![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ যুগেযুগে নবী বা রাসুলদেরকে প্রেরণ করেছেন পথভোলা মানুষদেরকে সৎপথে পরিচালিত করার জন্য। যখনই ধর্মের পথ থেকে মানুষ বিচ্যুত হয়েছে তখনই মহান আল্লাহ বিভিন্ন সমাজে নবী বা রসুলদের প্রেরণ করেছেন।
কখনও কখনও পৃথিবীতে একই সময়ে একাধিক নবীও ছিলেন। তাদের সকলের কাজই ছিল মানুষকে ধর্মের পথে আহবান করা, সত্যের পথে আহবান করা। কথাটি এভাবেও বলা যায় যে তাদের সকলেরই কাজ ছিল আল্লার নির্দেশিত সঠিক পথে মানুষকে আহবান করা এবং পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। যুগেযুগে নবী বা রাসুলগণ তাই করেছেন।
এ বিষয়টি আরো বেশি পরিস্কার হবে যদি আমরা মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)এর জীবন এবং সেই সময়কার আরবের সামাজিক অবস্থার দিকে দৃষ্টিপাত করি। মহানবী ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দে ২৯ আগস্ট যখন মক্কায় জন্ম গ্রহণ করলেন তখন মক্কার সামাজিক অবস্থা যারপর নেই খারাপ ছিল। সমাজে কোন শৃঙ্খলা ছিল না বললেই চলে। পরিবারে কোন কন্যাসন্তান জন্ম গ্রহণ করলে তাকে জীবিত কবর দেয়া হতো। হত্যার বদলে হত্যা ছিল তখনকার সমাজের রীতি। বাজি রেখে ঘোড়দৌড়, জুয়া খেলা, মদ্যপান ইত্যাদি ছিল অতি সাধারণ ঘটনা। দুর্বলের ওপর অত্যাচার, লুটতরাজ ইত্যাদি লোকের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। মহানবীর বয়স যখন চৌদ্দ বছর তখন ৫৮৪ খ্রীষ্টাব্দে মক্কায় কুরাইশ, বনি হাশিম, বনি তাঈম প্রভৃতি গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় এবং মহানবীর বয়স যখন বিশ বছর তখন এ যুদ্ধ শেষ হয়। যুদ্ধে সকল পক্ষই ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুদ্ধ করতে করতে সকলেই যখন একটি অসহনীয় অবস্থার মধ্যে পড়ে তখন মহানবী তার কনিষ্ঠ চাচা আবদুল্লাহ যেয়াদকে সাথে নিয়ে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব করেন এবং এক চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হয়। এই চুক্তি কার্যকর করার জন্য হালফুল ফুজল নামক একটি সমিতি গঠিত হয় মহানবী এই সমিতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। হালফুজলকে কেন্দ্র করে মহানবীর সেবা ধর্মের খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কোথায় কোন দুর্গতের সাহায্যের প্রয়োজন, কোথায় কোন এতিম, বিধবা অসহায় অবস্থায় পড়ে আছে, কোথায় কোন বিদেশি পথিক অত্যাচারিত হচ্ছে, কোথয় কেন ব্যক্তি রোগাক্রন্ত হয়ে পড়ে আছে তিনি সেখানে ছুটে যেতেন এবং প্রতিকারের চেষ্টা করতেন। তিনি চেষ্টা করেছেন সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য এবং সকলের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষা করার জন্য। বাল্যকাল থেকেই মহানবীর স্বভাবের মাধুর্য, বুদ্ধি, সততা, ন্যায়নিষ্ঠা, ত্যাগ এবং মানব হিতৈষণার জন্য পরম বিশ্বস্ত বা আল-আমিন নামে খ্যাত ছিলেন। মহানবীর নিষ্কলঙ্ক সততা এবং অকৃত্রিম মানব সেবা সেই অন্ধকার যুগেও নীতিজ্ঞনহীন মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধার ভাব জাগিয়ে তুলেছিল। মহানবী ছিলেন অন্ধকার আরব সমাজে আলোর দ্যুতি।
