নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জন্ম:১৯৯২ মৃত্যু:২০..

কোন্ দূর কুহকের কূল লক্ষ্য করি ছুটিতেছে নাবিকের হৃদয়-মাস্তুল কে বা তাহা জানে! অচিন আকাশ তারে কোন্ কথা কয় কানে কানে

বারিদ

আকাশে আলো আসতে দাও,মেঘ ঢেকেছে আকাশে .......

বারিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্জনতম কবি জীবনানন্দ দাশ

১৯ শে জুলাই, ২০১১ সকাল ১০:৩০

যারা বাংলা কবিতা পড়েন,তারা নিশ্চয়ই জীবনানন্দ দাশের কবিতার সাথে পরিচিত।তার জন্ম ১৭ ফেব্রুয়ারী ১৮৯৯, মৃত্যু ২২ অক্টোবর ১৯৫৪। পিতা সত্যানন্দ দাশ এবং মাতা কবি কুসুমকুমারী দেবী।তাঁর মৃত্যুকাহিনি বেশ অদ্ভুত।কবি এতই অন্যমনস্ক ছিলেন যে কলকাতার এক মন্থরগতি ট্রামের ধাক্কায় আহত হয়ে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।





জীবনানন্দ দাশ আমার প্রিয় কবি।আজ আমার প্রিয় জীবনানন্দ দাশের কিছু কবিতার লাইন শেয়ার করছি।





সারাটি রাত্রি তারাটির সাথে তারাটিরই কথা হয়



চোখদুটো ঘুমে ভরে

ঝরা ফসলের গান বুকে নিয়ে আজ ফিরে যাই ঘরে!

ফুরায়ে গিয়েছে যা ছিল গোপন- স্বপন কদিন রয়!

এসেছে গোধূলি গোলাপীবরণ-এ তবু গোধূলি নয়!

সারাটি রাত্রি তারাটির সাথে তারাটিরই কথা হয়,

আমাদের মুখ সারাটি রাত্রি মাটির বুকের পরে!



চোখদুটো যে নিশি ঢের-

এত দিন তবু অন্ধকারের পাই নি তো কোনো টের!



নাবিক



কোন্ দূর কুহকের কূল

লক্ষ্য করি ছুটিতেছে নাবিকের হৃদয়-মাস্তুল

কে বা তাহা জানে!

অচিন আকাশ তারে কোন্ কথা কয় কানে কানে!



তোমায় আমি



তোমায় আমি দেখেছিলাম ব’লে

তুমি আমার পদ্মপাতা হলে;

শিশির কণার মতন শূন্যে ঘুরে

শুনেছিলাম পদ্মপত্র আছে অনেক দূরে।



আকাশলীনা





সুরঞ্জনা, অইখানে যেয়োনাকো তুমি,

বোলোনাকো কথা অই যুবকের সাথে;

ফিরে এসো সুরঞ্জনা :

নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;



ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে;

ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;

দূর থেকে দূরে - আরও দূরে

যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর।



কী কথা তাহার সাথে? - তার সাথে!

আকাশের আড়ালে আকাশে

মৃত্তিকার মতো তুমি আজ :

তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।



সুরঞ্জনা,

তোমার হৃদয় আজ ঘাস :

বাতাসের ওপারে বাতাস -

আকাশের ওপারে আকাশ।



সে



আমাকে সে নিয়েছিলো ডেকে;

বলেছিলো: ‘এ নদীর জল

তোমার চোখের মত ম্লান বেতফল:



আট বছর আগের একদিন



শোনা গেল লাশকাটা ঘরে

নিয়ে গেছে তারে;

কাল রাতে - ফাল্গুনের রাতের আধাঁরে



যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ

মরিবার হল তার সাধ। বধূ শুয়ে ছিল পাশে - শিশুটিও ছিল;

প্রেম ছিল,আশা ছিল-জোৎসনায়,-তবে সে দেখিল

কোন ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেলো তার?

অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল - লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।

এই ঘুম চেয়েছিলো বুঝি!



লোকেন বোসের জর্নাল



সুজাতাকে ভালোবাসতাম আমি —

এখনো কি ভালোবাসি?

