নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক্রমাগত বস্তুবাদী জীবনধারার কবলে পড়ে আমাদের সমাজ থেকে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙ্গে পড়ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে একক পরিবারের সংখ্যা। যেখানে বস্তুবাদের ছোয়া বেশি পড়েছে সেখানেই এর প্রভাব বেশি। পাশ্চাত্য যেহেতু অনেক আগে বস্তুবাদকে গ্রহণ করেছে সেহেতু সেখানেই এর সূচনা। সেখানকার প্রবীণরা অঢেল সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও অসহায় ও একাকীত্বের মধ্যে দুর্বিসহ অবস্থায় জীবন পার করে থাকেন। অনেকে মাসের মাসের পর মাস অন্যদের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে নির্জনে ঘরের মধ্যে মরে থাকেন। অনেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নেন। মৃত্যুর পরেও কেউ তাদের খোঁজ- খবর নেয় না। লাশ পঁচে-গলে দুর্গন্ধ বেরোনোর পরেই প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দিয়ে মরদেহের সৎকার করায়। আর যাদের স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে তারাও সেখানে দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করে। যেহেতু ইদানীং পাশ্চাত্যের জীবনধারাকে প্রাচ্যবাসীরাও নকল করছে সেহেতু এখানেও এখন যৌথ পরিবারের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে প্রবীণরা হয়ে পড়ছেন অসহায়।
অথচ আগে এই প্রবীণরাই এ অঞ্চলের যৌথ পরিবারগুলোতে সবচেয়ে বেশি সম্মান পেয়ে থাকতেন। আমৃত্যু পরিবারের কর্তৃত্বও তাদের হাতেই থাকত। তাদের আদেশ ব্যতীত পরিবারের কোন সদস্য কোন কাজ করতো না। কিন্তু আধুনিক(!) সভ্যতার ছোয়ায় সে যুগের অবসান ঘটতে চলেছে। প্রাচ্যবাসীরাও পশ্চিমা সভ্যতাকে অনুকরণ করে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে ফেলছে। বাড়ছে একক ও অণু পরিবারের সংখ্যা। ক্রমশ এরা আত্মকেন্দ্রীক মানুষে পরিণত হয়ে পড়ছে।
যৌবনে মানুষ তার সমস্ত সুখকে বিসর্জন দিয়ে সন্তানদেরকে বড় করে তোলেন। প্রবীণ বয়সে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়ায় তখন আর কাজ করতে পারেন না। স্বাভাবিকভাবেই তাদেরকে সহায়তা করার দায়ভার সন্তানদের উপরে বর্তায়। এটা তাদের অধিকারও বটে। প্রতিটি ধর্ম এবং আমাদের সামাজিক নির্দেশনাও অনুরূপ। কিন্তু সেই সামাজিকতা ও ধর্মেই আঘাত হানছে বস্তুবাদ। ফলে অসহায় হয়ে পড়ছেন আমাদের প্রবীণরা। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে তবুও সরকারিভাবে ওল্ডহোমের মত অকিঞ্চিতকর ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আমাদের এ অঞ্চলে তারও ব্যবস্থা নেই। এ কারণে অসহায় এসব প্রবীণদের অনেকে ভিক্ষার মত নিকৃষ্ট পেশা ধারণ করে জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু চলা-ফেরার ক্ষমতা ফুরিয়ে গেলে তাও সম্ভব না হলে তাদের অনেককে রাস্তাÑঘাটে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
একজন সুস্থ ও সামর্থবান ব্যক্তি গায়ে চমৎকার পোশাক পরে, গায়ে সুগন্ধি মেখে করে গটগট করে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। আর তারই চলার পথে হাত বাড়িয়ে পড়ে থাকছেন একজন বৃদ্ধ কিংবা বৃদ্ধা। তারাও নিশ্চয় কারো পিতা অথবা মাতা। সেই স্বাস্থ্যবান যুবকটি তাদের দিকে একটু তাকিয়ে দেখারও প্রয়োজন বোধ করছে না। অথচ জীবন চলার পথে ন্যায় অন্যায়ের দিকে না তাকিয়ে তারা নিজেদের সন্তানদেরকে ভাল রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মনে রাখা উচিৎ, আমরা যে কালচারের সূচনা ঘটাতে যাচ্ছি তাতে আর ক’দিন বাদে পড়ে থাকা ঐ লোকটির স্থান দখল করতে যাচ্ছি আমরা। তখন এমনি করেই আমাদের অতি আদরের সন্তানগুলোও আমাদের অসহায় অবস্থার দিকে তাকিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করবে না। আর যেহেতু এই