নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০২০ সাল থেকে নতুন এক ভাইরাস পুরো পৃথিবীকে অস্থির করে তুলেছে। নতুন এ ভাইরাসকে বলা হচ্ছে সার্স-কোভিড-২। পুরো নাম সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনাভাইরাস-২। আর এ ভাইরাস সংক্রমিত হলে এবং রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ওই রোগকেই বলা হয় "কোভিড-১৯"। করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে দেশে দেশে চলছে লকডাউন। তাই মানুষকে থাকতে হচছে ঘরবন্দী। কোটি কোটি মানুষ কোয়ারেন্টিনে, আইসোলেশনে।এক বছরের বেশী হয়ে গেলেও প্রাণঘাতী ভাইরাসটির থাবা শেষ হয়ে যায়নি। বরং নিত্যনতুন রূপ ধারণ করে নিজের বিস্তার ঘটিয়ে চলেছে করোনাভাইরাস। ঘন ঘন রূপ বদলানো এ ভাইরাসের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। এর শত শত সাধারণ রূপান্তর ইতোমধ্যে ঘটেছে।
বর্তমানে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা ধরন বিশ্বজুড়ে নতুন করে ভীতি ছড়িয়ে দিয়েছে। ভাইরাসটির সংক্রমণ সারা বিশ্বে আবার বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের যেসব দেশে করোনা কমে এসেছিল, সেখানেও সংক্রমণ বাড়ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার ডেল্টা ধরন পৃথিবীকে আরো বেশী করে ভোগাবে।
ছবি - europeanpharmaceuticalreview.com
ইতোমধ্যে করোনার ১৯ মাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য মতে, এ সময়ে করোনায় মারা গেছে ৪১ লাখ ৬৩ হাজার ৮১৫ জন। সংক্রমণের দিক দিয়ে এখনো যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষে। এরপর ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া ও ফ্রান্স। ডেল্টা ধরন যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা আগামী এক দুই মাসের মধ্যেই ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। এ জন্য তারা টিকাদান কার্যক্রম দ্রুত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। পাশাপাশি টিকা উন্নীতকরণেও বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ল্যানসেট, নেচারসহ বিজ্ঞানবিষয়ক বিভিন্ন সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে বলা হয়, ডেল্টা ধরনের ক্ষেত্রে অনেক টিকাই কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে না। ফলে ডেল্টা ও করোনার আরো মারাত্মক ধরনের কথা মাথায় রেখে টিকার উন্নীত করতে হবে। ডেল্টা রোধে মডার্নার টিকা কার্যকর বলা হলেও এরও আরো উন্নয়ন দরকার।
বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাংলাদেশে এরই মধ্যে ১৯ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, যে হারে মৃত্যু বাড়ছে তাতে মৃতের সংখ্যা ২৫ হাজারের ঘরে যেতে বেশি সময় লাগবে না। করোনার ডেল্টা ধরন বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। এত দিন গ্রামগুলো করোনামুক্ত থাকলেও এখন গ্রামেও সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। গত ২৩ জুলাই ২০২১ থেকে দেশব্যাপী (ঈদের ছুটি বাদে) লকডাউন চলছে। লকডাউন করোনা কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বলা মুশকিল। তবে আশার কথা চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টিকা এসে পৌঁছেছে। রাশিয়ার টিকাও অচিরেই পৌঁছাবে। টিকাদান কার্যক্রম পরিকল্পনা অনুযায়ী করতে পারলে বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।
করোনার প্রার্দুভাবের মাঝেই ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীও বাড়তে শুরু করেছে আর তার সাথে মড়ার উপর খাড়ার ঘা হিসাবে বাংলাদেশে দেখা দিয়েছে বন্যা ও ভূমিধস । বর্ষাকাল এডিস মশার ডিম পাড়ার সময়। এডিস মশার কামড়েই ডেঙ্গু রোগ হয়। আর এত সব সমস্যার মাঝে দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ লড়াই করছে টিকে থাকার জন্য,বেঁচে থাকার জন্য।
ছবি - shutterstock.com
