নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মোটর সাইকেলে চড়ে বাতাস কেটে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাওয়ার মজাই আলাদা। কানের পাশ দিয়ে পত পত করে বাতাস কেটে বেরিয়ে যায়। দুর্দান্ত গতি হৃদয়ে এক ধরনের রোমাঞ্চকর অনুভূতি জাগায়। এডভেঞ্চার-এডেভেঞ্চার ভাব। দু:সাহসী অভিযাত্রী মনে হয় নিজেকে। অথচ এই বাহনটি এক আজব বাহন। মাত্র দু’টি চাকার উপর নিখুঁত ভারসাম্য বজায় রেখে তাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। আবার মাটিতে লেগে থাকা সেই চাকা দু'টোর বিস্তৃতিও খুবই কম। মাত্র দেড় থেকে দু’ ইঞ্চির মত। এর উপর নির্ভর করে বাহনটি এগিয়ে যায় নিজের ওজন ছাড়াও প্রায় চার-পাঁচ মণ ভারী দু’-তিন জন মানুষ নিয়ে। স্বল্প দূরত্বের গন্তব্যে পৌঁছাতে এই বাহনটির জুড়ি নেই। আর রাজধানী শহর ঢাকার জ্যামে অন্যদেরকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত চলাচলে এই বাহনটি অত্যন্ত কার্যকরী। সময় বাঁচানোর প্রয়োজনে কাউকে কাউকে ফুটপাতের উপর দিয়েও একে চালিয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এটার খরচও মোটামুটি কম। কিন্তু এই বাহনটির সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে এর দুর্বল নিরাপত্তাব্যবস্থা। ভারসাম্য নষ্ট হয়ে কিংবা টাল সামলাতে না পারলে যে কোন সময় ডেকে আনতে পারে নির্মম মৃত্যু। কিন্তু এর চেয়েও সাংঘাতিক হচ্ছে এর আহত করার ক্ষমতা। ছিলে-ছেঁচড়ে নিয়ে যায় এর আরোহীকে। নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে দুরন্ত এই বাহনটির চরিত্র মিলে যায় একেবারে পাগলা ঘোড়ার সাথে। আমার এক পরিচিত বিজ্ঞব্যক্তির মতামত হচ্ছে ‘হুন্ডা চালায় গুণ্ডায়’। ও, হ্যাঁ। বলাই হয়নি যে, সিঙ্গার কোম্পানির সেলাই মেশিন যেমন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে সিঙ্গার মেশিন হিসেবে খ্যাতি পেয়ে গেছে, ঠিক তেমনি হোন্ডা কোম্পাননির তৈরি মোটর সাইকেল এই দেশে জনপ্রিয় বিধায় সব মোটর সাইকেলকেই হুন্ডা বলে আখ্যায়িত করা হয়। এই হুন্ডার চরিত্রের সাথে গুণ্ডার অনেকটাই মিল আছে। ভালো মানুষের হুন্ডা থাক আর না থাক, গুণ্ডার অবশ্যই একটা হুন্ডা থাকতে হয়।
আরে, এদিকে হুন্ডা নিয়ে এত কথা বলার কারণটাই দেখি ভুলে যেতে বসেছি! হ্যাঁ, গতকাল হুন্ডা নিয়ে মহাসড়কের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। না, না। হুন্ডা আমি চালাতে জানি না। পেছনে বসেছিলাম। ভাগ্য ভাল যে সাংঘাতিক কিছু হয়নি। অল্পের উপর দিয়ে গেছে। হাঁটুতে সামান্য ছিলে গেছে আর বাম হাতের কবজিতে সামান্য চোট পেয়েছি। আর চালকেরও তেমন কিছু হয়নি। আমার মতই তারও হাঁটুতে সামান্য ছিলে গেছে। আর একটা মজার এবং অবাক কাণ্ড হয়েছে। বুকে আঘাত না পেলেও চালকের কলমখানা তার পকেটের কিছু অংশ ছেদ করে বেরিয়ে গেছে। দুর্ঘটনার কারণ ছিল চায়ের দোকান থেকে মহাসড়কের উপর ফেলে দেওয়া পানি। সেই পানিতে আবার একটা পলিথিন ছিল, যার ভেতর পানি জমেছিল। রাস্তার ডান দিক থেকে মুখোমুখি একটা ট্রাক রাস্তায় উঠছিলো। এমন সময় সেটা দেখে ব্রেক কষতে গিয়েই বাধে যত বিপত্তি। ব্রেকটা হলো সেই ভেজা অংশে এবং সামনের চাকার নিচে পড়লো