নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইদানীং আমাদের দেশে প্রায়শঃই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনায় মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে মনে করে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে। আইনত এসব হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার কারো না থাকলেও এটি আগা-গোড়াই আলোচনার বস্তু। বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জিম্মায় থাকা আসামিদেরকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারসহ বিভিন্ন অভিযানের সময় ‘ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টারের’ নামে যে ঘটনাগুলি বলা হচ্ছে সেগুলি সবই স্থান, কাল ও পাত্র ছাড়া একই রকম মনে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি আসামিদের নিরাপত্তা বিধানে অপারগ হচ্ছে তখন ঝুঁকি নিয়ে কেন অভিযানে নামছে? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না পাওয়ায় ধরে নেওয়া হচ্ছে যে, এতে রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে এবং রাষ্ট্রই তা ঠাণ্ডা মাথায় ঘটাচ্ছে। শুধু এটাই নয়, এসকল কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্র্রের সমর্থন আছে তা সরকারের সাথে জড়িত এমপি-মন্ত্রীরাও ব্যক্তিগত অভিমত হিসাবে প্রকাশ করছেন। বেশ কিছুদিন আগে বিবিসির সাথে এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নে সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘সন্ত্রাসীদের দমন করতে যখন কিছুটা এই ধরনের (ক্রসফায়ার) পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়, (তখন) সেটা সব সরকারের সময়ই কোন না কোনভাবে করেছে- (বিবিসি সংলাপ-০৮ ই মার্চ ২০১৪)।’ ঐ অনুষ্ঠানে তিনি তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরে বলেন, তার এ অভিমতকে দেশের অধিকাংশ মানুষ (প্রথম আলোর জরিপ মোতাবেক ৭৩ শতাংশ) একে সমর্থন করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি চুয়াডাঙ্গার একশতভাগ মানুষ ক্রসফায়ারকে সমর্থন জানানোর কথাও উল্লেখ করেন। অর্থাৎ এটা পরিষ্কার যে, ক্রসফায়ার কিংবা এনকাউন্টারের মত যেসব বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে তা সরকারের গোচরেই হচ্ছে। একই রকমভাবে এটা শুধু বর্তমান সরকারই নয়, অতীতের সরকারও করেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে একটি শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে কেন? এর উত্তরও বিবিসি সংলাপের ঐ অনুষ্ঠানে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। আইনের মাধ্যমে, বিচারের মাধ্যমে যখন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ করা যাচ্ছে না তখন বাধ্য হয়েই সরকারকে তা করতে হচ্ছে। কথা হলো, সন্ত্রাস নির্মূলের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে সন্ত্রাস আদৌ বন্ধ হবে কী?
এ প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেওয়ার আগে কিছু বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করার প্রয়োজন আছে। আইনের ভাষায় কোন অপরাধীকে হাতে নাতে ধরতে পারলেও তার শাস্তি প্রদানের অধিকার কারোরই নেই, হোক সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা রাষ্ট্রের অন্যকোন সংস্থা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হচ্ছে অপরাধীকে গ্রেফতার করে আদালতের কাছে সোপর্দ করা। আদালত তাকে আইনের ভিত্তিতে দোষের পরিমাণ অনুযায়ী যথাযথ শাস্তি প্রদান করবে এবং একমাত্র সেটাই বৈধ। সাংবিধানিকভাবে এর বাইরে শাস্তি দেওয়ার অধিকার কারোরই নেই। এমতবস্থায় আদালত বা বিচারব্যবস্থা যদি অপরাধ দমন বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অক্ষম হয় তবে সেটা বিচারব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের ব্যর্থতা বলে গণ্য হবে। আদালত বা বিচারব্যবস্থার অস্তিত্ব থাকা অবস্থায় যে কোন যুক্তি বা পরিস্থিতেই অন্য কারো বিচার করার এখতিয়ার নেই। এখন অধিকাংশ মানুষ যদি আদালতের রায়ের বাইরে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে তবে বুঝতে হবে বিচারব্যবস্থার উপর তাদের আস্থা নেই। সেই যুক্তিতে আদালতের উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তাও থাকে না। কেননা একই সাথে কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত প্রদান করতে দুইটি সার্বভৌম শক্তির উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য নয়। সেটা হলে দ্বৈত-শাসনব্যবস্থার জন্ম নেবে। ফলে একের সাথে অন্যের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে।
ক্রসফায়ার বা যে কোন ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করলে যারা এ কাজের সাথে জড়িত থাকবে তারা নিজেদেরকে জবাবদিহিতার উর্ধে ভাবতে শুরু করবে। এসব কাজ করে যখন তারা পার পেয়ে যাবে তখন তারা দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। অন্যদিকে যারা নিজেদেরকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বলে মনে করবে তারাও নিজেদেরকে বাঁচাবার জন্য বেপরোয়া হয়ে যাবে। জন্ম নেবে আইন না মানার একটি সংস্কৃতি। আর আইন না মানার সংস্কৃতি একটি দেশ বা জাতির জন্য ক্যান্সারের ন্যায়। মানবদেহে ক্যান্সার একবার বাসা বাধলে যেমন তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, তেমনি রাষ্ট্রকেও এই সংস্কৃতি কুরে কুরে খেয়ে ফেলবে। এর শুরুটা সাময়িকভাবে খুবই কার্যকরী বলে বীতশ্রদ্ধ সাধারণ মানুষের কাছে ভাল লাগতেই পারে। কিন্তু এটি স্থায়ী কোন সমাধান নয়। আমাদরকে মনে রাখতে হবে মানুষকে শান্তি দিতে ব্যর্থ হওয়া এই সমাজব্যবস্থাই সন্ত্রাসী তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। এদের অধিকাংশই কারো না কারো হয়ে কাজ করে। তাদেরকে এভাবে হত্যা করলেও এদের জন্মদাতারা ঠিকই ক্ষমতার জোরে সুরক্ষা পেয়ে যাবে। আবার যারা এভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হবে তাদের স্বজনগণ কখনোই এই ব্যবস্থাকে সমর্থন করবে না। আজীবন তারা বে-আইনীভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন বলেই মনে করবেন। অন্যদিকে নিজেদেরকে অপ্রতিরোধ্য মনে করা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যগণ এক ধরনের রক্তপিপাসু প্রাণীতে পরিণত হবেন। আগে যেখানে ধাওয়া দিলেই কাজ হতো সেখানে তারা গুলি ব্যবহার করা শুরু করবে। রাষ্ট্র পরিণত হবে পুলিশী রাষ্ট্রে। বিচারব্যবস্থার ব্যর্থতার পেছনে যে রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তাদেরকে ব্যবহার করা শুরু করবে। এবং এটা করার অভিযোগ সব সরকারের বিরুদ্ধেই ছিল এবং আছে। কারণ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নাম করে ধরে নেওয়া অনেক মানুষই এখন আর ঘরে ফিরছে না। নিখোঁজ হওয়ার কয়েকদিন পরেই পাওয়া যাচ্ছে গুলিবিদ্ধ লাশ। রাষ্ট্রে যখন এভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটতে থাকবে তখন যার যার আত্মরক্ষার ভার তার নিজের হাতেই তুলে নিতে হবে। এমতবস্থায় যার যার সুরক্ষাই হবে তার আইন। একটি রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য এর চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা আর কী হতে পারে?
সুতরাং বিচার বহির্ভূত হত্যা নয়, সুন্দর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে বিচারব্যবস্থা অর্থাৎ আদালতকে শক্তিশালী করে অপরাধীদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে অথবা সমাজব্যবস্থায় সার্বিক পরিবর্তন এনে মানুষকে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
২৫ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:২৪
উড়োজাহাজ বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:২০
মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্ বলেছেন: সহমত! সুন্দরভাবে আপনার যুক্তি তুলে ধরেছেন! যদিও ক্রস-ফায়ারে বদমাস গুলো মরছে ভেবে খুশি হচ্ছিলাম, কিন্তু আপনার লেখা পড়ে বুঝতে পারছি এর সুদূর প্রসারী ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে। ধন্যবাদ এই চমৎকার সুচিন্তিত লেখার জন্য!
৩| ২৫ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:১৩
টয়ম্যান বলেছেন: সহমত আপনার লেখার সাথে
২৫ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:১৭
উড়োজাহাজ বলেছেন: ধন্যবাদ টয়ম্যান।
৪| ২৫ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:২৩
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: কি অবস্থা হয়ে গেছে আমাদের, স্বাভাবিক মৃত্যুর জন্যেও দাবি জানাতে হয়!
ভাল লিখেছেন।
২৬ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৫২
উড়োজাহাজ বলেছেন: আরো অনেক কিছুই করতে হবে বলে মনে হচ্ছে। পাপতো আর কম জমেনি! এখন শোনা যাচ্ছে গাড়ি নিয়ে সড়কে গেলে টোল দিতে হবে। কয়দিন পর সরকারি রাস্তায় হাটতে গেলে টোল দিতে হবে, বাজারে ঢুকতে গেলে টোল দিতে হবে, হাসতে-কাদতে টোল দিতে হবে (অবশ্য গালের টোল নহে!)। দাবি করে কিছুই পাবেন না। আমরা যে উত্তরাধুনিক সভ্যতার নাগরিক!
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:২০
মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্ বলেছেন: সহমত! সুন্দরভাবে আপনার যুক্তি তুলে ধরেছেন! যদিও ক্রস-ফায়ারে বদমাস গুলো মরছে ভেবে খুশি হচ্ছিলাম, কিন্তু আপনার লেখা পড়ে বুঝতে পারছি এর সুদূর প্রসারী ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে। ধন্যবাদ এই চমৎকার সুচিন্তিত লেখার জন্য!