরোধীরা উচ্চকণ্ঠে বলছে যে, আওয়ামী লীগের জামায়াত বিরোধিতা রাজনৈতিক কৌশল, অর্থের প্রশ্নে তারাও যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নমনীয়। এর যুক্তি হিসেবে তারা প্রধানত যে প্রশ্নগুলো উপস্থাপন করছে তার মধ্যে অন্যমত হচ্ছে-
১। আওয়ামী লীগ যদি সত্যিকার অর্থেই দেশ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের নির্মূল করতে চায় তাহলে তাদের দলকে আইন করে নিষিদ্ধ করছে না কেন?
২। ইসলামি ব্যাংকসহ জামায়াত নিয়ন্ত্রিত অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানই দেশের প্রচলিত আইনে বৈধ। যদি তাই হয় তবে তাদের কাছ থেকে টাকা নিতে সরকার দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগবে কেন? তাদের টাকা নিয়ে আবার ফেরত দিতে হবে কেন? আর যদি স্বাধীনতা বিরোধী হওয়ায় তাদের অর্থ অচ্ছ্যুতই হয় তাহলে তারা দেশে ব্যবসা করছে কীভাবে? কিভাবে তারা অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে টেক্কা দিয়ে আজ প্রথম সারিতে?
৩। আওয়ামী লীগ চায় বিএনপি যেন যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের সংসর্গ ত্যাগ করে। বিএনপি তা না করাতে আওয়ামী লীগ তাদের সাথে কোন ধরনের আলোচনায় রাজী নয়। কিন্তু বিএনপি তাদেরকে ত্যাগ করছে না এই যুক্তিতে যে, আইন অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী দেশে একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, তাই তাদের সাথে জোট করার অধিকার বিএনপির রয়েছে।
উপরোক্ত প্রশ্নগুলো আওয়ামী লীগকে বিব্রত করছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে এ প্রশ্নগুলি এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তৃণমূলের নেতা-নেত্রী কিংবা আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমর্থকরা নির্বাক হয়ে বসে আছেন। সরকারের অনেক বাঘা বাঘা মন্ত্রী এমপিও এ ব্যাপারে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে জবাব দিচ্ছেন। সবমিলিয়ে আদর্শিক অবস্থানে আওয়ামী লীগকে আরও দৃঢ় হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে অভিমত দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল। তারা বলছেন, নৈতিকতা ও আদর্শের প্রশ্নে সরকারের উচিত সাধারণ মানুষের কাছে এ ব্যাপারে তাদের প্রকৃত অবস্থান তুলে ধরা।
২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৩৪
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের মজার আরেক নাম রাজনীতি।।এখানে সবাই উল্টোপথে আর উল্টোরথে চলে।।
।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:১৯
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: