নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা ছেয়ে গেছে পৃথিবীময়। চায়ের দোকানে, ক্যান্টিনে, খবরের কাগজে ফুটবল প্রসঙ্গে আলাপ-আলোচনা, গুরুত্ব দিয়ে সংবাদপত্রের পাতায় প্রধান শিরোনাম, টিভির পর্দায় দর্শকদের আনন্দ উচ্ছাস দেখলে মনে হয় পৃথিবীটা বুঝি স্বর্গের রূপ নিয়েছে। মনে হয় এখানে ক্ষুধা নেই, কান্না নেই, নেই কোন অভাব-অভিযোগ কিংবা না পাওয়ার সামান্যতম বেদনাও। বিশ্বকাপ ফুটবল যেন স্বর্গের আনন্দ নিয়ে এসেছে মর্তের বুকে। প্রতিবার অর্থাৎ প্রত্যেকটা বিশ্বকাপেই এমনটা হয়। কিন্তু ঘাড় ঘুরালেই আমরা অপর পিঠে দেখতে পাই পৃথিবীর আরেক নগ্নরূপ। ঠিক মাঠের বাইরেই, যেখানে টেলিভিশনের ক্যামেরাগুলোর দৃষ্টি যায় না অথবা গুরুত্ব দেয় না, সেখানে দেখা যাচ্ছে হত-দরিদ্রদেরকে ক্ষুধার্ত রেখে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অপচয় করে এই আয়োজনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে মানুষ, সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সাথে। তাদের চোখে এটা এক বিরাট প্রহসন। তাদের প্রশ্ন- যে দেশের মানুষের মধ্যে একটা বিশাল সংখ্যা আশ্রয়ের অভাবে রাস্তায় ঘুমায়, পেট পুরে দু’বেলা খেতে পায় না, অর্থের প্রয়োজনে যেখানে নারীরা তাদের অমূল্য সম্পদ সম্ভ্রম বিকায়, তাদের দেশে কেন এই অঢেল অর্থের অপচয়? সম্ভবত এ সংক্রান্ত একটি ছবি ব্রাজিলের প্রশাসন কিংবা এই সভ্যতাকেই সাংঘাতিক চপেটাঘাত করেছে। সেই ছবিটি পৃথিবীময় ছড়িয়ে গেছে- যাতে দেখা গেছে এক ক্ষুধার্ত মানুষের সামনে পরিপাটি করে প্লেটে এনে খেতে দেওয়া হয়েছে ফুটবল! ক্ষুধার্তের জন্য দরকার খাবার, ফুটবল নয়, এমনকি অন্য কোন বিনোদনও নয়। চরম বাস্তবতা হচ্ছে পেটে ক্ষুধা থাকলে মানুষের মনে সুর, কাব্য কোন কিছুই ভালো লাগেনা। এ জন্য কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’ ক্ষুধার্ত মানুষকে খাদ্য না দিয়ে ফুটবলের আনন্দ মানুষের কাছে তিক্ত মনে হবে- উক্ত ছবি থেকে এ সত্যটি উপলব্ধি করার মত জ্ঞান এদের আছে কী?