সেটা অবসরে ভাববার কথা,

অবসর তবু নেই;

তবু একদিন হেমন্ত এলে অবকাশ পাওয়া যাবে

এখন শেলফে চার্বাক ফ্রয়েড প্লেটো পাভলভ ভাবে

সুজাতাকে আমি ভালোবাসি কি না।



হায় চিল





হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে

তুমি আর কেঁদোনাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে!

তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে।

পৃথিবীর রাঙ্গা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে;

আবার তাহারে কেন ডেকে আনো?

কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!



হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে

তুমি আর কেঁদোনাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে!



বনলতা সেন





হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,

সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয়-সাগরে

অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগতে

সেখানে ছিলাম আমি; আরও দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;

আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,

আমারে দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন ।



চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,

মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের পর

হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা

সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,

তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, 'এতদিন কোথায় ছিলেন?'

পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।



সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মত

সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;

পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পান্ডুলিপি করে আয়োজন

তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;

সব পাখি ঘরে আসে - সব নদী - ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;

থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।



ক্যাম্পে



এখানে বনের কাছে ক্যাম্প আমি ফেলিয়াছি;

সারারাত দখিনা বাতাসে

আকাশের চাঁদের আলোয়

এক ঘাইহরিণীর ডাকে শুনি –

কাহারে সে ডাকে!



এইসব দিনরাএি



মনে হয় এর চেয়ে অন্ধকারে ডুবে যাওয়া ভাল।

এইখানে-

পৃথিবীর এই ক্লান্ত অশান্ত কিনারের দেশে,

এখানে আশ্চর্য সব মানুষ রয়েছে।



বাংলার মুখ





বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ

খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে

চেয়ে দেখি ছাতার মতো ব্ড় পাতাটির নিচে বসে আছে

ভোরের দয়েলপাখি - চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ

জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশথের করে আছে চুপ;

ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;

মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে

এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ



দেখেছিল; বেহুলাও একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে -

কৃষ্ণা-দ্বাদশীর জোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চড়ায় -

সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,

শ্যামার নরম গান শুনেছিল - একদিন অমরায় গিয়ে

ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়

বাংলার নদ-নদী-ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।



আবার আসিব ফিরে





আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে - এই বাংলায়

হয়তো মানুষ নয় - হয়তো বা শাঁখচিল শালিকের বেশে,

হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিঁকের নবান্নের দেশে

কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়।

হয়তো বা হাঁস হবো - কিশোরীর - ঘুঙুর রহিবে লাল পায়

সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে।

আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে

জলঙ্গীর ঢেউ এ ভেজা বাংলারি সবুজ করুণ ডাঙ্গায়।



হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে।

হয়তো শুনিবে এক লক্ষীপেঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে।

হয়তো খৈয়ের ধান সরাতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে।

রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে

ডিঙ্গা বায় - রাঙ্গা মেঘে সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে,

দেখিবে ধবল বক; আমারে পাবে তুমি ইহাদের ভীড়ে।



জীবনানন্দ দাশের লেখা আমার প্রিয় কবিতা হচ্ছে-



রাতের আধাঁরে নীল



রাতের আধাঁরে নীল নিরব সাগরে,

আমাদের এ জীবণ সাগরের দূরগামী জাহাজের মত,

কী করে কখন

অতিদূর থেকে ভেসে আসে।



কোথায় সে ছিল

কবে ভূল তারকায়।



সাগরের রাঙ্গা নীল জলকাকলিতে

ডের মৃত,ডের অনৃতে-

কুহুলীন দ্বীপের আভাসে

হে নাবিক-

হে মানব রজনীর আধাঁর বন্দিনী জানি-

তবু যুগে যুগে

কেউ জেনেছ কী,

তুমি আছ

শুনেছ কী সাগরের ঢেউ?



শঙ্খরেখায় ঘুরে আধাঁরে আধাঁরে-

দূর দ্বীপ মাধুরীর পারে,

আরও আশা আলো ভালবাসি।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.