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার মতে, করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বে চরম দারিদ্র্যের শিকার হতে যাচ্ছে শত কোটি মানুষ।চরম দারিদ্র্যের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া। আবার এ অঞ্চলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে ভারত। করোনায় বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হারও বাড়িয়ে দিয়েছে। পিপিআরসির হিসাবে দারিদ্র্যতা বেড়ে ৪৩ শতাংশ হয়েছে। আর সিপিডি বলেছে, এ হার ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে বলা হয়েছে, করোনা কালে দেশে বেকারত্ব ১০ গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বা কাছাকাছি বাস করছে। করোনা মহামারী দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় বাংলাদেশে নতুন দরিদ্র হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে চাকরির ওপর নির্ভরশীল মধ্যবিত্তদের বড় অংশই দিশেহারা। শুধুমাত্র সরকারী চাকুরীজীবি ছাড়া আর বেশীরভাগ বেসরকারী চাকুরীজীবি বিশেষ করে সেবা খাত - শিক্ষকদের একটি অংশ চাকরি হারিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। যাঁদের চাকরি আছে, বেতন যেন সোনার হরিণ । কারো বেতন কমে গেছে, অনেকে মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো লকডাউনে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেকে কর্মী ছাঁটাই করেছে। নতুন করে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনে ঘরে না থাকলে জেলে যাওয়ার ঝুঁকিও আছে। এমন গভীর সংকটে মধ্যবিত্তদের পাশে কেউ নেই। চরম দরিদ্র বা গরিবের জন্য সরকারের কিছু খাদ্য ও অর্থ সহায়তা আছে। উচ্চবিত্তের জন্য আছে শিল্পের প্রণোদনা। কিন্তু বেঁচে থাকতে বা ঘুরে দাঁড়াতে কিছুই নেই মধ্যবিত্তের জন্য।
ছবি - alamy.com
মহামারির প্রভাবে মধ্যবিত্ত শ্রেণী নতুন করে দরিদ্র হচ্ছে। সঞ্চয় ভেঙে খেতে খেতে নিঃশেষ এই শ্রেণী সামাজিক কাঠামো থেকেও নিঃশেষ হওয়ার পথে ।আর কিছুদিন এরকম চললে দেশে হয়ত শুধু দু শ্রেণীর মানুষ ই থাকবে । চরম দরিদ্র বা গরিব এবং উচ্চবিত্ত । মধ্যবিত্ত বলে আর কোন শ্রেণীর উপস্থিতি নাও দেখা যেতে পারে দেশে।আর তাই শ্রেণীকে রক্ষার জন্য সরকারের দ্রুত এবং নতুন করে জোরালো তদারকি চান অর্থনীতিবিদরা।অনেক প্রতিষ্ঠান আছেন যাঁরা সরকারের প্রণোদনা নিয়েও কর্মী ছাঁটাই করছেন, নানা অজুহাতে বেতন কাটছেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন। একই সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান একান্তই বাধ্য হয়ে কর্মী ছাঁটাই করছে, তাদের বেতন সহায়তা দিয়ে হলেও মধ্যবিত্তের মানুষকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও কর্মী টিকিয়ে রাখতে দায়িত্ব নিতে হবে। যেসব বৃহৎ শিল্পের ক্ষেত্রে যেসব প্রণোদনা আছে, এগুলো শর্তসাপেক্ষে হওয়া উচিত। এমন ব্যবস্থা করা দরকার যে প্রণোদনা তখনই পাওয়া যাবে, যখন প্রতিষ্ঠানে কোনো কর্মী ছাঁটাই হবে না।করোনা মহামারিতে গত বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবরে অনেক পরিবারেরই গড় মাসিক আয় কমেছে এবং প্রায় পরিবারের কেউ না কেউ চাকরি অথবা আয়ের সক্ষমতা হারিয়েছেন। এ সময়ে দৈনন্দিন খরচ মেটাতে পরিবারগুলো সঞ্চয় ও ধারদেনার ওপর নির্ভরশীল ছিল। ফলে পরিবারগুলোর গড় মাসিক সঞ্চয় ও কমে গেছে, ঋণের পরিমাণ বেড়েছে । করোনা পরিস্থিতির কারণে ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে বলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক জরিপে উঠে এসেছে।পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) আরেকটি জরিপ অনুসারে, মহামারির প্রভাবে দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে গেছে। স্পষ্টতই মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি বড় অংশ এর মধ্যে পড়েছে।
ছবি - thefinancialexpress.com.bd
