নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী কর্তৃক পবিত্র হজ্ব এবং মহানবী (স.) সম্বন্ধে করা অবমাননাসূচক উক্তি নিয়ে সর্বমহলে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া, বিচারকদের অভিশংসন ক্ষমতা সংসদের কাছে ন্যস্ত, নতুন স¤প্রচার নীতিমালা তৈরি এবং গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা ইস্যুতে দেশ যখন রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত তখনই হঠাৎ করে শারদীয় দুর্গাপূজা এবং ঈদুল আজহা এসে যাওয়ায় তখনকার মতো স্তিমিত হয়ে যায় বাংলাদেশের গোটা রাজনৈতিক অঙ্গন। কিন্তু প্রতিটি ইস্যুই রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক সচেতন মহল। তবে ইস্যুগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বী জোট ক্ষমতাসীন সরকারকে কতটুকু চেপে ধরতে পারবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, কৌশলগতভাবে বিরোধী জোটগুলো সরকারের অবস্থান থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তাছাড়া তাদের নিজেদের মধ্যে আছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ভাঙ্গন এবং পারস্পরিক সন্দেহ। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর সর্বশেষ আপীল রায় নিয়ে বিএনপি এবং জামায়াত নেতাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে গুমোট অবস্থা। বিএনপির তৃণমূলের ধারণা, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীকে বাঁচিয়ে দেওয়ার শর্তে জামায়াত ও সরকারের মধ্যে গোপন আঁতাত হয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি কিংবা জামায়াতের পক্ষ থেকে কেউই এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করছেন না।
দ্বিতীয় আরেকটি সম্ভাবনা রয়েছে যে, এই রায়ের মাধ্যমে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বিএনপির মধ্যে জামায়াত সম্বন্ধে সন্দেহের সৃষ্টি করে দিয়েছে। এই রাজনৈতিক চালের ফলে সৃষ্ট সন্দেহ থেকে যদি পরস্পর আলাদাও হয়ে যায় তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আর বিএনপিকে জামায়াতশূন্য করতে পারলে তখন সরকারের পক্ষে একা বিএনপি কিংবা একা জামায়াতকে মোকাবেলা অত্যন্ত সহজ হয়ে যাবে।
অবশ্য সবকিছুই এখনো পর্যন্ত ধারণাপ্রসূত। কারণ, আঁতাতের ব্যাপারটিকে কেউই স্বীকার করছেন না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর রায়ের ব্যাপারে বলা হয়েছে, এটা আদালতের সিদ্ধান্ত। সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতসহ অন্যান্য দায়িত্বশীল নেতা-নেত্রীগণ সাফ সাফ বলে দিয়েছেন জামায়াতের মত যুদ্ধাপরাধী দলের সাথে আঁতাত কোনভাবেই সম্ভব নয়। যুক্তরাজ্য সফর শেষ করে দেশে ফিরে এলে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের জন্য কাজ করে। আঁতাতের রাজনীতি করে না। জামায়াতের কাছ থেকে আওয়ামী লীগের কী পাওয়ার আছে? যাদের হাতে বিএনপি দেশের পতাকা তুলে দিয়েছিল, যুদ্ধাপরাধের জন্য তাদের আমরা গ্রেফতার করতে পেরেছি। কয়েকজনের শাস্তি হয়েছে। বিচার করলে আমিই করতে পারবো। আমার হারাবার কিছু নেই।’ অন্যদিকে আঁতাত প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মোহিত তার স্বভাব সুলভ ভাষায় একে ‘টোটালি রাবিশ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সরকারের সাথে জামায়াতের আঁতাত হচ্ছে এটা জামায়াতই ছড়াচ্ছে। এর সাথে বিএনপিও যুক্ত আছে।’ তিনি সাংবাদিকদের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, ‘যাদের ঘৃণা করি তাদের সাথে কিভাবে আঁতাত হতে পারে?’
কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘শেষ বলে কোনো কথা নেই’ বলে একটি কথা চালু আছে। এর আলোকে বলা যায় স্বার্থের প্রয়োজনে এদেশের রাজনীতিতে সবই সম্ভব। অতীতে আওয়ামী লীগ জামায়াতের সাথে মিত্রতা গড়েছিল তার নজীরও রয়েছে। কিন্তু কোনটা সম্ভব আর কোনটা অসম্ভব- এর চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই মুহূর্তে দেশের রাজনীতিতে কি হতে চলেছে।
ক্ষমতায় না থাকা এবং বিরোধী দলেও না থাকার মত দুঃখজনক (?) পরিস্থিতি হলেও তিন তিনবার ক্ষমতায় আসা, জনপ্রিয়তার দিক থেকে এগিয়ে থাকা ও সাংগঠনিক শক্তির বিবেচনায় একমাত্র বিএনপিই আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু বর্তমানে সেই দলটি নিদারুণ দুঃসময় পার করছে। পাঁচই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে পর্যন্ত তাদের শক্তির প্রমাণ মিললেও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দলটি ঝিমিয়ে পড়েছে। দলের প্রথম সারির নেতাদের প্রতি তৃণমূল কর্মীদের ক্ষোভ ক্রমেই বেড়ে চলছে। তাদের অভিযোগ দলটির প্রথম সারিটি সুবিধাবাদী ও চাটুকার নেতায় ভরে গেছে। তারা নিজেরা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত বিধায় কোন ধরনের পরিবর্তন কিংবা ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করতে নারাজ। তারা সর্বদাই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ভুল তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন। খালেদা জিয়া একজন আপসহীন নেত্রী হিসেবে বার বার আন্দোলনের সূচনা করতে চান, কিন্তু সেই আন্দোলনে প্রথম সারির নেতারা সেভাবে সাড়া দেন না। তারা চেয়ে আছেন বিদেশি কূটনীতিকরা কি করে সেই দিকে। সর্বশেষ ঈদের পরে আন্দোলন করা হবে এই কথা বলার পর দু’দুটো ঈদ পার হয়ে গেছে। পরিবেশ অনুকূলে না পেয়ে এখন স্বয়ং খালেদা জিয়াই বলছেন, দিনক্ষণ দিয়ে আন্দোলন হয় না। আমরা আন্দোলনে আছি। আন্দোলন চলছে। সময় মতো মানুষদের ডাক দেবো। দেশবাসী তখন আমাদের ডাকে সাড়া দেবে।’
এদিকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতারা বিএনপির এই অবস্থায় দলটির আন্দোলন নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেও দ্বিধা করছেন না। তাদের প্রশ্ন, যে ঈদের পর আন্দোলন হবে সেটা আসলে কোন ঈদ? কেননা ঈদতো ইতোমধ্যে পার হয়ে গেছে। তাদের মতে বিএনপির আন্দোলন করার শক্তি এবং সাহস- এর কোনটাই অবশিষ্ট নেই। এদিকে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও বলেছেন, ‘বিএনপির আন্দোলনের ক্ষমতা নেই। তারা মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য আন্দোলনের হুমকি দেয়।’
সার্বিক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে এখন পর্যন্ত বলা যায় যে, যথেষ্ট ইস্যু থাকা সত্ত্বেও বিএনপি নিজেদের দুর্বলতার কারণে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের সুবিধাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে নি এবং আগামী ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে পর্যন্ত তেমন কিছু করতে পারবে বলেও মনে হচ্ছে না। কারণ, দলটি দীর্ঘ দিন যাবৎ ক্ষমতাহীন রয়েছে এবং ক্রমাগত নানা ধরনের ঝামেলার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছে। দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপির আশার আলো তারেক রহমানও দেশে আসতে পারছেন না। এমতবস্থায় অনেকে ধারণা করছেন- এত সময় এভাবে পাড়ি দিলে শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া যিনি নিজেও শারীরিকভাবে অসুস্থ- একা দলটিকে বর্তমান অবস্থায় ধরে নাও রাখতে পারেন।
©somewhere in net ltd.