নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ থেকে মাত্র কয়েক বছর আগেও দেশে ইন্টারনেট সেবা একটি দু®প্রাপ্য বিষয় ছিল। কিন্তু কয়েকটি মোবাইল ফোন কোম্পানি এবং ওয়াইম্যাক্স সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে ইন্টারনেট এখন প্রায় সর্বস্তরে পৌঁছে গেছে। আর দুটো পক্ষই এখন উচ্চগতির নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ করেছে, যার বদলে দুর্গম অঞ্চলে বসেও শহরের ন্যায় গতি সম্পন্ন সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সভ্যতাকে আমূল বদলে দিয়েছে বিজ্ঞানের এই অনন্য আবিষ্কারটি। কিন্তু এরও একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অর্থাৎ নেতিবাচক দিক রয়েছে। অর্থাৎ এই ইন্টারনেটকেই ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকর কাজে। প্রথমত, ইন্টারনেট ছিল অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য সাংঘাতিক ক্ষতিকর। কারণ, দেশি- বিদেশি বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে যাতে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তিরা পর্ণ সিনেমা আপ্লোড করে থাকে। একটি জরিপ থেকে জানা যায়, সাইবার জগতে যতগুলো ওয়েবসাইট রয়েছে তার মধ্যে পর্ণ সাইটের সংখ্যাই অধিক। পর্ণ সাইটগুলোতে প্রদর্শিত এসব দৃশ্য দেখে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুরা নানা ধরনের অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। সেগুলো আবার ডাউনলোড করে মোবাইল ফোনে সরবরাহ করছে একশ্রেণির মানুষ। এসবের ফলে বিশেষ করে নারীদের প্রতি ধর্ষণের মত অনৈতিক আচরণ ও উত্যক্তকরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়া ইদানীং পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হয়ে থাকে। কিছু অসচ্চরিত্রবান ব্যক্তিরা অর্থ লেনদেন করে এমন সাইটগুলো হ্যাক করে অর্থ হাতিয়ে নেয়। তবে আমাদের দেশে যেহেতু অনলাইনে অর্থ লেনদেন এখনও ঐ হারে হচ্ছে না সেহেতু এর সাথে সংশ্লিষ্ট অপরাধের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু আর্থিক লেনদেন যত বাড়ছে ততই অপরাধের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
উপরে উল্লেখিত সমস্যাগুলো অনেকটাই পুরনো। কিন্তু ইদানীং এসবের সাথে আরো কিছু বিষয় যুক্ত হয়েছে যা আমাদের সমাজ ব্যবস্থার ভিত্তিকে গুড়িয়ে দেওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। এর একটি হচ্ছে বিভিন্ন উগ্রপন্থী সম্প্রদায়ের প্রচার-প্রচারণা। এর মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, জঙ্গিবাদী আচরণ ও কার্যক্রম। অনলাইন জগতে বিশেষ একটি শ্রেণি দিনে দিনে মারাত্মকভাবে অসহনশীল হয়ে পড়ছে। এরা ভিন্নমতকে একদমই সহ্য করতে পারে না। তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এরা ব্যক্তিগত আক্রমণের আশ্রয় গ্রহণ করে। ধারাবাহিকভাবে একেরপর এক অপবাদ ও কুৎস্যা রটিয়ে এরা মানুষের জীবনকে অতীষ্ঠ করে তোলে। এসব প্রচারণার ফলে ইন্টারনেটের সাধারণ ব্যবহারকারীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। এদের একটা অংশ অকথ্য নোংরা ভাষার ব্যবহারের মাধ্যমে বিরোধী মতকে অবদমন করার চেষ্টা করে। বিশেষ করে এরা চরিত্র হননের জন্য টার্গেট করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে।
তবে ভার্চুয়াল জগতের এ সকল কর্মকাণ্ড যদি সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকতো তবে এর সাথে জড়িত ব্যক্তির চরিত্র বিনষ্ট হলেও জাতীয়ভাবে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতো না। কিন্তু বর্তমানে ভার্চুয়াল জগৎ আর বাস্তব জগতের দূরত্ব অনেকটাই কমে এসেছে। যে মানুষগুলো পরিচয় গোপন করে অনলাইন জগৎ দাপিয়ে বেড়ায় তাদের একটা অংশই রাজপথে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালায়, টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নেয়, এমনকি কখনো কখনো এদের মধ্য থেকেই দেশ পরিচালনার জন্য এমপি-মন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে থাকেন। সুতরাং তাদের ঐ ভিন্নমতের প্রতি অশ্রদ্ধা, গালাগালির স্বভাব বাস্তব জগতেও প্রভাব ফেলে। এর উত্তম নজীর সম্ভবত যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলানোর দাবিতে জমায়েত হওয়ার ঘটনা। আদালতের রায়কে পরিবর্তনের দাবিতে শাহবাগে সৃষ্ট সে আন্দোলন এতটাই প্রভাব সৃষ্টি করে যে, সে সময় সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্তা-ব্যক্তিরাও সেখানকার ঘোষিত কর্মসূচির সাথে আপস করতে বাধ্য হন। সেখান থেকে যে আগুন ছড়িয়েছে তা পরবর্তীতে পুরো দেশকে দাহ করেছে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ ও শত শত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। ওই সময়ে সৃষ্ট সংঘাতে যত সংখ্যক মানুষ রাস্তায় লড়েছে তার চাইতে বেশি লড়েছে অনলাইনে।
