নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খুবই সাধারন একজন মানুষ । পড়া যার নেশা । পড়ার এবং জানার আশায় ----

মোহামমদ কামরুজজামান

মোহামমদ কামরুজজামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

" AIPAC " অ্যামেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি বা ইহুদি লবি - তাদের কাজ কি ? ইসরাইল-ফিলিস্তিন স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা কি সম্ভব?

২৪ শে মে, ২০২১ দুপুর ১২:৪৪


ছবি - timesofisrael.com

" অ্যামেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি " সংক্ষেপে আইপেক (AIPAC)। এটি ইসরাইল-সমর্থক একটি মার্কিন লবিং গ্রুপ। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ও নির্বাহী শাখায় যাতে ইসরাইলপন্থী নীতি ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, সে ব্যাপারে এরা নিরলস লবিং চালায়। বেস্টি বার্নস কর্ন আইপেকের বর্তমান প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেশ কয়েকটি ইসরাইলপন্থী লবিং গ্রুপের অন্যতম এটি। এরা দাবি করে, এদের সদস্যসংখ্যা এক লাখের উপরে। আছে ১৭টি আঞ্চলিক অফিস। রয়েছে বহু ডোনার। তাদের আরো দাবি - এটিই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন, যেটি যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল জোট জোরদার করার কাজে নিয়োজিত।

আইপেক যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদদের মাঝে লবিং চালায়, যাতে তারা ইসরাইলের প্রতি শর্তহীন রাজনৈতিক সমর্থন জারি রাখেন। এদের প্রয়াসেই গাজায় সাম্প্রতিক ইসরাইলি হামলার ঠিক এক সপ্তাহ আগে গত ২২ এপ্রিল কংগ্রেসের ৪৩৫ সদস্যের মধ্যে ৩৩০ জন সদস্য স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয় হাউজ অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন কমিটির চেয়ারম্যানসহ পদস্থ সদস্যদের কাছে। এ চিঠিতে তারা বলেছেন, ইসরাইলে অর্থসহায়তা যেন কমানো না হয় কিংবা কোনো শর্তও যেন এ বিষয়ে আরোপ না করা হয়। এই চিঠি আইপেকের প্রতিনিধিত্বের শক্তি প্রদর্শনের একটি উদাহরণ মাত্র।


ছবি - foreignpolicy.com

আমরিকার প্রেসিডেন্টদের তথা আমেরিকার সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে ইসরাইলি দুষ্কর্মের সহযোগী হিসেবে কাজ করার। আর সর্বসম্প্রতিক আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার পূর্বসূরীদের সেই ভূমিকাই প্রকাশ করলেন গত ১২ মে " ইসরাইল হ্যাজ দ্য রাইট টু ডিফেন্ড ইটসেলফ" - বক্তব্যের মাধ্যমে। এর প্রতিফলনও দেখা যাচ্ছে এরই মধ্যে। তার জাতিসঙ্ঘের দূত লজ্জার মাথা খেয়ে ইতোমধ্যেই ব্লক করে দিয়েছেন নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতি সম্পর্কিত আহ্বান। বাইডেনের এই বক্তব্য ও অবস্থান সমালোচনার মুুখে পড়েছে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই। ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরাইলের হত্যাযজ্ঞ এবং গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদে রাজপথে বিক্ষোভ হয়েছে, বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়েছে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে। সবার দাবি - যুক্তরাষ্ট্রকে তার নীতি পরিবর্তন করে আন্তর্জাতিক আইনানুগ ও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। কংগ্রেসের প্রতি সদস্যকে স্বাক্ষর করতে হবে বেটি ম্যাককুলাম সূচিত বিলে। এই বিলে রয়েছে - ইসরাইলকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের কোনো তহবিল ফিলিস্তিনি শিশুদের আটক রাখা, অবৈধ অবরোধ, ফিলিস্তিনি সম্পদ ধ্বংস এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে অধিকতর ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ইসরাইলে অন্তর্ভুক্তির কাজে ব্যবহার করা যাবে না।


