![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সকল বান্দার উপর ইসলামে প্রবেশ করা, উহা আঁকড়ে ধরা এবং উহার পরিপন্থী বিষয় থেকে সতর্ক থাকা ফরজ করেছেন। আর নবী মুহাম্মাদ (সা.)কে সে দিকে আহবান করার জন্যই পাঠিয়েছেন।
আল্লাহ্ এই মর্মে ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি নবী (সা.)-এর অনুসরণ করবে, সে হেদায়াত প্রাপ্ত হবে, পক্ষান্তরে যে তার থেকে বিমুখ হবে, সে পথভ্রষ্ট হবে।’
তিনি বহু আয়াতে মুরতাদ হওয়ার মাধ্যম, শিরক ও কুফরির সকল প্রকার থেকে সতর্ক করেছেন।
ওলামায়ে কেরাম মুরতাদের বিধি-বিধান অধ্যায়ে এই মর্মে উল্লেখ করেছেন, একজন মুসলমান ব্যক্তির রক্ত ও ধন-সম্পদ হালালকারী বিভিন্ন ইসলাম বিধ্বংসী কার্য কলাপ সম্পদনের মাধ্যমে মুরতাদ ও ইসলাম থেকে হতে বহিস্কার হয়ে যায়।
ইসলাম বিধ্বংসী কাজ হল সর্ব মোট ১০টি। যা শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ বিন সুলায়মান আত তামীমী (রহ.) ও অন্যান্য ওলামায়ে কেরাম উল্লেখ করেছেন।
আমরা ওইসব ইসলাম বিধ্বংসী কাজগুলো নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণসহ উল্লেখ করছি। যাতে আমরা ওই বিষয়গুলো থেকে সতর্ক সতর্ক হতে পারি।
ইসলাম বিধ্বংশী কাজগুলো নিম্নরূপ-
১। আল্লাহর ইবাদতে শিরক করা।
আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তার সঙ্গে শিরক করাকে ক্ষমা করেন না। উহা ব্যতিরেকে উহার নিম্ন পর্যায়ের পাপ সবই তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৬)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি শিরক করবে আল্লাহ তার উপর জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম, আর এই সমস্ত যালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী থাকবে না।’ (সূরা মায়েদাহ্, আয়াত : ৭২)
এই শিরকের অন্তর্ভূক্ত হল- মৃতকে আহবান করা, তাদের নিকট ফরিয়াদ করা, তাদের জন্য নযর-নেয়াজ মানা ও পশু যবেহ করা। যেমন কোনো ব্যক্তি জ্বিনের জন্য বা কোনো কবেরর জন্য যবেহ করল ইত্যাদি।
২. নিজের ও আল্লাহর মধ্যে মধ্যস্থতা সাব্যস্ত করে তাদের উপরেই ভরসা রাখা। এই ধরণের ব্যক্তি সর্ব সম্মতিক্রমে কাফের বলে গণ্য।
৩. মুশরিককে মুশরিক বা কাফেরকে কাফের না বলা বা তাদের কুফরিতে সন্দেহ পোষণ করা কিংবা তাদের ধর্মকে সঠিক ভাবা।
৪. এই বিশ্বাস করা যে, অন্যের আদর্শ নবী (সা.) এর আদর্শের চাইতে অধিক পূর্ণাঙ্গ। কিংবা এই বিশ্বাস করা যে, অন্যের বিধান নবী (সা.) এর বিধান অপেক্ষা অধিক উত্তম। সে ব্যক্তি কাফের বলে গণ্য হবে।
৫. রাসূল (সা.) আনিত কোনো বস্তুকে ঘৃণার চোখে দেখা। এমতাবস্থায় সে কাফের বলে গণ্য হবে যদিও সে ওই বস্তুর উপর বাহ্যিকভাবে আমল করে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ইহা এ জন্যই যে, তারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিষয়কে ঘৃণা করেছে সুতরাং আল্লাহ তাদের আমলগুলোকে পণ্ড করে দিয়েছেন।’ (সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত : ৯)