মহানবী ছোটবেলা থেকেই প্রত্যক্ষ করেছেন সমাজের অন্ধকার, অনাচার, যুলুম এবং ভেবেছেন এই পথভোলা মানুষদেরকে কিভাবে সৎপথে পরিচালিত করা যায়, কিভাবে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়। চিনতে চেষ্টা করেছেন কে তার উপাস্য। আর তাই নির্জন হেরা পর্বতের গুহায় গিয়ে তিনি ধ্যান করেছেন এবং চল্লিশ বছর বয়সে সত্য পথের সন্ধান পেলেন। পেলেন পবিত্র কুরআন। প্রচার করলেন শান্তির অমোঘ বাণী, প্রতিষ্ঠা করলেন ইসলাম। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পারলৌকিক মুক্তির কথা বলে। ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। পৃথিবীতে মানুষ তার জীবনকে কিভাবে পরিচালিত করবে তার পরিপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে ইসলামে। ইসলামের মূল পাঁচ স্তম্ভের পাশাপাশি, মানুষের আচার আচোরণ, চলাফেরা , খাওয়াদাওয়া, নৈতিকতা, মানবতাবোধ, দেশপ্রেম, মানবিক দায়িত্ব কর্তব্য, কি করা উচিত, কি করা অনুচিত, কি করতে হবে, কি করা যাবে না অর্থাৎ একজন মানুষ প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি দিন কিভাবে যাপন করবে তার পূর্ণঙ্গ বর্ণনা ইসলামে রয়েছে। আর সে কারণেই ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান বলা হয়। ইসলাম ইহলোককে প্রথমে স্থান দিয়েছে। পৃথিবীকে বলা হয়েছে পরকালের সশ্য ক্ষেত্র। পৃথিবীতে কৃত কর্মের ফল পাওয়া যাবে পরলোকে। জীবনকে শুধু কলেমা, নামাজ, রোজা হজ্জ্ব যাকতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, প্রতিদিনের অন্যান্য কাজেও ইসলামের বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। শুধু আল্লার হক আদায় করলেই চলবে না সৃষ্টির হকও আদায় করতে হবে। আল্লাহর হক আদায় না করার কারণে যে অপরাধ হয় আল্লাহ ইচ্ছে করলে তা মাফ করে দিতে পারেন কিন্তু কোন বান্দার হক আদায় নাকরে তার বিরুদ্ধে কোন অপরাধ করা হলে ঐ ব্যক্তি মাফ না করলে আল্লাহ তা মাফ করবেন না, এমন কথা পবিত্র হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে। সুতরাং ইসলাম সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
বিভিন্ন বক্তা যারা ওয়াজ মাহফিলে ইসলামি বিধিবিধান বিষয়ে বক্তব্য রাখেন তাদের কথা শুনে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে এমন একটি ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে পরলোকই সব। ইহলোকের সময়ের ব্যাপ্তি পরলোকের সময়ের তুলনায় চোখের পলকের মত খুবই নগন্য সময় সুুতরাং এই স্বল্প সময়ের পৃথিবীর জন্য তেমন কিছু নাকরাই ভালো। সম্পদের পরিমাণ কম থাকলে পরকালে হিসাব দেয়া অনেক সহজ হয় ইত্যাদি।পৃথিবীতে কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব ও যাকাত শক্ত করে আকড়ে থাকতে পারলেই পরকালের মুক্তি অবশ্যম্ভাবী। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ নামাজ ও যাকাতকে সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। নামাজকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এজন্য যে নামাজ মানুষকে সকল অন্যায় থেকে বিরত রাখে। অপর দিকে যাকাতের অর্থ মহান আল্লাহর নিকট যায় না। যাকাতের অর্থ যায় সহায় সম্বলহীন দরিদ্র মানুষের কাছে। দরিদ্র মানুষের দারিদ্র্য ঘোচে। যদি সকল মানুষ নামাজি হয় আর সকল নামাজি মানুষ যদি অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে এবং সকল ধনবান ব্যক্তি, যাদের ওপর যাকাত ফরজ তারা যদি যাকাত আদায় করে তাহলে পৃথিবীতে যারপর নেই শান্তি বিরাজ করবে। কালেমা ইসলামে দাখেল হবার পূর্বশর্ত। রোজার মাধ্যমে ক্ষুধার্তের কষ্ট বোঝা যায় আর হজ্জ্বের মাধ্যমে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলামের এসকল বিধান পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং পারলৌকিক মুক্তি জন্য। শুধু পারলৌকিক কল্যাণ সাধনই ইসলামের একমাত্র উদ্দেশ্য হতো তা হলে হযরত আদম (আঃ) কে আল্লাহ বেহেশত হতে পৃথিবীতে পাঠাতেন না। সুতরাং মহান আল্লাহর নিকট পৃথিবীর পৃথক গুরুত্ব আছে।
