নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

র‌্যাব কি ফ্রাঙ্কেস্টাইন, না ষড়যন্ত্রের শিকার?

০৬ ই মে, ২০১৪ রাত ৮:২২

এক দশকের বেশি সময় হতে চলেছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এলিট বাহিনী র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন বা র‌্যাবের। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর চৌকস সদস্যদের সমন্বয়ে বাহিনীটি গঠিত হলেও পরবর্তীতে পুলিশের অন্যান্য বাহিনী থেকেও সদস্য সংগ্রহ করে শক্তিশালী করা হয়েছে র‌্যাবকে। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র ও প্রযুক্তি। শুরুতেই আত্মপ্রত্যয়ী ও গতিশীল র‌্যাব ছিল চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের কাছে আতঙ্কসৃষ্টিকারী একটি বাহিনীর নাম। সেই সুবাদে সাধারণ মানুষ র‌্যাবকে ভাবতে শুরু করে ত্রাণকর্তার ভূমিকায়। কিন্তু জন্মের কয়েক বছরের মধ্যেই রাষ্ট্রীয় এই এলিট বাহিনীটির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হতে শুরু করে তাদের কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে। এর মধ্যে ক্রসফায়ারের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অন্যতম। রাষ্ট্রীয় এই বাহিনীটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে তারা অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরকে গ্রেফতার করে আদালতের হাতে সোপর্দ না করে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করছে। শুধু অপরাধী নয়, নিরীহ সাধারণ মানুষও তাদের শিকারে পরিণত হয়েছে অনেকবার। এর মধ্যে ব্যাপক আলোচনায় আসে র‌্যাবের গুলিতে ভোলার কলেজ ছাত্র লিমনের পা হারানো ও পরবর্তীতে তার নামে অবৈধ অস্ত্রের মিথ্যা মামলা দিয়ে হেনস্থা করার ঘটনাটি। এরকম আরো বহু ঘটনা রয়েছে যা কখনো এই রাষ্ট্রীয় বাহিনীটির প্রতিপত্তির কারণে আলোচনায় আসতে পারেনি। র‌্যাব শক্তিশালী ও রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট অন্যদিকে ভুক্তভোগীরা ঐক্যহীন ও বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তাদের হাতে আরো অধিক হেস্ত-নেস্ত হওয়ার ভয়ে নীরবে হজম করে গেছেন সেসব।

এসব ঘটনা শুধু দেশে নয়, বিদেশি অনেক সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মাধ্যমেও তাদের বিরুদ্ধে কথা উঠেছে, সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু বরাবরের মতই র‌্যাবের পক্ষ থেকে সে সব অভিযোগগুলোকে অস্বীকার করা হয়েছে। কোন একটি ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টার ঘটনা পরবর্তী তাদের দেওয়া প্রেস ব্রিফিংই সর্বত্র গৃহীত হয়েছে চূড়ান্ত সত্য হিসেবে। বিপরীত দিকে রাষ্ট্রীয় এই সুসংগঠিত বাহিনীটির দেওয়া প্রেস রিলিজকে চ্যালেঞ্জ করার মত দুঃসাহস কিংবা উপযুক্ত প্রমাণ কারো কাছেই থাকার কথা নয়। কেননা রাষ্ট্রীয় কোন সংস্থার কর্মকাণ্ডকে চ্যালেঞ্জ করার অধিকার কিংবা যোগ্যতা এই দেশের সংস্কৃতিতে গড়ে উঠেনি। কিন্তু সেসব প্রেস-রিলিজ আবার গদ বাঁধা হওয়ায় ঐ অর্থে কখনো বিশ্বাসযোগ্যতাও লাভ করেনি। তাই এক সময় ‘র‌্যাব’ আর ‘ক্রসফায়ার’ এই দু’টি শব্দ সমার্থক হয়ে উঠে। অন্যদিকে সংবাদ মাধ্যমগুলোও ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘এনকাউন্টার’ শব্দটির আগে সযতেœ ‘তথাকথিত’ শব্দটি যুক্ত সন্দেহ প্রকাশ করে সংবাদ প্রকাশ করতে থাকে। তবে তারা ইনিয়ে বিনিয়ে বা আইনের মার প্যাঁচকে মাথায় রেখে বিতর্কিত ঘটনাগুলোর জোরালো সমালোচনা করে গেছে।

অপরদিকে রাষ্ট্র এই বাহিনীটির এই কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে গেছে প্রকাশ্যভাবে। উপুর্যোপরি তাদেরকে শক্তিশালী করা হয়েছে লোকবল, আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র ও প্রযুক্তি সরবরাহ করে। র‌্যাবের দেওয়া প্রেসব্রিফিংকে মেনে নেওয়া হয়েছে বিনা আপত্তিতে, যদিও কিছু কিছু ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত রয়েছে। যখন যে সরকার এসেছে সে সরকারই তাদেরকে বিশেষ এই কাজের প্রতি ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দিয়ে রেখেছিল। কিছুদিন আগে সরকারের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার প্রয়োজনে গুটি কয়েক সন্ত্রাসীদের ক্রসফায়ারে দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন (বিসিসি সংলাপ, ৮মার্চ ২০১৪)

