নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক সময় ফেসবুক ছিল নিছক আনন্দ- বিনোদনের ক্ষেত্র। আমি যখন আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে অনলাইনে আসি, ফেসবুকে একাউন্ট খুলি তখন কৌতুকের পেজগুলোকে গণহারে লাইক দিয়ে রেখেছিলাম। নিউজ ফিড জুড়ে শুধু কৌতুক আর মজার মজার গল্প। আমিতো পড়ি আর হাসতে হাসতে শেষ। আনন্দ পেতাম তাই ফেসবুককে ভাল লাগত। আর ব্লগগুলোতে সুন্দর সুন্দর ছোট গল্প, কবিতা ইত্যাদি পড়ে ভাল লাগত। অবশ্য সে সময় ব্লগগুলোতে অন্যান্য বিষয় নিয়ে ক্যাচালও চলত। কিন্তু নির্ধারিত কিছু ব্লগে না গেলে তা টের পাওয়ার কোন উপায় ছিল না। কিন্তু অতীতের সেই নির্মল বিনোদনকে আজকাল কবজা করেছে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক লেখা-লেখি এবং সেসবের প্রতিবাদে হুমকি-ধামকি আর গালাগালি। এবং এটা এখন শুধুমাত্র নির্ধারিত ব্লগুগুলোতে সীমাবদ্ধ নেই, এটা এখন সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। মূলত বাইরের জগতে স্থান না পেয়েই একশ্রেণীর ধর্মবিদ্বেষী গোষ্ঠী অনলাইনকে তাদের স্বর্গভূমি বানিয়েছে। একই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অনুভূতিতে আঘাত লাগা অতি ধার্মিক গোষ্ঠীটিরও।
ধর্মবিদ্বেষী এবং অতিধার্মিক গোষ্ঠীটি চরিত্রগত দিক দিয়ে একই পর্যায়ের এই বিষয়টি আমি আগেও বলেছি। মানসিক রোগাক্রান্ত একটি একটিপক্ষ সারাদিন (আল্লাহই জানেন, এদের ইনকাম কী) ধর্মের বিভিন্ন খণ্ডিতাংশ তুলে ধরে উল্টো-পাল্টা প্রশ্ন করে। ধর্মের সামগ্রিক দিকটি (পরিবেশ, পরিস্থিতি) এদের দৃষ্টিতে ধরে না। তাদের এই অজ্ঞতা, ব্যর্থতার ঝাল মেটায় অনলাইনে (ফেসবুকে) লিখে। এসব লিখে যদি কেউ শান্তি পায়, তবে পাক না! কিন্তু তাদেরকে শান্তিতে থাকতে দেবে না অপর একটি সমমনা উগ্রগোষ্ঠী। দোকানী যেমন দোকান খুলে বসলে কাস্টমার আসে তেমনি একশ্রেণির অতি ধার্মিকরা ঐ ধর্মবিদ্বেষীদের কাস্টমারে পরিণত হয়েছে।
দুটো শ্রেণীই চরিত্রগত দিক দিয়ে উগ্র, চরমপন্থী, হৃদয়ে মানুষের প্রতি ঘৃণা লালনকারী। এরা অন্যকে আক্রমণ করে আনন্দ পায়। এরা পরমতে বিশ্বাসী নয়, সহিষ্ণু নয়। মানুষের মধ্যে যদি সহনশীলতা না থাকে তবে সমাজে শান্তি থাকে না। যে কোন একটি পক্ষও যদি অসহিষ্ণু ও উগ্র হয়ে উঠে তাহলে শান্তির বারোটা বেজে যায়। আর এখন দুটোরই গেছে।
ধর্মবিদ্বেষী গোষ্ঠীটিকে কিছু বলে লাভ নেই। এরা কোন কিছুকে তোয়াক্কা করে না, কোন নিয়ম মানে না। অপরের বিশ্বাসে আক্রমণ করতে এদের বাধা নেই। কেননা, কারো বেধে দেওয়া মানদণ্ড এরা পায় নি। এরা প্রত্যেকেই স্বয়ম্ভু। অপরদিকে অনলাইনে থাকা (অতি) ধর্মবিশ্বাসী গোষ্ঠীটিকেও একই কাতারে গণনা করি। কারণ, অনুভূতি দেখাতে গিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ, গীবত, নোংরা প্রচারণায় এরাও কম যায়নি। এদের একটা বড় অংশ মা-বোন তুলে গালা-গালিতে অতিশয় পারঙ্গম (যদিও ধর্মবিদ্বেষীদের প্রশ্নের উত্তরে দেখাতে পারে না এসব কিতাবের/শাস্ত্রের কোন অধ্যায়ে আছে, কোন সুরায় আছে)।
কিন্তু ধর্মবিশ্বাসী গোষ্ঠীটি যেহেতু অন্তত আল্লাহ-রসুল, অবতার, মহামানবদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখে, নিজেদেরকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অধিকারী মনে করে না, সেহেতু তাদের প্রতি আমার কিছু কথা আছে। তাদের প্রতি আমার প্রথম প্রশ্ন হলো, আপনাদের এত অনুভূতি কেন? আর এত অনুভূতি থেকে লাভ কী? আপনাদের কী করার শক্তি আছে? আপনাদেরকে দেখি ধর্মবিদ্বেষীদের ফাঁসি চাইতে। কিন্তু কার কাছে চান? আপনাদের পায়ের তলায় মাটি আছে কিনা তা চিন্তা করে দেখেছেন? নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন নিজেরা নিজেরা অনৈক্য আর মতভেদ করে কতভাগ হয়ে গেছেন? সকল ধর্মই বলে ঐক্যই হচ্ছে শক্তি, আর আপনারা চর্চা করেন অনৈক্যের। যে মতভেদ, বাহাস ঐক্য নষ্ট করে তাকে আপনারা ধর্মীয় কাজ বলে জ্ঞান করেন।
এমতবস্থায় আমার কথা হচ্ছে, শক্তিহীন অবস্থায় পড়ে থাকা ভাল, ঐক্যের চেষ্টা হলে দেহে ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চিত হবে। আর দুর্বল অবস্থায় যদি বেশি নড়া-চড়া করা হয় তবে বাকি শক্তিটুকু নি:শেষ করে দেওয়া হবে। এখন ভেবে দেখুন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা কোনটা। এখন অনুভূতি দেখিয়ে চিল্লা-পাল্লা করে মরে যাওয়া, না ভবিষ্যতের জন্য শক্তি অর্জন করা?
