নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার দিনগুলো চরম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। নিয়মিত ঘুম হচ্ছে না। কোন কাজেই মনোযোগ দিতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমার বসে থাকার দিন ফুরিয়ে এসেছে। অনেক বসে থেকেছি। চোখের সামনে আমাদের দেশটা এভাবে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যেতে দিতে পারি না। দেশরক্ষায় আমার দায়িত্ব আছে। আমি এদেশের নাগরিক। এদেশটা আমার। আমি দায়িত্বহীন দেশ লুটেরাদের হাতে দেশকে ছেড়ে দিয়ে কাপুরুষের মত সংসার ও আত্ম প্রতিষ্ঠা নিয়ে মগ্ন থাকতে পারি না। তাতে যে আমার ভবিষ্যত নিরাপদ হবে তাও না। উটপাখির মত বালির নিচে মাথা লুকিয়ে ঝড়কে ফাঁকি দেওয়া যায় না। এই নিষ্পৃহতা আমার কাছে মানুষের জীবন বলে মনে হচ্ছে না। কাপুরুষতা, সমস্যা থেকে পলায়নপরতা মানুষকে মানায় না। আরাম আয়েশ আর নির্বিঘেœ সময় কাটানোর সময় এখন নয়। বড় বড় কথা বলা, অন্যের দোষ ধরার সময় এখন আর নয়। বরং খোজা দরকার আমি কি করছি। সংকট উত্তরণে আমার কর্তব্য কী। দেখতে হবে আমি আমার দায়িত্ব ঠিক মত পালন করছি কি না। এসব চিন্তা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। মনে হচ্ছে থিওরি আর লেকচার ঝাড়ার সময় শেষ। এবার বাস্তব কাজে নামতে হবে।
আমি সকল বন্ধুদের আহ্বান করছি, আসুন আমরা দেশকে নিয়ে ভাবি, দেশ ও দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখি। অন্যের দোষ ধরে পার পাওয়ার সময় এখন নয়। অন্যের দোষ ধরতে থাকলে অন্যেরাও আমার দোষ খুঁজবে। এর চাইতে আসুন কাজ করে দেখাই। একে অন্যকে সঠিক ভূমিকা রাখায় উৎসাহ যোগাই। এখানে ধর্ম-বর্ণের কোন পার্থক্য নেই। সকলেই এখানে অংশ নিতে পারেন-যদি নিজেকে এই দেশের অংশীদার মনে করেন। আমাদের মধ্যে সমস্যা হচ্ছে মতভেদ। আমাদের সামনে সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক মত-পার্থক্য। আমাদের সামনে সমস্যা হচ্ছে ধর্মীয় ভিন্নতা। কিন্তু ভেবে দেখুন আমরা যদি বৃহত্তর স্বার্থ চিন্তা করি তবে এসব সমস্যা খুবই ঠুনকো। রাজনীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের সেবা করা, মানুষের কল্যাণ করা। সকল ধর্মেরও উদ্দেশ্য সেই একই।
কিন্তু রাজনীতি আর ধর্ম কেন আমাদেরকে শান্তি দিতে পারছে না? কারণ, আমরা মানুষকে শান্তি দেওয়া আর মানুষের কল্যাণ করার সেই আসল উদ্দেশ্য থেকে সরে গেছি। এই উদ্দেশ্য থেকে আমাদের কাছে বড় হয়ে গেছে নিজ দলের প্রতিষ্ঠা, নিজ মতবাদের বিজয়। ধর্মের যে মূল উদ্দেশ্য তাকে ছাপিয়ে আমাদের কাছে বড় হয়ে গেছে ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান। ধর্মের আচার-অনুষ্ঠানের পার্থক্য নিয়ে আলাদা হয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হচ্ছি। উদ্দেশ্য যখন এক তখন আচার-অনুষ্ঠান