তার যুক্তি ছিলো, যখন অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না হয়, তখন ক্রসফায়ারের মাধ্যমে তা করা সম্ভব হচ্ছে বলে তিনি তা সমর্থন করেন এবং স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষও সমর্থন করে। অথচ তিনি খেয়াল করে দেখেননি এর মাধ্যমে আইনের শাসন বা বিচার ব্যবস্থাকে তিনি কতটুকু নিচে নামিয়ে ফেলেছেন। তার এ মনোভাব শুধু যে তার একারই, তা নয়। সরকারও অনুরূপটাই মনে করে। এই মনোভাবের বিপরীত ধারণা যদি সরকারের থাকতো, তাহলে আমরা সরকার তরফ থেকে মন্ত্রীর ঐ বক্তব্যের বিরোধিতা বা প্রতিবাদ উঠতে দেখতাম। দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে এই যে, কোন পক্ষ থেকেই এই বক্তব্যের বিরোধিতা বা প্রতিবাদ হয়নি। শুধু তাই নয়, র‌্যাবের ক্রসফায়ার যে কারো ঈশারায় হয়ে থাকে তার একটি প্রমাণ হচ্ছে- যখন খুব ঘন ঘন ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটতে থাকে তখন সংবাদ মাধ্যম ও দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ ও হৈ চৈ শুরু করে দেয়। আর তখনি হঠাৎ করে ক্রসফায়ারের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নেমেও যায়। এতে বোঝা যায় এসবের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কারো না কারো হাতে রক্ষিত আছে।বিনা বিচারে মানুষকে (হতে পারে সে অপরাধী) ক্রসফায়ারে হত্যা করলে জবাবদিহি করতে হয়না বিধায় একদিকে আদালতের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে, অন্যদিকে আইনের উর্ধ্বে উঠা শক্তিটি নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী বনে যায়। তারা বিশ্বাস করতে থাকে যে তাদেরকে অভিযুক্ত করতে তাদের উপর কোন শক্তি নেই। এটা মানব মনের একটি সাধারণ প্রতিক্রিয়া। আমরা ইতিহাসে বহু দেখেছি যে কোন একটি ভূ-খণ্ডের উপর আধিপত্য বিস্তার করে অনেক অত্যাচারী রাজা-বাদশাহ এবং হালের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় গিয়ে যা ইচ্ছে তাই করে থাকে। তারা কখনোই ভাবতে পারে না যে তারা একদিন ক্ষমতাচ্যুত হতে পারে। তাই তারা আইনের উর্ধ্বে উঠে যা ইচ্ছা তাই করে বেড়ায়। স্বাভাবিকভাবেই তারা কাউকে হিসেবে নেয় না। যে কেউ নির্বিচারে তাদের শিকারে পরিণত হয়। তাদের মাঝে জন্ম নেয় রক্ত পিপাসা ও অর্থলোভ মানসিকতা। তার প্রমাণ ইতোমধ্যেই আমাদের আলোচ্য এই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এই বাহিনীটির বহু সদস্য বহু বে-আইনী কাজ করে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছেন, চাকুরিচ্যুত হয়েছেন। এমনকি কোরবানীর ঈদ উপলক্ষ্যে গাবতলীতে গরু বিক্রি করতে আসা ব্যবসায়ীর গরু বিক্রির টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে এই র‌্যাবের বিরুদ্ধেই।