৬. দ্বীনের কোনো বিষয় নিয়ে বা তার পুরস্কার কিংবা শাস্তিকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন, ‘(হে রাসূল) আপনি বলুন! তোমরা কি আল্লাহর সঙ্গে এবং রসূলের সঙ্গে ঠাট্টা করছিলে? কোনো প্রকার ওজর-আপত্তির অবতারণা কর না। তোমরা ঈমান আনায়নের পর আবার কুফরি করেছ।’ (সূরা তাওবাহ্, আয়াত : ৬৫-৬৬)
৭. যাদু-টোনা করা : যাদুর অন্যতম প্রকার হল তন্ত্র-মন্ত্রের সাহায্যে দু’জন মানুষের বন্ধন তৈরি করা বা তাদের মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন করা। সুতরাং যে ব্যক্তি যাদু করবে বা তাতে রাজি হবে সে কাফের বলে বিবেচিত হবে।
আল্লাহ তাআলার বলেন, ‘ওই দু’জন (হারূত-মারুত ফেরেস্তা) কাউকে যাদু শিক্ষা দিতেন না যতক্ষণ পর্যন্ত এই কথা না বলতেন, নিশ্চয় আমরা (তোমাদের জন্য) পরীক্ষা স্বরূপ। সুতরাং (আমাদের নিকট যাদু শিখে) কাফের হয়ো না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১০২)
৮. মুশরিকদেরকে মুসলমানদের বিরূদ্ধে সাহায্য সহযোগিতা করা।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের মধ্য হতে যে ওদের (অর্থাৎ বিধর্মীদের) সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই দলভূক্ত বলে গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ যালেমদেরকে হেদায়াত দান করেন না।’ (সূরা মায়েদা, আয়াত : ৫১)
৯. এ বিশ্বাস করা যে, কারও জন্য মুহাম্মাদ (সা.) এর শরীয়তের বাইরে থাকার অবকাশ রয়েছে। যেমন (এক শ্রেণীর ভণ্ড সূফীর ধারণা অনুপাতে) অবকাশ ছিল খিযির (আ.) এর জন্য মুসার (আ.) শরীয়ত হতে বাইরে থাকার। এ বিশ্বাসেও সে কাফের হয়ে যাবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্ম অন্বেষণ করবে তার থেকে তা গ্রহন করা হবে না। এবং সে পরকালে ক্ষতি গ্রস্তদের দলভূক্ত হবে।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)
১০. সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহর দ্বীন হতে বিমুখ থাকা। সে ব্যাপারে জ্ঞানার্জন না করা, তদানুযায়ী আমল না করা, এই ধরণের মন-মানষিকতার ব্যক্তিও কাফের বলে পরিগণিত হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ওই ব্যক্তি অপেক্ষা কে বেশি যালিম (অত্যাচারী) হতে পারে, যাকে উপদেশ দেওয়া হয়েছে স্বীয় প্রতিপালকের আয়াত সমূহ দ্বারা, অতঃপর সে উহা হতে বিমুখ হয়েছে? নিশ্চয় আমি অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী।’ (সূরা সাজদাহ, আয়াত : ২২)
কোনো লোক এ সকল বিষয়ে লিপ্ত হলে সে কাফের বলে বিবেচিত হবে, চাই সে মজা করার জন্য এ সকল কাজ করুক বা গুরুত্ব সহকারে করুক, সেচ্ছায় করুক বা ভয়ে করুক। অবশ্য কাউকে যদি বাধ্য করা হয়, তবে তার ব্যাপার আলাদ। এ সমস্ত ইসলাম বিধ্বংশ বিষয় অত্যন্ত মারাত্মক। তারপরও তা ব্যাপকভাবে এসব সংগঠিত হয়ে থাকে।
মুসলিম ব্যক্তির উপর অপরিহার্য কর্তব্য হল, এ সকল বিষয় থেকে সতর্ক থাকা। আমরা আল্লাহর নিকট তার ক্রোধ অবধারিতকারী বিষয় হতে এবং তার যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
©somewhere in net ltd.