আপনারাতো এখন ধর্মবিদ্বেষীদের কাষ্টমারে পরিণত হয়েছেন। যত তাদের বিরোধিতা করতে যাচ্ছেন, জবাব দিতে চাচ্ছেন ততই তাদেরকে হিট বানিয়ে দিচ্ছেন। আপনারা না গেলে তাদের লেখায় ঘাস জন্মাতো। আপনার মধ্যে ধর্মের ব্যাপারে, নিজেদের সততার ব্যাপারে সন্দেহ আছে। তাই হীমন্যতায় ভোগেন। আপনার হীনমন্যতা না থাকলে অন্যের আঘাতে আপনার অনুভূতির এত নড়চড় হতো না।
আর আপনাদের ধর্মজ্ঞান নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ধর্মের আগমন কেন হয়েছে আপনারা তাই ভুলে গেছেন। ধর্মের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্য ধর্ম। যাতে মানবকল্যাণ আছে (শুধু মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান কল্যাণ নয়) সেটাই মূল ধর্ম। যাতে শুধু জাতিস্বার্থ আছে সেটা বিভক্তি- যদিও তা ধর্মের নাম নিয়ে করা হয়।
অতীতে ইহুদিরা অতি কিতাবী হয়ে ধর্মের প্রাণ হারিয়ে বসেছিল। তাদেরকে শোধরাতে ঈসা (আা)কে আসতে হয়েছিল ধর্মের প্রাণ নিয়ে। তিনি এসে সাপ্তাহিক এবাদতের দিন অন্ধের চোখে দৃষ্টিদান করে ধর্মের কাজ করেছিলেন। কিতাবীদের নিকট তখন তা অধর্মের কাজ হিসেবে ঠেকেছিল। আজকের দিনে গরীব-দু:খীদের পেটে খাবার না দিয়ে হজ্ব করতে যাওয়া ধর্মের কাজ নয়, হাসপাতালের সামনে কোরবানীর হাট বসিয়ে কোরবানীর আয়োজন যেমন ধর্মের কাজ নয়। তেমনি প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে মাটির তৈরি দেবতাকে ভোগ-প্রসাদ দেওয়াও ধর্মের কাজ নয়। ধর্মের কাজ হচ্ছে নফল এবাদত (তাহাজ্জুদ) বাদ দিয়ে রাত জেগে রোগীর সেবা করা, নিজের ক্ষমতার্জন নয়, মানুষের সার্বিক কল্যাণের চিন্তা করা।
ভাল করে চিন্তা করে দেখুন আপনি যা করছেন সেটা কেন করছেন, উদ্দেশ্য কি? নিজ ধর্মের মহিমা ছড়ানো, না মানবকল্যাণ? ধর্মের মহিমাতো তখনি ছড়ায় যখন তার মাঝে মানুষ মানবতা খুজে পায়। অপরদিকে কিতাবের আয়াত আর শ্লোক দেখিয়ে, বিশ্লেষণ করে পণ্ডিত হওয়া যায়, ধার্মিক নয়। আপনি বলতে পারেন স্রষ্টাকে খুশি করার জন্য। স্রষ্টা কিসে খুশি হন? কি করে মনে করেন তাঁর-জপ করলেই তিনি খুশি হয়ে যাবেন। তিনি কি আমার-আপনার মত এতটাই তামসিক?
