![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বাংলাদেশি, এখানে সবার লেখনি পড়ে অবাক হই আর নিজে ও লিখার চেষ্টা করি
রুনা লায়লা। শুধু বাংলাদেশ নয় উপমহাদেশের অন্যতম স্বনামধন্য সংগীত শিল্পী। বিশ্বের বুকে সংগীতের সুরের মূর্ছনায় বাংলাদেশকে এক সুউচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠা করেছেন। নতুন প্রজন্মের অনেকেই হয়তো তাঁর সম্পর্কে তেমন একটা ধারণা নেই।
১৯৫২ সালের ১৭ই নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহন করেন। পিতা মোহাম্মদ ইমদাদ আলী সরকারী কর্মকর্তা হওয়ার সুবাধে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান বর্তমানে পাকিস্তানের করাচিতে বসবাস করেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে স্টেজ প্রোগ্রাম করে নিজের প্রতিভার জানান দেন । প্রথমে নৃত্য শিল্পী হিসাবে তিনি তার সংস্কৃতি চর্চা শুরু করেন তাঁর মা তাঁকে নৃত্য চর্চার জন্য বুলবুল একাডেমী অব ফাইন আর্টস-এ ভর্তি করেন কিন্তু বড় বোন সংগীত শিল্পি দিনা লায়লার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তিনিও ধীরে ধীরে সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং নিজেকে একজন কালজয়ী সংগীত শিল্পী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬১ সালে মাত্র ৯ বছর বয়সে পাকিস্তান রেডিও সমগ্র পাকিস্তানের ইন্টার-স্কুল সংগীত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভ করেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শিল্পী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বাংলা, হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবী, সিন্ধি, গুজরাটি, পশতু, বেলুচি, আরবী, পার্শিয়ান, মালয়, নেপালী, জাপানী, ইতালী, ফরাসী, স্পেনীয় ও ইংরেজীসহ প্রায় ১৮টি ভাষায় গান গাইতে পারেন। ১৯৬৬ সালে তিনি উর্দু ছবি “হাম ডোনো” তে গীতিকার কলিম ওসমানী ও নাসাদের সংগীত পরিচালনায় “উনকি নাজারো সে মোহাব্বত কি জো” গানটি গেয়ে কেবলমাত্র পাকিস্তানে নয় সমগ্র উপমহাদেশে সংগীত পিপাসুদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এর পর তাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। মুলত: এই গানের পরই রুনা নুরজাহান ও মালা বেগমকে পিছনে ফেলে পাকিস্তানের প্লেব্যাক শিল্পী হিসাবে একক আধিপত্য শুরু করেন। আপে ডিল মে আঞ্জুমান মে” ও মেরা বাবু ছেলছাপিলি” সহ অসংখ্য জনপ্রিয় রয়েছে যা আজও এই সকল গানের আবেদন ফুরায়নি, এখনও এই সকল গান মানুষের হৃদয়ে আবেগে দোলা দেয়।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তান ভেঙ্গে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের অভুদয় ঘটে। ১৯৭৪ সালে এই শিল্পী পশ্চিম পাকিস্তান হতে বাংলাদেশে চলে আসেন। এই কিংবদন্তি শিল্পী ১৯৬৬ সাল হতে ১৯৭৪ মাত্র ৮ বৎসরে পশ্চিম পাকিস্তানে থাকাবস্থায় সংগীতে যে অবদান রেখে এসেছেন অদ্যাবধি পাকিস্তানের ইতিহাসে নুরজাহান ও মালা বেগমের পর রুনা লায়লার স্থান বলে মনে করা হয়। পাকিস্তানের ২৪ বৎসরের শাসন-শোষণ, বঞ্চনার ইতিহাসে পূর্ব পাকিস্তানের তথা বাঙ্গালীরা কেবলমাত্র রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে বঞ্চনার স্বীকার হননি, সাংস্কৃতিক বঞ্চনারও স্বীকার হয়েছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তানে বিভিন্ন ভাবে তাকে হেয় করার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। তারই প্রমান নুরজাহানের সাথে আমাদের রুনা লায়লার এক ধরনের ব্যক্তিত্বের