অর্থাৎ প্রক্রিয়া নিয়ে বিভক্তি কেন? একজন মুসলমান নামায পড়ছে আরেকজন হিন্দু মূর্তিকে পুজা করছে। আমরা সকলেই চাইছে অন্যদের আচার-অনুষ্ঠানকে ব্যর্থ প্রমাণ করে নিজেরটাকে প্রতিষ্ঠা করতে। লড়াই করে সেটা কোটি বছরেও সম্ভব হবে না। একজন মুসলমান যদি মনে করে সে নামায পড়ে, রোজা রেখে, হজ্ব করে পরকালে জান্নাতে যেতে পারবে তবে তাকে সে পথেই ছেড়ে দেওয়া উচিত। অনুরূপভাবে একজন হিন্দু যদি মনে করে সে কাঠ-পাথরের মূর্তির মধ্যেই ভগবানকে খুঁজে পাবে তবে সে তাই করুক না! তাতে আমার সমস্যা কি? সে যদি সেভাবে স্বর্গ পেতে ব্যর্থ হয় তবে আমার সমস্যা কোথায়? তাকে বিরত রাখার দায়িত্ব কে আমাকে দিয়েছে? কেউ যদি নিজের ভালটা না বুঝে তবে তাকে বাঁচানোর জন্য আপনার এত দরদ কেন? আর সেই বাঁচাটাতো পরকালীন বাচা! বরং আসুন আমরা ইহকাল নিয়ে চিন্তা করি। আমরা যদি পরকালের চিন্তা করে ইহকালকেই যদি বরবাদ করে ফেলি, পরস্পরে লড়াই করে পৃথিবীটাকেই নরক বানিয়ে ফেলি তবে কি আদৌ আমরা মৃত্যুর পর পরকালে স্বর্গ পাব?
যে কৃষক ফসলের সিজনে ভাল ফসল না ফলাতে পারে সে কি আদৌ বাকি সময় সুখ ভোগের আশা করতে পারে? তাহলে আমরা কেন পরকালীন মুক্তির কথা বলে ইহকালকে ধ্বংস করছি? এরচেয়ে আসুন আমরা মিলে মিশে একটা সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। কেউ কারো শত্র“ না হয়ে, নিজের ধর্ম নিজে পালন করে সামষ্টিক বিষয়ে আমরা একতাবদ্ধ হই। তবেই আমাদের পরকালও সুন্দর হবে।
আপনি মুসলিম? আপনার ধর্মের কোথায় আছে জোর করে অন্যের মতের উপর আপনার মত চাপিয়ে দেওয়ার? তাছাড়া বিশ্বাস কি কখনো জোর করে চাপানো যায়? তাহলে আমরা কেন বারংবার সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছি? আপনি যদি মুসলিম হোন তবে সঠিক মুসলিম হোন। সনাতন ধর্মের কোথায় আছে অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে? কোথায় আছে অন্যের মতামতকে উপেক্ষা করতে? কোন ধর্মেই সেটা নেই। আপনি যদি হিন্দু হয়ে থাকেন তবে উত্তম হিন্দু হোন। এমনকি আপনি যদি কোন ধর্মেই বিশ্বাস না করেন তাহলেওতো সমস্যা নেই। মানুষের তৈরি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্রের কোথায় কোন ধারায় লেখা আছে অন্যের বিশ্বাস, অন্যের বাক-স্বাধীনতা, অন্যের কণ্ঠকে রুদ্ধ করার কথা? কোন ধর্ম অন্যায়কে সমর্থন করতে বলে, কোন আইন ঘুষকে বৈধতা দেয়? অথচ সেগুলোই কিন্তু আমাদের মূল সমস্যা।
