নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খুবই সাধারন একজন মানুষ । পড়া যার নেশা । পড়ার এবং জানার আশায় ----

মোহামমদ কামরুজজামান

মোহামমদ কামরুজজামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

" রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধ " - এর দায়ভার কি শুধু পুতিনের ? নাকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির হিরোগিরী ও অতিলোভ এবং আমেরিকা-ইউরোপের দেখানো লোভের মূলোই দায়ী ? ( ৩ য় পর্ব ) ।

১৩ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:২৫


ছবি - বিবিসি

২য় পর্বের পর -

আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প ছিলেন অনেকটা মাথা মোটা যে কিনা দুনিয়ায় প্রচলিত ভদ্রলোকের চুক্তি ( Gentleman Agreement) তথা কুটনীতির ধার ধারতেন না। তার নিকট যা ভাল মনে হত তাই করে ফেলতেন অবলীলায় । তার অনেক কাজই সুপার পাওয়ার আমেরিকার সাথে মানানসই হতনা এবং তার আগে যারা আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ছিলেন তাদের করা অনেক কাজকেই তিনি বাতিল করে দিয়েছিলেন এবং তিনি আমেরিকার অনেক পুরনো ও বিশ্বস্ত বন্ধুদেরকে ত্যাগ করে একলা চলার নীতি পালন করতে গিয়ে আমেরিকাকে বিশ্বমঞ্চে প্রায় একা করে ফেলেছিলেন। নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয়ে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হন বাইডেন যিনি কিনা ট্রাম্পের তুলনায় অনেকটা ঠাণ্ডা মাথার এবং সূক্ষ্ম ও কূটবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ হিসাবে বিবেচিত। তিনি রাষ্ট্রপতি হয়েই আমেরিকাকে আগের জায়গায় নেয়ার প্রচেষ্টা শুরু করেন।বাইডেন আবারো বিশ্বমঞ্চে আমেরিকার নেতাগিরির স্বপ্ন দেখেন এবং আমেরিকাকে গ্লোবাল নেতৃত্বে নেয়ার জন্য মনোনিবেশ করেন। আর এর জন্য বাইডেনের মতো প্রেসিডেন্ট আমেরিকার সক্ষমতা হিসেবে যেসব টুলস বা হাতিয়ার ব্যবহার করতে শুরু করেন তা হলো -

১। অবরোধ আরোপ (মানে অপছন্দ বা শত্রু বিবেচিত দেশকে আমেরিকান ডলারে বৈদেশিক বাণিজ্য করতে না দেওয়া)।
২। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা (যে কাউকে ঘায়েলের পশ্চিমা পুরনো তরিকা)।


ছবি - cnn.com

বাইডেন ভাবেন যে, এই দুই হাতিয়ার ব্যবহার করেই বিনা অস্ত্রে ও সামরিক তৎপরতা ছাড়াই তিনি চীন ও রাশিয়াকে পরাজিত ও পর্যুদস্ত করতে পারবেন আর আমেরিকার নেতৃত্ব ফের অটুট করতে-রাখতে পারবেন বিশ্বমঞ্চে । আর তাই একই রকম উদ্দেশ্যেই বাইডেন ইউরোপীয়ান ইউনিয়নকে সাথে নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনকে যুদ্ধে এনেছিলেন। তার জন্য বাইডেন ক্ষমতার শপথ নেয়ার পরেই যখন তিনি এ দুই (অবরোধ ও মানবাধিকার) মহা অস্ত্রের কথা ইইউ নেতাদের জানান তারাও তাতে অন্ধ বিশ্বাস করেছিলেন। তাদের মনের মাঝে চিন্তা সম্ভবত এরকম ছিল যে, আমেরিকার হাবিলদার হয়ে যদি আরো কিছু দিন দুনিয়ায় সর্দারীর ভাগ পাওয়া যায় তা হলে আর চীনের পেছনে পেছনে লাইন ধরে ব্যবসা বদল করে বাঁচতে চাওয়ার দরকার কী ? অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে বিনা যুদ্ধে ও বিনা অস্ত্র ব্যবহারে প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও রাশিয়ার উপরে অবরোধ আর মানবাধিকার এ দুই অস্ত্র ব্যবহার করে বিজয় লাভের ভাবনায় তারা (আমেরিকা ও ইউরোপ) এক সাথে কাজে নেমে পড়ে। আর এ কাজে বলির পাঠা হিসাবে বেছে নেওয়া হয় ইউক্রেনকে, যে কিনা পুরনো সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেতরে ১৪ রাষ্ট্রের একটি যাকে এখনো ন্যাটোর সদস্যই করা হয়নি। গত ২০১৪ সাল থেকে ইইউ, আমেরিকাসহ ন্যাটো ইউক্রেনকে প্রলুব্ধ (তার সামনে মূলো ঝুলায়) করে তাকে ন্যাটোর সদস্য করে নেয়া হবে বলে - আর তাই ন্যাটোর সদস্যপদ ইউক্রেনের কাছে এক সোনার হরিণ করে গড়ে তোলা হয়েছিল এবং ইউক্রেনের রুপালী পর্দার হিরো প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সেই মূলো লাভের আশায় তার অতীতকে ভূলে এক অদৃশ্য সোনার হরিণের পিছনে ছুটে চলা শুরু করেন এবং খায়েশ করেন বর্তমান রাশিয়ান আধিপত্য থেকে বাইরে থাকার

