নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোমার ক্রীড়ায় আমার মরণ

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১১



ছোট বাচ্চাদেরকে অনেক সময় পশু-পাখি নিয়ে খেলতে দেখা যায়। এতে তারা প্রচুর আনন্দ পেয়ে থাকে। কিন্তু এতে খেলনায় পরিণত হওয়া ঐ প্রাণীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়। বিষয়টি বড়রা খেয়াল করলেও বাচ্চাদের অখুশি না করার মানসে তাদেরকে বাধা প্রদান থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু বেচারা ঐ প্রাণীটির কথা চিন্তা করে দেখুন এতে তার কতটা কষ্ট হয়! বাচ্চাটি কিন্তু তা বুঝতে পারে না। কারণ তা বোঝার যোগ্যতা কিংবা জ্ঞান তার নেই। বড়রা বুঝতে পারেন। আর তাই শেষ পর্যন্ত বাচ্চাদেরকে কষ্ট দিয়ে হলেও তাদের এই অমানবিক ক্রীড়াকে বাধা প্রদান করতেই হয়। অন্য প্রাণীদের প্রতি এই নিমর্মতা সম্বন্ধে কি শুধু ক্রীড়ারত অবুঝ বাচ্চারাই অজ্ঞ? আমাদের বর্তমান বিশ্ববিবেকও কি এ ব্যাপারে একেবারেই বেখয়াল নয়?



গত ১১ ই সেপ্টেম্বর পালিত হয়েছে ‘নাইন-ইলেভেন’ খ্যাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বুকে দুঃসাহসিক হামলার ত্রয়োদশ বর্ষ। এই উপলক্ষে দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা ও লেখা-লেখি হয়েছে। ২০০১ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিমান বন্দর থেকে উড্ডয়নকারী চারটি বিমান ছিনতাই করে ঊনিশজন যুবকের একটি দল যুক্তরাষ্ট্রের গর্বের প্রতীক টুইন টাওয়ারখ্যাত বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রসহ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সদর দপ্তর পেন্টাগনে আছড়ে ফেলে। দুটি বিমানের আঘাতে টুইন টাওয়ার মাটির সাথে মিশে যায়। এতে প্রায় তিন হাজারের মত সাধারণ মানুষ নিহত হয়। অপরদিকে পেন্টাগনে আছড়ে পড়া বিমানে সেখানকার স্থাপনার আংশিক ক্ষতি হয়। আর চতুর্থ বিমানটি হোয়াইট হাউজে যেতে ব্যর্থ হয়ে পেনিসেলভেনিয়ার একটি স্থানে বিধ্বস্ত হয়। এই হাজার তিনেক মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য। তবে এই হামলার আরো সাংঘাতিকতা প্রমাণিত হয়েছে এর পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায়। এই হামলা গোটা বিশ্ব পরিস্থিতিতে পাল্টে দিয়েছে। হামলার পেছনে একতরফাভাবে দায়ী করা হয়েছে সৌদি ভিন্ন মতাবলম্বী ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বাধীন আল-কায়েদাকে। এরপরের ঘটনা আমাদের সকলেরই জানা। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ নামে শুরু হওয়া এক যুদ্ধে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশকে একত্রিত করে গোটা পৃথিবী জুড়েই শুরু হয়েছে এক ভয়াবহ যুদ্ধ, যার শেষ আজও হয়নি। কবে নাগাদ এ যুদ্ধ শেষ হবে তারও কোন পূর্বাভাস নেই।



