নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খুবই সাধারন একজন মানুষ । পড়া যার নেশা । পড়ার এবং জানার আশায় ----

মোহামমদ কামরুজজামান

মোহামমদ কামরুজজামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

" তালাক " - ইসলামের এবং মানব জীবনের সবচেয়ে নিকৃষ্ঠতম হালাল কাজ।সর্বাবস্থায় এবং শেষপর্যন্ত নর-নারী প্রত্যেকেরই যা পরিহার করাই সর্বোত্তম পন্থা।(মানব জীবন - ৭)।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৪৬


ছবি - pinterest.com

পরিণত বয়সে একজন নারী,একজন পুরুষ অনেক আশা-আকাংখা এবং ভবিষ্যতের সুখ-স্বপ্নে বিভোর হয়ে বিবাহ নামক একটি পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয় তিন অক্ষরের একটি শব্দ "কবুল" বলার মাধ্যমে। এর মাঝে প্রতিজ্ঞা করা হয় সুখে-দুঃখে আমৃত্যু একসাথে থাকার এবং তার সাথে সাথে দাম্প্যত্য জীবনে তাদের পথচলা শুরু হয় স্বামী-স্ত্রী হিসাবে।যার মাধ্যমে উভয়েই প্রতিজ্ঞা করে একের সুখে সুখী,দুঃখে দুঃখী হবার। দাম্প্যত্য জীবনে তথা সংসারে বেশীরভাগ স্বামী-স্ত্রী'ই সাফল্যের, সাথে সুখে-দুঃখে আমৃত্যু একসাথে এক জীবন কাটিয়ে দিতে পারলেও কারো কারো জীবনে নেমে আসে নানা কারনে অশান্তি -অসুখের কালো মেঘ। সংসারের জটিলতায়,নানা ঘটনা-দূর্ঘটনা,অবস্থা-পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে, মানষিক টানা-পোড়ন, মানিয়ে নেয়া-মানিয়ে চলার মানষিকতার অভাবে,ত্যাগ-সমঝোতার অনুপস্থিতি ,ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব , সামাজিক-মানষিক অবস্থা ও পরিস্থিতির বৈষম্য,শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন,পরিবারের বাকী সদস্যদের সাথে মানিয়ে চলার অক্ষমতা ইত্যাদি নানা কারনে ধীরে ধীরে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে দ্বন্দ্ব-মতবিরোধ তৈরী হতে থাকে ।

এসব দ্বন্দ্ব-সংঘাতেের সাথে সাথে মত-মনের অমিল ও নানা ঘটনার প্রেক্ষাপটে ছোট খাট ঘটনা মহিরুহ আকার ধারন করে এবং একটা সময় আর স্বামী-স্ত্রী কেউ কাউকে সহ্য করতে পারেনা। উভয়ের মাঝে তৈরী হয় ব্যাপক মানষিক দূরত্ব।আর এই দূরত্ব বাড়তে বাড়তে একসময় তা অনতিক্রম্য হয়ে উঠে ।আর এভাবে চলতে চলতে একটা সময় স্বামী-স্ত্রী কেউ কারোর ছায়াও সহ্য করতে পারেনা ,তখন তাদের মাঝে বেজে উঠে বিচেছদের করুন সূর।তখনই হয় স্বামী মুক্তি পেতে চায় তিন অক্ষরের একটি শব্দ "তালাক" বলার মাধ্যমে অথবা স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে মুক্তি পেতে চায় "তালাক" নামের আইনি কিছু প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার মাধ্যমে।তিন অক্ষরের একটি শব্দ "কবুল" বলার মাধ্যমে যেখানে উভয়ে উভয়ের জন্য হয়েছিল হালাল,গড়ে উঠেছিল আত্মার সম্পর্ক সেখানে তিন অক্ষরের একটি শব্দ "তালাক" বলার মাধ্যমে উভয়ের সাথে উভয়ের সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে হয়ে যায় উভয়ে উভয়ের জন্য হারাম তথা প্রতিপক্ষ।কেন এবং কিসের অভাবে তাদের জীবনে নেমে আসে এ অমানিশা যার ফলে বিবাহের পবিত্র সম্পর্ক এবং ভালবাসাময় পারিবারিক সম্পর্ক ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় এবং মহান আল্লাহপাক ও তার রাসুল (সঃ)তা অপছন্দ করলেও ধর্মে কেন এবং কোন অবস্থায় তালাকের অনুমতি দেয়া আছে তা আমাদের সবার জানা আবশ্যক।

বিবাহ শুধু সামাজিক একটি প্রথা বা রীতিনীতিই নয়, বরং এটি একটি মহৎ ইবাদত। এটি আল্লাহর হুকুম ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ অনুযায়ী করলে সাওয়াবও হয়। অন্য বিধানের মতো বিবাহও ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। তাই অন্য বিধান পালনে যেরূপ সে বিষয়ের জ্ঞান থাকা অপরিহার্য, যথা নামাজের জন্য তার আনুষঙ্গিক বিধান জানতে হয়, তদ্রূপ বিবাহ করতে হলেও তার আনুষঙ্গিক বিধানাবলি অবশ্যই জানতে হবে। দাম্পত্য জীবনের আচরণবিধি সম্পর্কে বিবাহের আগেই জ্ঞানার্জন করতে হবে। এটি এমন একটি সম্পর্ক যা মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাকে কিভাবে সঠিকভাবে টিকিয়ে রাখা যায়, কিভাবে সম্পর্কের উন্নয়ন হবে, আল্লাহ না করুন যদি সম্পর্কের অবনতি হয়, তাহলে কিরূপে মিল হবে অথবা জীবনের তাগিদে যদি সম্পর্ক ছিন্ন তথা তালাক দিতে হয়, তাহলে কিভাবে দিতে হবে-এরূপ যাবতীয় বিষয়ে জ্ঞানার্জন আবশ্যক। নচেৎ মনগড়া ও প্রচলিত ভুল রীতি অবলম্বনে নিজের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই ধ্বংসের দিকে চলে যাবে। পৃথিবীটা সংকীর্ণ হয়ে আসবে। নিজের অজ্ঞতার খেসারতই নিজেসহ গোটা পরিবার ও সমাজ ভোগ করবে।


ছবি - sodomalaw.com

তালাক অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়। কেউ এর অপব্যবহার করলে কিংবা ভুল পন্থায় তা প্রয়োগ করলে সে একদিকে যেমন গুনাহগার হবে, অন্যদিকে তালাকও কার্যকর হয়ে যাবে। তাই প্রত্যেক বিবেচক স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব হলো তালাকের শব্দ কিংবা এর সমার্থক কোনো শব্দ মুখে উচ্চারণ করা থেকে সতর্কতার সঙ্গে বিরত থাকা। অতি প্রয়োজন ছাড়া স্বামীর জন্য যেমন তালাক দেওয়া জায়েজ নয়, তেমনি স্ত্রীর জন্যও তালাক চাওয়া নিষিদ্ধ। তালাকের পথ খোলা রাখা হয়েছে শুধু অতি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য। বর্তমান সমাজে, বিশেষ করে আমাদের সমাজে কোনো পরিবারে তালাকের ঘটনা যে কত বিশৃঙ্খলা, জুলুম, অত্যাচার এবং ঝগড়া-বিবাদের কারণ হয় তা বলে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। বিষয়টি যতটাই স্পর্শকাতর, আমাদের সমাজে দিন দিন ততটাই তার ব্যবহার বেড়ে চলছে।আর বিবাহ বিচ্ছেদের প্রভাব যে শুধু নর-নারীর মানসিক অবস্থার ওপরেই পড়ে তা নয়, শারীরিক ভাবেও ক্ষতি হয়।বিবাহ বিচ্ছেদের মতো মানসিক ঝড় নর-নারীর জন্য বড় ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যাও তৈরি করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল হওয়া, হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া, ঘুমের প্রচণ্ড অবনতি, প্রচন্ত মানসিক অস্বস্তি ও হতাশা এদের মধ্যে অন্যতম।তার সাথে সাথে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ হলে তার সব চেয়ে বড় প্রভাব গিয়ে পরে তাদের সন্তানদের ওপর।বাবা-ময়ের বিচ্ছেদ অনিশ্চিত করে দেয় অনেক ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যত।আর এর ফলে এইসব পরিবারের ছেলেমেয়েদের সামাজিকীকরণ ব্যাহত হয়। তারা সবসময় একধরনের মানসিক চাপের মধ্যে থাকে।এর ওপর তাদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ বা সামাজিকীকরণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।ফলে সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠার জন্য যে ধরনের পরিবেশের মধ্যে থাকা দরকার তা থেকে তারা বঞ্চিত হয়।


ছবি - sodomalaw.com

তালাক কি - তালাক শব্দের অর্থ বিচ্ছিন্নতা বা ত্যাগ করা। ইসলাম ধর্মে আনুষ্ঠানিক বিবাহ বিচ্ছেদকে তালাক বলা হয়।স্বামী সর্বাবস্থায় তালাক দিতে পারেন।স্ত্রী শুধুমাত্র তখনই তালাক দিতে পারবেন, যদি বিয়ের সময় এর লিখিত অনুমতি দেওয়া হয় বা কিছু প্রক্রিয়া অনুসরন করে।শরীয়তের পরিভাষায় তালাক অর্থ "বিবাহের বাঁধন তুলিয়া ও খুলিয়া দেওয়া, বা বিবাহের শক্ত বাঁধন খুলিয়া দেওয়া "স্বামী-স্ত্রীর সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে দেওয়া।

জীবনে চুড়ান্ত বিপর্যয় থেকে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে রক্ষার জন্য ইসলামে তালাকের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন চরমভাবে বিরোধ দেখা দেয়,পরস্পর মিলে মিশে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে শান্তিপূর্ণ ও মাধুর্য মন্ডিত জীবন যাপন যখন একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়,পারস্পারিক সম্পর্ক যখন হয়ে পড়ে তিক্ত,বিষাক্ত।একজনের মন যখন অপরজন থেকে এমন ভাবে বিমূখ হয়ে যায় যে,তাদের শুভ মিলনের আর কোন সম্ভাবনা থাকেনা,ঠিক তখনই এই চূড়ান্ত পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইসলামে। তালাক হচ্ছে নিরুপায়ের উপায়। স্বামী স্ত্রী পরস্পরকে বেঁধে রাখার শেষ চেষ্টাও যখন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় তখন সেখানে তালাক সর্বশেষ উপায়।


ছবি - news.virginia.edu

বর্তমান সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদ কেন বেড়ে চলছে - এখানে একটি প্রশ্ন, বর্তমান সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদ প্রবণতা কেন ক্রমাগত ভাবে বেড়ে চলছে? সমাজবিজ্ঞানীরা নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নানা কারণ বর্ণনা করেন। তবে যে কথাটি প্রায় সবাই বলছেন তা হচ্ছে - ধর্মীয় অনুশাসনের ও মূল্যবোধের অভাব। ধর্মীয় অনুশাসনের বিষয়টি অনেক বিস্তৃত। বিশ্বাস ও মূল্যবোধ, জীবনদর্শন, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক, একে অপরের হক সম্পর্কে সচেতনতা - এ সবই ধর্মীয় অনুশাসনের অন্তর্ভুক্ত। এরপর পর্দা রক্ষা, পরপুরুষ বা পরনারীর সঙ্গে মেলামেশা থেকে বিরত থাকা ইত্যাদিও বিশেষ ধর্মীয় অনুশাসন, যা পালন না করাও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতির কারণ। গবেষণা-পরিসংখ্যান বলছে,বেশীরভাগ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে পরকীয়ার জেরে। কোনো ক্ষেত্রে স্বামীর পরকীয়া, কোনো ক্ষেত্রে স্ত্রীর। এ ছাড়া তথ্য-প্রযুক্তির প্রভাব, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আধুনিক সংস্কৃতির কারণেও সংসার ভাঙছে। বর্তমানে নর-নারী নির্বিশেষে বিদেশি চ্যানেল ও বিভিন্ন ধরনের সিরিয়াল দেখে সাংস্কৃতিক দিক থেকেও প্রভাবিত হচ্ছে।’

এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের করণীয় -

** ইসলামে যে সুসংহত জীবনব্যবস্থা রয়েছে, তার প্রতিটি অংশই অতি প্রয়োজনীয়। যে অংশ বাদ দেওয়া হবে তার কুফল ভোগ করতে হবে।স্বামী-স্ত্রী একে অন্যকে কোনোভাবেই কষ্ট না দেওয়া, প্রত্যেকে অন্যের হক রক্ষায় সচেষ্ট থাকা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। স্বামী ও স্ত্রী প্রত্যেকেরই রয়েছে কর্তব্য এবং অধিকার। নিজের কর্তব্য পালন আর অন্যের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট হলেই সবার মাঝে শান্তি আসবে এবং পরিবার রক্ষা পাবে ভাংগনের হাত থেকে।

** শুধু পরিবারকেন্দ্রিক ইসলামী অনুশাসনগুলোই নয়, সাধারণ অনুশাসনগুলো মেনে চলারও গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন—মাদকাসক্তিও অনেক পরিবারের ভাঙনের কারণ। মাদক ইসলামী বিধানে হারাম।তাই নার-নারী সকলকে সমাজের সাধারন অনুশাসনগুলোও মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে।

** নারী-পুরুষ উভয়ে যদি পর্দার বিধান মেনে চলে, তবে পরকীয়া জাতীয় কিছু ঘটার আশঙ্কা থাকবে না। পর্দা বলতে শুধু সামনের মানুষটির সঙ্গেই পর্দা নয় বরং এ ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট, মোবাইল ইত্যাদির মাধ্যমেও ব্যাপকভাবে পর্দা লঙ্ঘিত হয় এবং তাও একসময় সংসার ভাঙার কারণ হয়ে থাকে। বিশেষত, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদির মতো তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যে বিশ্বব্যাপী কত সংসার ভাঙার কারণ ঘটেছে, তার সঠিক হিসাব হয়তো কোনো দিনই প্রকাশিত হবে না।কাজেই স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই দায়িত্ব-কর্তব্য হচেছ উভয়ে উভয়কে সময় দেয়া এবং ইলেকট্রনিক যন্ত্র তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার সীমিত করা।

** তালাক দেওয়ার অধিকার ইসলামে শুধু স্বামীকেই দেওয়া হয়েছে। স্ত্রীর হাতে এ জন্য দেওয়া হয়নি যে নারীদের স্বভাবে সাধারণত তাড়াহুড়ার প্রবণতাটা একটু বেশি। তাই তাদের ক্ষমতা দিলে ছোটখাটো বিষয়েও তাড়াহুড়া করে তালাক দেওয়ার আশঙ্কাটা বেশি। তাই বেশি পরিমাণে বিবাহবিচ্ছেদ রোধেই ইসলাম নারীদের তালাকের ক্ষমতা দেয়নি। তাই বলে কি প্রয়োজনে স্ত্রী তালাক দিতে পারবেনা?

ইসলামে স্ত্রী কি স্বামীকে তালাক দিতে পারে -

একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ইসলাম নারীকে তালাকের অধিকার দেয়নি, কিন্তু তালাকের যে মূল উদ্দেশ্য বিবাহবিচ্ছেদ, তার অধিকার দিয়েছে। অর্থাৎ কোনো কারণে নারী চাইলে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানোর বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে। ইসলামে নারীদের আটকে রাখা হয়নি, বরং তারাও প্রয়োজনে যথাবিহিত নিয়মে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারে। যেমন -

ক. বিবাহের আগেই স্ত্রী এ শর্ত দিতে পারবে যে আমাকে "তালাক" (বিবাহবিচ্ছেদ) দেওয়ার অধিকার দিতে হবে। তখন স্বামী থেকে প্রাপ্ত অধিকারবলে স্ত্রী প্রয়োজনে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারবে, যা আমাদের দেশের কাবিননামার ১৮ নম্বর ধারায় উল্লেখ থাকে এবং যা তালাক-ই-তৌফিজ নামে পরিচিত।

তালাক-ই-তৌফিজহলো স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদত্ত তালাক প্রদানের ক্ষমতা। স্বামী দি স্ত্রীকে বিবাহ রেজিস্ট্রির তথা কাবিন নামার ১৮ নাম্বার কলামে বিয়ে বিচ্ছেদের ক্ষমতা অর্পণ করে থাকেন এবং সে ক্ষমতার বলে স্ত্রী যদি স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ চান তাহলে সে বিচ্ছেদকে ‘তালাক-ই-তৌফিজ’ বলে। এ ক্ষেত্রে স্ত্রী আদালতের আশ্রয় ছাড়াই স্বামীকে তালাক দিতে পারেন। তালাক-ই- তৌফিজের ক্ষেত্রে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের ৭ ধারায় বর্ণিত নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। স্ত্রী তালাকের নোটিশ কপি চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাবেন ও এক কপি স্বামীর কাছে পাঠাবেন। নোটিশ প্রাপ্তির পরবর্তী ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে। এজন্য নিকাহনামার ১৮ নাম্বার ঘরটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পূরণ করা উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, বিয়েতে প্রশ্নকারীরা কনেকে এই প্রশ্নটি করেন না এবং ঘরটি শূন্য থাকে। কাজীদের অবশ্যই দুই পক্ষকে এই ঘরটি সম্পর্কে অবগত করা উচিত এবং বর ও কনেপক্ষ উভয়েরও বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত। স্বামী যদি এ ঘরটি পূরণ না করেন অর্থাৎ কোনো কিছুই উল্লেখ না করেন অথবা কেবল সীমাবদ্ধ দু- তিনটি বা একটি ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা প্রদান করেন, তখন স্ত্রীর তালাক প্রদান করার ক্ষমতা সীমিত হয়ে যায়।স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক প্রদানের অধিকারের আরেকটি উপায় হলো ‘খুলা’ তালাক।

খ. যদি বিবাহের সময় শর্ত না-ও দিয়ে থাকে, তার পরও স্ত্রী স্বামী থেকে আপসের ভিত্তিতে এমনকি প্রয়োজনে বিনিময়ের মাধ্যমেও তালাক নিতে পারবে। এটাকে "খুলা তালাক" বলা হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস - ৫২৭৩)।

খুলা তালাক - হলো স্বামী এবং স্ত্রীর আলোচনা সাপেক্ষে বিয়েবিচ্ছেদ। স্বামীকে খুলার মাধ্যমে বিয়েবিচ্ছেদে রাজি করানোর দায়িত্ব হচ্ছে স্ত্রীর। অর্থাৎ বিচ্ছেদের উদ্যোগ অবশ্যই স্ত্রীর কাছ থেকে হতে হবে। প্রয়োজনে স্ত্রী স্বামীকে কোনো কিছুর বিনিময় প্রদান করবেন। সাধারণত বিনিময় বা ক্ষতিপূরণ হিসেবে স্ত্রী তার আর্থিক দাবির কোনো অংশ ত্যাগ করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে স্বামী রাজি থাকলে এভাবে বিচ্ছেদ ঘটতে পারে। খুলা তালাকের ক্ষেত্রে অন্য কোনো চুক্তি না থাকলে স্ত্রী মোহরানা পাওয়ার অধিকারী হবেন না, কিন্তু ইদ্দত পালনকালে স্ত্রী তার গর্ভের সন্তানের জন্য স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হবেন। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে প্রস্তাবক যেহেতু স্ত্রী, সেহেতু তালাকের নোটিশ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌরসভার চেয়ারম্যান/ সিটি করপোরেশন বরাবরে স্ত্রীই পাঠাবেন।


ছবি - stlouiscollaborativelaw.com

গ. ওই পদ্ধতিদ্বয় ছাড়াও স্বামী নপুংসক, পাগল, অস্বাভাবিক ক্রোধসম্পন্ন হলে কোনোক্রমেই মনের মিল না হলে বা নিখোঁজ হয়ে গেলে অথবা যেকোনো কঠিন সমস্যায় পতিত হলে স্ত্রী বিচারকের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ করিয়ে নিতে পারবে। (শরহুস সগির, দরদির : ২/৭৪৫, কিফায়াতুল মুফতি : ৬/২৫২) ।

আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ

স্ত্রী যদি তালাক-ই-তৌফিজ ও খুলার মাধ্যমে বিয়েবিচ্ছেদ ঘটাতে ব্যর্থ হন এবং বিয়েবিচ্ছেদ হওয়া একান্ত প্রয়োজন মনে করেন তাহলে তাকে ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিয়েবিচ্ছেদ আইনে বর্ণিত নিয়ম অনুসরণ করতে হবে (ধারা ২)। সেই আইনে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে কোন কোন কারণে একজন স্ত্রী আদালতে বিয়েবিচ্ছেদের আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে স্ত্রীকে পারিবারিক আদালতে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে তালাকের জন্য আবেদন করতে হবে। আদালতের ডিক্রিমূলে তখন স্ত্রীর তালাক কার্যকর হবে।

আইন অনুযায়ী স্ত্রী যেসব কারণে আদালতে তালাক চাইতে পারেন সেগুলো হলো -

** চার বছর পর্যন্ত স্বামী নিরুদ্দেশ থাকলে।
** দুই বছর স্বামী তার স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হলে।
** স্বামীর সাত বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি কারাদণ্ড হলে।
** স্বামী কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া তিন বছর যাবত দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে।
** বিয়ের সময় পুরষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায়ের করা পর্যন্ত বজায় থাকলে।
** স্বামী দুই বছর ধরে অপ্রকৃতিস্থ বা পাগল থাকলে অথবা কুষ্ঠরোগে বা মারাত্মক যৌন ব্যধিতে আক্রান্ত থাকলে।
** বিয়ে অস্বীকার করলে। অর্থাৎ যদি কোনো মেয়ের বাবা বা অভিভাবক মেয়েকে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে বিয়ে দেন এবং সেই মেয়েটি ১৯ বছর হওয়ার আগে বিয়ে অস্বীকার করে বিয়ে ভেঙে দিতে পারে। তবে শর্ত হলো, মেয়েটির সঙ্গে স্বামীর দাম্পত্য সম্পর্ক (সহবাস) যদি স্থাপিত না হয়ে থাকে তখনই কেবল বিয়ে অস্বীকার করে আদালতে বিচ্ছেদের ডিক্রি চাওয়া যাবে।
** স্বামী একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করলে। অর্থাৎ স্বামী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লঙ্ঘন করে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করলে।
** স্বামীর নিষ্ঠুরতারকারণে। নিম্নলিখিত আচরণগুলো ‘নিষ্ঠুরতা’ হিসেবে গণ্য হবে।

(১) অভ্যাসগত আচরণে স্ত্রীকে আঘাত করা, (দৈহিক আঘাত ছাড়াও মানসিক আঘাতও এর অন্তর্ভুক্ত, যা তার জীবন শোচনীয় বা দুর্বিষহ করে তুলেছে)।
(২) অন্য কোনো খারাপ নারীর সঙ্গে জীবনযাপন বা মেলামেশা।
(৩) স্ত্রীকে অনৈতিক জীবনযাপনে বাধ্য করা।
(৪) স্ত্রীর সম্পত্তি নষ্ট করা।
(৫) স্ত্রীকে নিজস্ব ধর্মপালনে বাধা দেয়া।
(৬) যদি স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকে, তাদের সঙ্গে পবিত্র কোরআনের নির্দেশ অনুসারে সমান ব্যবহার না করা।
(৭) এছাড়া মুসলিম আইনে বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য বৈধ বলে স্বীকৃত অন্য যে কোনো কারণে স্ত্রী পারিবারিক আদালতে বিয়ে বিচ্ছেদের দাবি করতে পারবে।


ছবি - vanbibberlaw.com

উপরের যে কোনো এক বা একাধিক কারণে স্ত্রী আদালতে বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারেন। অভিযোগ প্রমাণের দায়িত্ব স্ত্রীর। অভিযোগ প্রমাণিত হলে স্ত্রী বিচ্ছেদের পক্ষে ডিক্রি পেতে পারেন। যদি আদালত বিচ্ছেদের ডিক্রি দেয় তাহলে তার পরের সাতদিনের মধ্যে একটি সত্যায়িত কপি আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ইউপি/ পৌরসভা/সিটি করপোরেশনের চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে পাঠাবেন। স্বামীর অবস্থান জানা না থাকলে মুসলিম বিয়ে-বিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯-এর ধারা ৩ অনুসারে তার উত্তরাধিকারদের কাছে নোটিশ দিতে হবে।১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুযায়ী তালাকের নোটিশ পাওয়ার পর চেয়ারম্যান আইনানুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন এবং চেয়ারম্যান যেদিন নোটিশ পাবেন সেদিন থেকে ঠিক নব্বই দিন পর তালাক চূড়ান্তভাবে কার্যকর হবে। গর্ভাবস্থায় বিয়েবিচ্ছেদ হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না। এ ক্ষেত্রে ৯০ দিন এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার মধ্যে যেদিনটি পরে হবে সেদিন থেকে তালাক কার্যকর হবে। স্ত্রী গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না।

স্ত্রী তালাক দিলেও কি মোহরানা পাবে

স্ত্রী তালাক দিলেও মোহরানার টাকা তাকে দিতে হবে এবং তালাক কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ভরণপোষণ করতে হবে। তবে দাম্পত্য মিলন না ঘটলে এবং মোহরানা সুনির্দিষ্ট হয়ে থাকলে স্ত্রী মোহরানার অর্ধেকের অধিকারী। ১৯৩৯ আইনের ৫ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, এই আইনের কোনো কিছুই কোনো বিবাহিত নারীর বিয়েবিচ্ছেদের ফলে মুসলিম আইনানুসারে তার দেনমোহর বা এরকোনো অংশের ওপর কোনো অধিকারকেই প্রভাবিত করবে না।

ইসলামে তালাকের অবস্থান -

ইসলামী শরিয়তে অতি প্রয়োজনে তালাকের অবকাশ থাকলেও বিষয়টি অপছন্দনীয়। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, "আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপ্রিয় হালাল বস্তু হচ্ছে তালাক"।(আবু দাউদ শরীফ, হাদিস - ২১৭৭)

তাই নারী-পুরুষ উভয়ের কর্তব্য তালাক থেকে দূরে থাকা। তালাক দেওয়ার ক্ষমতা যেহেতু পুরুষের, তাই পুরুষকে ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে খুবই সংযমী হতে হবে। অন্যদিকে নারীর ব্যাপারেও হাদিস শরিফে এসেছে, "যে নারী স্বামীর কাছে বিনা কারণে তালাক প্রার্থনা করে, তার জন্য জান্নাতের সুঘ্রাণ পর্যন্ত হারাম" (ইবনে মাজাহ, হাদিস - ২০৫৫)

সম্প্রতি পরকীয়ার বিস্তারে যেমন পুরুষের অপরাধ আছে, তেমনি আছে নারীরও। দেখা যাচ্ছে, এক নারীর দ্বারাই অন্য নারীর সংসার ভাঙছে। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর এই বাণী খুবই প্রাসঙ্গিক,"কোনো নারী যেন তার বোনের (অপর নারীর) অংশ নিজের পাত্রে নেওয়ার জন্য তালাকের আবেদন না করে। সে নিজে পছন্দ মোতাবেক বিবাহ করুক, কেননা তার ভাগ্যে যা লেখা আছে সে তা-ই পাবে"। (বুখারি শরীফ, হাদিস - ৬৬০০)

তাই প্রত্যেকের কর্তব্য, নিজের ভাগ্যে যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা। অন্যের জিনিস নিজের করে নিয়ে নেওয়ার মতো লোভী মানসিকতা কোনো ভদ্র মানুষের হতে পারে না। উপরন্তু যখন ওই নারীটিও একজন নারী।


ছবি -123rf.com

দাম্পত্য সম্পর্কের দৃঢ়তায় ইসলামের দিকনির্দেশনা

যেসব কারণে দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়, সেগুলো দূর করার জন্য কোরআন-হাদিসে অনেক নির্দেশনা রয়েছে।

প্রথমত, বিবাহের আগে একে অন্যকে ভালোভাবে দেখে নেবে, যাতে বুঝে-শুনেই বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং কোনো ধরনের দৈহিক ত্রুটির কারণেই যেন বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করার উপক্রম না হয়।

দ্বিতীয়ত, শুধু একে অন্যের দোষ-ত্রুটির দিকেই দেখবে না, বরং তার মধ্যে যেসব ভালো গুণ বিদ্যমান সেগুলোর দিকে তাকিয়ে অপছন্দের দিকগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন, "যদি তাকে তোমার অপছন্দও হয়, তবু তুমি যা অপছন্দ করছ আল্লাহ তাতে সীমাহীন কল্যাণ দিয়ে দেবে"। (সুরা নিসা, আয়াত - ১৯)

এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, "কোনো মুমিন পুরুষ মুমিন নারীর ওপর রুষ্ট হবে না, কেননা যদি তার কোনো কাজ খারাপ মনে হয়, তাহলে তার এমন গুণও থাকবে, যার ওপর সে সন্তুষ্ট হতে পারবে"। (মুসলিম শরীফ, হাদিস - ১৪৬৯)।

স্ত্রীকে সংশোধনের কয়েকটি নির্দেশনা

যদি স্ত্রী স্বামীর আনুগত্য না করে, হক আদায় না করে, বরং উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত হয়, তাহলে স্বামীর দায়িত্ব হলো তাকে সংশোধনের সর্বাত্মক চেষ্টা করা। শরিয়ত এ ধরনের স্ত্রীকে সুশৃঙ্খল জীবনে ফিরিয়ে আনতে কিছু দিকনির্দেশনাও দিয়ে দিয়েছে। প্রথমে সেগুলো অনুসরণ করবে। তার পরও যদি স্ত্রীর মধ্যে কোনো পরিবর্তন না আসে, তাহলে চূড়ান্ত ফয়সালা তালাকের পথ বেছে নিতে পারবে।

প্রথম পদক্ষেপ : প্রথমেই উত্তেজিত হবে না বরং নিজেকে সংযত রাখবে এবং ভালভাবে মিষ্টি কথায় স্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করবে। মায়া-ভালোবাসা প্রকাশ করে মন গলানোর চেষ্টা করবে। কোনো ভুল ধারণায় থাকলে যথাসম্ভব তা দূর করার চেষ্টা করবে। মায়া-মমতা-ভালবাসার মাধ্যমে যত দূর সম্ভব দাম্পত্য জীবন স্থায়ী করার আপ্রাণ চেষ্টা করবে।

দ্বিতীয় পদক্ষেপ : ওই পদক্ষেপের মাধ্যমে কাজ না হলে রাগ-অনুরাগ প্রকাশের উদ্দেশ্যে স্ত্রীর সঙ্গে রাত যাপন থেকে বিরত থাকবে। ঘুমানোর জায়গা পৃথক করে নেবে। যদি এতে সতর্ক হয়ে যায় এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয় তাহলে দাম্পত্য জীবন সুখের হবে।

তৃতীয় পদক্ষেপ : উল্লিখিত দুটি পদক্ষেপ গ্রহণের পরও কোনো কাজ না হলে তৃতীয় পদক্ষেপ হিসেবে শরিয়ত স্ত্রীকে হালকা শাসন, হাত ওঠানোর অনুমতি দিয়েছে। তবে ক্ষিপ্ত হয়ে নয় বরং অন্তরে মহব্বত পোষণ করে বাহ্যিকভাবে স্ত্রীকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে তা করবে। তবে এতে যেন তার শরীরে কোনো দাগ না পড়ে এবং চেহারা বা স্পর্শকাতর কোনো স্থানে আঘাত না আসে।কেউ কেউ স্ত্রীকে শাসনের নামে বেধড়ক মারপিট করে থাকে, যা শরিয়ত সমর্থিত নয় এবং তা সুস্পষ্ট জুলুম।রাসুলুল্লাহ (সা.) স্ত্রীদের এ ধরনের শাস্তি দেওয়া কখনো পছন্দ করেননি।

এ প্রসংগে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, "পুরুষেরা নারীদের অভিভাবক। কারণ, আল্লাহ তাদের একের ওপর অপরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং পুরুষেরা নিজের ধন-সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা অনুগত এবং বিনম্র। স্বামীর অনুপস্থিতিতে তারা তাঁর অধিকার ও গোপন বিষয় রক্ষা করে। আল্লাহই গোপনীয় বিষয় গোপন রাখেন।যদি স্ত্রীদের অবাধ্যতার আশংকা কর তবে প্রথমে তাদের সৎ উপদেশ দাও। এরপর তাদের শয্যা থেকে পৃথক কর এবং তারপরও অনুগত না হলে তাদেরকে শাসন কর৷ এরপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তবে তাদের সাথে কর্কশ আচরণ করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমু্ন্নত-মহীয়ান।" (সুরা নিসা, আয়াত - ৩৪)।

চতুর্থত ও সর্বশেষ পদক্ষেপ : উল্লিখিত তিনটি পদক্ষেপ গ্রহণের পরও কোনো কাজ না হলে চতুর্থ পদক্ষেপ হিসেবে পবিত্র কুরআনের নির্দেশ হলো,উভয় পক্ষ থেকে এক বা একাধিক সালিসের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করবে। এ প্রসংগে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, "যদি তোমরা উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদের আশঙ্কা কর, পুরুষের পরিবার থেকে একজন সালিস ও নারীর বংশ থেকে একজন সালিস পাঠিয়ে দেবে।। যদি তারা মীমাংসা কামনা করে,তবে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ এবং সবার মনের কথা জানেন ।"( সুরা নিসা, আয়াত - ৩৫)।

তালাক হলো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

আর যদি পরিস্থিতি এমন হয়ে যায় যে,মীমাংসা ও সংশোধনের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়, কোনোক্রমেই একমতে পৌঁছা সম্ভব না হয় - এ রকম চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে শরিয়ত স্বামীকে তালাক দেওয়ার এখতিয়ার দিয়েছে। তালাক অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ হলেও তা ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা না থাকলে শরিয়ত সমর্থিত পদ্ধতিতে তালাক দেবে।

তালাক দেওয়ার শরিয়ত নির্দেশিত পদ্ধতি

কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুসারে তালাক দেওয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো—স্ত্রী যখন হায়েজ (মাসিক) থেকে পবিত্র হবে তখন স্বামী তার সঙ্গে সহবাস না করে সুস্পষ্ট শব্দে এক তালাক দেবে। যেমন,আমি তোমাকে এক তালাক দিলাম। এরপর স্বামী যদি স্ত্রীকে ইদ্দত চলাকালীন ফিরিয়ে নিতে চায় তাহলে তা পারবে। আবার স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কায়েম হয়ে যাবে। অন্যথায় ইদ্দত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং স্ত্রী স্বামী থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে যাবে। তালাক কার্যকর হওয়ার পর স্ত্রী ইচ্ছা করলে অন্যত্র বিবাহ করতে পারবে। তালাক দিতে একান্ত বাধ্য হলে এই পদ্ধতিতে তালাক দেওয়া কর্তব্য।

শরিয়ত নির্দেশিত পদ্ধতিতে তালাক দেওয়ার সুফল

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, তালাকের পরে দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তির কথা মনে পড়ে পরস্পরের গুণ ও অবদান স্মরণ করে উভয়েই অনুতপ্ত হয় এবং বৈবাহিক সম্পর্ক পুনর্বহাল করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। যদি শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী এক তালাক দেওয়া হয়, তাহলে এ আশা পূরণ হওয়ার সুযোগ থাকে এবং আবার বৈবাহিক জীবন শুরু করতে পারে। এ পদ্ধতিতে দীর্ঘ সময় স্ত্রীকে পুনঃ গ্রহণের অবকাশ পাওয়া যায় এবং তালাকের কারণে সৃষ্ট সমস্যা নিয়েও ভাবার সুযোগ থাকে।

আর যদি ইদ্দত শেষ হয়ে বিচ্ছেদের পর আবার তারা দাম্পত্য জীবনে ফিরে আসতে চায়, তাহলে নতুনভাবে মোহর ধার্য করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। এ ক্ষেত্রে অন্যত্র বিবাহের প্রয়োজন হবে না। দুর্ভাগ্যবশত, দ্বিতীয়বারও তাদের মধ্যে বনিবনা না হলে এবং আবার তালাকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সে ক্ষেত্রেও ইসলামের নির্দেশনার পূর্ণ অনুসরণ করে ওই সুবিধা ভোগ করতে পারবে।

উল্লেখ্য, তালাকের সময় স্ত্রী গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত তার ইদ্দতের সময়। আর গর্ভবতী না হলে তিন হায়েজ (মাসিক) অতিক্রম হওয়া পর্যন্ত।

তবে স্বামী যেহেতু স্ত্রীকে দুই ধাপে দুই তালাক প্রদান করেছে, তাই এখন শুধু একটি তালাক তার অধিকারে আছে। এই তৃতীয় তালাক প্রদান করলে আর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকবে না এবং আবার বিবাহও করতে পারবে না। কেননা এই সুযোগ দুই তালাক পর্যন্তই সীমিত। যে ব্যক্তি উপরোক্ত পদ্ধতিতে দুই তালাক দেওয়ার পর আবার বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করবে, তাকে আগামী দিনগুলোতে খুব হিসাব-নিকাশ করে চলতে হবে। একটু অসতর্কতার কারণে তৃতীয় তালাক দিয়ে ফেললে আর এই স্ত্রীকে নিয়ে ঘর-সংসার করার সুযোগ থাকবে না, বরং সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যাবে।

শরিয়তের নির্দেশনা অমান্য করার কুফল

এভাবেই ইসলামী শরিয়ত বৈবাহিক সম্পর্ক অটুট রাখার অবকাশ দিয়েছে। কিন্তু মানুষ শরিয়তের এই সুন্দর পদ্ধতি উপেক্ষা করে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত সব শ্রেণির লোকদের মধ্যেই এ প্রবণতা দেখা যায় যে, তারা যখন রাগে ক্ষোভে লিখিত বা মৌখিকভাবে তালাক দেয় তখন একসঙ্গে তিন তালাকই দিয়ে থাকে। তিন তালাক দিলে ইদ্দত চলাকালেও স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে না এবং ইদ্দতের পরেও নতুনভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সুযোগ থাকে না। একে অপরের জন্য সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যায়। এমতাবস্থায় অনুতপ্ত হওয়া এবং আপসের জন্য আগ্রহী হওয়া কোনো কাজে আসে না।


ছবি -smartaboutmoney.org

যারা তিন তালাক দেওয়ার পর শরিয়তের বিধান জানতে মুফতি সাহেবদের কাছে আসে, তাদের অনেককেই দেখা যায় অত্যন্ত অসহায়ত্বের সঙ্গে নিজের দুঃখের কথা বলে মুফতি সাহেবের মন গলাতে চেষ্টা করে। নিষ্পাপ সন্তানদের কথা বলে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করতে থাকে,যেভাবেই হোক কোনো হিল্লা-বাহানা বের করে তার পরিবারটিকে যেন ধ্বংস থেকে বাঁচানো হয়। কিন্তু এসব আবদার-অনুরোধ বিফল। তার নিজ হাতেই সব সুযোগ বিনষ্ট হয়েছে। তালাক দেওয়ার শরিয়তসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ না করার কারণে স্ত্রী তার জন্য সম্পূর্ণ হারাম হয়ে গেছে। উপরন্তু শরিয়তের নিয়ম অমান্য করে মারাত্মক গুনাহ করা হয়েছে। আর অন্যায়ভাবে তালাক দেওয়ায় স্ত্রীর ওপর চরম জুলুমও করা হয়েছে, যা আরেকটি কবিরা গুনাহ। এখন আবার তাকে স্ত্রীরূপে ফিরে পাওয়ার যে সম্ভাবনাটি রয়েছে তা অত্যন্ত দূরবর্তী সম্ভাবনা।

প্রচলিত হিল্লা বিয়ে ইসলামে নিষিদ্ধ

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তিন তালাকের পরই স্বামী-স্ত্রী উভয়েই নানা রকম হিল্লা-বাহানার আশ্রয় নেওয়া শুরু করে। এটা যেমন অশালীন, তেমনি শরিয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ ও লানতযোগ্য কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, "(হিল্লা-বাহানার মাধ্যমে) অন্যজনের জন্য স্ত্রী হালাল করার উদ্দেশ্যে বিবাহকারী এবং যার জন্য হালাল করা হয়েছে—উভয়ের ওপরই আল্লাহর লানত" (আবু দাউদ শরীফ, হাদিস - ২০৭৬)।

যদিও এমতাবস্থায় ওই নারী অন্যত্র বিবাহ করে সেই স্বামীর সঙ্গে সহবাসের পর স্বামী কর্তৃক তালাকপ্রাপ্ত হলে প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে। তবে এ পদ্ধতি গ্রহণ করা অত্যন্ত ঘৃণিত।

উপরন্তু হিল্লা-বাহানা গ্রহণের মাধ্যমে ইসলামের বিরোধীদের ইসলামের বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। তারা হিল্লা বিয়ে নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে থাকে। অথচ ইসলাম এ ধরনের হিল্লা বিয়ের অনুমতিই দেয় না। ইসলামে নিষিদ্ধ একটি হীন কাজের দায় ইসলামের ওপর চাপিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হচ্ছে। আর এটি হয়েছে শুধু কিছু মুসলমানের অনৈতিক কাজের কারণে। ইসলামের বিধান হলো—তিন তালাকের পর উভয়ে উভয়ের রাস্তা ধরবে। স্বামী অন্যত্র বিয়ে করে নেবে। তদ্রূপ স্ত্রীও ইদ্দত শেষে অন্যত্র বিয়ে করে তার সঙ্গেই ঘর-সংসার করবে। স্ত্রী প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার বা স্বামী তাকে ফিরিয়ে নিতে কোনো হিল্লা-বাহানা করা অবৈধ। তবে হ্যাঁ, কোনো কারণে যদি দ্বিতীয় স্বামী কখনো তালাক দিয়ে দেয় বা মারা যায়, তখন ইদ্দত শেষে চাইলে সে আবার প্রথম স্বামীর কাছে যেতে পারবে। ইসলামের এই স্বচ্ছ বিধানের সঙ্গে প্রচলিত হিল্লা বিয়ের কোন সম্পর্কই নেই।


ছবি - moneycontrol.com

সব দেওয়ালেরই যেমন দুদিক আছে তেমনি সব জিনিষেরই ভাল-খারাপ দুটি দিক আছে। তালাক যেহেতু দুতরফা ভাবেই সম্ভব, তাই তার সুযোগ নিয়ে কিছু দুরভিসন্ধিমূলক মানুষ (নারী-পুরুষ উভয়েই,তবে বেশীরভাগই পুরুষ) অনেক সময় এর অপব্যবহার করে, ইসলামের চোখে তালাক কতটা গর্হিত ও নিকৃষ্ট তা না ভেবেই। এমনকি, কোন পরিস্থিতিতে -কী ধরনের অপরাধে কোন তালাক দেওয়া জায়েজ (ইসলাম সম্মত) এবং তার পদ্ধতিগত ধাপগুলি ঠিকঠাক মানা হল কি না সেটা না ভেবে। সর্বোপরি, দেখা দরকার পারস্পরিক সংশোধন ও সম্পর্কের পুনর্জাগরণের সুযোগ দেওয়া হল কি না। এ সব কিছু না ভেবে নিছক হঠকারিতা কিংবা বহুবিবাহের লিপ্সা থেকে তাৎক্ষণিক তিন তালাককে বিবাহবিচ্ছেদের সহজলভ্য ছাড়পত্র বানানো ইসলাম সমর্থন করেনা বা মেনে নেওয়া যায় না। এর ফলে কত নর-নারীর জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে, কত ছেলে-মেয়ে তাদের বাবা-মায়ের তালাকের কারনে মানবেতর জীবন যাপন করছে ,আর কত শত পরিবার এর ভূক্তভোগী তার হিসাব করতে বসলে চোখ ভিজে যাবে।এই অপব্যবহারের হোতা যারা, তাদেরকে ইসলাম ধর্মে ক্ষমার অযোগ্য পাপী বলেই মনে করা হয়।মুশকিল হল এই ভুল মানুষগুলির জন্য ইসলামের তালাক নিয়ে ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে অনেক ভ্রান্ত ধারণা জন্ম নিয়েছে এবং তারা ইসলামের অনেক সমালোচনা করে থাকে। এ ব্যাপারে সবারই সহনশীল হওয়া এবং শেষ সময় পর্যন্ত মানবিক ভাবে বিবাহ রক্ষার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত।

আল্লাহ আমাদের সকলকে দাম্প্যত্য জীবনে ক্ষমার,মেনে চলা-মানিয়ে চলার তওফিক দান করুন।সকল স্বামী-স্ত্রীকে সকল বিভেদ, মনোমালিণ্য ভুলে মিলে-মিশে আমৃত্যু একসাথে জীবন কাটানোর তওফীক দান করুন এবং তালাক নামক নিকৃষ্ট কাজ থেকে হেফাজত করুন।

চলবে -
================================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -

মানব জীবন - ৬ "দেনমোহর - স্ত্রীর হক" - Click This Link
মানব জীবন - ৫ "বিবাহ" - Click This Link
মানব জীবন - ৪ " মাতৃত্ব " - Click This Link
মানব জীবন - ৩ Click This Link
"নারী স্বাধীনতা বনাম নারী(জরায়ু)'র পবিত্রতা "
মানব জীবন - ২ " মাতৃগর্ভ (জরায়ু)"- Click This Link
মানব জীবন - ১ "মানুষের জন্ম প্রক্রিয়ার ইতিকথা"- Click This Link



উৎসর্গ - এ পর্বটি সকল স্বামী-স্ত্রীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত যাতে আমরা সকলেই সংসারের সকল সমস্যা এবং নিজেদের মাঝের সকল মনোমালিন্য এড়িয়ে উভয়ে উভয়ের প্রতি বিশ্বস্ত ও আন্তরিক থেকে ,ত্যাগ ও সমঝোতার মাধ্যমে সংসারকে সুখি ও শান্তিময় করে গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারি।যাতে ভাল-মন্দ সব বিষয়ে আমরা আমাদের অবস্থান বুঝতে পারি এবং এ ব্যাপারে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সংসার রক্ষায় সর্বোচ্চ করণীয় কাজ করতে পারি। মহান আল্লাহপাক আমাদের জীবনে সংসারের সুখের জন্য সহযোগীতার মনোভাব অর্জনের এবং সকল ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে চলার তওফিক দান করুন।

মন্তব্য ৩৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৩৮

রানার ব্লগ বলেছেন: দুটি মানুষের মধ্যে বিচ্ছেদ কখন হয় ?

