নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক কি শত্র“তার?

২৭ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০৮

শিক্ষকগণ হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। একটি জাতির উন্নতি ও অগ্রগতির পেছনে শিক্ষকদের বিরাট অবদান। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ সে ভিত্তিটা রচনা করে দেন। সুতরাং দুনিয়ার সকল বড় মানুষই তাদের প্রথম জীবনের শিক্ষকদের কাছে ঋণী থাকেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। পরিণত বয়সে গিয়েও শিক্ষকের পায়ের ধুলো মাথায় নেন। কিন্তু বর্তমানে সামাজিক পরিস্থিতি এমনটাই হয়েছে যে সে কৃতজ্ঞতাবোধ, শিক্ষকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন একেবারেই হারিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রায়শঃই বড় বড় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন দাবি আদায়ের নামে শিক্ষকদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতেও দেখা যায়। অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি, হুমকি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা, ক্লাস বর্জন তো স্বাভাবিক ঘটনা। সমাজব্যবস্থার এমন অধঃপতন কেন হয়েছে এবং এর পেছনে ছাত্ররা দায়ী নাকি শিক্ষক দায়ী তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।



অথচ এক সময় সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা ছিল সবার উপরে। ছাত্রদেরকে মানুষ করতে শিক্ষকগণ অনেক কঠোরতা করতেন কিন্তু অভিভাবগণ তাতে কোন ধরনের আপত্তি করেছেন বলে জানা যায় না। তারা বুঝতেন যে, তাদের সন্তানের মঙ্গলের জন্যই শিক্ষকদের এই আপাত কঠোরতা। আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাজী কাদের নেওয়াজের শিক্ষকের মর্যাদা কবিতাটি পাঠ করেছি। মুঘল বাদশাহ আলমগীর তার পুত্রকে একজন শিক্ষকের কাছে পড়াতে দিয়েছিলেন। একদিন তিনি খোঁজ নিতে গিয়ে দেখেন শাহজাদা পাত্র থেকে পানি ঢালছেন আর শিক্ষক নিজ হাত দিয়ে পা ধুয়ে নিচ্ছেন। এই দৃশ্য দেখে বাদশাহ ঐ শিক্ষককে ডেকে পাঠান। বাদশাহ’র আদেশ পেয়ে শিক্ষকতো ভয়ে মুষড়ে গেলেন। তিনি প্রথমে ভাবলেন বাদশাহ’র সন্তানকে দিয়ে পায়ে পানি ঢালিয়ে না জানি তিনি কত বড় স্পর্ধার কাজ করে ফেলেছেন! কিন্তু পরক্ষণেই তার আত্মমর্যাদা বোধ জেগে উঠে। পরদিন তিনি মাথা উঁচু করেই বাদশাহ’র সামনে হাজির হন। কিন্তু তিনি যা ভেবে গিয়েছিলেন প্রকৃত ঘটনা তার বিপরীত। বাদশাহ শিক্ষককে তিরস্কার করে বললেন যে, আপনার কাছ থেকে আমার সন্তানতো কোন আদব-কায়দাই শিখলো না! এ কেমন শিক্ষা দিলেন যে আপনার ছাত্র আপনার পায়ে পানি ঢেলে দেবে আর আপনি আপনারই হাত দিয়ে পা পরিষ্কার করবেন? আপনি তাকে এমন শিক্ষা দিলেন না কেন যেন সে নিজেই নিজের হাত দিয়ে আপনার পা ধুয়ে দেয়? তখন শিক্ষক লজ্জিত বোধ করেন এবং শিক্ষকদের প্রতি বাদশাহ’র এত বড় সম্মান প্রদর্শনে অভিভূত হন। একারণে তিনি উচ্চকিত কণ্ঠে বাদশাহ’র প্রশংসা করেন।