বস্তুবাদ আমাদেরকে আরো জোরালোভাবে প্রভাবিত করে চলেছে সেহেতু আমাদের অবস্থা আরো খারাপ হবে- এমনটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। এ ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের উদাহরণতো রয়েছেই। সুতরাং এই পরিস্থিতিকে রোধ করতে হলে আমাদেরকে আমাদের প্রাচীন সামাজিক রীতি-নীতি, ধর্মবিশ্বাস ও পারিবারিক শিক্ষাকে ধরে রাখতে হবে। আর এই শিক্ষা প্রদানের দায়ভার আমাদের পিতা-মাতাদের উপরেই বর্তায়। অন্যথায় বস্তুবাদী সভ্যতা চূড়ান্তভাবে মানুষের অবমাননা না করে ছাড়বে না।
০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:২৮
উড়োজাহাজ বলেছেন: শহরে তো হয়েই গেছে প্রায়।
২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:৫৫
কসমিক- ট্রাভেলার বলেছেন:
সন্তানের কাছে মায়ের খোলা চিঠি
প্রিয় সন্তান
আমি যখন বার্ধক্যে যাব, আশা করব, তুমি আমাকে বুঝবে এবং আমার সঙ্গে আচরণে ধৈর্যশীল হবে। ধরো, আমি যদি হঠাৎ খাওয়ার প্লেট ভেঙে ফেলি অথবা টেবিলে স্যুপ ফেলে নষ্ট করি, বুঝবে আমি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছি। আশা করি, তখন তুমি চিৎকার করবে না। আর যদি উঁচু স্বরে কথা বোলো, বুঝবে তখন আমি নিজের কাছে খুব ছোট হয়ে যাই, অসহায় আর অপরাধী মনে করি নিজেকে।
যখন আমার শ্রবণশক্তি শেষ হয়ে আসছে এবং শুনতে পাচ্ছি না আমাকে তুমি ঠিক কী বলছ, তখন আমাকে ‘বধির’ বলা উচিত নয়। দয়া করে তুমি আবার বলো অথবা লিখে দেখাও।
আমি দুঃখিত বাবা। বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি, আমার পা দুর্বল হয়ে আসছে। আমি মনে মনে চাই, তোমার ধৈর্য থাকবে আমাকে দাঁড়াতে সাহায্য করতে। যেভাবে আমি তোমার পাশে ছিলাম, যখন তুমি ছোটবেলায় হাঁটতে শিখছিলে। আমার কিছু কথা শোনো, যখন আমি অসহায়ের মতো তোমাকে কিছু বলব...তোমার কাছে ভাঙা রেকর্ডের মতো লাগলেও আমার কথা শুনে বিরক্ত হোয়ো না। তোমার মনে আছে? তুমি ছোট থাকতে আমার কাছে একটা বেলুন চেয়েছিলে। সেটা না পাওয়া পর্যন্ত বারবার আমাকে সেটাই বলতে। সারাক্ষণ জিজ্ঞেস করতে, ‘কখন দেবে, কখন দেবে...।’
দয়া করে আমাকে গোসল করার জন্য জোর কোরো না। আমার শরীর দুর্বল। ঠান্ডায় বয়স্ক মানুষ খুব তাড়াতাড়ি অসুস্থ হয়ে যায়। তুমি যখন ছোট ছিলে...আমাকে তোমার পেছনে দৌড়াতে হতো। কারণ, তুমি গোসল করতে চাইতে না।
তোমার অলস সময়ে, আশা করব তুমি আমার সঙ্গে একটু সময়ের জন্য হলেও কথা বলবে। আমি সব সময় একাকিত্বে ভুগি এবং কথা বলার মানুষ পাই না। জানি তুমি ব্যস্ত থাকো কাজে অথবা আমার কথায় ও গল্পে আনন্দ পাও না তেমন, তবু আমার জন্য কিছু সময় রেখো। তোমার কি মনে পড়ে? যখন ছোট ছিলে, তখন তোমার টেডি বিয়ারের গল্প আমি শুনতাম।
যখন আমার মৃত্যু আসবে, তুমি কি আমার হাত ধরে থাকবে? যা আমাকে সাহস জোগাবে। তুমি চিন্তা কোরো না, যখন আমার সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে দেখা হবে, আমি তাঁর কানে কানে অবশ্যই বলব, তোমাকে অনুগ্রহ করতে...। কারণ, তুমি তোমার মা-বাবাকে ভালোবেসেছিলে।
ভালো থাকবে সব সময়।
২০১২ সালের কোনো একদিন প্রথম আলোয় লেখাটি ছেপেছিল।
০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:২৮
উড়োজাহাজ বলেছেন: খুবই হৃদয়স্পর্শী আকুতি।
৩| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:৫৬
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ক'দিন পর যাদুঘরে খুজতে হবে আর উইকি দেখে এর সংজ্ঞা জানতে হবে। কসমিকের পত্রটি ভাল লাগলো।।
০৩ রা অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৮
উড়োজাহাজ বলেছেন: যথার্ত বলেছেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:১৪
ঢাকাবাসী বলেছেন: আর্থ সামাজিক অবস্হা এসবের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তবে অতো দ্রত হচ্ছেনা যতটা ভাবছেন।