নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল কল-কব্জায় এক ধরনের পঁচন দেখা দিয়েছে। এটা আমাদের দেশের ক্ষেত্রে যেমন সত্য তেমনি সত্য অপরাপর দেশগুলোর ক্ষেত্রেও। সর্বত্র একটা অস্থিরতা ও ভাঙ্গনের চিত্র আজ পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রতিদিনের সংবাদপত্র, টেলিভিশন কিংবা ইন্টারনেটের খবরে এই চিত্রটিই আমাদের সামনে ফুটে উঠছে। দেশে দেশে আজ শত্র“তা, সীমানা নিয়ে সংঘাত, যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, স্বাধীনতার নামে লড়াই। আবার দেশের অভ্যন্তরে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল ও নিজস্ব দলীয় কোন্দলে চলে খুনো-খুনি। অনায়াসে দোষ চাপিয়ে দেওয়া হয় প্রতিপক্ষের ঘাড়ে। এসবের ফলস্বরূপ ঘটছে অসংখ্য আদম সন্তানের প্রাণহানি, দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা। ব্যক্তিগতভাবে ভাইয়ে ভাইয়ে শত্র“তা, সামান্য ক্ষেতের আইল নিয়ে মারামারি, খুনো-খুনি এখানকার নিত্য দিনের চিত্র। লুটপাট, চুরি, ছিনতাই, অন্যের সম্পত্তি দখল ইত্যাদি নিয়মিত ব্যাপার। বড়দের সম্মান করা, মান্য করার মত ইত্যাদি শিষ্টাচারগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। মানবদেহে পঁচন প্রক্রিয়া শুরু হলে যেমন তা মানুষের মৃত্যু ডেকে আনে, তাকে আর কোন ওষুধ দিয়েই যেমন আরোগ্য করা যায় না, তেমনি কি পৃথিবীবাসীর জন্যও কি এই সর্বগ্রাসী পঁচন প্রক্রিয়া মৃত্যু ডেকে আনবে? প্রশ্নটা অত্যন্ত নেতিবাচক এবং হতাশাজনক হলেও যুক্তি কিন্তু একেই সমর্থন করে।
একথা অনস্বীকার্য যে, প্রচলিত সভ্যতা মানুষকে যান্ত্রিক উন্নতি এবং প্রগতিতে একদিক দিয়ে যেমন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে চূড়ান্ত অবস্থানে, ঠিক একই তালে মানুষকে পৌঁছে দিচ্ছে অধঃপতনের নিুসীমায়। মানুষকে ক্রমশ করে তুলছে হৃদয়হীন রোবটের মত। ফলে ব্যক্তি যেমন হয়ে উঠছে আত্মস্বার্থকেন্দ্রীক তেমনি জাতি হয়ে উঠছে প্রবলভাবে জাতীয় স্বার্থের প্রতি অন্ধ। পৃথিবীর বুকে কল্পিত সীমানা দিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে মানুষকে। ক্ষুদ্র ভূ-খণ্ডে সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ ও ভূমির মধ্যেই তারা গাদা-গাদি করে মরছে, আর অন্যদিকে বিশাল ভূÑখণ্ডের অঢেল সম্পদ ভোগ করছে অল্প সংখ্যক মানুষ। সেই সাথে তাদেরকে উজ্জীবিত করা হচ্ছে জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনায়। সেনাবাহিনী গড়ে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে মারণাস্ত্র এবং একই সাথে তাদেরকে প্রতিনিয়ত প্রতিবেশী দেশের বিরোধিতায় শানিত করা হচ্ছে। এই সভ্যতা মুখে বলছে চিন্তার স্বাধীনতার কথা, বাক স্বাধীনতার কথা, অথচ তাদের হুকুম খেলাফ করলেই আরোপ করা হচ্ছে অবরোধ, নিষেধাজ্ঞা। এই যে মানুষকে এভাবে ক্রমান্বয়ে বিবেক-বোধহীন স্বার্থান্ধ প্রাণীতে রূপান্তরিত করা হচ্ছে এবং একই সাথে যান্ত্রিক প্রগতি যুক্ত করে তাদেরকে ক্ষেপাটে ও পাগলা ষাঁড়ের মত বানানো হচ্ছে, তাতে চূড়ান্ত ক্ষতিটা কার হচ্ছে? চূড়ান্ত ক্ষতিটা কিন্তু হচ্ছে মানব সভ্যতারই।
এ কথার সত্যতা খোঁজার জন্য খুব বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই। আমাদের দেশের কথাই চিন্তা করা যাক। বিচ্ছিন্নভাবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাবো প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি সেক্টরে আজ অনিয়ম ও দুর্নীতি বাসা বেধে আছে। সরকারি কর্মচারীরা নাগরিককে তার যথাযথ সেবা দেয় না- ঘুষ চায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা বিধান করার কথা, অথচ তারাই হয়ে উঠছে তাদের ঘুম হারাম করার প্রধান উপাদান। ঘুমন্ত মানুষকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়, অপহরণ করে নিয়ে খুন করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, নির্মমভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়, অথবা ফাঁসিয়ে দেওয়া হয় মিথ্যা মামলায়। আবার এসব অজুহাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করেনা সাধারণ নাগরিকগণও, অথচ তাদের কাছে নিরাপত্তা দাবি করা হয় শতভাগ। বিচার চেয়ে আদালতের বারান্দায় ঘুরে ঘুরে বিচারপ্রার্থীর সুখতলা ক্ষয় হয়ে যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যথাযথ বিচার পাওয়া যায় না। আবার টেবিলে টেবিলে পয়সা খরচ করে, ঘুষ দিয়ে বছরের পর বছর মামলা চালিয়ে যাওবা বিচার পাওয়া যায়, কিন্তু বিচারপ্রার্থী তার সুফল ভোগ করতে পারে না। কারণ, কথায় আছে বিচারে দীর্ঘসূত্রীতা বিচার না পাওয়ারই নামান্তর।
মানুষ কোথায় যাবে, কী খাবে তাও চিন্তার বিষয়। খাদ্যে ভেজাল, শিক্ষায় ভেজাল, ধর্ম-কর্মে ভেজাল, প্রগতিশীলতায় ভেজাল, আচরণে ভেজাল, ওয়াদা রক্ষায় ভেজাল, মাপে ভেজাল, ভেজালের স্বর্গরাজ্য সর্বত্র । আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও নেই শৃঙ্খলা। ‘শক্তি যার, ক্ষমতা তার’ এই নীতির উপর ভিত্তি করে সারা পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্ব মোড়লগণ। জাতিসংঘ, আইএমএফ এর মত সংস্থাগুলো সাম্রাজ্যবাদীদের হাতের ছড়ি হয়ে তাদেরই স্বার্থ রক্ষা করে চলছে। গণতন্ত্র তাদের প্রধান অস্ত্র হলেও পরসম্পদের নেশা ধরে গেলে তারা গণতন্ত্রকে বাম পাশে রেখে শিং উচিয়ে অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষ হত্যা করতে এদের বিবেকে বাঁধে না। অনিয়মই এখানকার নিয়মে পরিণত হয়েছে। মিথ্যার দাপটে প্রতিনিয়ত এখানে সত্য গড়া-গড়ি খাচ্ছে।
এসবের প্রতিকারে কেউ কেউ যে একেবারেই চিন্তা করেন না তা নয়। কখনো কখনো উদ্যোগ নিলে কোন কোন বিষয় প্রশমিত হয় বটে, কিন্তু অন্য সমস্যাগুলো তখন মারাত্মক আকার ধারণ করে। মানব শরীরের অবস্থা এ পর্যায়ে পৌঁছলে ওষুধ প্রয়োগের কোন স্থান থাকে না। পরিণতি নিশ্চিৎ মৃত্যু। সে হিসেবে মানবজাতির আত্মিক মৃত্যু অনেক আগেই ঘটে গেছে। এখন শুধু অপেক্ষা শারীরিক মৃত্যুর। মানবজাতি জেনেশুনেই নিজেদেরকে এই নিশ্চিৎ আত্মহত্যার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এখান থেকে বাঁচার উপায় তার আত্মাকে ফিরিয়ে আনা। বস্তুতান্ত্রিক, জড় ও ভোগবাদী যান্ত্রিক সভ্যতা কি আমাদেরকে ফিরিয়ে দিতে পারবে এই প্রাণ?
০৩ রা জুন, ২০১৪ রাত ১:৩৬
উড়োজাহাজ বলেছেন: ওষুধ পাওয়া গেছে। সমস্যা হচ্ছে ডাক্তারের উপর ঈমান নেই। না থাকলেও বাধ্য হয়ে তারই দেওয়া ওষুধ খেতেই হবে।
২| ০৩ রা জুন, ২০১৪ রাত ১২:৩৩
একজন ঘূণপোকা বলেছেন:
উপর তলা থেকে ঠিক করতে হবে
০৩ রা জুন, ২০১৪ রাত ১:৩৭
উড়োজাহাজ বলেছেন: উপর তলা থেকে নয়, আরো উপর থেকে।
৩| ০৩ রা জুন, ২০১৪ ভোর ৬:৪৪
ঢাকাবাসী বলেছেন: পঁচনটা মাথা থেকে শুরু হয়! ভাল হবার সম্ভাবনা নেই বললেই হয়!
০৩ রা জুন, ২০১৪ সকাল ১১:১৭
উড়োজাহাজ বলেছেন: উপযুক্ত ডাক্তারের হাতে ধরলে, বিশেষ করে যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি ধরলে সুস্থ্য করে তোলা কোন অসম্ভব কাজ নয়।
৪| ০৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:০৯
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: এই সভ্যতা মুখে বলছে চিন্তার স্বাধীনতার কথা, বাক স্বাধীনতার কথা, অথচ তাদের হুকুম খেলাফ করলেই আরোপ করা হচ্ছে অবরোধ, নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু এটা করেও কিছু দেশকে হাত করা যায় নি-তাই না? যারা ক্ষমতায় আসে লোভ বা "ব্যাবসায়ীক স্বার্থে" তারা তো বিকিয়ে যাবেই এতে বৈচিত্রের কিছু নেই।।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা জুন, ২০১৪ রাত ১০:৩০
পংবাড়ী বলেছেন: ঔষধ পাবেন কোথায়?
এই সমস্যাগুলো জানা সমস্যা, এগুলো সমাধহান বের করা শিক্ষিত শ্রেণীর দায়িত্ব