যখন তাদের ভেতর দুই জনার প্রতি বিতৃষ্ণা বেড়ে যায় , কমফর্ট জোন কমে যায় !! ঠিক তখনই বিচ্ছেদ ঘটে। আসলে সম্পর্ক টেনে নিয়ে যাওয়ার বদলে তাকে মুক্তি দেয়া উত্তম।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৫২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রানার ব্লগ ভাই,আপনার প্রথম এবং মন্তব্যের জন্য।

সেটাই ।স্বামী - স্ত্রী, দুটি মানুষ।এমন দুজন মানুষ যারা এই দুনিয়ার সবচেয়ে আপনজন ছিল এবং যাদের মাঝে কোন আড়াল বা ভিতর-বাহির বলে কিছু ছিলনা।যাদের এক সাথে পথচলা শুরু হয়েছিল অনেক স্বপ্ন ও আকাংখা নিয়ে।সেই দুজন মানুষই সময়ের পরিক্রমায় বিচেছদের মত কঠিন সিদ্ধান্ত বেছে নিয়ে মুক্তি পেতে চায় বিবাহ নামক বন্ধন থেকে তালাকের মাধ্যমে।

কেন ? কি জন্য ? এতটা মানসিক দূরত্ব তৈরী হয় বা এর পিছনে কি এমন কারন ? এ সব প্রশ্নের জবাব খোজার চেষ্টায়ই এ পোস্ট।যখন স্বামী - স্ত্রী'র সম্পর্ক আর টানেনা উভয়কে তখন সে সম্পর্ক টেনে নিয়ে যাওয়ার বদলে তাকে মুক্তি দেয়াই উত্তম।তার পরেও শেষ চেষ্টা একবার করা উচিত উভয়েরই।এটাই মনে হয় ভাল।

২| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৫৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার মানব জীবন সিরিজের পোস্টগুলিতে জন্ম প্রক্রিয়া, নারী, নর-নারীর যৌন জীবন, বিবাহ, তালাক ইত্যাদি দেখা যাচ্ছে। মানব জীবনে আর কিছু নাই? আপনি কি ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলিকে হাইলাইট করছেন? আপনার এই সিরিজের উদ্দেশ্য কি?

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৫৬

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ সাড়ে চুয়াত্তর ভাই,আপনার প্রশ্ন এবং মন্তব্যের জন্য।

আপনার প্রশ্নের জবাবে , "মানুষ" - আমরা কোথা থেকে এসেছি এবং কোথায় যাব এবং এ দুনিয়াতে আমাদের করনীয়-বর্জনীয় - এ সব প্রশ্নের জবাব জানা ও খোঁজার প্রেক্ষাপটেই "মানব জীবন" সিরিজ লেখার দুঃসাহস।

আর এ সিরিজে মানুষের "জন্মের আগে থেকে মৃত্যুর পরের" (শেষ বিচারের) বিষয় সময় পর্যন্ত সব বিষয় নিয়েই লিখার ইচছা আছে ।সব মিলিয়ে ৪০-৪৫ পর্ব হতে পারে।যদি আল্লাহ চাহেন এবং ততদিন পর্যন্ত জীবিত থাকি।

ভাই,মানব জীবনের সাথে যে সব বিষয় - যেমন - রস-কস-সিংগারা-বুলবুলি (ধর্ম,সমাজ,পরিবার,অর্থনীতি,শিক্ষা ) সবই আসবে এবং আছে ।তবে কোন কোন টা হয়ত আগে-পরে হয়ে যাবে বা যাচেছ এই যা।

আশা করি সাথে থাকবেন ,পাশে পাব। আর লেখায় ভূল-ত্রুটি চোখে পড়লে সংশোধনের সুযোগ করে দিবেন।

৩| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:৩১

রানার ব্লগ বলেছেন: সেটাই ।স্বামী - স্ত্রী, দুটি মানুষ।এমন দুজন মানুষ যারা এই দুনিয়ার সবচেয়ে আপনজন ছিল এবং যাদের মাঝে কোন আড়াল বা ভিতর-বাহির বলে কিছু ছিলনা

সমস্যাটা এখানেই !!!! দেখুন দুই জন মানুষ এরা সামাজিক বন্ধনে আবধ্য হলেও এদের দুই জনারই ব্যাক্তি স্বত্বা আছে, আলাদা চিন্তা ভাবনা আছে, আলাদা জগত আছে, যখনি একজন অন্য জনার ব্যাক্তি স্বত্বায় অনুপ্রবেশ করে সমস্যা ওখান থেকেই জাগ্রত হয়। দুজনার প্রতি সন্মান বোধের জায়গা ক্ষতিগ্রস্থ হলেই বাকি আর কিছুই থাকে না।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:০৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রানার ব্লগ ভাই,আপনার প্রতিমন্তব্যের জন্য।

আসলেই ভাই।স্বামী - স্ত্রীর সম্পর্কটাই শুরু হয় ত্যাগ ও সমঝোতার মূল মূলমন্ত্রে। যে পরিবারে তথা স্বামী - স্ত্রীর মাঝে ত্যাগ ও সমঝোতার মনোভাব বেশী সেই পরিবারই সুখের হয় ।

এখন সেই ত্যাগ ও সমঝোতার মনোভাবের পরিবর্তে যদি আলাদা ব্যক্তিস্বত্বা তথা ব্যক্তিত্বের সংঘাত বড় হয়ে দেখা দেয় তবে সেখানে সংসার করা কোন ভাবেই সম্ভব না বা সেই সংসার টিকে থাকার কোন সম্ভাবনা নেই।স্বামী-স্ত্রীর একের প্রতি অন্যের সম্মান-মর্যাদা-ত্যাগ-সমঝোতা এই চার জিনিষের একটিও যদি অনুপস্থিত থাকে বা হয়ে যায় তখন আর সংসার করা তথা সংসার সুখের হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা ।

৪| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:২৮

রামিসা রোজা বলেছেন:
দাম্পত্যজীবনে মতৈক্য-মতানৈক্যের টানাপড়েনে সংসার
ভাঙতেও পারে, আবার বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেও একছাদের নিচে দুটোজীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন এ সমাজের
অনেকেই। তবে ,
যেহেতু পরিবার ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কায় সমাজবিজ্ঞানীরা
বিবাহিত জীবনকে উৎসাহিত করছেন, সেহেতু একটা
ভারসাম্যপূর্ণ স্থায়ী ছাদের জন্য স্বামীস্ত্রী উভয়কেই উভয়ের
সম্পদ বিবেচনা করা সুফল বয়ে আনতে পারে।
অনেকে হয়ত বলবেন, পশ্চিমের স্বামীস্ত্রীরা উভয়েই শিক্ষিত সম্পদশালী কিন্তু সংসার টিকছে কই?
বরং এতে করে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ ও আত্মমর্যাদাবোধ এত
প্রবল হয়ে উঠছে যে মর্যাদায় সামান্য আঘাত লাগলেই যে
যার মতো কেটে পড়ছেন। কিন্তু এর কুফল ভোগ করছে
তাদের নিষ্পাপ সন্তানেরা।এর মূলেও কিন্তু রয়েছে স্বামীদের পুরুষতান্ত্রিক সনাতন বিশ্বাসের ভিত অটুট রাখার দ্বন্দ্ব।
আক্রমণটা আসছে মূলত পুরুষদের পক্ষ থেকে। শিক্ষিত
ও রিসোর্সফুল স্ত্রী/সঙ্গী শিক্ষাব্যবস্থার বৈষম্যহীনতার কারণে
পুরুষরা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পেয়ে যাচ্ছেন ।
অন্যদিকে আত্মনির্ভরশীলতার কল্যাণে স্বামীর শোষণের মুখে
নুড়ো জ্বেলে দিয়ে নারীরা বেরিয়ে পড়ছেন। বিরোধীপক্ষ তর্কে অবতীর্ণ হয়ে বলতে পারেন, কেবল একপক্ষকে দোষারোপ
করলে তো হবে না। নারীরাও কিছু ধোয়া তুলসীপাতা নন।
কিন্তু সমাজ বিশ্লেষকদের মতে, নারীরা শারীরিক এবং
প্রাকৃতিক কারণেই একটি স্থায়ী দাম্পত্যজীবনকে অগ্রাধিকার
দেন। এখনো খুব বাধ্য না হলে অনেক নারীই ছোটখাট মতানৈক্যকে প্রাধান্য না দিয়ে সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা
করেন। জননী নারীকে সাতপাঁচ অনেক ভেবে ঘর ছাড়তে
হয়।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:২১

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ বোন রামিসা রোজা ,আপনার মন্তব্যের জন্য।

আসলেই ভাই।স্বামী - স্ত্রীর সম্পর্কটাই শুরু হয় ত্যাগ ও সমঝোতার মূল মূলমন্ত্রে। যে পরিবারে তথা স্বামী - স্ত্রীর মাঝে ত্যাগ ও সমঝোতার মনোভাব বেশী সেই পরিবারই সুখের হয় । তবে বিপরীত মেরুতে অবস্থান তথা নানা মতানৈক্যের মাঝেও কোন কোন স্বামী - স্ত্রী তাদের এক জীবন এক ছাদের নীচে কাটিয়ে দেয় এটাও সত্যি। তবে সেই পরিবারে নিরবিচ্ছিন্ন সুখ থাকেনা তবে জীবন চলে যায়।সেখানে হয়ত তাদের মাঝে,তাদের মনে সন্তান-পরিবার-সামজিকতা সহ নানা বিষয় তাদের জীবনে অনুঘটক হিসাবে কাজ করে একসাথে সংসার চালিয়ে যেতে।

আবার এটাও ঠিক ত্যাগ ও সমঝোতার মনোভাবের পরিবর্তে যদি আলাদা ব্যক্তিস্বত্বা তথা ব্যক্তিত্বের সংঘাত বড় হয়ে দেখা দেয় তবে সেখানে সংসার করা কোন ভাবেই সম্ভব না বা সেই সংসার টিকে থাকার কোন সম্ভাবনা নেই।স্বামী-স্ত্রীর একের প্রতি অন্যের সম্মান-মর্যাদা-ত্যাগ-সমঝোতা এই চার জিনিষের একটিও যদি অনুপস্থিত থাকে বা হয়ে যায় তখন আর সংসার করা তথা সংসার সুখের হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা ।

আবার এটাও আমার মনে হয়, পারত পক্ষে কোন নারীই সংসার ভাংগতে চায়না ।তবে তাও সবসময় সঠিক নয়।দোষে-গুনে মানুষ এবং এই দোষ-গুন স্বামী - স্ত্রী যে কারো দ্বারাই ঘটতে পারে।কাজেই সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য স্বামী - স্ত্রী উভয়েরই ভূমিকা রয়েছে এবং উভয়েরই সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত।

৫| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৩

মিরোরডডল বলেছেন:




ডু ইউ থিংক ইবাদত পালন করতে মানুষ বিয়ে করে ? জামান করেছিলো ?
বিয়ে একটা প্রয়োজন এবং সামাজিকতা । মানুষ একা থাকতে পারেনা । একজন মনের মতো সঙ্গীর সাথে জীবন কাটাতে চায় তাই বিয়ে করে । তাও শুধুই ধর্মীয় এবং সামাজিক কিছু বিধিনিষেধ আছে তাই করতে বাধ্য । এই বাধ্যবাধকতা না থাকলে মনে হয়না কেউ বিয়ে করতো ।

দ্বিতীয় প্যারায় বিবাহ বিচ্ছেদের যে কারন বলা হয়েছে, এর বাইরেও সো ম্যানি রিজনস ক্যান বি । ডিভোর্স মানেই হাজব্যান্ড ওয়াইফের মাঝে মারামারি, কাটাকাটি আর বিতৃষ্ণা না । অনেক রেস্পেক্টফুল মিউচুয়াল আন্ডারস্টেন্ডিং ডিভোর্স আছে । এমনও ডিভোর্স দেখেছি যেখানে দুজনের মাঝে কম্প্যাটিবিলিটি না থাকায় চেষ্টা করেও না হওয়াতে ডিভোর্স । দেন দে ফাউন্ড দা রাইট পার্সন যেখানে ব্যাটে বলে যায়, হ্যাপিলি সংসার করছে । তাহলে কেন ডিভোর্স নিকৃষ্টতম ???

আমাদের সোসাইটিতে লোকলজ্জার ভয়ে সামাজিক কারনে অনেক কাপল একই ছাদের নীচে বসবাস করলেও ওটা একচুয়াল ম্যারেজ না । নান অভ দেম হ্যাপি । নট এট অল । কোনও সম্পর্কই নেই, না মেন্টালি না ফিজিক্যালি, একজীবন এভাবে স্যক্রিফাইস করে পার করে দিচ্ছে । এটা কেন উৎকৃষ্ট ???

শুধু হাজব্যান্ড ওয়াইফ কেনো, বাবা মা ভাই বোনের সংসারে অথবা যেকোনো অবস্থায় একসাথে থাকতে গেলে মানুষে মানুষে বিবাদ খুনসুটি হবেই । তাই মানিয়ে চলতে হয় মানিয়ে নিতে হয় । একারনে বিয়ে পুর্ব আলাদা জ্ঞানার্জন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না । একজন মানুষ যদি অনেস্ট সেনসিবল, কমপেশনেইট, লজিক্যাল, লাভিং ক্যায়ারিং এসব গুণাবলীর অধিকারী হয় তখন সে লাস্ট মোমেন্ট পর্যন্ত ট্রাই করে ভালোবাসার বন্ধনে একটা সম্পর্ক ধরে রাখতে । আর যার মাঝে এগুলো নেই, তাকে শুধু বিয়ে করার জন্য বিয়ে পূর্ব জ্ঞান, কি করতে হবে, কি হবে না এগুলো গুলিয়ে খাওয়ালেও কোনো কাজ হবেনা ।

বিয়েকে অবশ্যই এনকারেজ করি । খুবই সুন্দর একটা সিস্টেম । যদি ওয়ার্ক করে দেন ইটস এ হ্যাভেন, ইফ নট হেল ম্যান ।

পুরো পোষ্ট আর পড়লাম না জামান । অনেক বড় । সময় নেই, পরে হয়তো আসবো ।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ বোন মিরোরডডল ,আপনার মন্তব্যের জন্য।

-ডু ইউ থিংক ইবাদত পালন করতে মানুষ বিয়ে করে ? জামান করেছিলো ?

