নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আত্মহত্যা কারো জীবনে কোন ফলাফল নয়।

bangla51214

মন ভাল নেই

bangla51214 › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘আমরা ভালো হতে চাই’

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:০৮

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম



ছবি:ফাইল ফটো



ঢাকা: `রাষ্ট্র, সমাজ এমনকি পরিবারও আমাদেক ছুড়ে ফেলেছে। অসামাজিক কাজ না করলে আমাদের খাবার জুটবে কীভাবে? সরকার আমাদের কাজ দিক, আমরা ভালো হতে চাই-’ কথাগুলো তৃতীয় লিঙ্গের বা থার্ড জেন্ডারের দুইজনের।



নারী ও পুরুষের বাইরে আরও একটি লিঙ্গের মানুষ আছেন, যাদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে বলা হয়। সাধারণভাবে যাদের আমরা ‘হিজড়া’ বলে চিনি, তারা সমাজ জীবনে অবহেলিত। শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য তাদের অনেক কিছুই করতে হয়, যা সমাজের চোখে অনৈতিক। তাদেরই দুজনকে রোববার মধ্যরাতে হোটেল সোনারগাঁও এলাকা থেকে আটক করা হয়।



তাদেরই দুইজন শিউলী ও সাদিয়াকে রাজধানীর রমনা মডেল থানায় আনা হলে বিড় বিড় করে বলতে থাকেন- ‘রাষ্ট্র, সমাজ এমনকি পরিবারও আমাদেক ছুড়ে ফেলেছে। অসামাজিক কাজ না করলে আমাদের খাবার জুটবে কীভাবে? সরকার আমাদের কাজ দিক, আমরা ভালো হতে চাই।’



রোববার দিনগত রাত ৩টায় সন্দেহজনক চলাফেরার কারণে তাদের আটক করেন রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুর রহমান।



থানায় আনা হলে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করে। তারা হাজতে যেতে রাজি নয়। ডিউটি অফিসারের রুমে বসে পড়েন তারা। পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের হাজতে যেতে বললে তারা ক্ষেপে যান। তাদের সামলাতে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কমল, অনুকূল চন্দ্র ও কনস্টেবল এনামুল হককে বেশ বেগ পেতে হয়। শেষে হার মেনে নেয় পুলিশই।



পুলিশের নির্দেশ না মানলে ধমক দেয় এএসআই কমল। এ সময় তারা অভিশাপ দিতে থাকেন তাকে। বলেন, “তোর পরিবারে যেন আমাদের মতো কেউ জন্ম নেয়। তখন বুঝবি হিজড়াদের কী যন্ত্রণা! পুলিশকে অভিশাপ দিতে দিতে হঠাৎই তাদের কণ্ঠ ভার হয়ে ওঠে। চোখের জল লুকানোর জন্য আঁচল নিয়ে চোখ মুছে নেন।”



সাদিয়া বলেন, “ও পুলিশ ভাই, আমাদের ছেড়ে দাও! আমরা তো কোনো অপরাধ করিনি। আমরা অসামাজিক কাজ করি বাধ্য হয়ে। সরকার কাজ দিক, আমরা ভালো হয়ে যাবো। আমাদের অযথা ধরে এনেছে।”



তখন এনামুল নামে কনস্টেবল বলে ওঠেন- “তোরা ছিনতাই করিস। তাই, ধরে এনেছে।” সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে ওঠে দু’জনই।



তারা চুরি, ছিনতাই করেন না বলে জানান। পরিবাগের ওভারব্রিজে যারা থাকে, তারা ছিনতাই করে। এ কথা শুনেই পুলিশটি ক্ষেপে যায়। বলে- “চুপ কর, বেশি কথা বলিস না।” তখন মুখের ওপর বলে এক হিজড়া বলে বসেন, “ক্ষেপেন ক্যা, ওরা কমিশন দেয় নাকি?”



সাদিয়ার বাড়ি ছিল সিলেট জেলার বিশ্বনাথ থানায়। বাড়ি থেকে বের করে দিলে ৭ বছর আগে ঢাকায় আসেন। কেন তাকে বের করে দিয়েছে, এ কথা জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জানান, এলাকার লোকজন নানান রকম কথা বলতো। তাতে পরিবারের লোকজন কষ্ট পেতো। তার পর মা আমাকে বলেছে, বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য। তা না হলে পরিবারের মানসম্মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ছোট বোনের বিয়ে আমার কারণেই আটকে ছিল। কেউ আত্মীয়তা করতে রাজি হচ্ছিল না।”



তাই, বাধ্য হয়েই ঢাকায় আসেন সাদিয়া। ভারতেও গিয়েছিলেন তিনি। একবছরের মতো ছিলেন হাওড়া রেল স্টেশন এলাকায়। সেখানে ব্যবসায়ীরা সকালে হিজড়াদের মুখ দেখে দোকান খোলে। সকালে লাইন করে হিজড়াদের সাহায্য দেয়। ভারতে নাকি বেশ ভালোই ছিলেন তিনি।



তাহলে বাংলাদেশে ফিরে আসলেন কেন? এ প্রশ্নের জবাবে সাদিয়া জানান, ভারতের কিছু খারাপ ছেলে আছে, তারা প্রতারণা করে। এমনকি মেরে ফেলতে দ্বিধা করে না। তাই, ফিরে এসেছেন ভয়ে।



বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা একেবারেই ভিন্ন। টাকা চাইলে গালি দিয়ে তাড়িয়ে দেয় বলেও জানান সাদিয়া। তাদের সমাজের কোথাও স্থান নেই। হোটেলে কিছু খেতে গেলে অনেকে ঢুকতে দেয় না।



সাদিয়ার সব আক্ষেপ সৃষ্টিকর্তা ও সরকারে ‌ওপর। বলেন, “একজন আমাদের অসহায় করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আরেকজন আমাদের জন্য কিছুই করেননি। স্কুলে ভর্তি হলেও নানা রকম বঞ্চনা সইতে না পেরে ষষ্ঠ শ্রেণির পর পড়া হয় নি আর। একটু বড় হলে হিজড়ার ভাব প্রকাশ হয়ে পড়লে স্কুল থেকেও তাড়িয়ে দিয়েছে আমাকে।”



রাত-বিরাতে ঘুরতে ভালো লাগে না জানিয়ে চাকরির জন্য আকুতি জানায় তারা। কাজ করেই খেতে চান। আর সমাজের কাছে মানুষ হিসেবে মর্যাদা পেতে চান। বলেন সাদিয়া, “আমাদের কেন ঘৃণা করা হবে? আমরা তো আর ইচ্ছা করে হিজড়া হইনি!”



ডিউটি অফিসার অনুকূল চন্দ্র তাদের থানায় আনা প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে জানান, “এখনও (তখন ভোর ৪টা) মামলা দেওয়া হয়নি। সকালে ওসি সাহেব আসলে তিনি সিদ্ধান্ত দেবেন, কী করবেন।”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.