নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘গুম’ যে জন্য বেশি হৃদয়বিদারক
মানুষ মাত্রই মরনশীল। যে একবার জন্ম নিয়েছে তাকে মরতেই হবে। তাই জন্মের মতই মৃত্যুটাও খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবু স্বজনের মৃত্যুতে আমরা অল্প বিস্তর কষ্ট পাই। আবার সময়ের ব্যবধানে সে কষ্ট ভুলেও যাই। অন্যদিকে রোগে ভূগে কিংবা বার্ধ্যক্যজনিত কারণে কারো মৃত্যু হলে তা আমাদেরকে তুলনামূলকভাবে কম কষ্ট দেয়। কেননা এটা তাদের কাছে সহজ মনে হয় এবং এর জন্য কোন ব্যক্তি বিশেষকে দায়ী করা যায় না। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই তা মেনে নিতেও কষ্ট কম হয়। অন্যদিকে অস্বাভাবিক মৃত্যুগুলো মানুষকে কষ্ট দেয় বেশি। কেননা সেটা মানুষ কখনো প্রত্যাশা করে না। অপ্রত্যাশিত এই মৃত্যুগুলোর মধ্যে নানা রকমের দুর্ঘটনা, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি অন্যতম। তবে অপ্রত্যাশিত মৃত্যুগুলোর মধ্যে ইদানীং একটি নতুন সংযুক্তি ঘটেছে। আর তা হচ্ছে গুম। নতুন যুক্ত হওয়া এই ব্যাপারটি আমাদের কাছে অধিক বেদনার জন্ম দিয়েছে, জন্ম দিয়েছে আতঙ্কের। এটা এই জন্য যে, কারো স্বজন যদি খুনও হয়ে যায় তবে সে জানে খুন হওয়া ব্যক্তি আর কোন দিন ফিরে আসবে না, তাকে নিজ হাতে দাফন-কাফন করে উপযুুক্ত বিচার প্রার্থনার দিকে মনোযোগী হওয়া যায়। তার ফেরার দিকে চেয়ে কাউকে থেকে অপেক্ষা করতে হয় না। তার জন্য কোন কাজও থেমে থাকে না। এমনকি সবচেয়ে প্রিয়জনও একটা নির্ধারিত সময় শেষে চোখের পানি মুছে ফেলে আবার নতুন করে স্বাভাবিক জীবন-যাপন শুরু করে। কিন্তু যে গুম হয় তার স্বজনদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণই আলাদা। কেননা সে যদি খুন হয়েও থাকে তবুও তার মৃতদেহ ফিরে না পাওয়ায় ঐ ব্যক্তির জীবিত ফিরে আসার সম্ভাবনা মন থেকে দূর করতে পারে না তার স্বজনগণ। মা হয়তো মাঝরাতে উঠোনে কারো পদধ্বনি শুনে মনে করে এই বুঝি তার ছেলে ফিরে এসেছে! এখনি হয়তো কড়া নাড়বে দুয়ারে। কিন্তু আবার যখন সব নিশ্চুপ হয়ে যায় তখন আশাহত হয়। কখনো বা সন্দেহবশত দুয়ার খুলে এদিক ওদিক তাকায়, খুঁজে ফেরে ছেলে ফিরে এল কি না! অথবা গুম হওয়া ব্যক্তিটির স্ত্রী প্রতিনিয়ত চেয়ে থাকে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটির ফিরে আসার আশায়। এই মা-ই হয়তো সন্তানের ‘পিতা কোথায়’ প্রশ্নের জবাবে তার সন্তানদেরকে প্রবোধ দিয়ে রেখেছেন ‘পিতা ফিরে আসবে’ বলে। সেই সন্তানও হয়তো মনে মনে ধরে নিয়েছে বাবা তাদের জন্য অনেক খাবার কিংবা খেলনা নিয়ে ফিরে আসছে। এই অপেক্ষাটা যত দীর্ঘ হয় ততই বাড়ে যন্ত্রনা, বাড়ে কষ্ট। এথেকে পিতার উপর সন্তানের জন্ম নিতে পারে এক অব্যক্ত অভিমানও। এই যে অপেক্ষার দীর্ঘ প্রহর, এই যে দীর্ঘ প্রতীক্ষা, এত অভিমানের মাঝে দীর্ঘ দিবস-রাত পার হয়ে যাওয়া- এ যে কত কষ্টের তা একমাত্র সেই বুঝবে যে হারিয়েছে তার স্বজনকে। আমরাও হয়তো সামান্য বুঝে নিতে পারি, যদি নিজেদেরকে সে স্থানটিতে বসিয়ে কল্পনা করি।
আমাদের দেশে আজ গুমের এক সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তা থেকে তুলে কিংবা ঘুমিয়ে থাকা মানুষকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে গুম করা হচ্ছে। তাদের কতকের লাশ হয়তো শেষ পর্যন্ত রাস্তায় বস্তা বন্দী অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে, কারোটা ভেসে উঠছে নদীর বুকে। অথবা কারোটা মিলছে না আর কখনোই। দিনে দিনে লাশ হয়ে যাওয়া কিংবা হারিয়ে যাওয়া মানুষের এই তালিকা লাফিয়ে লাফিয়ে শুধু বেড়েই চলছে। এর পেছনে কারা দায়ী তা কখনোই স্পষ্ট হচ্ছে না। তাই মানুষের মাঝে একই সাথে বাড়ছে ক্ষোভ এবং আতঙ্ক। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম সহ মোট সাত ব্যক্তিকে অপহরণের পর হত্যা করে নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভে পুড়ছে নারায়ণগঞ্জ, দেশবাসী আছে উদ্বিগ্ন অবস্থায়।