ছবি - timesofisrael.com

বিশ্ববাসীর কাছে এটি দিবালোকের মত স্পষ্ট যে - দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি সরকার ইসরাইলের প্রতিটি কাজে শর্তহীন সমর্থন দিয়ে ফিলিস্তিনকে ধ্বংস ও মহা বিপর্যয়কর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিবেকবান মানুষের চাওয়া হলো, এই একবিংশ শতাব্দীতে অন্তত ফিলিস্তিন প্রশ্নে মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে যুক্তরাষ্ট্র এই সঙ্কট নিরসনে কাক্সিক্ষত ভূমিকা পালন করবে। সেই সাথে কংগ্রেসকে এগিয়ে আসতে হবে যাতে " আর্মস কনট্রোল অ্যাক্ট "ও " লেহি লজ " কাজে লাগিয়ে ইসরাইলে মারণাস্ত্র রফতানি বন্ধ করা হয়। মনে রাখা দরকার, ফিলিস্তিনে ইহুদিরা যা কিছু করছে কথিত " রাইট টু সেলফ-ডিফেন্সের " অজুহাত তুলে। অথচ আন্তর্জাতিক আইন বলছে, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বল প্রয়োগ অনুমোদনযোগ্য। কিন্তু দখলদারিত্ব বজায় রাখার জন্য বল প্রয়োগ বৈধ নয়। অতএব ইসরাইলের বল প্রয়োগের কোনো অধিকার নেই ফিলিস্তিনিদের ওপর। অথচ ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে সেই অবৈধ কাজ জারি রেখেছে।


ছবি - jns.org

ফিলিস্তিন - ইসরায়েল সমস্যার মূলে আছে পরস্পরের অস্তিত্ব মেনে না নেওয়া। ভূমির অধিকার, নিরাপত্তা ও কূটনীতির মতো বিষয়গুলো এর পরে আসে। এজন্য নিয়মিত বিরতিতে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই শুরু হয়, থেমেও যায় একটা সময় পর, কিন্তু পরস্পরকে মেনে নেওয়ার মতো অবস্থায় আসে না কোনো পক্ষ। বলা অনাবশ্যক ফিলিস্তিনিরা শরণার্থী হিসেবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম পার করছে। তারা প্রায় সব ধরনের অধিকার বঞ্চিত। ফিলিস্তিনি জনগণের একাংশের প্রতিনিধিত্বকারী হামাসকে সন্ত্রাসী তকমা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ একঘরে করে রেখেছে। তারা একদিকে নিজভূমে পরবাসী, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও বিচ্ছিন্ন। তাই অধিকারবঞ্চিতদের পক্ষে অধিকার হরণকারীদের মেনে নেওয়া কঠিন, কিন্তু বাস্তবতা উভয়ের কেউ এখন একপক্ষ অন্যপক্ষকে ঐ জায়গা থেকে পুরোপুরি উত্খাত করতে পারবে না। ৭৩ বছরের ইতিহাস সে কথাই বলে।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের নিরসনের জন্য এ পর্যন্ত কম পরিকল্পনা, প্রস্তাব, রোডম্যাপ ও কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ হয়নি, কিন্তু কোনো কিছুতেই কিছু হয়নি। পরিস্থিতি সেই সাত দশক আগের মতোই রয়ে গেছে। উভয় পক্ষে বেড়েছে হতাশা, সন্দেহ, অবিশ্বাস। পরিস্থিতি আরো জটিল করেছে রাজনীতিবিদরা। জেরুজালেম, শরণার্থী, ফিরে আসার অধিকার ও সীমান্তের মতো মৌলিক ইস্যুগুলোতে কোন পক্ষের ছাড় দেওয়া সম্ভব। কারণ সেটি করা হলে নিজেদের পরিচয় ও অস্তিত্বকে অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড় করানো হবে।

আর এত সব সমস্যার সমাধান তখনই সম্ভব যখন আমরিকা আইপেকের বা ইহুদি লবির চাপ উপেক্ষা করে ইসরাইলকে তথা ইসরাইলের উপর নিঃশর্ত সমর্থন প্রদান বন্ধ করবে এবং ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে । স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে এবং জাতি হিসাবে ফিলিস্তিনিদের অধিকারকে স্বীকৃতি দিবে ।এভাবেই বা এর ফলেই হয়ত স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। যদিও তার জন্য পাড়ি দিতে হবে অনেক বন্ধুর পথ এবং ছাড় দিতে হবে ইসরাইল-ফিলিস্তিন দু পক্ষকেই।এর জন্য নিতে হবে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত এবং দূর করতে হবে পারস্পরিক অবিশ্বাস বন্ধ করতে হবে দ্বন্দ্ব-সংঘাত।তা না হলে এ সমস্যা শতাব্দীর পর শতাব্দী চলতে থাকবে আর ফিলিস্তিনিদের রক্ত ঝরতেই থাকবে।