ইসলাম পবিত্র কুরআন ও হাদিসে রয়েছে সৎকাজের আদেশ আর অসৎ কাজের নিষেধ। এগুলো মহান আল্লাহর দেয়া কতগুলো বিধিবিধানের সমষ্টি মাত্র। আজ ইসলাম বিশ্বের অনেক জাতির কাছে অপছন্দের এবং ভয়ের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর জন্য ইসলাম দায়ী নয়। এর জন্য দায়ি কতিপয় ব্যক্তি যারা মুসলিম হয়েও মানুষকে বিপদগ্রস্ত, মানব সভ্যতার ক্ষতি করে। মাত্রাতিরিক্ত অনুভূতি প্রবণ এসকল মানুষ সামান্য কিছু হলে তাকে বিশাল একটি কিছু বানিয়ে মহূর্তের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়ে। ইসলামের বিরুদ্ধে কোন গুজব বা কোন রটনা শুনলেও তারা ঘটনার সত্যতা যাচাই হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করেনা। শোনা মাত্রই আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে বসে। সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলায় কোন এক অখ্যাত নাট্যকারের লেখা নাটকের মঞ্চায়ন নিয়ে ঘটে গেল এক মধ্যযুগীয় ঘটনা। উপস্থিত দর্শকগণ নাকি মহানবীর অবমাননা করা হচ্ছে নাটকের মাধ্যমে এই অভিযোগে নাটকটি বন্ধ করে দেয়। তখন আর তেমন কিছু ঘটে না। কিন্তু দুদিন পরে এ বিষয়ক সংবাদ যখন একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তখন কতিপয় ব্যক্তি মানুষের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এক মুসলিম পরিবারের গৃহে রক্ষিত পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন শরিফ পুড়ে যায়। এতে কি ইসলামের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হল? একজন মুসলিমের দায়িত্ব আইন মেনে চলা সমাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখা। যারা এই ধ্বংসাত্মক কাজের সাথে জড়িত তারা নিজেরাও জানেনা আসলে প্রকৃত ঘটনা কি। তাদের উচিত ছিল, ধৈর্যধারণ করা বিষয়টি আগে জানা। যদি সত্যি সত্যি এধরণের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে আদালতে মামলা করা, আদালত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। সকলেই নিজের হাতে আইন তুলে নিলে সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। সকল সময় ধৈর্যধারণ করা একজন দীনদার ব্যক্তির কর্তব্য। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন নিশ্চই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। যেসকল লোক ধৈর্য ধারণ করেনা, তাদের প্রতি আল্লার সমর্থন থাকেনা। আর যাদের প্রতি আল্লাহর সমর্থন নেই, তাদের ডাকে সাড়া দেয়া মুসলিম উম্মার জন্য পাপ।
আমরা যারা মুসলিম আমাদের ভাবতে হবে ইসলামের আদর্শ কি, মহানবী তার নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে কি কাজ করেছেন এবং নবুয়ত প্রাপ্তির পরে কি করেছেন, আমাদের জন্য তার কি নির্দেশনা। মহানবী সারা জীবন সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন এবং নিজে নবুয়ত প্রাপ্তি পূর্বেও দ্বন্দ্ব নিরসনে কাজ করেছেন যা আমরা তার জীবনী বা ইতিহাস পড়লে জানতে পারি। মহানবী সাম্যের বাণী, সম্প্রীতির বাণী প্রচার করেছেন। বিদায়হজ্জ্বে প্রথম অংশ জুড়ে রয়েছে সাম্যের কথা সম্প্রীতির কথা, শেষ অংশে রয়েছে নামাজ রোজার কথা। আমাদের সকলের কর্তব্য হোক মহানবীর চরিত্রাদর্শ অনুসরণ করা সমাজে সাম্য ভ্রাতৃত্ব ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ যুগেযুগে নবী বা রাসুলদেরকে প্রেরণ করেছেন পথভোলা মানুষদেরকে সৎপথে পরিচালিত করার জন্য। যখনই ধর্মের পথ থেকে মানুষ বিচ্যুত হয়েছে তখনই মহান আল্লাহ বিভিন্ন সমাজে নবী বা রসুলদের প্রেরণ করেছেন।