**সামাজিকতা এবং ধর্মীয় বিধি-নিষেধের কারনে মানুষ বিয়ে করে তা ঠিক আছে এবং ধর্মীয় রীতি-নীতি মেনে চললে জীবনের প্রতিটি কাজই ইবাদতের অর্ন্তভূক্ত।

- দ্বিতীয় প্যারায় বিবাহ বিচ্ছেদের যে কারন বলা হয়েছে, এর বাইরেও সো ম্যানি রিজনস ক্যান বি । ডিভোর্স মানেই হাজব্যান্ড ওয়াইফের মাঝে মারামারি, কাটাকাটি আর বিতৃষ্ণা না । অনেক রেস্পেক্টফুল মিউচুয়াল আন্ডারস্টেন্ডিং ডিভোর্স আছে । এমনও ডিভোর্স দেখেছি যেখানে দুজনের মাঝে কম্প্যাটিবিলিটি না থাকায় চেষ্টা করেও না হওয়াতে ডিভোর্স । দেন দে ফাউন্ড দা রাইট পার্সন যেখানে ব্যাটে বলে যায়, হ্যাপিলি সংসার করছে । তাহলে কেন ডিভোর্স নিকৃষ্টতম ???

** তালাকের জন্য অসংখ্য কারন থাকতে পারে আছে এবং ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ভিন্ন হতে পারে।পারস্পরিক ও সমঝোতার ভিত্তিতে অনেক তালাক হয় এটাও সত্যি।তালাক যেভাবেই হোক তা বেদনা দায়ক এবং ব্যক্তি-পরিবার-সমাজে এর নানা ক্ষতিকারক প্রভাব পরে।তাই ধর্মে তালাকে নিকৃষ্টতম হালাল কাজ বলা হয়েছে।

- শুধু হাজব্যান্ড ওয়াইফ কেনো, বাবা মা ভাই বোনের সংসারে অথবা যেকোনো অবস্থায় একসাথে থাকতে গেলে মানুষে মানুষে বিবাদ খুনসুটি হবেই । তাই মানিয়ে চলতে হয় মানিয়ে নিতে হয় । একারনে বিয়ে পুর্ব আলাদা জ্ঞানার্জন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না ।

** মানুষের জীবনে চলার পথে অনেক জিনিষের দরকার হয় তার জন্য অনেক কিছু জানতে হয়। আর মানুষের জীবনে যে কয়টা কাজ জীবনের সবচেয়ে বেশী পরিবর্তন আনে বা যা সবচেয়ে বেশী দরকারী ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে বিবাহ তাদের মধ্যে অন্যতম। এখানে সারা জীবনের প্রশ্ন জড়িত এবং বিয়ের ফলে নারী উভয়ের অনেক দায়িত্ব-কর্তব্যের প্রশ্ন জড়িয়ে থাকে । আর এসব কিছু সঠিক ভাবে সমাপ্ত করার জন্য বিয়ের পুর্বে বিয়ে সম্পর্কে আলাদা জ্ঞানার্জন প্রয়োজন আছে যা তাদেরকে সংসার জীবনে মেনে চলতে-সুখের করতে সাহায্য করবে।

-বিয়েকে অবশ্যই এনকারেজ করি । খুবই সুন্দর একটা সিস্টেম । যদি ওয়ার্ক করে দেন ইটস এ হ্যাভেন, ইফ নট হেল ম্যান ।

** জাহান্নাম বা স্বর্গ মানুষের আচার আচরনেরই ফলাফল।যদি মানুষ স্বর্গ-নরকের মাঝে প্রার্থক্য জানে ও বুঝে তখনই সে স্বর্গ পাওয়ার জন্য যা দরকার তা করতে আগ্রহী হবে আর নরক এড়ানোর চেষ্টা করবে । না জানলে ত তার কাছে দুই সমান ।
"অন্ধের হাতি দেখার মত" হবে।

-পুরো পোষ্ট আর পড়লাম না জামান । অনেক বড় । সময় নেই, পরে হয়তো আসবো ।

** কি করুম বোন, একটা বিষয় লিখতে গেলে খুটি-নাটি সব কিছু লিখতে হয় বিশেষ করে দিক নির্দেশনামূলক লেখার ক্ষেত্রে।আর তাই আমার লেখা সব বড় হয়ে যায়।পরে সময় সুযোগে পড়ে নিলেই হবে।

ধন্যবাদ আবারো গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য এবং পড়ার জন্য।

৬| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩৫

মাসুদুর রহমান (শাওন) বলেছেন: কিছু মানুষ আছে হুদাই তালাক দেয়...

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৬

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ মাসুদুর রহমান (শাওন)ভাই ,আপনার মন্তব্যের জন্য।

তালাকের জন্য অসংখ্য কারন থাকতে পারে আছে এবং সেগুলি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ভিন্ন হতে পারে তবে সমাজে আছে কিছু মানুষ যারা রুচিতে বৈচিত্রের :P জন্য নতুন নতুন শাদী করে আর পুরানোকে তালাক দেয়। এ জাতীয় বিকৃত মানুষ নর-নারী উভয়েই হতে পারে।

৭| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:০৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: এইটা সত্যিই জঘণ্য এক প্রথা। সব তছনছ করে দেয়

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:০২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নেওয়াজ আলী ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য।৷৷৷ সেটাই,হালাল কাজ কিন্তু যার ফলাফল বেদনাদায়ক ও প্রভাব দীঘ`স্থায়ী। পরিবার, সমাজ এবং আপনজন রা যেখানে ভুক্তভোগী।

৮| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৪৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনি ভাগ্যবা্ন ! কেউ আপনাকে
এ্ই লেখার সূত্র জানতে চায়নি !!

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:১৩

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নূর মোহাম্মদ নূরু ভাই, এই প্রথম আপনি আমার পোস্টে মন্তব্য করেছেন তার জন্য এবং কস্ট করে পড়ার জন্য। ভাই,ভাগ্যবান কিনা জানিনা,তবে নিজে কিছু জানার চেস্টা আর কিছু লেখার আগ্রহ থেকেই লেখা। আর প্রতিটি লিখা লিখতে গেলে অনেক অনেক পড়তে ও জানতে হয়,সেটা আপনি ভাল জানেন। আর এখান থেকে মানে এই লেখা- লেখি থেকে কিছু পাওয়ার নেই শুধু জানা ও শেখা ব্যতীত।।।।। আর কিছু মানুষ আছে আমাদের মাঝে,যারা সবকিছুতেই কারন বা সুত্র খুজে। এক হিসাবে তা ভাল বলেই আমি মনে করি। তারা হয়তো জানার আগ্রহ থেকেই তা করে,এটাই আমি মনে করি। তবে আপনি কি বলছেন তা আমি বুজেছি। তবে একটা কথাই বলব ভাই,এই ব্লগের বাইরে ও অনেক কিছু আছে এবং অনেক কিছু করার আছে এক জীবনে। কাজেই, সামনে তাকান, পিছনে নয়। প্রতি ১০ জন মানুষের মাঝে আমাকে হয়তো ১/২ জনে পছন্দ করে, বাকিরা অপছন্দ বা সহ্য ও হয়তো করেনা। তাই বলে বা তাদের অপছন্দের কারনে আমার থেমে গেলে হবেনা। জীবনের নিয়মে চলতে হবে।

৯| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৩৫

অজ্ঞ বালক বলেছেন: তালাক জিনিসটারে সামাজিকভাবে এমন একটা 'জুজু' বানাইয়া তুলা হইসে যে মনে মনে মইরা গেলেও অনেকরে দেখসি তালাক নেয় না বা দেয় না। এইরকম অসংখ্য অসুস্থ সম্পর্ক দ্যাখা শেষে আমার মত হইলো জিনিসটা যে একটা স্বাভাবিক বিষয় সেইটা সবার মাইনা নেয়া। হইতেই পারে মিল হয় নাই বিয়ার পর। মনের বা দেহের বা অন্যকিছুর। সেইক্ষেত্রে এই একটা মাত্র জীবন এমনে নষ্ট করার মানেই নাই কোনো। সেইটা একটা খারাপ কাজ, তালাক না।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৩৩

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ অজ্ঞ বালক ভাই,আপনার মন্তব্যের জন্য।৷৷ তালাক জিনিসটা আসলেই হয়ত ভয়ের হয়ত বা না। তবে ভাই একটা কথা ঠিক,এর প্রভাব ব্যক্তিগত-পারিবারিক - সামাজিক জীবনে পড়ে যা পুরাটাই নেগেটিভ ভাবেই দেখা হয় বা ফলাফল ও বেদনাদায়ক হয় এই জন্য। আর সন্তান থাকলে তাদের উপরে এর প্রভাব পড়ে সুদুর প্রসারী। তবে সবকিছুর উপরে মানুষের যার যার জীবন তা সে নারী বা পুরুষ। অসুস্থ সম্পর্ক টেনে নিয়ে ভাল কিছু একটা আশা করা যায় না।কাজেই,মত- মনের অমিল চরম আকার ধারণ করলে তখন তালাকই ভাল। এতে করে উভয়ের ই নতুন করে বাচার এবং শুরু করার একটা সুযোগ মিলে।

১০| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৪৮

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: বনি বনা না হলে আলাদা হওয়াই উত্তম কাজ,নিকৃষ্টতম কাজ না। নিকৃষ্টতম হালাল কাজ কথাটা সাংঘর্ষিক।ভুল বোঝাবুঝির অবসান হলে আবার একসাথে থাকতে।মাঝখানে যে আরেকটা বিয়ে দিতে হবে যেটা ইসলামে আছে এটা নিকৃষ্টতম অমানবিক কাজ।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৫৪

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নুরুলইসলা০৬০৪ ভাই,আপনার মন্তব্যের জন্য।। সেটাই। বনি-বনা না হলে কতদিন আর একসাথে থাকা যাবে।মৃত সম্পর্ক টেনে নিয়ে বয়ে বেড়ানো থেকে মাটি চাপা দেওয়াই ভাল।। নিকৃস্টতম হালাল এই অথে', ইসলামের যেত কাজের অনুমতি দেয়া আছে তার মধ্যে তালাক হল সবার চেয়ে এবং সব'শেষ উপায় বা হালাল। চুড়ান্ত ভাবে তালাকের পরে আর একসাথে হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। আর ইসলামে হিল্লা বিয়ের কোন স্থান নেই। এটা কিছু বিকৃত মানষিকতার মানুষের বিকৃত লালসা চরিতার্থ করার জন্য করা হয়।

১১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:৩৭

শায়মা বলেছেন: ভাইয়া কেমন আছো?

এই পোস্ট পড়ে যদি মানুষ তালাক দেবার আগে তবুও একটু ভাবে। কিন্তু আত্মহত্যা তালাক এসব এমনই জিনিস যা মানুষ যখন ভাবনার ক্ষমতা হারায় তখনই তা করে।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ২:১৮

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ সায়মা বনি,কেমন আছেন আপনি? অনেক দিন পর দেখলাম আপনাকে। ব্যস্ততা কি একটু কমেছে আপনার। আমআলহামদুলিল্লাহ, আমি ভাল আছি।৷৷৷৷৷ ৷ ৷ আসলে সমস্যাসংকুল এ দুনিয়ায় মানুষের ভরসার জায়গা খুব কম। যে কিছু জায়গায় এখনো মানুষ কিছুটা হলেও ভরসা করতে পারে,যেখানে একটু হলেও শান্তি খুঁজে পেতে পারে সেটা পরিবার তথা স্বামী স্ত্রী র সম্পর্কে। সেখানে যদি শান্তি থাকে,একে অপরকে বুঝে তাহলে জীবনে যতই কস্ট আসুক উভয়ের মিলিত চেষ্টায় তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। আর সংসারে যদি অশান্তি থাকে তবে তালাক বা আত্মহত্যা যে কোনটাই করতে পারে অশান্ত মনের মানুষ। ৷ আর এ জন্যই জীবন এর এ কঠিনতম বাস্তবতাকে বুঝার চেষ্টা করতে হবে এবং জানতে হবে তা থেকে বেরিয়ে আসার উপায়। কারন তালাক বা আত্মহত্যা কোন সমাধান নয় তা আরও বেশি সমস্যার সৃষ্টি করে অন্যদিকে।

১২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে চোখ বুলিয়েছি। কিন্তু মন্তব্য সব গুলো পড়েছি।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:১২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রাজিব নুর ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য।৷৷৷

পোস্টে চোখ বুলিয়েছেন সাথে সব মন্তব্য পড়েছেন, তাহলে পড়া হয়ে গেছে প্রায়। আপনি যে সময় করে পড়েন, মন্তব্য করেন তার জন্য শুকরিয়া ভাই। আল্লাহ আপনার কন্যাদের ভাল ও সুস্থ রাখুন এই দোয়া

১৩| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ২:২৫

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রাজিব নুর ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য।৷৷৷ এত রাতে আপনি জাগা কেন? ছোট কন্যা কি ঘুমায় নি বা ঘুমাতে দিচেছনা?৷ পোস্টে চোখ বুলিয়েছেন সাথে সব মন্তব্য পড়েছেন, তাহলে পড়া হয়ে গেছে প্রায়। কিছু লেখার চেষ্টা করা আরকি ভাই। আপনি যে সময় করে পড়েন, মন্তব্য করেন তার জন্য শুকরিয়া ভাই। আল্লাহ আপনার কন্যাদের ভাল ও সুস্থ রাখুন এই দোয়া রইল।

১৪| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৩৬

করুণাধারা বলেছেন: তিন তালাক একবারে দিলে তালাক কার্যকর হবে কিনা এই নিয়ে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে দ্বিমত আছে। এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করলে ভালো হতো।

তবে তালাক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, প্লাস।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:১৯

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ বোন করুণাধারা , আপনার মন্তব্যের জন্য ।

তালাক এমনিতেই অমানবিক আর একসাথে তিন তালাক তা না মানবিক না গ্রহনযোগ্য তবে তালাক কার্যকর হয়ে যাবে।

বাংলাদেশে তালাকের পদ্ধতি তিনটি। এগুলো অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক।

১। তালাকের নোটিশ প্রদান।
২। সালিস এর উদ্যোগগ্রহন।
৩। ৯০ দিন অতিবাহিত হবার পরে তালাক এর সার্টিফিকেট গ্রহণ (একজন রেজিস্টারড নিকাহ রেজিস্টার থেকে)।

তালাক এর নোটিশ দেয়ার সময় এটা ধরেই নেয়া হবে যে, যিনি নোটিশ প্রদান করবেন তিনি অবশ্যই পুরো দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করবেন। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা অন্যরকম।তালাকের সময় দেখা যায় যে তালাকের পুরো টাকা পরিশোধ করা হয় না অথবা অংশ বিশেষ পরিশোধ করা আছে।

সে কারণে তালাকের আইনজীবীর দায়িত্ব পুরো দেনমোহরের টাকা আদায় অথবা পরিশোধ করে দেয়া। তালাকের সময় আর একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর তা হল তালাকের নোটিশ দেয়ার পরে তিন মাস (ইদ্দতকালিন) ভরণপোষণ ও অন্যান্য ভরণপোষণ যেমন বাচ্চা থাকলে তাদের ভরণপোষণ স্বামী কর্তৃক প্রদান করা।

আর এক্ষেত্রে আইনি জটিলতা পরিহার করতে চাইলে দুই পক্ষ বসে একটা সমঝোতা করে নিতে পারে। স্ত্রীর ক্ষেত্রে তালাকের উপরিউক্ত তিনটি পদ্ধতি মেনে তালাক দিতে হবে। স্ত্রী দেনমোহর থেকে কোনোভাবেই বঞ্চিত হবে না।

বাংলাদেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করলে দেখা যায় যে এখানে সমঝোতার ভিত্তিতে তালাক দেয়ার সংখ্যা বেশি। আইনেও সমঝোতার ভিত্তিতে তালাক দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।সব শেষে বলা যায়, তালাক সম্পূর্ণরূপে মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১ অনুযায়ী পরিচালিত একটি বিধান। তবে জটিলতামুক্ত তালাক কার্যকর করার জন্য একজন আইনজীবী অথবা অন্তত ভালো একজন কাজির সাহায্য নেয়া যেতে পারে।

১৫| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৫৬

এমেরিকা বলেছেন: শায়খ আহমাদুল্লাহ প্রমুখ আলোচকেরা তালাক নিয়ে প্রচুর বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেনঃ
- কাউকে সাক্ষী না রেখে রাতের আঁধারে তালাক দিলেও তালাক হয়ে যাবে। এতই সহজ?
- তালাক দেবার ইচ্ছে না থাকলেও মুখে তালাক উচ্চারণ করলেই তালাক হয়ে যাবে। ফাইজলামি নাকি?
- তালাক দেবার জন্য হাদীসে উল্লেখিত সেপারেশনের (বিছানা আলাদা করার) দরকার নেই।

আমার বুঝ হচ্ছে পরিষ্কার। ১৪০০ বছর আগে আরবে লেখালেখির ভালো ব্যবস্থা ছিলনা বলে বিয়েশাদী, তালাক সবকিছুই মৌখিকভাবে হত। এখন যেহেতু লেখালেখির ব্যবস্থা খুব সুলভে করা যায়, তাই লিখিত ছাড়া মৌখিক তালাকের কোন ভিত্তি নেই। কুরআন হাদীসে তালাক দেবার সিস্টেম বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়নি। তাই ধরেই নেয়া যায়, বিয়ের মত এটিও একটি ফর্মাল প্রসেস। মৌখিক তালাক কোনভাবেই কার্যকর নয়।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৩৬

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই এমেরিকা , আপনার মন্তব্যের জন্য ।

- কাউকে সাক্ষী না রেখে রাতের আঁধারে তালাক দিলেও তালাক হয়ে যাবে। এতই সহজ?

* তাহলে ত এটা মনে মনে হয়ে যাচেছ।অন্তত:পক্ষে স্ত্রীকে শুনতে হবে এবং স্পষ্টভাবে উচচারন করতে হবে।তাইত হওয়া উচিত।

- তালাক দেবার ইচ্ছে না থাকলেও মুখে তালাক উচ্চারণ করলেই তালাক হয়ে যাবে। ফাইজলামি নাকি?

* তালাক বিষয়টা যেহেতু সংবেদনশীল কাজেই এ ব্যাপারে মজা করা বা মজা করে কিছু বলাও উচিত না।তবে মজা করেও এমন যদি বলে আমি তোমাকে তালাক দিলাম বা একতালাক দিলাম তাহলে তা কার্যকর হবার কথা। তবে এ ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা যথাযথ কর্তৃপক্ষ ভাল বলতে পারবে।

- তালাক দেবার জন্য হাদীসে উল্লেখিত সেপারেশনের (বিছানা আলাদা করার) দরকার নেই।

* তালাক দেবার পূর্বে স্বামীর দায়িত্ব হলো স্ত্রীকে সংশোধনের সর্বাত্মক চেষ্টা করা। শরিয়তে এ ধরনের স্ত্রীকে সুশৃঙ্খল জীবনে ফিরিয়ে আনতে কিছু দিকনির্দেশনাও দিয়ে দিয়েছে।

প্রথম পদক্ষেপ - প্রথমেই উত্তেজিত হবে না বরং নিজেকে সংযত রাখবে এবং ভালভাবে মিষ্টি কথায় স্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করবে। মায়া-ভালোবাসা প্রকাশ করে মন গলানোর চেষ্টা করবে। কোনো ভুল ধারণায় থাকলে যথাসম্ভব তা দূর করার চেষ্টা করবে। মায়া-মমতা-ভালবাসার মাধ্যমে যত দূর সম্ভব দাম্পত্য জীবন স্থায়ী করার আপ্রাণ চেষ্টা করবে।

দ্বিতীয় পদক্ষেপ : ওই পদক্ষেপের মাধ্যমে কাজ না হলে রাগ-অনুরাগ প্রকাশের উদ্দেশ্যে স্ত্রীর সঙ্গে রাত যাপন থেকে বিরত থাকবে। ঘুমানোর জায়গা পৃথক করে নেবে। যদি এতে সতর্ক হয়ে যায় এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয় তাহলে দাম্পত্য জীবন সুখের হবে।

বিছানা আলাদা করার কথা বলা হয়েছে স্ত্রীর মনোভাব বা স্বভাব পরিবর্তনের জন্য।সমঝোতার জন্য। তা চাইলে কেউ মানতে পারে বা কেউ সরাসরি তালাক ও দিতে পারে।

বাংলাদেশে তালাকের পদ্ধতি তিনটি। এগুলো অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক।

১। তালাকের নোটিশ প্রদান।
২। সালিস এর উদ্যোগগ্রহন।
৩। ৯০ দিন অতিবাহিত হবার পরে তালাক এর সার্টিফিকেট গ্রহণ (একজন রেজিস্টারড নিকাহ রেজিস্টার থেকে)।

তালাক এর নোটিশ দেয়ার সময় এটা ধরেই নেয়া হবে যে, যিনি নোটিশ প্রদান করবেন তিনি অবশ্যই পুরো দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করবেন। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা অন্যরকম।তালাকের সময় দেখা যায় যে তালাকের পুরো টাকা পরিশোধ করা হয় না অথবা অংশ বিশেষ পরিশোধ করা আছে।

সে কারণে তালাকের আইনজীবীর দায়িত্ব পুরো দেনমোহরের টাকা আদায় অথবা পরিশোধ করে দেয়া। তালাকের সময় আর একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর তা হল তালাকের নোটিশ দেয়ার পরে তিন মাস (ইদ্দতকালিন) ভরণপোষণ ও অন্যান্য ভরণপোষণ যেমন বাচ্চা থাকলে তাদের ভরণপোষণ স্বামী কর্তৃক প্রদান করা।

আর এক্ষেত্রে আইনি জটিলতা পরিহার করতে চাইলে দুই পক্ষ বসে একটা সমঝোতা করে নিতে পারে। স্ত্রীর ক্ষেত্রে তালাকের উপরিউক্ত তিনটি পদ্ধতি মেনে তালাক দিতে হবে। স্ত্রী দেনমোহর থেকে কোনোভাবেই বঞ্চিত হবে না।

বাংলাদেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করলে দেখা যায় যে এখানে সমঝোতার ভিত্তিতে তালাক দেয়ার সংখ্যা বেশি। আইনেও সমঝোতার ভিত্তিতে তালাক দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।সব শেষে বলা যায়, তালাক সম্পূর্ণরূপে মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১ অনুযায়ী পরিচালিত একটি বিধান। তবে জটিলতামুক্ত তালাক কার্যকর করার জন্য একজন আইনজীবী অথবা অন্তত ভালো একজন কাজির সাহায্য নেয়া যেতে পারে।

১৬| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৩৫

নীল আকাশ বলেছেন: করুণাধারা বলেছেন: তিন তালাক একবারে দিলে তালাক কার্যকর হবে কিনা এই নিয়ে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে দ্বিমত আছে। এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করলে ভালো হতো।
আপনি উনার প্রশ্নটা বুঝতে পারেন নি। তিন তালাক একসাথে দিলে হবে কি হবে ন সেটা নিয়ে চার মাজহাবের সিদ্ধান্তের মাঝে কিছুটা মত পার্থক্য আছে।

@করুণাধারা আপুঃ
প্রশ্ন: এক ভাই তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরে তিনি মত পরিবর্তন করে বলেন যে, তিনি সেটা রাগের মাথায় দিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে- এই ভাই কি তার স্ত্রীকে ফেরত নেয়ার অধিকার রাখে? ইসলাম কী বলে এ সম্পর্কে? উল্লেখ্য যে, এ মাসআলায় একাধিক দৃষ্টিভঙ্গির মতামত শোনতে পাওয়া যায়; এতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়।

উত্তর: রাগের তিনটি অবস্থা হতে পারে:
প্রথম অবস্থা: এত তীব্র রাগ উঠা যে, ব্যক্তি তার অনুভুতি হারিয়ে ফেলা। পাগল বা উন্মাদের মত হয়ে যাওয়া। সকল আলেমের মতে, এ লোকের তালাক কার্যকর হবে না। কেননা সে বিবেকহীন পাগল বা উন্মাদের পর্যায়ভুক্ত।

দ্বিতীয় অবস্থা: রাগ তীব্র আকার ধারণ করা। কিন্তু সে যা বলছে সেটা সে বুঝতেছে এবং বিবেক দিয়ে করতেছে। তবে তার তীব্র রাগ উঠেছে এবং দীর্ঘক্ষণ ঝগড়া, গালি-গালাজ বা মারামারির কারণে সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি। এগুলোর কারণেই তার রাগ তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ লোকের তালাকের ব্যাপারে আলেমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। অগ্রগণ্য মতানুযায়ী, এ লোকের তালাকও কার্যকর হবে না।

তৃতীয় অবস্থা: হালকা রাগ। স্ত্রীর কোন কাজ অপছন্দ করা কিংবা মনোমালিন্য থেকে স্বামীর এই রাগের উদ্রেক হয়। কিন্তু এত তীব্র আকার ধারণ করে না যে, এতে বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে কিংবা নিজের ভাল-মন্দের বিবেচনা করতে পারে না। বরং এটি হালকা রাগ। আলেমগণের সর্বসম্মতিক্রমে এ রাগের অবস্থায় তালাক কার্যকর হবে। এক মজলিসে একসাথে ৩ তালাক বললে সেটা ১ তালাক হিসেবে কার্যকর হবে।

কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “ইগলাক এর অবস্থায় তালাক কিংবা দাস আযাদ নেই”। [সুনানে ইবনে মাজাহ (২০৪৬), শাইখ আলবানী ‘ইরওয়াউল গালিল’ কিতাবে হাদিসটিকে ‘সহিহ’ আখ্যায়িত করেছেন] ইগলাক শব্দের অর্থে আলেমগণ বলেছেন: জবরদস্থি কিংবা কঠিন রাগ।

রাগাম্বিত ব্যক্তির তালাকের মাসয়ালায় বিস্তারিত ব্যাখ্যামূলক এটাই সঠিক অভিমত। ইবনে তাইমিয়া ও ইবনুল কাইয়্যেম এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন।

হাদিস শরীফে উলে­খ আছে, রাগের বশবর্তী হয়ে অর্থাৎ রাগের মাথায় তালাক দিলে তা তালাক বলে গণ্য হবে না।
যেমন আবু দাউদ শরীফের কিতাবুত তালাক অধ্যায়ের ‘বাবু ফিত তালাক্বি আ’লা গাইজী’ অর্থাৎ ‘রাগান্বিত অবস্থায় তালাক দেয়া’ অনুচ্ছেদে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

হাদিস শরীফটি নিম্নরুপঃ অর্থাৎ মুহাম্মাদ ইবনে উবায়দ ইবনে আবু সালিহ (র) হতে বর্ণিত, যিনি (সিরিয়ার) ইলিয়া নামক স্থানে বসবাস করতেন। তিনি বলেন, আমি সিরিয়া হতে আদী ইবনে আলী আল কিন্দীর সাথে বের হই। এরপর আমরা মক্কায় উপনীত হলে, আমাকে সাফিয়্যা বিনতে শায়বার নিকট তিনি প্রেরণ করেন। যিনি আয়শা (রা) হতে এ হাদিসটি সংগ্রহ করেন। রাবী বলেন, আমি আয়শা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ গিলাক অবস্থায় কোন তালাক হয় না বা দাস মুক্ত করা যায় না। ইমাম আবু দাউদ (র) বলেন, গিলাক অর্থ রাগান্বিত অবস্থায় তালাক প্রদান করা। (আবু দাউদ শরীফ, ৩য় খন্ড, ২১৯১ নং হাদিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

২. এছাড়া নিদ্রিত ও উন্মাদ (নেশাগ্রস্থ বা রোগগ্রস্থ) অবস্থায় তালাক হয় না। (সুনানু নাসাই শরীফ-৩য় খন্ড,-৩৪৩৩ নং হাদিস এবং সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ-২য় খন্ড-২০৪১, ২০৪২ নং হাদিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
দ্বীনের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই”(2:256)।

3) আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (স) বলেছেন- তালাক মাত্রই তা কার্যকর হয়, বুদ্ধিভ্রষ্ট ও মতিভ্রম লোকের তালাক কার্যকর হয় না”(তিরমিযী, কিতাবুত তালাক, হাদীস 1131)। অর্থাৎ যদি কেউ মদ খেয়ে অথবা নেসাগ্ৰস্থ অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেয়, সেই তালাক গ্ৰহণ যোগ্য হবে না।

শুধুমাত্র এখানেই শেষ নয়, স্ত্রীর যদি Period বা ঋতু স্রাব বা মাসিক হয়- এই অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়া যাবে না। নিচের বর্ণিত হাদীসটি দেখুন-
“আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা) বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নবী (স) জীবদ্দশায় তার স্ত্রীকে ঋতুবতী অবস্থায় ১ তালাক দিলে তার পিতা উমার ইবনে খাত্তাব (রা) নবী (স)- কে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন নবী ( স) বললেন- তাকে (তোমার ছেলেকে) গিয়ে বল যে, সে যেন তার স্ত্রীকে স্ত্রী হিসাবে ফিরিয়ে নেয়” (বুখারী, কিতাবুত তালাক, হাদীস 4871)।

এখানেই কিন্তু শেষ নয়, আরও একটু বাকি আছে। নিচের হাদীসটি দেখুন-
“আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিশ্বনবী (স) বলেছেন- গিলাক বা রাগ অবস্থায় তালাক বা দাস মুক্তি হয় না”(আবুদাউদ, কিতাবুত তালাক, হাদীস 2191)

আরো উল্লেখ্য: জোর পূর্বক, ঘুমন্ত, নাবালক, পাগল বা জ্ঞানহারা, নেশাগ্রস্থ, রাগান্বিত ব্যাক্তির প্রদত্ত তালাক কিছুই গন্য হবেনা-(আল কুরআন: সূরা নাহল-১০৬,) সূরা বাকারা(০২:২২৪ ও ২২৫)সুনান ইবনু মাজাহ: হাদিস নং-২০৪৬ সহীহ, সুনান আবূ দাঊদ: হাদীস নং-৪৪০৩ সহীহ, সহীহুল বুখারী: পর্ব-তালাক অধ্যায়-১১, সুনান আবূ দাউদ: হাদীস নং-২১৯৩ সহীহ)।