সেই পানিভর্তি পলিথিন। ধপাস করে পড়ে গেলাম। পড়ে আমি ভাবছি কতদূর ক্ষতি হলো। মনে পড়ে গেল হুন্ডা দুর্ঘটনায় ভয়ানক অবস্থার কথা। কিন্তু নাহ, তেমন কিছু হয়নি। নিজে নিজেই দাঁড়ালাম এবং চালককেসহ গাড়ি টেনে সোজা করলাম। আমার পকেটের মোবাইলও বের হয়ে পড়ে যায়নি। ব্যাগে থাকা ল্যাপটিতেও সামান্যতম আঘাত লাগেনি। তবে চালকের মোবাইলখানা পড়ে গিয়েছিল। সেটাও অবশ্য অক্ষত ছিল। আমাদের এই দুর্দশা দেখে রাস্তার আতংক ট্রাকচালকও ব্রেক কষে বসে রইল। আমরা যতক্ষণ সাইড না হলাম ততক্ষণ ট্রাকওয়ালা গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখল। অন্যরা এসে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে লাগল। কারণ, এমন মাঝ রাস্তায় হুন্ডা পড়ে গেলে সাধারণত আরোহীরা সাংঘাতিক আহত হয়, এমনকি মরেও যায়। তারা বলতে লাগলো আপনাদের ভাগ্য ভাল যে তেমন কিছু হয়নি। আমরাও মনে মনে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম।
এবার হচ্ছে দ্বিতীয় কিস্তি। হুন্ডারও কিছু হয়নি। অতপর আবার গন্তব্যে যেতে হবে। পাশের দোকান থেকে চা খেয়ে আবার উঠলাম। একটা কথা বলে নেই, চালকের উপর আমার আস্থা তেমন একটা ছিলো না। তাছাড়া তিনি কিছুটা অন্যমনস্ক ছিলেন সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত। তিনি জানতে চাইলেন আমি ভয় পেয়েছি কি না। আমি ভয় পাইনি। তাছাড়া এই মুহূর্তে ভয়কে আশ্রয় দেয়া উচিত নয়। শত হলেওতো বীরদের (!) উচিত নয় ভয় পেয়ে থেমে যাওয়া। শংকা আছে। মনে সদা উকি-ঝুকি মারছে চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়ার। বিভিন্ন কল্পনা আসছিল যে- এবার যদি কিছু হয় তখন কী হবে? আমি যে কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য নিজেকে সমর্পিত করে দিলাম। যে কোন ব্যথার জন্য শরীরকে তৈরি করে নিলাম। চিন্তা করছিলাম যদি চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে অক্কা পেয়ে যাই তবে তো একটা গতি হলো। কিন্তু যদি অক্কা না পাই, যদি মাথায় আঘাত পেয়ে আর আমার হেডব্যাংকে আবদ্ধ মস্তিস্কে ঝাকা লেগে সমস্ত স্মৃতি এলোমেলো কিংবা গোলমেলে হয়ে যায়! যদি পিচ ঢালা পথে মাথার ঘষা লেগে চামড়া উঠে যায়!! যাইহোক, ভয় না পেয়েও সারাটা রাস্তায় শংকা নিয়ে কাঠ হয়ে বসে রইলাম। কারণ, মনে হচ্ছিলো আমার সামান্য নড়ন-চড়নও যদি পাগলা ঘোড়ার কাত হয়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়! যদি ব্যালেন্স হারায়। সবচেয়ে শংকা বেড়ে গেল যখন বৃষ্টি শুরু হলো। রাস্তা পিচ্ছিল হলে চার চাকাওয়ালাদের সমস্যা নেই। কিন্তু দু’চাকার হুন্ডাওয়ালা গুণ্ডাদের বিপত্তি শুরু হয়ে যায়। যাক্, পরিশেষে আর কোন খারাপ অবস্থার মুখোমুখি না হয়েই গন্তব্যে পৌঁছলাম। কিন্তু ঠিকই আমার দামী প্যান্টটি ছিড়ে ফেললাম। পেছনের সিটে উঠতে গিয়ে প্যান্টের পিছন দিকের সেলাই খুলে গেল! কি মুসিবত! কি বিব্রতরকর পরিস্থিতি!! যাক, কাহিনী অনেক লম্বা হয়ে গেল। একদিনের কাহিনী এত বড় করা ঠিক নয়। পরিমিত বলে বাংলায় একটা শব্দ আছে। সেটা মাথায় রাখা প্রয়োজন।
১৮ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:৫৭
উড়োজাহাজ বলেছেন: পাগলা ঘোড়ার মত!!