দ্বন্ধ ছিল। রুনা লায়লাই প্রথম এশিয়ার কোন শিল্পী হিসাবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির বিশাল নিউ রয়েল হলে প্রথম সংগীত পরিবেশন করার গৌরব লাভ করেন। ভারতের বোম্বেতে পাকিস্তানী সংগীত পরিচালক নিসার বাজমীর সংগীত পরিচালনায় তিনি ৩ দিনে ৩০টি গান রেকর্ড করে গ্রিনিজ বুকে নিজের নাম লিখে যে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন তা আজও কেউ ভঙ্গ করতে পারেনি। ১৯৭৪ সালে রুনা লায়লা কলকাতায় একটি কনসার্ট করেন এবং সেখানেই তার বিখ্যাত গান “সাধের লাউ বানাইলাম তরে বৈরাগী” এই কনসার্টের পর একটা কথা প্রচলিত ছিল যে, ভারত বলেছিল রুনাকে আমাদের দাও বিনিময়ে ফারাক্কা নাও। বাংলাদেশের ইতিহাসে রুনার মত আইকনিক শিল্পী আর কেউ নেই। নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি রোল মডেল। তিনি বর্তমানে দক্ষিন এশিয়ার আঞ্চলিক সংস্থা “সার্ক” এর শুভেচ্ছা দূত হিসাবে কাজ করছেন। ভারত-পাকিস্তানের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী নুরজাহান ও মালা বেগমকে পিছনে ফেলে রুনা লায়লা পাকিস্তানের চলচ্চিত্রের প্লে-ব্যাক সংগীত শিল্পী হিসাবে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন কিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে দেশকে ভালবেসে পশ্চিম পাকিস্তানে তার একক শীর্ষস্থান থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাঙ্গালী আর বাংলাদেশের প্রতি ভালবাসার টানে ১৯৭৪ সালে পশ্চিম পাকিস্তান হতে স্থায়ী ভাবে বাংলাদেশে চলে আসেন। যদিও সেই সময় অনেক বাঙ্গালী শিল্পী ও অভিনেতা-অভিনেত্রী নিজেদের জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকার কারনে বাংলাদেশে না এসে পাকিস্তানে থেকে গেছেন, যেমন: রহমান ও শবনম কিন্তু রুনা লায়লাই ব্যতিক্রম হিসাবে কেবলমাত্র দেশের টানে, এদেশের মানুষের প্রতি তাঁর অকৃতিম ভালবাসার কারনে পাকিস্তানের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শিল্পী হিসাবে নিজের একক আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে চলে আসেন। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন ১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৮৯, ১৯৯২, ২০১২ ও ২০১৫, স্বাধীনতা পুরস্কার, ভারতের সায়গল ও পাকিস্তান হতে নিগার পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। এসকল পুরস্কারের চেয়ে তার যেটা বড় অর্জন তাহলো তিনি বাঙ্গালী আর বাঙ্গালী জাতির হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। যতদিন বাংলাদেশ ও বাঙ্গালী থাকবে ততদিন মানুষের হৃদয়ে তার স্থান থাকবে। এর চেয়ে বড় অর্জন আর কিছু হতে পারে না। তাই সমগ্র বাঙ্গালী জাতির পক্ষ থেকে তার প্রতি রইল আমাদের গভীর শ্রদ্ধা, গভীর ভালবাসা। সম্প্রতি বিবিসি কর্তৃক এক জরিপে রুনা লায়লা বিশ্বের সেরা ৩০ বাঙ্গালীর একজন নির্বাচিত হন। অভিনন্দন রুনা, অভিনন্দন তোমাকে।
-----আলী আমজাদ
শিল্পীদের জীবন র্দশন আপডেট পেতে চোখ রাখুন আজকের প্রসঙ্গ
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৯
আতোয়ার রহমান বাংলা বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:১১
শায়মা বলেছেন: রুনা লায়লার জন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা.....
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৪৩
আতোয়ার রহমান বাংলা বলেছেন: আপনার জন্য ও অনেক ভালোবাসা
ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৭
সনেট কবি বলেছেন: ভাল পোষ্ট।