তবে তিনটি কাজ যা বাস্তবে বা ঠাট্টাচ্ছলে করলেও তা বাস্তবিকই ধর্তব্য আর তা হলো বিবাহ,তালাক ও স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনা-(সনান আবূ দাউদ: হাদীস নং ২১৯৪ হাসান সহীহ)।ফতুয়া :কিতাবুল ফেরাহ আলাল মযাহিবিল আরবায়া ” গ্রন্থের ৪র্থ খন্ড ৩২৩ পৃষ্টায় উল্লেখ রয়েছে, ফতোয়া শামি ৩য় খন্ড ২৪৪ পৃষ্টাতে রয়েছে

হানাফী মাযহাবের ইমামগন বলেনঃ কিতাবুল ফেরাহ আলাল মযাহিবিল আরবায়া ” গ্রন্থের ৪র্থ খন্ড ৩২৩ পৃষ্টায় উল্লেখ রয়েছে,
অর্থাৎ হানাফী মাযহাবের ইমামগন, বলেন, তালাক কার্যকর হওয়ার জন্য স্ত্রীর প্রতি সম্বোধন থাকা শর্ত। এভাবে যে, স্ত্রী নাম ধরে, তাকে বুঝায় এ ধরনের সর্বনাম ব্যবহার করে, যেমন- তোমাকে তালাক কিংবা তাকে তালাক দিলাম। অথবা ইঙ্গিতবাচক বিশেষ্য ব্যবহার করা, যেমন তালাকপ্রাপ্তা, আতপর এ ধরনের শব্দ গঠনকগত ভাবে মহিলা বা স্ত্রীকে বুঝায়।

এ থেকে বুঝা গেল উল্লেখিত ঘটনার আলোচ্য মতে (সম্বোধন) বা না থাকার কারণে উক্ত স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয় না| যা
ফতোয়া শামি ৩য় খন্ড ২৪৪ পৃষ্টাতে রয়েছেঃ অর্থাৎ অপ্রকৃতস্থ, মত ব্যক্তির ন্যয় অনুরূপ ব্যক্তির ক্ষেত্রে তালাকের হুকুম দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। তার কথা ও বাহিয্যিক স্বভাবগত কাজের মধ্যে নিতান্ত বিঘ্নতার কারনে,অনুরূপ মদহুশ ঐ ব্যাক্তির ক্ষেত্রে বলা হয়।যার বাধ্যক্যের কারনে বা কোন রোগের কারণে কিংবা আকস্মিক (দুর্ঘটনার)

দুর্ঘটনার কারণে যার বিবেক বুদ্ধিতে বিঘ্নতা ঘটে, যতক্ষণ কথায় ও কাজে বিচারবুদ্ধি চরম বিঘ্ন বা অসুবিধায় থাকবে তখন তার কথা গ্রহণীয় নয়। যদিও সে কি বলতেছে জানে এবং তার ইচ্ছে করে, কেননা এ জানা ও ইচ্ছে করা গ্রহণ যোগ্যতা রাখে না সঠিক সুস্থ অনুভূতি না থাকার কারণে।

আর তাই গ্রন্থে আল্লামা মুফতি সৈয়দ আমিনুল ইহসান মুজাদ্দেদী (রহঃ) মদহুশ এর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন,
-অর্থাৎ যারা লজ্জার কারণে ;ভয়ের কারণে;;কিংবা রোগের কারণ;বিবেক বুদ্ধি লোপ পায়। কিতাবুল ফিকাহ আলাল মাযাহিবিল আরবায়া, কিতাব এ উল্লেখ আছে অর্থাৎ যখন রাগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং তার কথা ও কাজের ক্ষেত্রে প্রলাপ বকতে থাকে,তখন তার তালাক প্রযোজ্য নয়, আর এটাই উত্তম অভিমত।

অর্থাৎ হানিফি মাযহাবের বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামদের নিকট গবেষণা লব্ধ অভিমত হল নিশ্চয়ই যারা রাগ ও তার স্বভাবচরিত্রের নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায় যে, তার কথা ও কাজে বেহুদা বিষয় প্রভাব বিস্তার তখন তার তালাক পতিত হবে না,

সুতরাং বর্ণিত উদ্ধৃত সমূহ দ্বারা বুঝা যায় যে উল্লেখিত ঘটনার আলোচ্য মতে স্বামীর আগে অস্থির হয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় রুপে তালাক দেওয়া স্ত্রীর প্রতি তালাক পতিত হয় না|

০১ লা মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৩৮

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই নীল আকাশ ,আপনার চমতকার,তথ্যবহুল ও পুঙ্খানুপুঙ্খ ও বিশদ মন্তব্যের জন্য এবং দেরিতে জবাবের জন্য দুঃখিত।

আমি অনেক কিছু জানতাম না যা আপনার মন্তব্য থেকে জানতে পারলাম।আর এই মন্তব্যের জন্য আপনাকে যে পরিশ্রম করতে হয়েছে আল্লাহ আপনাকে তার উত্তম প্রতিদান দিন আর আমাদের সবাইকে এই বেদনাদায়ক কাজ এবং পরিস্থিী থেকে হেফাজত করুন।

১৭| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৩৭

নীল আকাশ বলেছেন: মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ “হে নবী! তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও তখন তাদেরকে তালাক দাও তাদের ‘ইদ্দাতের প্রতি লক্ষ্য রেখে, আর ‘ইদ্দাতের হিসাব সঠিকভাবে গণনা করবে।” (সূরাহ আত্‌-ত্বলাক ৬৫/১)হালাল জিনিসের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট জিনিস হচ্ছে ত্বলাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ। যদিও এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত তবুও স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রাখতে না পারলে ইসলামে এ ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের বিচ্ছেদ ঘটানোর সুযোগ করে দেয়া হয়েছে ত্বলাকের মাধ্যমে। এখানে ত্বলাক সংক্রান্ত কয়েকটি নিয়ম উধৃত করা হলো।
১। কোন স্ত্রীর মধ্যে স্বামীর প্রতি অবাধ্যতার লক্ষন দেখা দিলে স্ত্রীকে সদুপদেশ দিতে হবে। প্রয়োজনে তার শয্যা ত্যাগ করতে হবে, শিক্ষামূলক প্রহার করতে হবে। (এ মর্মে সূরা আন-নিসাঃ ৩৪ আয়াত দেখুন)
২। যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদের আশঙ্কা দেখা দেয় তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন ও স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত করতে হবে। “তারা দু'জন সংশোধনের ইচ্ছে করলে আল্লাহ্‌ তাদের উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য করে দেবেন।” (সূরা আন-নিসাঃ ৩৫)
৩। যদি তালাক দেয়া একান্তই অপরিহার্য হয়, তাহলে নারী যে সময়ে ঋতুমুক্তা ও পরিচ্ছন্না হবে, সে সময় যৌন মিলনের পূর্বেই স্বামী তাকে এক তালাক দিবে আর স্ত্রী তালাকের ইদ্দত তথা তিন ঋতু বা ঋতুমুক্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করবে- বাকারাঃ ২৮। এ ইদ্দতের মধ্যে যাতে পুনর্মিলন ও সন্ধির সুযোগ থেকে যায় সে জন্য স্বামী স্ত্রীকে তার গৃহ থেকে বহিষ্কৃত করবে না, আর স্ত্রীও গৃহ থেকে বের হয়ে যাবে না। অবশ্য স্ত্রী যদি খোলাখুলি ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে স্বতন্ত্র কথা। (সূরা আত-ত্বলাক-১)
৪। স্বামী যদি স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে চায় [এক তালাক অথবা দু’তালাকের পরে] তাহলে তাকে ইদ্দতের মধ্যে স্বাচ্ছন্দে ফিরিয়ে নিতে পারবে। এ শারঈ রীতির আরেকটি বড় সুবিধা এই যে, এক তালাক অথবা দু’তালাকের পরে ইদ্দতের সীমা শেষ হয়ে গেলেও স্বামী তার তালাকদত্তা স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করতে পারবে নতুনভাবে মাহর নির্ধারণ ও সাক্ষীর মাধ্যমে। অন্য পুরষের সাথে স্ত্রীটির বিবাহিতা হওয়ার কোন প্রয়োজন হবে না। এ অবস্থায় পূর্ব স্বামী তাকে বিবাহ করতে না চাইলে স্ত্রী যে কোন স্বামীর সঙ্গে বিবাহিতা হতে পারবে।
৫। আবদুল্লাহ বিন উমার বর্ণিত আবূ দাঊদের হাদীস হতে জানা যায়, কেউ ঋতু অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দিলে সে তালাককে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তালাক হিসেবে গণ্য করেননি। কাজেই কেউ তালাক দিতে চাইলে স্ত্রীর পবিত্রাবস্থায় তালাক দিতে হবে।
৬। কেউ স্ত্রীকে এক তালাক দিয়ে ইদ্দতের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিলে একটি তালাক বলবৎ থাকবে। স্ত্রীর ঋতুমুক্ত অবস্থায় স্বামী দ্বিতীয় তালাক দিয়ে স্ত্রীকে ইদ্দতের মধ্যে আবার ফিরিয়ে নিতে পারবে। এক তালাক বা দু’ তালাক দিয়ে স্ত্রীকে ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নিলে তাদের মধ্যে বিয়ে পড়ানোর প্রয়োজন হয় না।
৭। এক তালাক অথবা দ্বিতীয় তালাক দেয়ার পর ইদ্দত শেষ হয়ে গেলে স্বামী ইচ্ছে করলে তার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করতে পারবে। এতে যেন স্ত্রীর অভিভাবকেরা বাধা সৃষ্টি না করে- (সূরা আল-বাকারাহঃ ২৩২)
৮। স্বামী তার স্ত্রীকে পরপর ৩টি তুহুরে বা ঋতুমুক্ত অবস্থায় তিন তালাক না দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তিন তুহুরে তিন তালাক দিলেও বিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এ অবস্থায় ঐ স্বামী স্ত্রী আবার সরাসরি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না। তারা পুনরায় কেবল তখনই বিয়ে করতে পারবে যদি স্ত্রীটি স্বাভাবিকভাবে অন্য স্বামী গ্রহণ করে এবং তার সঙ্গে মিলিত হয় অতঃপর ঐ স্বামী মারা যায় বা স্ত্রীটিকে তালাক দেয়- বাকারাঃ ২৩০। উল্লেখ্য তিন তালাক হয়ে গেলে প্রথম স্বামীর সাথে বিয়ের জন্য অন্য পুরুষের সাথে মহিলাকে বিয়ে করে তার সাথে মিলন ঘটতে হবে এবং সে [দ্বিতীয় স্বামী] যদি কোন সময় স্বেচ্ছায় তাকে তালাক দেয় তাহলে প্রথম স্বামী পুনরায় বিয়ে করতে পারবে।
একত্রিত তিন তালাক প্রসঙ্গঃ
ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে আব্দুর রাযযাকের প্রমুখাৎ, তিনি তাউসের পুত্রের বাচনিক এবং তিনি স্বীয় পিতার নিকট হতে আব্দুল্লাহ বিন ‘আব্বাস (রাঃ) এর সাক্ষ্য উদ্ধৃত করেছেন যে, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পবিত্র যুগে আর আবূ বাকরের (রাঃ) সময়ে আর উমার (রাঃ) এর খিলাফাতের দু’বৎসর কাল পর্যন্ত একত্রিতভাবে তিন তালাক এক তালাক বলে গণ্য হত। অতঃপর উমার (রাঃ) বললেন, যে বিষয়ে জনগণকে অবকাশ দেয়া হয়েছিল, তারা সেটাকে তরান্বিত করেছে। এমন অবস্থায় যদি আমরা তাদের উপর তিন তালাকের বিধান জারী করে দেই, তাহলে উত্তম হয়। অতঃপর তিনি সেই ব্যবস্থাই প্রবর্তিত করলেন।
একত্রে তিন তালাক দেয়া হলে এক তালাক বলে গণ্য হবে। এর প্রমাণঃ (আবূ রুকানার স্বিতীয় স্ত্রী আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট তার শারীরিক অক্ষমতার কথা প্রকাশ করলে) নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবদ ইয়াযীদকে (আবূ রুকানাকে) বললেন, তুমি তাকে ত্বালাক দাও। তখন সে ত্বলাক দিল। অতঃপর তাকে বললেন, তুমি তোমার (পূর্ব স্ত্রী) উম্মু রাকানা ও রুকানার ভাইদেরকে ফিরিয়ে নাও। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমিতো তাকে তিন ত্বলাক দিয়ে ফেলেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি তা জানি। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করলেন, “হে নবী! যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে ত্বলাক দিবে তখন তাদেরকে ইদ্দাতের উপর ত্বলাক দিবে”। (আত-ত্বলাক ৬৫:১) (সহীহ আবু দাউদ হাদীস নং ২১৯৬)
উপরোক্ত হাদীসে বোঝা যাচ্ছে যে, উপরোক্ত হাদীসে তিন ত্বলাক দেয়া বলতে বিখ্যাত ভাষ্য গ্রন্থ ‘আউনুল মা’বুদ ৬ষ্ঠ খণ্ড ১৯০ পৃষ্ঠায় (আরবী) ব্যাখ্যায় (আরবী) উল্লেখ করেছেন। যার অর্থ আবূ রুকানা তার স্ত্রীকে এক সাথেই তিন ত্বলাক প্রদান করেছিলো।
এখন প্রশ্ন, উমার (রাঃ) এ নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তন করলেন কেন? প্রকাশ থাকে যে, ইসলামী বিধানগুলো মোটামুটি দু’ভাবে বিভক্ত। প্রথম শ্রেণীর আইনগুলো স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে এবং ইজতিহাদের পরিবর্তনে কোন অবস্থানেই কোনক্রমে এক চুল পরিমাণও বর্ধিত, হ্রাসপ্রাপ্ত ও পরিবর্তিত হতে পারে না। যেমন ওয়াজিব আহকাম, হারাম বস্তুসমূহের নিষিদ্ধতা, যাকাত ইত্যাদিন পরিমাণ ও নির্ধারিত দণ্ডবিধি। স্থান, কাল পাত্রভেদে অথবা ইজতিহাদের দরুণে উল্লিখিত আইনগুলো পরিবর্তন সাধন করা অথবা তাদের উদ্দেশ্যের বিপরীত ইজতিহাদ করা সম্পূর্ণ অবৈধ।
দ্বিতীয় শ্রেণীর আইনগুলো জনকল্যাণের খাতিরে এবং স্থান-কাল-পাত্রভেদে এবং অবস্থাগত হেতুবাদে সাময়িকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। যথা শাস্তির পরিমাণ ও রকমারিত্ব। জন্যকল্যণের পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও একই ব্যাপারে বিভিন্নরূপ নির্দেশ প্রদান করেছেন, যেমনঃ
ক) মদ্যপায়ীকে চতুর্থবার ধরা পড়ার পর হত্যা করার দণ্ড- আহমাদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ।
খ) যাকাত পরিশোধ না করার জন্য তার অর্ধেক মাল জরিমানাস্বরূপ আদায় করা- আহমাদ, নাসায়ী, আবূ দাউদ।
গ) অত্যাচারীর কবল হতে ক্রীতদাসকে মুক্ত করে স্বাধীনতা প্রদান করা- আহমাদ, আবূ দাউদ, ইবনু মাজা।
ঘ) যে সকল বস্তুর চুরিতে হস্তকর্তনের দণ্ড প্রযোজ্য নয়, সেগুলোর চুরিরর জন্য মূল্যের দ্বিগুণ জরিমানা আদায় করা- নাসায়ী ও আবূ দাউদ।
ঙ) হারানো জিনিস গোপন করার জন্য দ্বিগুণ মূল্য আদায় করা- নাসায়ী, আবূ দাউদ।
চ) হিলাল বিন উমাইয়াকে স্ত্রী সহবাস বন্ধ রাখার আদেশ দেয়া- বুখারী, মুসলিম।
ছ) কারাদণ্ড, কশাঘাত বা দুররা মারা ইত্যাদি শাস্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রদান করেননি। অবশ্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তিনি সাময়িকভাবে আটক করার আদেশ দিয়েছিলেন- আবূ দাউদ, নাসায়ী ও তিরমিযী।
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তিকালের পর খুলাফায়ে রাশেদীনও বিভিন্ন প্রকারের শাস্তি ও দণ্ড প্রদান করতেন। উমার ফারূক (রাঃ) মাথা মুড়ানোর ও দুররা মারার শাস্তি দিয়েছেন। পানশালা আর যে সব দোকানে মদের ক্রয় বিক্রয় হত, সেগুলো পুড়িয়ে দিয়েছেন।
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পবিত্র যুগে মদের ব্যবহার ক্বচিৎ হত। উমার (রাঃ) এর যুগে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি ঘটায় তিনি এ অপরাধের শাস্তি ৮০ দুররা আঘাত নির্দিষ্ট করে দেন আর মদ্যপায়ীকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেন। উমার (রাঃ) কশাঘাত করতেন, তিনি জেলখানা নির্মাণ করান, যারা মৃত ব্যক্তিদের জন্য মাতম ও কান্নাকাটি করার পেশা অবলম্বন করত, স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে তাদেরকে পিটানোর আদেশ দিতেন। এর রকমই তালাক সম্বন্ধেও যখন লোকেরা বাড়াবাড়ি করতে লাগল আর যে বিষয়ে তাদেরকে অবসর ও প্রতীক্ষার সুযোগ দেয়া হয়েছিল তারা সে বিষয়ে বিলম্ব না করে শারী’আতের উদ্দেশ্যের বিপরীত সাময়িক উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে ক্ষিপ্রগতিতে তালাক দেয়ার কাজে বাহাদুর হয়ে উঠল, তখন দ্বিতীয় খালীফা উমার (রাঃ)’র ধারণা হল যে, শাস্তির ব্যবস্থা না করলে জনসাধারণ এ বদভ্যাস পরিত্যাগ করবে না, তখন তিনি শাস্তি ও দণ্ডস্বরূপ এক সঙ্গে প্রদত্ত তিন তালাকের জন্য তিন তালাকের হুকুম প্রদান করলেন। যেমন তিনি মদ্যপায়ীর ৮০ দুররা আর দেশ বিতাড়িত করার আদেশ ইতোপূর্বে প্রদান করেছিলেন, ঠিক সেরূপ তাঁর এ আদশেও প্রযোজ্য হল। তাঁর দুররা মারা আর মাথা মুড়াবার আদেশ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং প্রথম খালীফা আবূ বাকর (রাঃ) এর সাথে সুসমঞ্জস না হলেও যুগের অবস্থা আর জাতির স্বার্থের জন্য আমীরুল মু’মিনীনরূপে তাঁর এরূপ করার অধিকার ছিল, সুতরাং তিনি তাই করলেন। অতএবং তাঁর এ শাসন ব্যবস্থার জন্য কুরআন ও সুন্নাতের নির্দেশ প্রত্যঅখ্যান করার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে টিকতে পারে না। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও সুস্পষ্ট যে, খালীফা ও শাসনকর্তাদের উপরোক্ত ধরনের যে ব্যবস্থা আল্লাহর গ্রস্থ ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতে বর্ণিত ও উক্ত দু’বস্তু হতে গৃহীত, কেবল সেগুলোই আসল ও স্থায়ী এবং ব্যাপক আইনের মর্যাদা লাভ করার অধিকারী। সুতরাং উমার ফারূকের শাসনমূলক অস্থায়ী ব্যবস্থাগুলোকে স্থায়ী আইনের মর্যাদা দান করা আদৌ আবশ্যক নয়। পক্ষান্তরে যদি বুঝা যায় যে,তাঁর শাসনমূলক ব্যবস্থা জাতির পক্ষে সঙ্কট ও অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং দণ্ডবিধির যে ধারার সাহায্যে তিনি সমষ্টিগত তিন তালাকের বিদ’আত রুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন, তাঁর সেই শাসনবিধিই উক্ত বিদ’আতের ছড়াছড়ি ও বহুবিস্তৃতির কারণে পরিণত হয়ে চলেছে- যেরূপ ইদানীং তিন তালাকের ব্যাপারে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, হাজারে ও লাখেও কেউ কুরআন ও সুন্নাহর বিধানমত স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করে কিনা সন্দেহ- এরূপ অবস্থায় উমার (রাঃ) এর শাসনমূলক অস্থায়ী নির্দেশ অবশ্যই পরিত্যাক্ত হবে এবং প্রাথমিক যুগীয় ব্যবস্থায় পুনঃ প্রবর্তন করতে হবে। আমাদের যুগের বিদ্বানগণের কর্তব্য প্রত্যেক যুগের উম্মাতের বৃহত্তর কল্যাণের প্রতি দৃষ্টি রাখা এবং জাতীয় সঙ্কট দূর করতে সচেষ্ট হওয়া। একটি প্রশাসনিক নির্দেশকে আঁকড়ে রেখে মুসলমানদেরকে বিপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয়া উলামায়ে ইসলামের উচিত নয়।
সর্বশেষ কথা এই যে, হাফিয আবূ বাকর ইসমাঈলী সমষ্টিগতভাবে প্রদত্ত তিন তালাকের শারঈ তিন তালাকরূপে গণ্য করার জন্য উমার (রাঃ) এর পরিতাপ ও অনুশোচনা সনদসহ রেওয়ায়াত করেছেন। তিনি মুসনাদে উমারে লিখেছেন- হাফিয আবূ ই’য়ালা আমাদের কাছে রেওয়ায়াত করেছেন, তিনি বলেন সালিহ বিনে মালেক আমাদের কাছে রেওয়ায়াত করেছেন, তিনি বলে, খালেদ বিনে ইয়াযীদ আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি স্বীয় পিতা ইয়াযীদ বিন মালিকের নিকট হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব বললেন- তিনটি বিষয়ের জন্য আমি যেরূপ অনুতপ্ত, এরূপ অন্য কোন কাজের জন্য আমি অনুতপ্ত নই, প্রথমতঃ আমি তিন তালাককে তিন তালাক গণ্য করা কেন নিষিদ্ধ করলাম না। দ্বিতীয়তঃ কেন আমি মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাসদেরকে বিবাহিত করলাম না, তৃতীয়তঃ অগ্নিপতঙ্গ কেন হত্যা করলাম না। ইগাসার নতুন সংস্করণে আছে, কেন আমি ব্যাবসাদার ক্রন্দনকারীদের হত্যা করলাম না।
কোন দেশে যদি বিদ’আতী পন্থায় তালাক দেয়ার প্রবণতা প্রকট আকার ধারণ কের যেরূপ উমার এর যুগে ঘটেছিল তাহলে শুধুমাত্র ইসলামী রাষ্ট্রের শাসক যদি মনে করেন যে, এক সাথে তিন তালাকতে তিন তালাক হিসেবেই গণ্য করা হবে, তাহলে তিনি এরূপ ঘোষণা শাস্তিমূলকভাবে দিতে পারেন। কিন্তু বর্তমান যুগে সে যুগের ন্যায় অবস্থা সৃষ্টি হয়নি এবং নেই।
আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন- দেখো, মাত্র দু’বার তালাক দিলেই স্ত্রীর ইদ্দতের মধ্যে পুরুষ তাকে বিনা বিবাহে ফিরিয়ে নিতে পারে। অতঃপর হয় উক্ত নারীর সাথে উত্তমরূপে সংসার নির্বাহ অথবা উত্তম রূপে বিচ্ছেদ। আর যে মাহর তোমরা নারীদের দিয়েছ তার কিছুই গ্রহণ করা তোমাদের জন্য হালাল নয়... (সূরা আল-বাকারাহঃ ২২৯)
(আরবী) অর্থাৎ (আরবী) আমরা তার হিফাযত করেছি (আরবী) তার হিসাব রেখেছি।
সুন্নাত ত্বলাক্ব হল, পবিত্রাবস্থায় সহবাস ব্যতীত স্ত্রীকে ত্বলাক দেয়া এবং দু’জন সাক্ষী রাখা।