কখনও কখনও পৃথিবীতে একই সময়ে একাধিক নবীও ছিলেন। তাদের সকলের কাজই ছিল মানুষকে ধর্মের পথে আহবান করা, সত্যের পথে আহবান করা। কথাটি এভাবেও বলা যায় যে তাদের সকলেরই কাজ ছিল আল্লার নির্দেশিত সঠিক পথে মানুষকে আহবান করা এবং পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। যুগেযুগে নবী বা রাসুলগণ তাই করেছেন।
এ বিষয়টি আরো বেশি পরিস্কার হবে যদি আমরা মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)এর জীবন এবং সেই সময়কার আরবের সামাজিক অবস্থার দিকে দৃষ্টিপাত করি। মহানবী ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দে ২৯ আগস্ট যখন মক্কায় জন্ম গ্রহণ করলেন তখন মক্কার সামাজিক অবস্থা যারপর নেই খারাপ ছিল। সমাজে কোন শৃঙ্খলা ছিল না বললেই চলে। পরিবারে কোন কন্যাসন্তান জন্ম গ্রহণ করলে তাকে জীবিত কবর দেয়া হতো। হত্যার বদলে হত্যা ছিল তখনকার সমাজের রীতি। বাজি রেখে ঘোড়দৌড়, জুয়া খেলা, মদ্যপান ইত্যাদি ছিল অতি সাধারণ ঘটনা। দুর্বলের ওপর অত্যাচার, লুটতরাজ ইত্যাদি লোকের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। মহানবীর বয়স যখন চৌদ্দ বছর তখন ৫৮৪ খ্রীষ্টাব্দে মক্কায় কুরাইশ, বনি হাশিম, বনি তাঈম প্রভৃতি গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় এবং মহানবীর বয়স যখন বিশ বছর তখন এ যুদ্ধ শেষ হয়। যুদ্ধে সকল পক্ষই ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুদ্ধ করতে করতে সকলেই যখন একটি অসহনীয় অবস্থার মধ্যে পড়ে তখন মহানবী তার কনিষ্ঠ চাচা আবদুল্লাহ যেয়াদকে সাথে নিয়ে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব করেন এবং এক চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হয়। এই চুক্তি কার্যকর করার জন্য হালফুল ফুজল নামক একটি সমিতি গঠিত হয় মহানবী এই সমিতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। হালফুজলকে কেন্দ্র করে মহানবীর সেবা ধর্মের খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কোথায় কোন দুর্গতের সাহায্যের প্রয়োজন, কোথায় কোন এতিম, বিধবা অসহায় অবস্থায় পড়ে আছে, কোথায় কোন বিদেশি পথিক অত্যাচারিত হচ্ছে, কোথয় কেন ব্যক্তি রোগাক্রন্ত হয়ে পড়ে আছে তিনি সেখানে ছুটে যেতেন এবং প্রতিকারের চেষ্টা করতেন। তিনি চেষ্টা করেছেন সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য এবং সকলের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষা করার জন্য। বাল্যকাল থেকেই মহানবীর স্বভাবের মাধুর্য, বুদ্ধি, সততা, ন্যায়নিষ্ঠা, ত্যাগ এবং মানব হিতৈষণার জন্য পরম বিশ্বস্ত বা আল-আমিন নামে খ্যাত ছিলেন। মহানবীর নিষ্কলঙ্ক সততা এবং অকৃত্রিম মানব সেবা সেই অন্ধকার যুগেও নীতিজ্ঞনহীন মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধার ভাব জাগিয়ে তুলেছিল। মহানবী ছিলেন অন্ধকার আরব সমাজে আলোর দ্যুতি।