কিন্তু আজ আমাদের অবস্থা কি হয়েছে? আইন করে আমরা শ্রেণিকক্ষে বেত নেওয়া বন্ধ করেছি। ছাত্ররা শিক্ষকদের সাথে বেয়াদবি করছে। নীতি-নৈতিকতা, সততা, ওয়াদা রক্ষা, মিথ্যা না বলার মত সদগুণগুলো শিখছে না। ফলে সমাজে অপরাধীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে। দেখা যাচ্ছে, যে যত বেশি শিক্ষিত সে তত অসৎ। রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে জাতীয় নেতৃত্বে পর্যন্ত যে যত উপরে উঠছে সে তত বেশি দুর্নীতিবাজ হচ্ছে, তত বেশি সে রাষ্ট্রের সম্পদ অবৈধভাবে ভোগ করছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অন্যায়, অবিচার প্রবেশ করে মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত অসৎ মানুষগুলোর কাছে সৎ মানুষগুলো ঠকছে, অপমানিত হচ্ছে।



প্রশ্ন হচ্ছে, সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থার এই ব্যর্থতার পেছনে এককভাবে ছাত্ররাই কি দায়ী? না, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাকে পণ্য বানিয়ে এবং শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের কারণে ছাত্র-শিক্ষক উভয়ের স্বাভাবিক সম্পর্কটুকু হারিয়ে গেছে। আজকের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচুর অর্থ খরচ করে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়া-লেখা করে, শিক্ষকগণও শিক্ষা দেওয়াকে অন্যান্য আর আট-দশটা পেশার ন্যায় একটি পেশা মনে করে ছাত্রদের কাছ থেকে যথা সম্ভব নানা কায়দা-কানুন করে অর্থোপার্জন করেন। ফলে উভয়ের সম্পর্ক হয়ে গেছে ক্রেতা-বিক্রেতার মত। এর পেছনে শিক্ষকদের ব্যর্থতাও কম নয়।



গত মঙ্গলবার দৈনিক সমকাল প্রকাশিত একটি খবর থেকে জানা যায়, ‘বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার সুখানপুকুর এলাকার হুয়াকুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে পিটিয়ে আহত করেছেন ওই স্কুলের শিক্ষক দম্পতি।’ প্রকাশিত খবর থেকে আরো জানা যায়, ‘এই বিদ্যালয়ের পার্শ্বস্থ আদর্শ কোচিং সেন্টারে এই বিদ্যালয়েরই ১০০ ছাত্র/ছাত্রী কোচিং নেয়। কোচিং কর্তৃপক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বিনোদনের জন্য শিক্ষা সফরের আয়োজন করে। ২৩ মার্চ দিনাজপুর জেলার স্বপ্নপুরীতে যাওয়ার জন্য তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা আগের দিন ২২ মার্চ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার কাছে ছুটির আবেদন করে। কিন্তু ছুটির আবেদন গ্রহণ করেননি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা উম্মে কুলসুম। তা সত্ত্বেও ২৩ মার্চ শিক্ষা সফরে যায় তারা। পরদিন সোমবার শিক্ষা সফরে যাওয়ার অপরাধে বিদ্যালয়ের একটি রুমে আটকে প্রধান শিক্ষিকা ও তার স্বামী একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক আসাদুল বারী ছাত্র-ছাত্রীদের বেধড়ক পেটান। এতে প্রায় অর্ধশত ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়। বিষয়টি জানতে পেরে বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে গেলে কৌশলে প্রধান শিক্ষিকা উম্মে কুলসুম ও তার স্বামী সহকারী শিক্ষক আসাদুল বারী বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যান।’