আবার ইদানীংকালে দেখা যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট আইএস সংকটে বাংলাদেশের তরুণরা নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলছে। অনলাইনে তারা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ করতে যাওয়ার জন্য জেহাদে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আল-কায়েদার মত উগ্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল থেকে প্রতিনিধিত্ব করছে একটা অংশ। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব কার্যক্রমকে মনিটরিং করে জড়িতদেরকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করছে। এতে একদিকে রাষ্ট্রশক্তির অপচয় হচ্ছে, সেই সাথে অদক্ষ, স্বার্থান্বেষী ও দুর্নীতিবাজ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের হাতে নিরপরাধ ব্যক্তিরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আর সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হচ্ছে জাতীয় ঐক্যের। জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধারগণ একে অন্যের প্রতি অশ্রদ্ধা, আক্রমণ ইত্যাদি ভালোভাবেই রপ্ত করছে। অথচ ঐক্য এবং পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনই হচ্ছে জাতীর টিকে থাকার মূল ভিত্তি। কিন্তু অত্যন্ত উপকারী আবিষ্কার, ইন্টারনেটের কাছ থেকে আমরা ক্ষতিটাকে গ্রহণ করছি।
এর মূল কারণগুলো কি তা এখন ভেবে দেখার সময়ে এসেছে, কেন তরুণরা সহিংস হয়ে উঠছে তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের নতুন প্রজন্ম কি কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না, নাকি তাদের কথা বলার ক্ষেত্রগুলো রুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে- তা আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হবে। তাদের কথা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার সুযোগ করে দিতে হবে। অন্যথায় বিষিয়ে ওঠা এই প্রজন্ম বিষের ঘাঁ-ই খেয়ে যাবে। জাতীর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:১৯
উড়োজাহাজ বলেছেন: বিষয়টি আমার মাথায় ছিল। আমার নিজের কাছে ইন্টারনেট কী জিনিস তা আমি নিজেই উপলব্ধি করি। তাই এর ভাল দিকটির কথা বলে শেষ করা যাবে না বলে আমি ভাল দিকটিকে এক কথায় 'অনস্বীকার্য' আখ্যা দিয়ে দিয়ে লিখেছি ইন্টারনেট এখন প্রায় সর্বস্তরে পৌঁছে গেছে। আর দুটো পক্ষই এখন উচ্চগতির নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ করেছে, যার বদলে দুর্গম অঞ্চলে বসেও শহরের ন্যায় গতি সম্পন্ন সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সভ্যতাকে আমূল বদলে দিয়েছে বিজ্ঞানের এই অনন্য আবিষ্কারটি।।
উপকারের শেষ নেই। আমার মূল লক্ষ্য ছিল নেতিবাচক দিক, অর্থাত পার্শ্বপ্রতি্ক্রিয়াটিকে তুলে ধরার দিকে। এটি আসলেই বাঙালি জাতির জন্য খুব করুণ অবস্থা ডেকে আনছে।
এইটুকু হচ্ছে আমার আরজি। তারপরেও আপনার মন্তব্যকে আমি শিরোধার্য করছি। যেটুকু ঘাটতি থেকে গেছে তা একান্তই আমার অযোগ্যতা বলেই মেনে নিচ্ছি। আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
একটা বিষয় খেয়াল করলাম, আপনি কখনো সমালোচনা করলে আগেই ভুল না বোঝার অনুরোধ করেন। আপনাকে আমি কথা দিচ্ছি- আমার মধ্যে তেমনটা নেই। তাই ভুল বোঝার কিছু নেইও। আবারো ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:০৬
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: দিনের পরই যেমন রাত আসে তেমনি নেটেরও ভাল-মন্দ দু'টো দিকই আছে। শুধু মন্দদিকটিকে দেখলে চলবে না। লেখাটি ভাল হয়েছে কিন্তু আরো ভল হতো যদি শুধু নেতিবাচক দকটি প্রধান্য না পেয়ে পাশাপাশি ইতিবাচক দিকটিও ফুটিয়ে তোলা হতো। তাহলেই লেখাটি আরো পূর্নাঙ্গ রূপ পেত।।ভুল বুঝবেন না,দয়া করে। ভেবে দেখবেন একটু।। ভাল থাকবেন।।