সূত্র - গালফ নিউজ।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:২৯

হেলাল নোাখালী বলেছেন: অ্যামেরিকা ও পরাশক্তিধর রাষ্ট্ররা তাদের স্বার্থেই অন্যায়কে সমর্থন করে আবার নিজেদের স্বার্থে ই মানবাধিকার এর কথা তুলে। তাদের আচরণ সবসময় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক , ন্যায়ভিত্তিক নয়।

২৪ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:৪০

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ হেলাল নোাখালী ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য।

একদম সঠিক বলেছেন আপনি। ন্যায়-অন্যায়ের মানদণ্ড সর্বদা শক্তিমান তথা শক্তিশালীদের ইচছা এবং তাদের স্বার্থেই নির্ধারিত হয়,তা সমাজ-দেশে কিংবা বিদেশে। সেখানে মানবিকতা-ন্যায়নীতি ইত্যাদি বিবেচ্য হিসবে বিবেচিত বিষয় নয় বা হয়না।

২| ২৪ শে মে, ২০২১ দুপুর ২:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: সত্য কথা বলি- আন্তর্জাতিক বিষয়ে আমি একেবারে অজ্ঞ। তাই মন্তব্য করলাম না। কিন্তু আপনার পোষ্ট মন দিয়ে পড়েছি।

২৪ শে মে, ২০২১ বিকাল ৪:৪১

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য।

আমরা কেউ সব জানিনা বা অনেক কিছুই জানিনা।জানার জন্য চেষ্টাটাই আমরা করতে পারি আর কিছু নয়। আর যারা দাবী করে অনেক কিছু জানে তারা আসলে কিছুই জানেনা।শুধু শুধু " গায়ে মানেনা আপনি মোড়ল " ভাব লয় অথবা "সবজান্তা সমশের" এর মত নিজেকে মনে করে।

মন দিয়ে পোষ্ট পড়ার জন্য আবারো ধন্যবাদ।

৩| ২৪ শে মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিরা সংখ্যালঘু। ওদের সংখ্যা অন্যদের তুলনায় অনেক কম। তারপরও এরা নাকি ওখানকার মিডিয়া, অর্থনীতি, কর্পোরেট জগত, রাজনীতি ইত্যাদিকে নিয়ন্ত্রণ করে। ইহার কারণ কি ইহুদিদের মেধা না কি অন্য কোন কারণ আছে?

২৪ শে মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ সাড়ে চুয়াত্তর ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য।

সারা পৃথিবীতে ইহুদিদের মোট সংখ্যা দেড় কোটির মতো।ইসরায়েলে ইহুদির সংখ্যা ৫৪ লাখ, অবশিষ্ট প্রায় এক কোটি ইহুদি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। এর মধ্যে আমেরিকায় ৭০ লাখ, কানাডায় চার লাখ আর ব্রিটেনে তিন লাখ ইহুদি থাকে। যুক্তরাষ্ট্র এবং দুনিয়ায় ইহুদিদের সংখ্যা ও সংখ্যালঘু।ইহুদিরা ছিল এই পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত যাযাবর জাতি। অস্তিত্ব রক্ষায় তারা বারবার বিতাড়িত হয়েছে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে। যদিও এদের আদি নিবাস ছিল ফিলিস্তিন-লেবানন-জর্ডান-সিরিয়া অঞ্চল, তবে এক সময় তারা জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। তারা ছিল এতোটাই ধূর্ত যে ইউরোপ তাদের দেশে তাদেরকে স্থান না দিয়ে তাদের স্থান করে দেয় মধ্যপ্রাচ্যে।

ইহুদিরা জনসংখ্যায় কম হলেও সারা দুনিয়ার মিডিয়া, অর্থনীতি, কর্পোরেট জগতের অনেকটাই নিয়ন্ত্রন তাদের অর্থ-মেধা-প্রযুক্তির সাহায্যে। সর্বোপরী ,তারা তাদের স্বার্থে তারা যে কোন ধরনের কাজ করতে বা ঝুকি নিতে দ্বিধা করেনা যা অন্য জাতিগোষ্ঠি বা বিবেকবান মানুষ কখনো করবেনা।তারাই দুনিয়ায় একমাত্র জাতি যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে হত্যা-সহিংসতার পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে।আর ঐতিহাসিকভাবেই ইহুদিরা বেঈমান এবং মোনাফেক জাতি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.