স্রষ্টার কাজ কী? স্রষ্টার কাজ সৃষ্টি জগত পরিচালনা করা। সবার প্রতিপালন করা। আপনি-আমি তাঁর প্রতিনিধি। প্রতিনিধির কাজ কী? প্রতিনিধির কাজ হচ্ছে তার বসের হয়ে কাজ করা। তাতেই বস খুশি, বেতন পাওয়া যাবে। তাহলে আমাদের মূল কাজ হচ্ছে পৃথিবীর পরিচালনা, সকল জীবের প্রতিপালন করা।
অথচ আপনি তাঁর নাম-জপ করে তাকে খুশি করার চেষ্টা করছেন। আপনার সেই জ্ঞান দেখে তিনি ক্রুদ্ধ হচ্ছেন। চাচ্ছি কি আর দিচ্ছে কী-টাই এখন স্রষ্টার প্রশ্ন।
১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩২
উড়োজাহাজ বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৩
মিতক্ষরা বলেছেন: দেখুন, শেখ মুজিবের প্রতি কটুক্তিকারীর সাত বছরের কারাদন্ড হয়েছে। সে তুলনায় ধর্মানুভূতিশীলরা কিন্তু একেবারেই নিরীহ। কারন রাসুল (সা) এর প্রতি কটুক্তিকারী কোন ধর্মবিদ্বেষীদের এক বছরের সাজা হয়েছে বলেও শুনিনি। লতিফ সিদ্দিকীর শুধু মন্ত্রীত্ব গিয়েছে তাতেই মাসুদা ভাট্টি সহ একগাদা লোকের কান্নাকাটি চরমে পৌছেছে।
১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৯
উড়োজাহাজ বলেছেন: এই জন্য আগে দরকার নিজেদের পায়ের নিচে কি আছে তার দিকে খেয়াল করা।
৩| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:২২
নেবুলাস বলেছেন: কিছু দ্বিমত, কিছু সহমত।
১৮ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:৩৯
উড়োজাহাজ বলেছেন: দ্বিমতগুলো শুধরে দিলে খুশি হবো।
৪| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৪২
খাটাস বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন আতাহার ভাই।
শেষের কিছু কথা প্রচলিত ধর্মের নীতির সাথে বিরোধী হলে ও পোস্টের মুল ম্যাসেজ এ দ্বিমতের সুযোগ নেই আমার কাছে।
+++++++++++++++++++++++
১৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:১৯
উড়োজাহাজ বলেছেন: ধন্যবাদ। প্রচলিত ধর্ম ধর্মের মূল থেকে দূরে সরে গেছে। এটাই বড় সমস্যা। আমি জানি অধিকাংশ মানুষ দ্বিমত করবে। তারপরও আমি এমনটাই সত্য বলে বিশ্বাস করি।
৫| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৫৪
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ধর্মান্ধতা ও ধর্মবিদ্বেষী দুইটাই জঘন্য ও পরিত্যাজ্য ।
ভালো থাকবেন
১৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:২০
উড়োজাহাজ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে, আপনিও ভাল থাকবেন।
৬| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৩
দি রিফর্মার বলেছেন: ফেসবুক বা ব্লগে লেখার একটি সুবিধা হচ্ছে বক্তাকে প্রকাশ্যে উপস্থিত থাকতে হয় না। তাই কোন প্রস্তুতি ছাড়াই কমেন্ট লিখে ফেলে।আর এই কালচার আমাদের শিখিয়েছে যে, দ্রুত আমাদের রিপ্লাই পোস্ট করা। কি লিখলাম সেটা বড় কথা নয়। তাই কিছু না ভেবেই প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে ফেলে। প্রতিক্রিয়া প্রকাশের আগে বুঝতে হবে আমি কি বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি এবং কিভাবে জানাচ্ছি। তাহলে এই সমাস্যার কিছুটা হলেও সমাধান আশা করা যায়।
৭| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:০৫
দি রিফর্মার বলেছেন: ইদানিং কালে একটা ফিলোসফি খুব মার্কেট পেয়েছে, সেটা হল গরীব দুখীকে না খাইয়ে হজ্ব করতে যাওয়া একটি অধার্মিক কাজ। আমরা হজ্বের উদ্দেশ্য ও মনস্তাত্বিক ব্যাপার টি সম্পর্কে না জেনেই ইসলাম ধর্মের একটি অত্যাবশ্যকীয় কাজ সম্পর্কে মন্তব্য করে বসি। হজ্ব করার জন্য যেমন অর্থ্ ব্যয় করতে হয়, এতে করে অর্থের প্রতি লোভ ত্যাগের শিক্ষা লাভ হয় তেমনি বংশ মর্যাদা, সাদা কালো জাতি ভেদ ভুলে এক কাতারে সামিল হওয়ার শিক্ষা লাভ হয়। যে ব্যক্তি অর্থের লোভ সংবরণ করতে পারে এবং বংশ মার্যাদা জাতিভেদ ভুলে এক কাতারে সামিল হতে পারে সেই ব্যক্তি স্বার্থ ত্যাগ করে মানব কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারে। সুতরাং সস্তা ফিলোসফি ফেরি করার কোন মানে হয় না।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:১২
সরদার হারুন বলেছেন: বাস্তব লেখা +++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++