এসব ঘটনার সাথে সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডারখ্যাত সারা দেশ তোলপাড় করা ঘটনায় দায়ী বলে আঙ্গুল উঠেছে র‌্যাবের দিকে। অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা গ্রহণ করার বিনিময়ে রাষ্ট্রীয় এই এলিট বাহিনীটি সাত জনকে অপহরণ করে নিয়ে হত্যা করে লাশ নদীতে ডুবিয়ে দিয়েছে। উক্ত ঘটনায় নিহত সাত জনের মধ্যে অন্যতম আালোচিত ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের শ্বশুরের তুলে ধরা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ মাধ্যমগুলো সংবাদ প্রকাশ করলে উচ্চ আদালত স্ব-প্রণোদিত হয়ে এই ঘটনার তদন্তের জন্য সরকার, সিআইডি ও র‌্যাবকে বিভাগীয় তদন্ত করার আদেশ প্রদান করেছেন।দেখা গেছে আলোচিত এই ঘটনায় পক্ষ-বিপক্ষ এই দুটি গ্র“পেই সরকার দলীয় সমর্থক গোষ্ঠী জড়িত। এখন যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় যে এর সাথে র‌্যাবের সম্পৃক্ততা আছে তাহলে বুঝে নিতে হবে সরকারের মদদপুষ্ট, সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অধিকারী এই বাহিনীটি এখন আর সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। ক্রসফায়ারের নামে ক্রমাগত মানুষ হত্যা করতে করতে তারা বেপরোয়া হয়ে গেছে এবং মানুষ হত্যা করা তাদের কাছে ডাল-ভাততুল্য। জনগণের দেওয়া ভ্যাট-ট্যাক্সের টাকায় অস্ত্র-শস্ত্র পেয়ে এখন তারা রাষ্ট্র এবং জনগণের বিরুদ্ধে ফ্রাঙ্কেস্টাইনে পরিণত হয়েছে।আর যদি তদন্তে তারা নির্দোষ প্রমাণিতও হয়, তাহলেও আরেকটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায়- এত বড় সাংঘাতিক একটি ঘটনায় তাদের দিকে আঙ্গুল তোলা কোন সাধারণ ঘটনা নয়, এটি একটি বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের অংশ বিশেষ। কেননা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখনই নানা মহল থেকে জোরালো আওয়াজ উঠছে, ‘র‌্যাবের কোন দরকার নেই।’এখন সরকার যদি র‌্যাবের পক্ষে সাফাই গায় তাহলে সরকারকে সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। আর যদি ‘র‌্যাব দরকার নেই’ কথাকে বাস্তবায়ন করতে যায় তাহলে পুরো সংস্থাটিকেই নির্মূল করতে হবে। তাহলে কি র‌্যাবকে নির্মূল করার জন্য কোন মহল এসব ঘটনা ঘটিয়ে র‌্যাবকে বিতর্কিত করে তুলছে? যদি তাই হয় তবে এর পেছনে কোন শক্তি বা কারা কারা জড়িত তা পরিষ্কার করার দায়িত্বও সরকারের উপরেই বর্তায়। কেননা এ ঘটনার সুষ্ঠু ও সঠিক তদন্ত না করলে এটি অদূর ভবিষ্যতে আরো বড় কোন ঘটনার জন্ম দিতে পারে।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:০৩

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা নিলয় বলেছেন: ভালো লাগলো

০৬ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:১১

উড়োজাহাজ বলেছেন: ভাল লাগলো শুনে আমারও ভাল লাগলো।

২| ০৭ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:২৩

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: এটাকে নির্মূল করা হোক এটা আমিও ব্যক্তিগত ভাবে চাই না। আর এটাও আমাদের বুঝতে হবে যে,এটা কোন ফেরেস্তাদের সংগঠন না। সব ঝুড়িতেই দু/একটা পঁচা আপেল থাকে। তাই না??

০৭ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:৪৮

উড়োজাহাজ বলেছেন: নির্মূল যদি করাও হয় তবে কাকে আনা হবে- সেটা আমার প্রশ্ন। কারণ ঘুরে ফিরে এই মানুষগুলোই আসবে। আমি চাই মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধি হোক। না হলে মানুষ পরিবর্তন করে কোন লাভ নেই।

৩| ০৭ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:৫৬

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ঠিক।। মন-মানসিকতার পরিবর্তন না এলে কোন কিছুতেই কিছু হবে না।।আর সেটার ব্যাপারে আমার প্রচুর সন্দেহ। কমতো দেখলাম না স্বাধীনতার পর থেকে।।

০৭ ই মে, ২০১৪ রাত ২:১৫

উড়োজাহাজ বলেছেন: সব কিছুর একটা শেষ আছে। ঘড়ির কাটার মত সময়ও আবর্তিত হয়। পাপ যখন পূর্ণতা পায় তখন তার পতনও শুরু হয়। শুরু হয় নতুন যুগের। আমি এই বিশ্বাসটি রাখি। আধারের পেছনে আলোর অস্তিত্বে আমি বিশ্বাসী।

৪| ০৭ ই মে, ২০১৪ ভোর ৪:০৫

উপপাদ্য বলেছেন: র‌্যাব ঠিকই আছে। যারা ব্যাবহার করছে তারাই হচ্ছে খারাপ। এখন দেখেন আওয়ামী ইন্ডিলীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন মায়ার মেয়ের জামাই হচ্ছে তারেক যে কিনা টাকার জন্য অবাধে খুন খারাবী করছে। এটাতো হাসিনা, তার বাবা মুজিব শেখ, বাকশাল, মায়া, মায়ার ছেলে দিপু এদের পুরানা অভ্যাস। এখন এরা যদি একটি সুসংগঠিত বাহিনীকে ধংস্স করে তাহলে কিইবা করার আছে।

মজার ব্যাপার বলি এই যে অসৎ কর্মের সংগে যারা জড়িত এরা সবাই একদিন পালিয়ে যাবে। নিবেদিত ইন্ডিলীগ কর্মীরা জনসাধারনের কিল গুতা খাবে। আর ধিক্কার বইয়ে বেড়াবে সেদিন বেশী দূরে নয়।

০৭ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:১৬

উড়োজাহাজ বলেছেন: তবু কিছু একটা হোক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.