ঘটনার পেছনে কারা দায়ী এ বিষয়ে তুলে ধরা তথ্য-প্রমাণে দেখা গেছে আক্রমণকারী ঊনিশজন যুবকের মধ্যে অধিকাংশই সৌদি নাগরিক। তারা আল-কায়েদার সদস্যও ছিল। সেই থেকে প্রমাণিত হয় যে এর পেছনে আল-কায়েদা দায়ী থাকতে পারে। কিন্তু এ ঘটনার ফলে পরবর্তীতে লাভবান কারা হয়েছে অর্থাৎ সফলতা কার ঘরে উঠেছে তা খেয়াল করলে দেখা যায়, এতে চূড়ান্তভাবে ধরাশায়ী হয়েছে পৃথিবীতে বসবাসকারী দেড়শো কোটি মুসলিম স¤প্রদায়। তাদের চরিত্রে চিরতরে উগ্রবাদীতা ও সন্ত্রাসবাদীতার অভিযোগ আরোপিত হয়েছে। ফলে নিজেদের স্বাতন্ত্র বজায় রেখে ইউরোপ-আমেরিকায় বসবাস করাটা তাদের পক্ষে একপ্রকারে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দাড়ি-টুপি ও হেজাব পরিধানকারী নারী-পুরুষগণ খ্রিস্টানদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। রাস্তা-ঘাটে তাদেরকে দেখলেই থুতু নিক্ষেপ করা হত, আক্রমণ করা হত। এ জন্য তারা ঘর থেকে ভয়ে বেরই হতে পারেন নি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ফলে পুরো আফগানিস্তান তছনছ হয়েছে। বহু নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। ঘর-বাড়ি হারিয়ে তারা উদ্বাস্তু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গোটা বিশ্বেই আল-কায়েদা দমনে পরিচালিত হয়েছে এই যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ সরকাগুলোর বিরুদ্ধে সৃষ্টি হয়েছে প্রচণ্ড গণ-অসন্তোষ। সৃষ্টি হয়েছে আইএসআইএলের মত আরো একটি উগ্রবাদী ও সশস্ত্র সংগঠনের। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গোটা বিশ্ববাসীর সামনে নিজেকে একচ্ছত্র পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত করেছে। পাশাপাশি আরবদের এই বিশৃঙ্খলার সুযোগে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে সুসংহত ও নিরাপত্ত্বা লাভ করেছে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল। সবকিছু মিলিয়ে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক নাগরিকগণও মনে করেন টুইন টাওয়ার হামলার দায় এককভাবে আল-কায়েদার নয়। তারা শুধুমাত্র ব্যবহৃত হয়েছে। এমনকি এই ঘটনাকে মার্কিন প্রশাসনের ষড়যন্ত্র (পড়হংঢ়রৎধপু) বলেও মনে করেন তারা।

এবার একটু পেছনে ফেরা যাক। যুক্তরাষ্ট্র যার বিরুদ্ধে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ করছে সেই আল-কায়েদার জন্ম ও বৃদ্ধি কার হাতে হয়েছে? গত শতাব্দীর শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া আফগানিস্তানকে আক্রমণ করলে তা ঠেকাতে ভিনদেশি ওসামা বিন লাদেনকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে শক্তিশালী করেছিল খোদ যুক্তরাষ্ট্র নিজেই। এ সত্য এতটাই প্রকট ও বিতর্কহীন যে কারোরই আর এ ব্যাপারে দ্বিমত থাকার কথা নয়। এমনকি সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এই সত্যটি সেদিনও প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন।



কাল পরিক্রমায় ওসামা বিন লাদেনের সংগঠন আল-কায়েদা যখন ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে পরিণত হয়েছে তখন তাকে দমাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে যুদ্ধ শুরু করেছে তার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কারা, আক্রান্ত হয়েছে কারা, দারিদ্র ও ক্ষুধার মুখোমুখি হয়েছে কারা, বেঘোরে প্রাণ দিয়েছে কারা, উদ্বাস্তু হয়েছে কারা? এরা আফগানিস্তান ও ইরাকসহ বেশ কয়েকটি দেশের সাধারণ জনগণ।



এবারে টুইন টাওয়ার হামলার প্রথম পর্যায়ের অবসান হয়েছে। ব্যাপক অস্ত্র-শস্ত্র, সৈনিকদের প্রাণহানী ও অর্থের আহুতি দিয়ে পরিপূর্ণ বিজয় অর্জনের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী ঘরে ফেরা শুরু করে। কিন্তু আল-কায়েদার এই শূন্যস্থান পূরণ করতে এগিয়ে এসেছে আইএসআইএল যা অধুনা নাম পরিবর্তন করে ইসলামিক স্ট্যাট বা আইএস নাম ধারণ করেছে। ইরাক ও সিরিয়ার বিরাট অংশ দখল করে তারা ইসলামিক রাষ্ট্রের ঘোষণা দিয়েছে। আইএসের উত্থান কিভাবে? আইএস-এর উত্থানও যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরেই। আরব বসন্তের উত্তাল হাওয়ার জের ধরে সিরিয়ার ক্ষমতা থেকে বাশার সরকারকে উৎখাত করতে চেয়েছিল বাশার বিরোধী একটি সুন্নি গোষ্ঠী। যুক্তরাষ্ট্রসহ রাজতন্ত্রের পূজারী সৌদি আরব ও পশ্চিমা বিশ্বের অন্যান্য দেশ বাশার সরকারকে উৎখাত করতে তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করে। অতীতে আল-কায়েদার ন্যায় তাদেরকেও অস্ত্র-সস্ত্র ও অর্থ দিয়ে পরিপুষ্ট করে তুলেছে। কিন্তু তারাও আল-কায়েদারই ন্যায় ফ্রাঙ্কেস্টাইনে পরিণত হলে এবার তাদেরকে দমনে ইরাক অংশে গত একমাস যাবৎ বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যেহেতু আইএসের সীমানা শুধু ইরাকেই সীমাবদ্ধ নয়, তাদের দখলকৃত অঞ্চল সিরিয়াতেও রয়েছে, তাই যুক্তরাষ্ট্র এবার সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে সেখানেও হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। গত বুধরার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকালে) হোয়াইট হাউজ থেকে দেওয়া এক ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই ঘোষণা দিয়েছেন। ঘোষণায় তিনি বলেন, ‘সিরিয়া ও ইরাকের আইএস এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মোটেও ইতস্তত করবে না যুক্তরাষ্ট্র।’ তিনি আরো বলেন, ‘আইএসের সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবেলায় বড় পরিসরের একটি জোটের নেতৃত্ব দেবে তার দেশ।’