যেখানে কোমলমতি ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য শিক্ষকদের চোখ রাঙানিই যথেষ্ট ছিল সেখানে শিক্ষকগণ হাতে বেত নেন, বেধড়ক পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠান। শিক্ষকদের এসব কর্মকাণ্ডে আমি শিক্ষকসুলভ সততা এবং ধৈর্যের কোন পরিচয় পাইনা। নিজেরাই যেখানে নিজেদের ক্রোধ সংবরণ করতে পারেন না, নিজেদের মেজাজ ধরে রাখতে পারেন না, সেখানে তারা ছাত্র/ছাত্রীদেরকে কি শিক্ষা দেবেন? সম্মানের পাত্র হতে গেলে নিজেদেরকে সে যোগ্যতাও প্রদর্শন করতে হয়। শুধু শিক্ষক হলেই মানুষ সম্মান করবে না, তাদের আচরণে শিক্ষণীয় কিছু থাকতেও হবে। ছাত্র শিক্ষকের প্রতিদ্বন্দ্বী নয় আবার শিক্ষকও ছাত্রের প্রতিদ্বন্দ্বী নন। সুতরাং ছাত্রদের সাথে শত্র“তার সম্পর্ক না রেখে শিক্ষার জন্য প্রাঞ্জল পরিবেশ বজায় রাখা উচিৎ। প্রয়োজনে তাদের গায়ে হাত তোলাকেও আমি ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করি যদি সেটা সীমা না ছাড়ায় কিংবা সেটা ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত না করে। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের আপত্তি তোলার মানসিকতা দূর করার দায়িত্বটুকুও শিক্ষকদেরই।



বাদশাহ আলমগীরের মত মানসিকতা অতীতে যুগ যুগ ধরে আমাদের মধ্যে ছিল। কিন্তু সেটা পরিবর্তীত হয়ে ‘বেত নিষিদ্ধ’ হওয়ার ক্ষেত্র সৃষ্টি হওয়াটা তাদেরই ব্যর্থতা। সুতরাং সকল বাঁধা বিপত্তি এড়িয়ে এই পঁচে যাওয়া সমাজ পুনর্গঠনে শিক্ষকদের এখন ভূমিকা রাখতে হবে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৩

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: শিক্ষকদের দলকানার ব্যাপারটাও কিন্তু আপনার লেখায় আশা করছিলাম। বর্তমানে এরাই প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুরবৃত্তি করে তখন ছাত্ররা কি করতে পারে??

২৯ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০০

উড়োজাহাজ বলেছেন: ভাই, শিক্ষাকে যারা পণ্য বানায় তারা কী না করতে পারে?

২| ২৮ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৮

কালীদাস বলেছেন: টিচাররা নিজেরা মারামারি করে কেন জানেন?? টিচাররা নিজেরাই নিজেদের রেসপেক্ট করতে পারে না...যারা নিজেরাই নিজেদের স্টুডেন্ট এবং কলিগ। তো এরকম একজন টিচার তার স্টুডেন্টকেই কি বা কি আদব শেখাবে?

এই জিনিষটা দিনকে দিন আরও ফল করছে বাংলাদেশে, এবং কনসিকোয়েন্টলি টিচারদের নামেও সেম কমপ্ল্যান আরও আসবে। আর যেই সোনার টুকরা একেকটা ভর্তি হচ্ছে আন্ডারগ্রাডে; দেখবেন আর কয়েকবছর পরে স্টুডেন্টরা সিমপ্লি হাত খুলে পেটাবে টিচারদের।

২৯ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০২

উড়োজাহাজ বলেছেন: পচন যখন ধরে, ক্যান্সার যখন শুরু হয় তখন সারা শরীরেই হয়। আর দেখতে চাইনা ওসব। কিন্তু কী আর করা- না দেখে উপায় নেই।

৩| ২৯ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৪২

অস্পিসাস প্রেইস বলেছেন:

"বাদশাহ আলমগীরের মত মানসিকতা অতীতে যুগ যুগ ধরে আমাদের মধ্যে ছিল। কিন্তু সেটা পরিবর্তীত হয়ে ‘বেত নিষিদ্ধ’ হওয়ার ক্ষেত্র সৃষ্টি হওয়াটা তাদেরই ব্যর্থতা। "

প্লাস +।

৪| ৩০ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৫৫

উড়োজাহাজ বলেছেন: হুম, আসলেই তাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.