মহানবী ছোটবেলা থেকেই প্রত্যক্ষ করেছেন সমাজের অন্ধকার, অনাচার, যুলুম এবং ভেবেছেন এই পথভোলা মানুষদেরকে কিভাবে সৎপথে পরিচালিত করা যায়, কিভাবে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়। চিনতে চেষ্টা করেছেন কে তার উপাস্য। আর তাই নির্জন হেরা পর্বতের গুহায় গিয়ে তিনি ধ্যান করেছেন এবং চল্লিশ বছর বয়সে সত্য পথের সন্ধান পেলেন। পেলেন পবিত্র কুরআন। প্রচার করলেন শান্তির অমোঘ বাণী, প্রতিষ্ঠা করলেন ইসলাম। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পারলৌকিক মুক্তির কথা বলে। ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। পৃথিবীতে মানুষ তার জীবনকে কিভাবে পরিচালিত করবে তার পরিপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে ইসলামে। ইসলামের মূল পাঁচ স্তম্ভের পাশাপাশি, মানুষের আচার আচোরণ, চলাফেরা , খাওয়াদাওয়া, নৈতিকতা, মানবতাবোধ, দেশপ্রেম, মানবিক দায়িত্ব কর্তব্য, কি করা উচিত, কি করা অনুচিত, কি করতে হবে, কি করা যাবে না অর্থাৎ একজন মানুষ প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি দিন কিভাবে যাপন করবে তার পূর্ণঙ্গ বর্ণনা ইসলামে রয়েছে। আর সে কারণেই ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান বলা হয়। ইসলাম ইহলোককে প্রথমে স্থান দিয়েছে। পৃথিবীকে বলা হয়েছে পরকালের সশ্য ক্ষেত্র। পৃথিবীতে কৃত কর্মের ফল পাওয়া যাবে পরলোকে। জীবনকে শুধু কলেমা, নামাজ, রোজা হজ্জ্ব যাকতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, প্রতিদিনের অন্যান্য কাজেও ইসলামের বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। শুধু আল্লার হক আদায় করলেই চলবে না সৃষ্টির হকও আদায় করতে হবে। আল্লাহর হক আদায় না করার কারণে যে অপরাধ হয় আল্লাহ ইচ্ছে করলে তা মাফ করে দিতে পারেন কিন্তু কোন বান্দার হক আদায় নাকরে তার বিরুদ্ধে কোন অপরাধ করা হলে ঐ ব্যক্তি মাফ না করলে আল্লাহ তা মাফ করবেন না, এমন কথা পবিত্র হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে। সুতরাং ইসলাম সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
বিভিন্ন বক্তা যারা ওয়াজ মাহফিলে ইসলামি বিধিবিধান বিষয়ে বক্তব্য রাখেন তাদের কথা শুনে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে এমন একটি ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে পরলোকই সব। ইহলোকের সময়ের ব্যাপ্তি পরলোকের সময়ের তুলনায় চোখের পলকের মত খুবই নগন্য সময় সুুতরাং এই স্বল্প সময়ের পৃথিবীর জন্য তেমন কিছু নাকরাই ভালো। সম্পদের পরিমাণ কম থাকলে পরকালে হিসাব দেয়া অনেক সহজ হয় ইত্যাদি।পৃথিবীতে কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব ও যাকাত শক্ত করে আকড়ে থাকতে পারলেই পরকালের মুক্তি অবশ্যম্ভাবী। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ নামাজ ও যাকাতকে সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। নামাজকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এজন্য যে নামাজ মানুষকে সকল অন্যায় থেকে বিরত রাখে। অপর দিকে যাকাতের অর্থ মহান আল্লাহর নিকট যায় না। যাকাতের অর্থ যায় সহায় সম্বলহীন দরিদ্র মানুষের কাছে। দরিদ্র মানুষের দারিদ্র্য ঘোচে। যদি সকল মানুষ নামাজি হয় আর সকল নামাজি মানুষ যদি অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে এবং সকল ধনবান ব্যক্তি, যাদের ওপর যাকাত ফরজ তারা যদি যাকাত আদায় করে তাহলে পৃথিবীতে যারপর নেই শান্তি বিরাজ করবে। কালেমা ইসলামে দাখেল হবার পূর্বশর্ত। রোজার মাধ্যমে ক্ষুধার্তের কষ্ট বোঝা যায় আর হজ্জ্বের মাধ্যমে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলামের এসকল বিধান পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং পারলৌকিক মুক্তি জন্য। শুধু পারলৌকিক কল্যাণ সাধনই ইসলামের একমাত্র উদ্দেশ্য হতো তা হলে হযরত আদম (আঃ) কে আল্লাহ বেহেশত হতে পৃথিবীতে পাঠাতেন না। সুতরাং মহান আল্লাহর নিকট পৃথিবীর পৃথক গুরুত্ব আছে।
ইসলাম পবিত্র কুরআন ও হাদিসে রয়েছে সৎকাজের আদেশ আর অসৎ কাজের নিষেধ। এগুলো মহান আল্লাহর দেয়া কতগুলো বিধিবিধানের সমষ্টি মাত্র। আজ ইসলাম বিশ্বের অনেক জাতির কাছে অপছন্দের এবং ভয়ের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর জন্য ইসলাম দায়ী নয়। এর জন্য দায়ি কতিপয় ব্যক্তি যারা মুসলিম হয়েও মানুষকে বিপদগ্রস্ত, মানব সভ্যতার ক্ষতি করে। মাত্রাতিরিক্ত অনুভূতি প্রবণ এসকল মানুষ সামান্য কিছু হলে তাকে বিশাল একটি কিছু বানিয়ে মহূর্তের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়ে। ইসলামের বিরুদ্ধে কোন গুজব বা কোন রটনা শুনলেও তারা ঘটনার সত্যতা যাচাই হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করেনা। শোনা মাত্রই আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে বসে। সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলায় কোন এক অখ্যাত নাট্যকারের লেখা নাটকের মঞ্চায়ন নিয়ে ঘটে গেল এক মধ্যযুগীয় ঘটনা। উপস্থিত দর্শকগণ নাকি মহানবীর অবমাননা করা হচ্ছে নাটকের মাধ্যমে এই অভিযোগে নাটকটি বন্ধ করে দেয়। তখন আর তেমন কিছু ঘটে না। কিন্তু দুদিন পরে এ বিষয়ক সংবাদ যখন একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তখন কতিপয় ব্যক্তি মানুষের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এক মুসলিম পরিবারের গৃহে রক্ষিত পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন শরিফ পুড়ে যায়। এতে কি ইসলামের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হল? একজন মুসলিমের দায়িত্ব আইন মেনে চলা সমাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখা। যারা এই ধ্বংসাত্মক কাজের সাথে জড়িত তারা নিজেরাও জানেনা আসলে প্রকৃত ঘটনা কি। তাদের উচিত ছিল, ধৈর্যধারণ করা বিষয়টি আগে জানা। যদি সত্যি সত্যি এধরণের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে আদালতে মামলা করা, আদালত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। সকলেই নিজের হাতে আইন তুলে নিলে সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। সকল সময় ধৈর্যধারণ করা একজন দীনদার ব্যক্তির কর্তব্য। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন নিশ্চই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। যেসকল লোক ধৈর্য ধারণ করেনা, তাদের প্রতি আল্লার সমর্থন থাকেনা। আর যাদের প্রতি আল্লাহর সমর্থন নেই, তাদের ডাকে সাড়া দেয়া মুসলিম উম্মার জন্য পাপ।
আমরা যারা মুসলিম আমাদের ভাবতে হবে ইসলামের আদর্শ কি, মহানবী তার নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে কি কাজ করেছেন এবং নবুয়ত প্রাপ্তির পরে কি করেছেন, আমাদের জন্য তার কি নির্দেশনা। মহানবী সারা জীবন সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন এবং নিজে নবুয়ত প্রাপ্তি পূর্বেও দ্বন্দ্ব নিরসনে কাজ করেছেন যা আমরা তার জীবনী বা ইতিহাস পড়লে জানতে পারি। মহানবী সাম্যের বাণী, সম্প্রীতির বাণী প্রচার করেছেন। বিদায়হজ্জ্বে প্রথম অংশ জুড়ে রয়েছে সাম্যের কথা সম্প্রীতির কথা, শেষ অংশে রয়েছে নামাজ রোজার কথা। আমাদের সকলের কর্তব্য হোক মহানবীর চরিত্রাদর্শ অনুসরণ করা সমাজে সাম্য ভ্রাতৃত্ব ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
©somewhere in net ltd.