মোদ্দা কথা হচ্ছে, আপনি যদি যার যার স্থানে থেকে সঠিক মুসলিম হন, আপনি যদি খাঁটি হিন্দু হন, আপনি যদি খাঁটি গণতন্ত্রী হোন তবে আপনার সাথে অন্যের কোন দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতো না। সকলের উদ্দেশ্য যেহেতু এক সেহেতু সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে কোন সমস্যা হতো না। কিন্তু আমরা সেটা করছি না। আমরা যে যে ধর্মের অনুসারী দাবি করছি সেই ধর্মকে সঠিকভাবে মেনে চলছি না। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা সংবিধানেরও তোয়াক্কা করছি না। ধর্ম মানুষমাত্র যে কাউকে ভালোবাসতে শেখায়, সমান ভাবতে শেখায়, সম্মান করতে শেখায়। মানুষের তৈরি আইনও মানুষের সমানাধিকারকে প্রাধান্য দেয়। কিন্তু আমরা সেই ধর্মের, সেই সংবিধানের অনুসারী মনে করি আর বাস্তবে পালন করি তার উল্টোটা।
এই উল্টো চলার কারণেই আজকে আমাদের এই দুর্গতি। আসুন, যার যার ধর্মকে, যার যার আস্থাকে সঠিকভাবে পালন করি, অন্যের বিশ্বাসকে মর্যাদা দেই, সম্মান করি, একই স্রষ্টার সৃষ্টি হিসেবে একে অপরকে ভাই মনে করি, ভালোবাসি, একে অপরের বিপদে এগিয়ে আসি। তবেই দেখবেন, আমাদের সমস্যার ৯৫ ভাগ সমাধান হয়ে গেছে।
আমাদের রাষ্ট্রনায়কদের এই পচনের মূলে প্রধানত দায়ী আমরাই। আমরা যদি সঠিক পথে থেকে তাদেরকে সততার সাথে শাসন করতে বাধ্য করতাম তবে তারা কিছুতেই আমাদের মতামতকে উপেক্ষা করে হানাহানি আর ক্ষমতা দখলের জন্য আমাদেরকে বলির পাঠা বানাতে পারত না। কারণ, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে তাদের চোখের সামনে আঙুল দিয়ে তাদের অন্যায়টাকে দেখিয়ে দিতে পারতাম। আজকে আমরা গণতন্ত্রের অধীনে বাস করছি। গণতন্ত্রের কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ঘুষ দিতে হবে এমন কোন কথা লেখা আছে? ট্যাক্সের কথা লেখা আছে। আমরা সেটা দিচ্ছিও। এরপর আবার উপরি হিসেবে তারা আমাদের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করছে। আমরা এভাবে কেন দ্বিগুণ ব্যয় করছি? কারণ, আমরা দল নিয়ে উপদল নিয়ে, কোন্দল করে, ধর্ম নিয়ে মতভেদ করে, ফেরকাবাজীতে ডুবে গিয়ে ঐক্যহীন হয়ে গেছি। আমরা সঠিক স্থানে থাকলে তাদেরকে এই অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করতে পারতাম।
যা বলছিলাম, এসব ভেবে খুব খারাপ সময় পার করছি। কিছুই ভালো লাগছে না। আমার বিশ্বাস, জাতির এই দুঃসময়ে অনেকেই দুঃশ্চিন্তায় নিমজ্জিত হয়ে আছেন। কিছু করতে না পারার দুঃখ নিয়ে দিনাতিপাত করছেন। ভবিষ্যত প্রজন্ম কি দিয়ে যাচ্ছেন তাই নিয়ে ভাবছেন। কিন্তু ভাবনায় ডুবে থাকলে সমাধান আসবে না। সমাধান আসবে কাজে নামলে। তাই আসুন না আমরা সকল মতভেদ ভুলে যার যার অবস্থানে থেকে সেই চেষ্টাটুকু করি। প্রচেষ্টার এখনি উপযুক্ত সময়। এ লক্ষ্যে আমার সীমার মধ্যে আমি আমার কাজ শুরু করে দেব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরবর্তী লেখায় সেটা তুলে ধরার আশা রাখছি।
আতাহার হোসাইন ঢাকা- বরিবার, ভোর ৫.৩৬
২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৪২
উড়োজাহাজ বলেছেন: কীভাবে চেষ্টা করছেন জানালে উপকৃত হতাম।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:২৯
অন্ধবিন্দু বলেছেন:
চেষ্টা করছি ...