ব্রাজিল বিশ্বকাপে ব্রাজিল এবং সারা পৃথিবীবাসীর কত অর্থ অপচয় হচ্ছে তা সঠিক অঙ্কে বলা সম্ভব নয়। তবে এককভাবে ব্রাজিল অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অন্যান্য কাজে ব্যয় করছে ১১ বিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অনেকে আনন্দের পেছনে খরচকে অপচয় মানতে আপত্তি করতে পারেন। কিন্তু অপচয় মনে না করেই বা উপায়টাই বা কী? ব্রাজিল কিংবা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের যদি মানুষ সুখী হতো, যদি তাদের বেঁচে থাকার মানটা নূন্যতম পর্যায়েও থাকতো তাহলে আপত্তি করার কিছু ছিলো না। কিন্তু প্রশ্ন হলো মানুষ এমনটা কেমন করে বা কেনই করতে পারছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমরা দেখতে পাব এটা আসলে মানুষের হতাশারই একটা বহিঃপ্রকাশ।
মানুষ আজ দুনিয়ার বুকে যান্ত্রিক প্রগতি ও উন্নতিতে শিখরে পৌঁছে গেছে। এমন সফলতা মানুষের জানা ইতিহাসে আর কখনো হয়নি। তাই সে এ নিয়ে অহঙ্কারও করতে পারে। কিন্তু উল্টোদিকে তাকালে সে দেখতে পায় এই পৃথিবী, আজকের সভ্যতা মানুষের মানবিকতাকে দিন দিন নিচে নামিয়ে দিচ্ছে। স্বভাবে, আচারে-আচরণে সে পশুত্বের কাছা-কাছি চলে গেছে। এখানে যুদ্ধ-গৃহযুদ্ধ, রক্তপাত, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সবলের উপর দুর্বলের অত্যাচার, দরিদ্রের উপর ধনীর বঞ্চনা পৃথিবীকে করে তুলেছে বসবাসের অযোগ্য স্থানে। লীগ অব নেশনস, জাতিসংঘ কিংবা কোন ধরনের সংস্থাই তাদেরকে এসব থেকে মুক্তি দিতে পারছে না। একটার পর একটা ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে করতে মানুষ এখন ক্লান্ত ও হতাশ। এরই মধ্যে যদি সে কখনো মন খুলে একটু আনন্দ করার সুযোগ পায়, একটু স্বাধীনতা পায় তখন সে আনন্দে বিহ্বল ও আত্মহারা হয়ে যায়, পৈত্রিক জমি-জমা বিক্রি করে সমর্থিত দলের বিশালাকার পতাকা বানায়, রেকর্ড করে। তাদের এই অবস্থাটা আসলে বাস্তবতাকে ভুলে থাকার প্রচেষ্টারই একটা অংশমাত্র। না হলে পৃথিবীর একটা বিশাল সংখ্যার মানুষকে অভুক্ত রেখে, গৃহহীন রেখে এই উল্লাস কেন, এর অন্য আর কী ব্যাখ্যা হতে পারে?
১৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:২১
উড়োজাহাজ বলেছেন: হুম, ঠিক বলেছেন।
২| ১৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:৫৩
রাজিব বলেছেন: বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং বিশ্বের অন্তত ৫০/৬০ টি দেশে রয়েছে। চীন বিশ্বকাপে খেলছে না কিন্তু সেখানে কোটি কোটি লোক এটি নিয়ে মেতে আছে। পাশের দেশ ভারতের জনগণ ক্রিকেট ছাড়া কিছু বুঝে না। তারাও এবার মেতেছে বিশ্বকাপ ফুটবলে। আমাদের আনন্দ করার মতো খুব বেশি কিছু কি আছে। ১৫ থেকে ২৫ এ বয়সে আমরা সবাই খেলা নিয়ে অনেক বেশি মেতে উঠি, বইমেলায় যাই এটাই বয়সের ধর্ম। নেশা করার চেয়ে, সিগারেট টানার চেয়ে ফুটবল নিয়ে মেতে উঠা অনেক বেশি ভাল কাজ। মেসিকে দেখে বা সাকিবকে দেখে খেলার মাঠে ছোটা শরীর ও মন দুইয়ের জন্যই ভাল।
১৯ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৮
উড়োজাহাজ বলেছেন: আমি নাখা-ভুখা মানুষের কথা বলছি। তারা কিন্তু আপনার সাথে একমত হতে পারবে না বলেই মনে হয়।
৩| ২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ২:২৬
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: বাস্তব কথা বললেও, আমি না করলে আরেকজন করবে। আর ব্যাবসায়ীক দিক থেকে যোগাযোগ ব্যাবস্থা থেকে সামগ্রিক উন্নতিও অস্বীকার করার নয়। আমি হয়তো নিরদিষ্টভাবে কিছু বলতে পারবো না,কিন্তু এটাও অস্বীকার করার নেই।। আর আলোর পিছে অন্ধকার তো থাকবেই। কোনদেশের সরকার এটা নিয়ে ভাবে বলুন তো? সবার কাছেই "বিশেষ কিছু"করে দেখানো টাই মুখ্য-তাই যতই প্রতিবাদ হোক না কেন,এই পরিস্থিতির কোন হের-ফের হবে না।।
২৪ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:৪০
উড়োজাহাজ বলেছেন: সহমত। দেরিতে উত্তর দেবার জন্য দু:খিত। ইদানীং ব্লগে আসতে ভাল লাগে না- যদিও অনলাইনেই থাকি। ভাল থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:২৩
একজন ঘূণপোকা বলেছেন:
আমরা হুজুগে মাততেই পছন্দ করি, যুক্তির ধারধারি না