নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দিবস করে কোনো কিছু পালন করা মানে এটাই বোঝায় যে বিষয়টি এখন দিন দিন দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে, বিষয়টি এখন বিলুপ্তির মুখে কিংবা হুমকির মুখে। তাই আলাদা দিবস ঘোষণা করে একে বাঁচিয়ে রাখার একটা বিকল্প পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যেমন করে কারো যদি শ্বাস কষ্ট হয় তবে তাকে আলাদাভাবে অক্সিজেনের নল লাগিয়ে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালানোর ব্যবস্থা করা হয়। বিশ্ব বাঘ দিবস হচ্ছে এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। দিন দিন বাঘ কমে যাচ্ছে, তাই বাঘ দিবস করে কিভাবে বাঘের সংখ্যা বাড়ানো যায় এবং তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তথা অভয়ারণ্য গড়ে তোলা যায় সেসব বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি করাই এই দিবসের উদ্দেশ্য।
কয়েকদিন আগে ভালোবাসা দিসব পালিত হলো। বোধ হয় ভালোবাসার ঘাটতি দেখা দিয়েছে বিশ্ববাসীর মধ্যে। তাই দিবস করে এখন ভালোবাসা সৃষ্টি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য দিবস নিয়ে যতটা না আপত্তি তোলা হয় তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি আপত্তি তোলা হয় ভালোবাসা দিবসের ব্যাপারে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নানা প্রান্ত থেকে এ নিয়ে নানা মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। কেউবা পক্ষে আবার কেউবা বিপক্ষে। আমাদের পাশের গ্রামে তো দেখলাম রীতিমত সেদিনের ওয়াজের আলোচ্য বিষয়ই ছিল কীভাবে দিনটিকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস না বলে বিশ্ব বেহায়া দিবস হিসেবে প্রমাণ করা যায়।
আজকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিবসটির গুরুত্ব মোটেও কম নয়। মাতৃভাষার জন্য লড়াই করে প্রাণ দেওয়ার ঘটনা পৃথিবীতে অত্যন্ত বিরল। তাই ৫২ সালে ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জনকারী অকুতোভয় সৈনিকদের আত্মত্যাগের মহিমা এবং মাতৃভাষা বাংলাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে কার্যকরী হওয়াকে স্মরণীয় করে রাখতে দিনটি পালন করা হয়। পরবর্তীতে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও মর্যাদা পেয়েছে। তাই দিনটিকে অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় দিবসের সাথে মিলিয়ে ফেলা কিছুতেই উচিত হবে না। তবে একটি দিক দিয়ে কিন্তু ঠিকই আমরা দিবসটিকে প্রাণহীন অনুষ্ঠানসর্বস্ব দিবসে পরিণত করে ফেলছি। ভাষার মাস এলেই বাংলাভাষার প্রতি আমাদের দরদ বেড়ে যায়। কিন্তু সারা বছর জুড়েই দেখা যায় বাংলাভাষার কতটা অবহেলা হচ্ছে।
অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই ভাষা আমাদের মাঝে বিরাজ করলেও ভাষার বিকৃতি লক্ষণীয়। বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষিত বাঙালির উচ্চারণ, কথায় কথায় ইংরেজী শব্দের ব্যবহার, র-ড় আলাদা করতে না পারা, ণ, ষ, ঈ ইত্যাদির যথাযথ ব্যবহার না করা, সহজে উচ্চারিত শব্দকে মুখ বেকিয়ে কায়দা করে উচ্চারণ করার রীতি বাংলা ভাষার স্বাভাবিকতার বিরুদ্ধে আঘাত করছে। আর রেডিও জকিদের কথা নাই বললাম। এ বিষয়টা নিয়ে এত এত কথা হয়েছে যে সেটা নিয়ে কথা বলারই রুচি নেই। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মনে রাখতে হবে, আমার আপনার মাতৃভাষা কিন্তু শহুরে উচ্চশিক্ষিতের ভাষা নয়। কায়দা করে মুখ বেকিয়ে করা ভাষাও নয়। আমাদের গ্রাম-গঞ্জে, শহরে আবহমান কাল থেকে চলে আসা ভিন্ন ভিন্ন উচ্চারণের সমাহার, আঞ্চলিক ভাষাই আমাদের আসল মাতৃভাষা, বাংলাভাষা।
বলছিলাম, ভাষার বিলুপ্তির কথা। ৫২ সালে উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে আমরা প্রাণ দিয়েছিলাম। প্রাণ দিয়ে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠাও করতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে বিজয়ী হয়ে ভারতীয় হিন্দি ভাষার কাছে আমরা এভাবে আত্মসমর্পন করবো তা বোধ হয় ভাষা সৈনিকরা জীবনেও কল্পনা করেননি। কল্পনা করলে উর্দুর প্রতি এত বিরোধিতা করতেন কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ হয়। ছো্ট ছোট বাচ্চারা এখন টেলিভিশনের কল্যাণে গড় গড় করে হিন্দিতে কথা বলছে। এর চাক্ষুষ প্রমাণ আমি অনেক বাসায়ই দেখেছি। এরা ভালো বাংলাও জানে না। কিন্তু কথায় কথায় হিন্দি বলে। বিশেষ করে নিজেদের মধ্য সেটা খুব বেশি দেখা যায়। আমাদের পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীরাও বাঙালি। বাংলা সাহিত্যের এককালীন তীর্থভূমি ছিল কোলকাতা। কিন্তু কোলকাতায় এখন বাংলাভাষা হুমকির মুখে। দিন দিন তারা হিন্দির প্রতি বেশি মাত্রায় ঝুঁকে পড়ছে। বাংলাভাষা রক্ষায় তাদের কোন দায়বোধ আছে বলেও মনে হয় না। সাহিত্য জগত ছাড়া আর সকল ক্ষেত্রেই কথাটা সত্য। আমাদের নতুন প্রজন্মও আকাশ সংস্কৃতির জোয়ারে পড়ে সেদিকে ঝুঁকে পড়ছে। তাই ২১ ফেব্রুয়ারীকে আমরা অচীরেই অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় ও বাহুল্যভরা দিবসে পরিণত করে ফেলতে যাচ্ছি কিনা সেটা নিয়ে আতংক হচ্ছে। বাংলাভাষা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুধু আজকের দিনেরই হোক তা যেন না কিছুতেই না হয়। যেমন করে দিবস করে ভালোবাসা হয় না, ভালোবাসােই সব দিবস হয়- তেমনি সব দিবস মাতৃভাষার দিবস হোক।
২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪০
উড়োজাহাজ বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:২৮
এ.টি. নূর শেখ লিটা বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন...