নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আত্মহত্যা কারো জীবনে কোন ফলাফল নয়।

bangla51214

মন ভাল নেই

bangla51214 › বিস্তারিত পোস্টঃ

আইলার পর এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি অনেক মানুষ

১৯ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৮

ভয়াভহ ঘূর্ণিঝড় আইলার তান্ডবে উপকূলীয় অঞ্চল লন্ডভন্ড হওয়ার ৪ বছর কেটে গেলেও খুলনার উপকূলীয় দাকোপ উপজেলার দু’টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে তিন হাজার অসহায় মানুষ অর্থের অভাবে ঘরে ফিরতে না পারায় আজও তারা বেড়ি বাঁধের ওপর ঝুপড়ি ঘর করে মানবেতর জীবন যাপন করে চলেছে। ঝড় থেমে যাওয়ার পর সরকারি-বেসরকারি ভাবে কিছু সাহায্য পেলেও এখন তাদের পাশে নেই কেউ। এলাকায় কাজ না থাকায় জীবন জীবিকার সন্ধানে অনেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে।

সরেজমিনে বেড়িবাঁধের ওপর বসবাসকারী এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫ মে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আইলার জলোচ্ছাসে বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় অঞ্চল দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা লন্ডভন্ড হয়। বিশেষ করে ৩২নং পোল্ডারে আইলার প্রবল জলোচ্ছাসে সুতারখালি ও কামারখোলা ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত নলিয়ান নদীর দুই পাশের ছোট-বড় ৭-৮টি গ্রামের সব ঘর-বাড়ি, গাছপালা, পশুপাখি মাটির সঙ্গে মিশে যায়। একই সঙ্গে খরোস্রোতা নলিয়ান নদীর গোড়ায় শিবসা’র মুখে ৯ ব্যান্ডের স্লুইচগেট এবং উড়ামুখো ও গোলবুনিয়া, দর্শণখালীর বেড়ি বাধ ভেঙ্গে বিস্তৃর্ণ গ্রামাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। তখন কামারখোলা ইউনিয়নের পশ্চিম শ্রীনগর গ্রাম থেকে শুরু করে নলিয়ান বাজার ও অপর পাড়ে গুনারী এলাকার মোট ২০ কিলোমিটার বেড়িবাধের পাশে শ্রীনগর, পশ্চিম সুতারখালি, বাইনপাড়া, গাইনপাড়া, গাজীপাড়া, নলিয়ান ও গুনারী গ্রামগুলো জোয়ারের পানিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়, আবার ভাটায় জেগে ওঠে। যে কারণে এসব এলাকার ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে পড়ায় ও গাছপালা মরে বিলান ভুমিতে পরিণত হয়। তখন বাধ্য হয়ে সেখানকার মানুষরা পাশেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ি বাধের (উচু জায়গা) ওপর ঝুপড়ি ঘর বেধে বসবাস শুরু করেন। পরে ২০১১ সালের ১১ ফেব্র“য়ারি উড়ামুখো ও দর্শণখালীর ভাঙ্গন দুটি পানি উন্নয়ন বোর্ড বেঁধে ফেলে। কিন্তু শিবসা নদী সংলগ্ন নলিয়ান নদীর গোড়ায় বাঁধ না দেওয়ায় প্রতিনিয়ত নদীর জোয়ারের পানিতে গ্রামগুলো তলিয়ে যায়। আর সে কারণে প্রায় ৬’শতাধিক পরিবারের প্রায় তিন হাজার মানুষ অদ্যবধি মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

ঝড়ের পর থেকে নলিয়ান নদীর পাশে বেড়ি বাধে বসবাসরত কামারখোলা ইউনিয়নের শ্রীনগর গ্রামের প্রভাতি মন্ডল বলেন, ‘ঝড়ে আমাগের বাড়িঘর সব ওইনদীতি গেছে। এহন স্বামী ছেলেপুলে নিয়ে এই বেড়িবাঁধ রাস্তার উপর কোন আশ্রয় নিছি। হ্যানে কোনো কাজ নেই। স্বামী গেছে ফকিরহাটে শ্রম দিতি। ঝড়ের পরে সরকার চাল দিয়ে সাহায্য করিলো। কিন্তু এখন আর কেউ আমাগে দ্যাখতেছে না।’ আরোতি রানী রায় (৪০) বলেন, আমার স্বামী আইলার পর কোথায় চলেগেছে। এখন ছেলেমেয়ে বাঁচাতি আমি নদীতি পোনা(রেনু) ধত্তি বাধ্য হচ্ছি। এইবার বোঝেন কেমন আছি।’ খুলনা শহরে নৈশপ্রহরি অচিন্ত্য মন্ডল(৩৫) বলেন,কয়েকদিন আগে ছুটিতে বাড়ি ফিরেছি ‘আজ আমাদের কোনো ঠিকানাও নেই, যাওয়ার যায়গাও নেই। বাড়িঘর, ঠিকানা, জন্ম মৃত্যু বিয়ে সবই এই বাধের সঙ্গে মিশে গেছে।’ গাজীপাড়ার বাঁধের উপর বসবাসকারী গাজী মুজিবর রহমান, খোরশেদ গাজী,আবু তাহের সরদার,কামরুল সানা বলেন, ঝড়ের পরেত্তে আজ চার বছর ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে কোন রকম বেঁচে আছি। এখন বাধ্য হয়ে সুন্দরবনে কাকড়া ধরা নৌকায় কিষেণ দিয়ে এবং নদীতে পোনা (রেণু) ধরে যা পাই তাই দিয়ে কোনো রকমে খেয়ে পরে বাঁচে আছি। সাতারখালি ইউনিয়নের গুনারী ২নং ওয়ার্ডের মেম্বর অবনি কুমার বৈদ্য বলেন, ‘আইলার পর আমাদের সুতারখালি ইউনিয়নের নলিয়ান নদীর দুই পাশে বাঁধের ওপর প্রায় ৫-৬’শ পরিবার ঝুপড়ি ঘর করে কোন রকম বসবাস করছে। ওই সময় সরকারের পক্ষ থেকে ঘর তৈরির জন্য কিছু লোককে ২০ হাজার করে টাকা দিয়ে ছিলো। কিন্তু ওই সময় তারা না খায়ে থাকার কারণে তারা ওই টাকা পেয়ে ঘর না বানিয়ে চাল ডাল কিনে খেয়ে ফেলেছে। তাছাড়া তাদের বসত ঘর বাড়ি আইলায় নদীর মদ্ধি চলে গেছে, তারা ঘর বানবে কোথায়। একই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য দেবব্রত মন্ডল বলেন, এখানকার মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা কাজের অভাব। তার ওপর খাওয়ার পানির ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। আর সবাই খোলা আকাশের নিচে পায়খানা করতে বাধ্য হচ্ছে। মাটি কাটা আর সুন্দরবনে যাওয়া ছাড়া তাগে আর কোনো কাজ নেই বললেই চলে। সুতারখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ হোসেন বলেন, সুতারখালি ইউনিয়নের ৬টি গ্রামের দুই হাজারের বেশি মানুষ ঝড়ের পর থেকে আজও ওয়াপদা রাস্তার ওপর বসবাস করছে। আবার অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। দ্রুত শিবসা মুখে বাধ না হলে ওই গ্রামগুলোর আর কোনো অস্তিত্ত্ব থাকবে না। আর এসব মানুষ ঘর-বাড়িও বাধতে পারবে না। তবে বর্তমানে তাদের পুর্নবাসনের জন্য একটা তালিকা তৈরির কাজ চলছে। বর্তমানে এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এটা সরকারি-বেসরকারি ভাবে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ঘরে ঘরে পানি বাহিত রোগ কলেরা, ডায়রিয়াসহ পেটের পীড়ায় মানুষ আকরান্ত হওয়ার সম্ভনা রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী আফিসার আবদুল হালিম বলেন, আইলার পর থেকে নলিয়ান নদীর দুই পাশে বাধের ওপর এখনও দুই শতাধিক পরিবার ওপর বসবাস করছে। ঘর বাধতে সরকার তাদের ২০ হাজার করে টাকা দিলেও তারা তা করেনি। তবে বর্তমানে সেখানে বসবাসরতদের একটা তালিকা তৈরির কাজ চলছে। সেটা হলে আমরা মন্ত্রণালয়ে সাহার্যের জন্য পাঠাবো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.