কিন্তু সিরিয়ার অভ্যন্তরে মার্কিন বিমান হামলাকে সিরিয়া সহজভাবে গ্রহণ করবে না। রাশিয়া ইতোমধ্যেই সিরিয়ায় মার্কিন হামলার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছে। সিরিয়া প্রসঙ্গে রাশিয়া সচরাচরই সোচ্চার। পাশাপাশি ইরানেরও এখানে স্বার্থ রয়েছে। সুতরাং ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধের মতই এই যুদ্ধও দীর্ঘ মেয়াদী হবে এবং প্রত্যক্ষ কোন ফলাফল না আসার সম্ভাবনাই প্রকট। স্বাভাবিকভাবেই এ যুদ্ধ পৃথিবীকে আরো বেশি অস্থিতিশীল করে তুলবে, বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নেবে, বহু মানুষকে উদ্বাস্তুতে পরিণত করবে। তাই এ বিষয়ে চিন্তাশীল মহল উদ্বেগাকুল হয়ে উঠেছেন।



যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এটা কোন ধরনের খেলায় মত্ত হয়েছে-এটাই এখন বিশ্ববাসীর সামনে মূখ্য জিজ্ঞাসা। তারা নিজেরাই নিজেদের স্বার্থে আল-কায়েদা আর আইএসদেরকে সৃষ্টি করবে, আবার তাদেরকেই ধ্বংস করতে গিয়ে লাখ লাখ বনী আদমকে হত্যা করবে, গৃহহারা করবে- এ কোন ধরনের খেলা? এর মধ্য দিয়ে নিশ্চয় তারা তাদের সামর্থ্য আর ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ করে আনন্দবোধ করছে। কিন্তু তাদের এ আনন্দের বিনিময়ে কত মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, বিশ্ব মানবতার কতটা অবমাননা হচ্ছে তা কি তারা খেয়াল করে দেখেছে? তারা যুক্তি দেয়, তারা নিজেরাও আক্রান্ত। কিন্তু তাদের এ যুক্তি মোটেও আমলযোগ্য নয়। কারণ, তারাই প্রথম প্রতিপক্ষকে বশে আনার জন্য আল-কায়েদা, আইএসদের সৃষ্টি করে। পরে তাদের হাতে আক্রান্ত হয়।



শিশুদের শিশুসুলভ নৃশংস ক্রীড়ায় যেমন বাধ্য হয়ে বড়দেরকে বাধা দিতে হয় তেমনি আজ যুক্তরাষ্ট্রের এই অনৈতিক যুদ্ধ ও পৈশাচিক হত্যায় বাধা দিতে হবে। কিন্তু কে বাধা দেবে এই বিরাটকায় শিশুকে? এই শিশুইতো জোর করে এখন পৃথিবীর অভিভাবকের স্থান দখল করে আছে। কিন্তু মানবতার স্বার্থে এই শিশুকে বাধা দান করা এখন বিশ্ববাসীর জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কারণ, তার ক্রীড়া এখন বাকিদের জন্য মরণ ডেকে আনছে। এ খেলা এখনই থামানো দরকার।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: এই শিশুইতো জোর করে এখন পৃথিবীর অভিভাবকের স্থান দখল করে আছে-ধ্রুবসত্য। থাকবেও আর কিছুসময়,অন্ততঃ প্যারালাল বিরোধী একটা শক্তি যে পর্যন্ত জেগে না উঠবে।। একটা ভারসাম্যের সৃষ্টি না হলে এককশক্তিটা নিজের ইচ্ছেমতই সব পরিচালনা করতে চাইবে।।
যুগে যুগে ইতিহাস এ শিক্ষাটাই দিয়ে আসছে।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.