এদিকে আমাদের রাজনীতিবিদরা স্পর্শকাতর এই বিষয়টি নিয়েও রাজনীতি করে যাচ্ছেন। অপহৃত সাত জনের মধ্যে ছয়জনের লাশ যে দিন শীতলক্ষা নদী থেকে উদ্ধার করা হয় ঠিক সেদিন ভোরে ভারতের চেন্নাইয়ে একটি রেলগাড়িতে একই সাথে দুটি কামরায় বোমা বিষ্ফোরণ ঘটে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কোন তদন্ত রিপোর্টের আগেই তালিনাডু রাজ্যের ডিএমকে দলের প্রধান করুনানিধি এ হামলার জন্য সরাসরি দায়ী করেছেন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে। যে কোন অঘটন ঘটলে ভারত এবং পাকিস্তান এই দুইটি বিবদমান দেশ দু’টিতে একে অপরের প্রতি দোষ দিয়ে পার পেয়ে যাওয়া অথবা ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া একটি পুরাতন কৌশল। দু’টি দেশই এই বিষয়টি ভাল উপভোগ করে। আর একই নিয়মে আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জের ঐ দুঃখজনক ঘটনায় দায়ী করে বসেছেন বিরোধী দল বিএনপিকে। আর বিএনপিতো শুধু নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় নয়, যে কোন ঘটনায়ই সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করে বসে। এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনায় পারস্পরিক দোষারোপের সুযোগে আসলে পার পেয়ে ঘটনায় দায়ী প্রকৃত দোষী ব্যক্তিগণ। তাই বার বার তারা মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে আবির্ভূত হয় আমাদের সামনে। বেদনার অথৈ সাগরে বার বার ভাসিয়ে যায় গোটা জাতিকে। ক্ষোভের আগুনে পুড়ে ছারখার হওয়া ছাড়া আমাদের কিছুই করার থাকেনা। তাৎক্ষণিক উত্তেজনায় আমরা আমাদেরই এই গরিব দেশের সম্পদে আগুন দিয়ে, ভাঙচুর করে ক্ষতিগ্রস্ত হই। তাতে ক্ষোভের প্রশমন ব্যতীত আর কিছু হয় না। এই ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিরা রয়ে যায় আড়ালেই।
আমাদেরকে বুঝতে হবে এটা আমাদের জাতীয় সমস্যা, জাতীয় সঙ্কট। এ বিষয় নিয়ে রাজনীতি করলে বার বার পার পেয়ে যাবে ঘটনার হোতারা। বার বার ফিরে আসবে গুমের ঘটনা। ফিরে আসবে ঘরে ঘরে কান্নার রোল। এসব নির্মূল করার জন্য দরকার সব বিভেদ ব্যবধান ভুলে, কোন দল বা ব্যক্তি বিশেষকে হেনস্থা করার মানসিকতা ত্যাগ করে ঘটনার পেছনে যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হওয়া। অন্তত এমন জাতীয় সঙ্কটে রাজনীতি চলতে পারে না। যেভাবে পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপের রাজনীতি চলছে তা অব্যাহত থাকলে পার পেয়ে যাবে প্রকৃত খুনিরা। এর পরিণতি ভোগ করতে হবে সমাজের সবাইকে, সব রাজনৈতিক দলকে।
০২ রা মে, ২০১৪ রাত ১:৪৭
উড়োজাহাজ বলেছেন: ধন্যবাদ সাইলেন্স। আমরা প্রত্যেকেই সাইলেন্স হয়ে যাচ্ছি দিন দিন।
২| ০২ রা মে, ২০১৪ রাত ৩:১০
মতিউর রহমান মিঠু বলেছেন: হ্যাঁ যেখানে নিহত ব্যক্তিগনের পরিবার বারবার একজন সাংসদের নাম বলছেন সেখানে দেশের প্রধান বলছেন অন্যকথা, দুর্ভাগ্য আমাদের যে এতোবড় অবিবেচক স্বনির্বাচক প্রধানমন্ত্রী দেশ চালায়। বাহ্ বাহ্ কি চমৎকার
০২ রা মে, ২০১৪ সকাল ১০:২২
উড়োজাহাজ বলেছেন: সহমত, দুর্ভাগ্য যে আমাদের প্রতিটা সরকারই এমন এ্যামিবা প্রাণিভূক্ত হয়।
৩| ০২ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৩:১৯
মতিউর রহমান মিঠু বলেছেন: দুর্ভাগ্য আমরা বাংলাদেশ নামক রষ্ট্রে জন্ম নিয়েছি....
সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আজ আরেক ব্যবসায়ি আপহৃত হয়েছে, চমৎকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি....
০২ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৩:২৬
উড়োজাহাজ বলেছেন: আবারো?
৪| ০২ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৫
ডার্ক ম্যান বলেছেন: ভাই এখন অনলাইন বলেন আর অফলাইন বলেন, সব জায়গায় বিপদ। একদিকে ৫৭ ধারা আর অন্যদিকে গুম।
০২ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৪:০২
উড়োজাহাজ বলেছেন: ভাললাগে না।
৫| ০২ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৩
মতিউর রহমান মিঠু বলেছেন: হ্যাঁ আজ আবারো সেই নারায়নগঞ্জেই....স্বনির্বাচক প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর ঐ অপহরনকারী দল!! ২০ লাখ টকা মুক্তিপন দাবি।
বলেন ৭ আদম সন্তানের জিবনের কি দাম রইলো...এই লজ্জাহীন সরকারের লজ্জা কিভাবে আনা যায়।
৭৫ এর হারানোর ব্যাথায় উনি এখনো মঞ্চে কাঁদেন, এই স্বজন হারাদের ব্যাথাতো উনার বোঝা উচিৎ। কিন্তু আসলে উনি বাঙালীর সাথে রসিকতা করতেন, করছেন এবং আগামীতেও করবেন তাও এমন নির্মম রসিকতা...
০২ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৪:০২
উড়োজাহাজ বলেছেন: অবাক পৃথিবী, স্ট্রেইন্জ!
৬| ০৩ রা মে, ২০১৪ রাত ১২:০৮
মতিউর রহমান মিঠু বলেছেন: সত্যি 'অবাক পৃথিবী, স্ট্রেইন্জ!"
কিছুক্ষন আগে নবীনগরে জীবিত উদ্ধার হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব পারে যদি চায়, প্রমান হলো উদ্ধারকৃত সাইফুল।
৭ আদম সন্তান হয়তো জীবিত ফিরতে পারতো যদি প্রশাসন ও সরকারের কেউ কেউ চাইতো ...এটা আমার বিশ্বাস।
ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন, সচেতন হয়ে পথ চলবেন, আমরা ব্লগাররা নিরাপদ তা ভাববার কোন কারন নেই।
০৩ রা মে, ২০১৪ দুপুর ১:২৮
উড়োজাহাজ বলেছেন: যাক, আল্টিমেটামে মনে হয় কাজ হয়।
৭| ০৩ রা মে, ২০১৪ রাত ১:১৩
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: গুমের পরিজনদের কথা সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখায়। এটাই আমার মনোবেদনার মূল কারন। এই আসবে,আসছে করেই স্ত্রী,সন্তান আর পরিজনদের দিন কাটে। তারপরই হতাশার অন্ধকার। কি এক বিচিত্র দেশে বাস করছি, যেখানে বিচারতো দুরের কথা কথা বললেও বিপদ!!
০৩ রা মে, ২০১৪ দুপুর ১:২৭
উড়োজাহাজ বলেছেন: তবুওতো আপনি বিদেশে মনে হয় ভালোই আছেন। আমরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে আছি।
৮| ০৩ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৪:২১
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ঠিক কথাই বলেছেন।। কিন্তু আমি ছাড়া আর সবাইতো দেশেই আছে-তাই না??
০৫ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:০২
উড়োজাহাজ বলেছেন: দেশের মানুষ ভাল নেই। কি যে হয়েছে!
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা মে, ২০১৪ রাত ১:০৩
সাইলেন্স বলেছেন: গুম হওয়া ব্যাক্তিদের পরিবার বছরের পর বছর প্রতীক্ষায় থাকে, হয়তো ফিরে আসবে প্রিয়জন।
ইলিয়াস আলীর কথাই ধরেন তার পরিবার এখনও আশায় বুক বেধে আছে তিনি ফিরে আসবেন।
পোস্টের প্রতিটা অক্ষরের সাথে সহমত।