২| ১৯ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:৩০
ইসটুপিড বলেছেন:
আর রাজধানী শহর ঢাকার জ্যামে অন্যদেরকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত চলাচলে এই বাহনটি অত্যন্ত কার্যকরী। সময় বাঁচানোর প্রয়োজনে কাউকে কাউকে ফুটপাতের উপর দিয়েও একে চালিয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
নবাবজাদাগর চালানির নমুনা দেখলে লাঠি দিয়া পাছায় বাড়ি দিতে মন চায়। আমার সামনে কোন এইটাইপের কোন ইতর মোটরসাইকেলওয়ালা এক্সিডেন্ট করলে সোজা হাততালি দেই।
১৯ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:৪৬
উড়োজাহাজ বলেছেন: হ্যাঁ, সেটা অন্যায়।
৩| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৮:৫০
কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা যে অক্ষত আছেন।এমনকি হুন্ডা,ল্যাপটপ,মোবাইল খানাও
শেষ ভালো যার সব ভালো তার
শেষ দৃশ্যে হ্যাপী(চিত্রনায়িকা নহে) এন্ডিং না দেখিয়া মন খারাপ করিতে গিয়া বিস্ময়ে লক্ষ্য করিলাম ঠোটের কোনে মুচকি হাসি আসিয়া পড়িয়াছে!!!কি আশ্চর্য,আমিকি তবে রুবেল হইয়া যাইতেছি?
০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:১০
উড়োজাহাজ বলেছেন: ধন্যবাদ। হ্যাপী নাকি দেশ থেকে পালাইছে, রুবেল ভাই?
৪| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৩
আর জে নিশা বলেছেন: ভালো মানুষের হুন্ডা থাক আর না থাক, গুণ্ডার অবশ্যই একটা হুন্ডা থাকতে হয়। মজা পেলাম ভাই, চমৎকার লিখেছেন ।
০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:১৮
উড়োজাহাজ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
৫| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:০৮
কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: আর বলিবেন্না,আমাদের তরে হ্যাপির মা-বাবা গত হইয়াছেন অনেক আগেই
হ্যাপি এখন বাস করে গনভবন আর ৩২নম্বরে
বিশেষ একখানা শ্লোগান(মন্ত্র) জপিলে তাহার আবাহন সুনিশ্চিত
তারপরও বোকার হদ্দ/গোঁয়ার গোবিন্দ বলিয়া জপিতে পারিনা
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:২২
উড়োজাহাজ বলেছেন: ব্লগের যে কি হইল। এতদিন পরে আপনাার কমেন্ট চোখে পড়ল। এর আগে কোন নোটি নাই।
৬| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৫৮
রাশেদ মহাচিন্তিত বলেছেন: ফুটপাথ দিয়ে মোটরসাইকেল চালানোতে আরোহীর সময় বাঁচে ঠিকই , কিন্তু যারা ফুটপাথ ধরে হাঁটেন তাঁদের জন্য যে এটা কত বড় অসুবিধা আর বিরক্তির কারন সেটা আরোহীগণ বোঝেন না। মাঝে মাঝে এরকম দেখলে এক একটা ফুটপাথ মোটরসাইকেল আরোহীদের ধরে থাপ্রাইতে মন চায়।
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:২১
উড়োজাহাজ বলেছেন: হ, ফুটপাতে থাকলে আমারও মুঞ্চায় হুন্ডাওয়ালাদের কানের নিচে থাপ্রা লাগাই। কিন্তু জ্যামে পড়লে মুঞ্চায় ফুটপাতে চড়ি।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:০৮
শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন:
একবার বাইক নিয়া পরার পর আর কোনদিন বাইক নিয়হা হাঙ্কিপাঙ্কি করিনাই। ভয়াবহ জিনিস!!