নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রুফায়দাহ পন্নী- ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক দেশেরপত্র
দৈনিক আমাদের সময়ের গতকালের সংখ্যার সম্পাদকীয় পড়ে পত্রিকার সম্পাদককে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারছি না। ‘বোকো হারামের নিন্দনীয় কাজ/দুই শতাধিক কিশোরী উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে’ শিরোনামে গতকালের সম্পাদকীয়তে তিনি ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলোর গোঁড়ামি ও অদূরদর্শীতা এবং একে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে সাম্রাজ্যবাদীদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু বক্তব্য দিয়েছেন যেগুলো পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বর্তমান সুশীল সমাজের অনেকেই অস্বীকার করেন। সম্পাদকীয়টি আফ্রিকান দেশ নাইজেরিয়ায় বোকো হারাম নামক একটি ইসলামী জঙ্গি সংগঠন কর্তৃক ‘ইংরেজি শিক্ষার অপরাধে’ দুই শতাধিক স্কুলছাত্রী অপহরণের প্রেক্ষাপটে লেখা। সম্পাদকীয়টির শুরুর দিকেই লেখক বলেছেন, “জানা যাচ্ছে, দুই শতাধিক কিশোরীকে উদ্ধারে সামরিক অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে আমেরিকা। এই মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেও কীভাবে সাম্রাজ্যবাদ সুচতুরভাবে তার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে, তা কেবল দেখার বিষয় নয়- এ থেকে বিশ্ব আর্থ-সামাজিক গতি-প্রকৃতি বা দেশি বাংলায় ‘ভাও’ বোঝার চেষ্টা করা খুবই প্রয়োজন। পাশাপাশি দেখতে হবে উগ্রপন্থী মাথা-গরম মুসলিম শক্তিগুলো কীভাবে খাল কেটে কুমির নিয়ে আনে।” তিনি বোকো হারামের এই অপকর্মকে হারাম অর্থাৎ ইসলামের দৃষ্টিতে অবৈধ ও জঙ্গিগোষ্ঠীটিকে ‘উগ্রপন্থী বোকা’, ‘মাথা মোটা’ ইত্যাদি বলে মন্তব্য করেছেন। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের `Divide and Rule’ নীতির উল্লেখ করে তিনি লিখেন, “সাম্রাজ্যবাদের শোষণনীতির মূল শিক্ষা হল- স্থানীয় অধিবাসীদের ভাগ কর আর তাদের বিবাদে জড়িয়ে রেখে কড়া শাসন চালিয়ে লুণ্ঠন করে যাও।
এটা খুব সফল হয়েছে আফ্রিকায়।” আফ্রিকা-এশিয়া-লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর স্বাধীনতাপরবর্তী রাজনৈতিক সংকটের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর রাজনীতি দিনে-দিনে কেবল ক্ষমতা ভোগের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।… তার সুযোগ নিচ্ছে পুরনো প্রভুরা। তারা এখনও পুরনো উপনিবেশের সম্পদের মধু আহরণেই ব্যস্ত রয়েছে।” বহু গোত্রে বিভক্ত আফ্রিকায় পশ্চিমারা কিভাবে সাম্প্রদায়িক বিভক্তিকে জিইয়ে রেখে তার ফায়দা লুটছে তা তিনি তুলে ধরেছেন এবং কিছু ঐতিহাসিক ঘটনাও উল্লেখ করেছেন। একেবারে শেষ দিকে তিনি লিখেছেন, “গণতন্ত্র, মানবাধিকার বা আইনের শাসনের জপ চালিয়ে যাচ্ছে পুঁজিবাদী মুরব্বিরা। কিন্তু এ তিন নিশ্চিত করতে হলে প্রথম দরকার সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা। সে কাজে আবার এরাই মূল বাধা। তলে তলে বিভক্তির কাজ তারাই চালিয়ে যায়। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর নিজেদের স্বার্থেই সামাজিক বিভেদ ও বিবাদ কাটিয়ে ওঠা উচিত। যতদিন এ দেশগুলোয় এ ধরনের বিজ্ঞ দূরদর্শী নেতার আবির্ভাব হবে না, ততদিন ভোগান্তিও কাটবে না।” জনাব আবু হাসান শাহরিয়ার, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। আপনাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দেওয়ার কারণ হচ্ছে, এই লেখায় আপনি এমন কিছু কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লেখ করেছেন যেগুলোকে অনেকেই পাশ কাটিয়ে চলতে চান। অথচ এগুলো এমন সত্য যা পাশ কাটিয়ে বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোন উপায় নেই। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আন্দোলন হেযবুত তওহীদ গত উনিশ বছর ধরে এবং বর্তমানে এর মুখপত্র হিসেবে দৈনিক দেশেরপত্র ঠিক এই বিষয়টিই মানুষের সামনে তুলে ধরছে। আমরা বরাবরই বলে এসেছি যে, উগ্রপন্থী সংগঠনগুলো যে আদর্শে বিশ্বাসী তা কোনভাবেই ‘ইসলাম’ নয়। ইসলাম এ ধরনের উগ্রপন্থাকে কখনোই স্বীকৃতি দেয় না। বরং তারা ইসলামের নামে যা করছে তা একদিকে যেমন মানুষের কাছে পুরো ইসলামকেই একটি আতঙ্কের বিষয়ে পরিণত করেছে, তেমনি সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।
গত শতাব্দীর শেষ দিকে এবং বর্তমান শতাব্দীর শুরুতেই অনেকবার এটি প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ করে এই সংগঠনগুলোর অনেকগুলোই যখন পশ্চিমাদের হাতে গড়া এবং তাদের অস্ত্রে পুষ্ট তখন ইসলামের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। আল-কায়েদার মত সংগঠন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। দ্বিতীয় যে বিষয়টি ওঠে এসেছে, তা হচ্ছে পাশ্চাত্যের “Divide and Rule” নীতি। এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা অধিকৃত দেশগুলোকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাহ্যিক স্বাধীনতা দিয়ে যাওয়ার সময় তারা এখানে ‘গণতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থা’র নামে অনৈক্যের একটি বীজ বপন করে দিয়ে যায়। উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতাপ্রাপ্ত এই ভূÑখণ্ডের মানুষগুলো যেন কিছুতেই ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে। বরং তারা যেন সারাক্ষণ নিজেদের মধ্যে কামড়া-কামড়িতে লিপ্ত থাকে। বাস্তবেও পরিস্থিতি ঠিক তাই হয়েছে। জাতিগুলোর অভ্যন্তরীণ এই বিবাদের সুযোগে তারা এখনো ‘পরোক্ষ প্রভু’র সুবিধা আদায় করে যাচ্ছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন ইত্যাদি সব ফাঁকা বুলি। শাসনক্ষতা ছাড়ার সময়ই জানে গণতন্ত্র কখনোই নব্য স্বাধীন এই জাতিগুলোর মধ্যে মানবাধিকার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে পারবে না। বরং দিনকে দিন এখানকার পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলবে। তারা চায়ও না এখানে স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকুক। কারণ স্থিতিশীল রাষ্ট্রে তাদের মাতব্বরি করার কোন অবকাশ থাকবে না। দৈনিক দেশেরপত্রের উদ্যোগে সারাদেশব্যাপী আমরা যে আলোচনা সভা, সেমিনার, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী ইত্যাদি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি সেগুলোতে মূল আলোচ্য বিষয়ই হচ্ছে এই ধর্মব্যবসা, ধর্ম নিয়ে অপ-রাজনীতি, উগ্র মৌলবাদ, সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসন, বিভক্তিকরণ নীতি ইত্যাদি নানা সংকট এবং তা থেকে উত্তরণের উপায়। আমরা মনে করি বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় জাতীয় ঐক্য। আমাদের সময় পত্রিকার সম্পাদকও ঠিক এই কথাটিই বলেছেন। আমরা মনে করি, সমাজের যারা শুভাকাঙ্খী তাদের প্রত্যেকের এই বিষয়গুলো উপলব্ধি ও স্বীকার করা উচিত। কারণ আগেই বলে এসেছি, একে অস্বীকার করে বা পাশ কাটিয়ে সমস্যার সমাধান আদৌ সম্ভব নয়।
সূত্র।
©somewhere in net ltd.