করোনা মহামারির প্রথম দফায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য তেমন কিছু ছিল না। তারা চাকরি হারিয়ে নীরবে অসহায়ত্বের মধ্যে আছে। নতুন করে দরিদ্র হয়ে যাওয়ার বিষয়টির প্রতিফলন বাজেটেও দেখা যায়নি। সাম্প্রতিক সময়ে যদিও সুনির্দিষ্ট কিছু পেশাকে টার্গেট করে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে সেবা খাতের শিক্ষক, চাকরিজীবীদের আরো কিভাবে সহায়তা করা যায়, সেটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। ইতিমধ্যেই পশ্চিমা বিশ্বে এই ধরনের গোষ্ঠীর জন্য কিছু উদ্ভাবনী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।এদের জন্য অন্যান্য দেশে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে আমাদের দেশেও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
ছবি - dreamstime.com
নিম্ন আয়ের মানুষের পর এখন সরকারের করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত শ্রেণির পাশেও দাঁড়াতে হবে। তাদের নগদ সহায়তা এবং পোশাক খাতের আদলে বেতন সহায়তা দেওয়া গেলে ক্ষয়িষ্ণু মধ্যবিত্তদের কিছুটা হলেও রক্ষা করা সম্ভব।করোনা মহামারির আঘাতে টিসিবির লাইনেও এখন মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে দেখা যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণিটা ক্রমেই ভেঙে হারিয়ে যাচ্ছে।এদিকে সরকারের বড় অগ্রাধিকারের মধ্যে আছে নিম্ন আয়ের মানুষ। কিন্তু অন্য যেসব পেশাজীবী বিশেষ করে মধ্যবিত্ত যারা আছেন , তাঁরা যে দারিদ্র্যসীমার খুব ওপরে আছেন, তা নয়। তাঁদের যে আয় আসে তা দিয়ে ব্যয় নির্বাহ হয়না। তাঁদের যে সঞ্চয় ছিল লম্বা লকডাউনে সেটা ভাঙতে ভাঙতে শূন্য হয়ে গেছে।নিম্ন পেশাজীবীর বাইরে সেবা খাতকেন্দ্রিক পেশাজীবীদের মধ্যে যাঁরা কাজ হারাচ্ছেন সেই জায়গাটাতে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।দেশের প্রত্যেক নাগরিক যাতে একটি ন্যূনতম জীবনমান ধরে রাখতে পারে, কারোরই যাতে মহামারির কারণে আর্থিক পরিস্থিতি অবনমন না হয়, সেই লক্ষ্যেই সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী খাতের সবাইকেও কাজ করতে হবে। এত দিন যেটা নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য করা হয়েছে, এখন মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্যও তা করতে হবে।এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও কিছুটা হলেও দায়িত্ব নিতে হবে।
আর নতুবা সমাজ থেকে মধ্যবিত্ত নামক শ্রেণী হারিয়ে গিয়ে বিশাল জনগোষ্ঠি দারিদ্রসীমায় প্রবেশ করবে যা দেশের অর্থনীতি এবং সামাজিক কাঠামোতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
২৯ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:৫৮
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ সামছুল মালয়েশিয়া প্রবাসী ভাই,প্রথমবারের মত আমার ব্লগে আসার,পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য।
আপনার করোনামুক্ত সুস্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য কামনা রইল।
২| ২৯ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:৪৩
হাবিব বলেছেন: মধ্যবিত্তরা সবচেয়ে চাপে আছে বর্তমানে। হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা নেই। তারা লোকলজ্জার মাথা খেয়ে বেঁচে থাকবেন মরার মতো।
২৯ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:২১
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: সমস্যা ত স্যার এখানেই। এ শ্রেণী না পারবে মরবে (নীচে নামতে) না পারবে মাথা উচু করে বাঁচতে (উপরে উঠতে) । বেঁচে থাকবে হয়ত " ছাল নাই কুত্তার,বাঘা তার নাম" এর মত ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৮:০০
সামছুল মালয়েশিয়া প্রবাসী বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ আজকে মালয়েশিয়াতে করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিলাম। আগামী মাসের ১৮ তারিখে দ্বিতীয় ডোজ পাবো ইনশাআল্লাহ্।।