সহী সূত্রঃ

০১ লা মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৩৮

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই নীল আকাশ ,আপনার চমতকার,তথ্যবহুল ও পুঙ্খানুপুঙ্খ ও বিশদ মন্তব্যের জন্য এবং দেরিতে জবাবের জন্য দুঃখিত।

আমি অনেক কিছু জানতাম না যা আপনার মন্তব্য থেকে জানতে পারলাম।আর এই মন্তব্যের জন্য আপনাকে যে পরিশ্রম করতে হয়েছে আল্লাহ আপনাকে তার উত্তম প্রতিদান দিন আর আমাদের সবাইকে এই বেদনাদায়ক কাজ এবং পরিস্থিী থেকে হেফাজত করুন।

১৮| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৩৯

করুণাধারা বলেছেন: আমার মন্তব্যের উত্তরে আপনি যা বলেছেন তাতে আমি খুবই অবাক হয়েছি। আমি জানি আপনি ভুল বলেছেন, কিন্তু সেটা প্রমাণ করার মতো সনদ বা তথ্য আমার কাছে না থাকায় আমি এ ব্যাপারে আর কথা বাড়াইনি।

ধন্যবাদ নীল আকাশকে, পরিষ্কার ভাবে বোঝাবার জন্য প্রচুর সময় নিয়ে দুটি মন্তব্য করার জন্য। এই ব্যাপারে আমার জানার আগ্রহ জন্মে "নিকাহ" নামের একটা সিনেমা দেখার পর। এই সিনেমাতে দেখানো হয়, স্বামী স্ত্রীর ঝগড়ার সময় স্বামী তিন তালাক দেয়। আমি পরবর্তীতে জানতে পারি, একবারে তিন তালাক বললে এক তালাক হবে। এর বিপরীত মত অনুযায়ী, একবারে তিন তালাক দেয়া তালাকের বৈধ পন্থা না হলেও তাতে তালাক হয়ে যাবে, কারণ কেউ ভুল করে হত্যা করলেও প্রাণ ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হয় না।

আল্লাহ সূরা বাকারাতে বিস্তারিত ভাবে ইদ্দত সম্পর্কে বলেছেন, ইদ্দতকালীন সময়ে স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে দিতে করেছেন। তালাক নামে একখানা সূরা আছে, তার প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলেছেন তালাক দেবার সময় ইদ্দতের দিকে লক্ষ্য রাখতে। একসাথে তিন তালাক দিলে ইদ্দত কী হবে??

আশাকরি নীল আকাশ যেমনভাবে ব্যাখ্যা করে মন্তব্য করেছেন, আপনি উনাকে সেভাবে বিস্তারিত প্রতি মন্তব্য করবেন। অপেক্ষায় থাকলাম।







০১ লা মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৪৫

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ বোন করুণাধারা ,আপনার জানার আগ্রহ এবং প্রতিমন্তব্যের জন্য এবং দেরিতে জবাবের জন্য দুঃখিত।

আসলে বোন আমিও অনেক কিছু জানতাম না যা ভাই নীল আকাশের বিশদ মন্তব্য থেকে জানতে পারলাম।আর এই মন্তব্যের পরে এবং মন্তব্যে থেকে আশা করি আপনিও জানার বিষয়ে অনেক তথ্য পেয়েছেন। আমি আসলে এত চমতকার ও বিশদভাবে আপনার মন্তব্যের জবাব দিতে পারতাম না যা ভাই ভাই নীল আকাশ দিয়েছেন।আমার অক্ষমতা মার্জনীয়।


আর এই মন্তব্যের জন্য ভাই নীল আকাশেকে যে পরিশ্রম করতে হয়েছে আল্লাহ তাকে তার উত্তম প্রতিদান দিন আর আমাদের সবাইকে এই বেদনাদায়ক কাজ এবং পরিস্থিতী থেকে হেফাজত করুন।

১৯| ০২ রা মার্চ, ২০২১ রাত ১২:৪৪

নীল আকাশ বলেছেন: ভাই কিছু মনে করবেন না। ধর্মীয় পোস্ট দেবার আগে নিশ্চিত হয়ে নেবেন যে সেই বিষয়টা আপনি ভালোভাবে জানেন।
কেউ পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন করেছেন আর আপনি ভুল উত্তর দিচ্ছেন। কিংবা উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছেন এটা খুব বিশ্রী ব্যাপার।
করুণাধারা আপু ভদ্র মানুষ দেখে এই পোস্ট নিয়ে পেচায় নি। চাদ্গাজী এই পোস্ট দেখেও নি। বেঁচে গেছেন।
এইসব পোস্ট লেখা আগে এটা পড়ে আসুনঃ
ব্লগে পোস্ট দেয়া বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয় নিয়ে লেখার ব্যাপারে কিছু অপ্রিয় সত্যকথা

০২ রা মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:২৪

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই নীল আকাশ ,আপনার মন্তব্যের জন্য ।

-কেউ পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন করেছেন আর আপনি ভুল উত্তর দিচ্ছেন। কিংবা উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছেন এটা খুব বিশ্রী ব্যাপার।

কি বলব ভাই বলেন? আমি সবসময় চেষ্টা করি সঠিক তথ্য এবং বিষয় ভিত্তিক ,বস্তুনিষ্ঠ জবাব দিতে ।এখন আপনার যদি মনে হয় তা এড়িয়ে যাওয়া বা ভুল উত্তর দেয়া তাহলে আর কিইবা বলার আছে। আর ব্লগ সাধারন(বেসিক) ভাবে কিছু জিনিষের আলোচনা করা হয় ।ফতোয়া দেয়ার জন্য বিশদ যে জ্ঞানের দরকার সে জ্ঞান যাদের আছে তারাই এ ব্যাপারে বিশদ বলবে।

আর আপনার রেফারেন্স ব্যক্তি ।

ভাই আমি জানতে চেষ্টা করি সঠিক এবং বিষয় ভিত্তিক তথ্য ।কারো সাথে কারো তুলনা করা আমি পছন্দ করি না।তা সে আমির-ফকির কিংবা তথাকথিত রাঘব বোয়াল যাই হোক।

ভাল ও সুস্থ থাকেন। আমার অক্ষমতা মার্জনীয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.