নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলা সিনেমার পরিচালক ও কাহিনী রচয়িতাদের ব্যাপারে আমাদের মধ্যে একটা নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বড় যে অভিযোগটি করা হয় তা হচ্ছে তারা অবাস্তব কাহিনী এবং ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বার বার একই ধরনের কাহিনীকে ভিত্তি করে সিনেমা নির্মাণ করেন। তাদের এই কাজকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখাটা বোধ হয় ঠিক উচিত নয়। কেন উচিত নয়, চলুন একটু বিচার করে দেখি। বলা হয় তিন ঘণ্টার একটি সিনেমাতে যে ধরনের খিস্তি-খেউর, নিষ্ঠুরতা, জিঘাংসার চিত্র দেখানো হয় তা বাস্তবসম্মত নয়, অতিরিক্ত ভায়োলেন্সে ভরা। কিন্তু আমি মনে করি এটা আমাদের দেশের পরিচালক ও কাহিনীকারদের দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির ফসল। তারা তাদের দূরদৃষ্টির মাধ্যমে আজ থেকে দশ-বারো বছর আগেই আমাদের বর্তমান সমাজচিত্রটিকে অগ্রীম দেখতে পেয়েছিলেন। সেটা তারা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন এবং সেটা বার বার করেছেন আমাদের সচেতনতার জন্য। কিন্তু আমরা সেগুলোকে অবাস্তব বলে উড়িয়ে দিয়েছি। রাখাল বালকের ত্রাহি চিৎকার ‘বাঘ এসেছে’ মিথ্যা গল্পটা জানি বলে আমরা শুরু থেকেই সিনেমাওয়ালাদের সেই চিৎকারে সাড়া দেই নি। আজ আমাদের দুয়ারে দুয়ারে সেই বাঘ হাজির। আজ থেকে ১০/১৫ বছর আগে থেকে নির্মিত সিনেমাগুলোর পরিচালক ও কাহিনীকারগণ বর্তমান সমাজের কোন বিষয়টি তুলে ধরতে বাদ দিয়েছেন? পত্রিকার পাতাগুলো খুললে আজকে আমরা যে পরিমাণে নিষ্ঠুরতার সাথে মানুষ খুন, স্বামী কর্তৃক স্ত্রী হত্যা, স্ত্রী কর্তৃক স্বামী হত্যা, অয়ারড্রোবে লুকিয়ে রাখা, মাটির নিচে পুঁতে রাখা, সন্তান-সন্তুতিকে খুন করে মা-বাবার আত্মহত্যা, সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়া মানুষ এখানে ওখানে পড়ে থাকা, মাদকাসক্তদের দৌরাত্ম্য, ধর্ষণ, ঘুষ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদির খবরগুলো পাই তার কোন বিষয়টি সেই সব সিনেমার দৃশ্যের সাথে বেমিল?
অভিযোগ করতে পারেন যে মাত্র তিন ঘণ্টার সিনেমায় এত খুন, এত ধর্ষণ, এত বিশাল পরিমাণ সহিংসতা দেখানো বেমানান। এর পক্ষে যুক্তি হচ্ছে একজন নির্মাতার হাতে নির্ধারিত সময় বরাদ্দতো থাকে সর্বোচ্চ সেই তিনটি ঘণ্টাই। এর বেশি তো তার সুযোগ নেই। দর্শককে, সমাজকে একটি বার্তা দিতে হলে তাকে সেই তিনটি ঘণ্টার মধ্যেই দিতে হবে। সুতরাং তিন ঘণ্টার মধ্যে সেটা দেখাতে পারাই তাদের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব।
তিন ঘণ্টার সীমিত সময়ের মধ্যে এত মারামারি-কাটাকাটি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা যদি বর্জনীয় হয় তবে আমাদের দেশের সংবাদপত্রগুলোও একইভাবে বর্জনীয়। একটি সিনেমা দেখে যদি মানুষ হতবিহ্বল হয় তবে যে কোন দিনের একটি পত্রিকা পাঠেও অনুরূপ হতবিহ্বল হওয়ার কথা। এমনটা যে হচ্ছে না তাও নয়। আজকাল অনেককেই পত্রিকায় খারাপ খারাপ খবর থাকে বলে পত্রিকা পাঠ করেন না বলে শোনা যাচ্ছে।
পত্রিকার প্রকাশকরা যদি সেসব সংবাদ প্রকাশ ও পরিবেশন করে সমাজে সম্মানীত হওয়ার যোগ্য হন, তবে আমাদের দেশের সিনেমা এবং এর সাথে জড়িত কলা-কুশলীদেরকে কেন হেয় জ্ঞান করা হবে? বরং তাদেরকে তাদের সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য আরো বেশি মর্যাদা দেওয়া প্রয়োজন। ভাবছেন পুরো বিষয়টাতে কোথায় যেন একটা অসঙ্গতি ও অপূর্ণতা রয়ে গেছে? হ্যা, বিশাল একটি অপূর্ণতা রয়ে গেছে। বাস্তবিক জগতে সিনেমার সেই নায়ক উপস্থিত নেই, যিনি কিনা ‘ইয়্যা ঢিসকাও’ বলে সকল অপশক্তিকে নির্মূল করে দিয়ে, সব বাধাকে নির্মূল করে ‘অবশেষে সকলেই শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল’ পরিসমাপ্তি আনেন- সেই অংশটুকু নেই। সেটা এখন অনিবার্য হয়ে গেয়ে। আমরা আগামী সেই দিনটির অপেক্ষা করছি।
©somewhere in net ltd.