ইউক্রেনের সামনে আমেরিকা-ইউরোপের মুলো ঝুলানো ও জেলেনস্কির হিরোগিরী ও অতিলোভ -

আমেরিকা-ইউরোপ সবসময়ই তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কখনো কখনো কাউকে বলির পাঠা বানিয়ে তাদের কাংখিত স্বার্থ হাসিল করেন। আমেরিকা-ইউরোপ সর্বশেষ বলির পাঠা হিসাবে বেছে নেয় ইউক্রেনকে যে কিনা আগে থেকেই তাদের ফাদে পা দেয়ার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিল। তার সামনে ঝুলানো হয় ন্যাটোর সদস্য করার মুলো আর এই মুলো (ন্যাটোর সদস্যপদ) ইউক্রেনের কাছে এক সোনার হরিণ হিসাবে প্রচার করা হয়েছিল। এদিকে ইউক্রেনের রুপালী পর্দার হিরো প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সেই মূলো যে কোন মূল্যে পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে উঠেন। তার এই খায়েশের কারনে ও লোভে পড়ে জেলেনস্কি ভূলে যান ইউক্রেনের ৪০০ বছরের পুরনো ইতিহাস। অর্থাৎ, এই যে ইউক্রেন ১৬৬৭ সাল থেকে রাশিয়ার জার সাম্রাজ্যের অধীনস্থ ছিল এবং ১৯১৭ সাল থেকে তা সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনস্থতায় কাটিয়েছিল। এতসব বাস্তবতা ভূলে জেলেনস্কি যে চেষ্টা করেছিলেন তাতে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারটা একদমই মাথায় রাখেননি বা আমেরিকা-ইউরোপের ভরসায় এটা ভূলে গিয়েছিলেন যে, রাশিয়ান আধিপত্য থেকে বাইরে থাকার খায়েশ তাকে না আবার পরাধীনতার শিকলে বন্দী করে ফেলে। কাজেই এখন যে পরিস্থিতি তাতে অপমান ও বিড়ম্বনা দিয়ে যদি ব্যাপারটা শেষ হতো সেটিও ভালো হত ইউক্রেনের জন্য তবে এর চেয়ে আরো খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে ইউক্রেনের সামনে এটা নিশ্চিত।

কারন, এই যুদ্ধ প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে এক কঠিন বাস্তবতার সামনে পৌঁছে দিয়েছে এবং তিনি বোকা হয়ে গেছেন, হয়েছেন প্রতারিত। ন্যাটোর সদস্যপদ এক সোনার হরিণ ছিল - এই লোভ দেখিয়ে তাকে প্রতারণা করে বিপথে নেয়া হয়েছে এবং তার ও ন্যাটোর লোভের বলি হয়েছে ইউক্রেনের জনগণ ।

যার ফলে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিন ইউক্রেনে হামলা শুরু করে ইউক্রেন সহ সবাইকে পর্যুদস্ত করা শুরু করেছেন। জেলেনস্কি অবাক হয়ে দেখেন তার পাশে কেউ নেই, কেউ আসেনি যারা তাকে আশা দিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিয়েছিল। না ন্যাটো, না ইইউর কোন দেশ, না আমেরিকা। তিনি এই ক্ষোভ ও অপমান না লুকিয়ে যুদ্ধ শুরুর পরের দিন সকাল থেকে অভিযোগ করতে থাকেন যে, "কেউ তার পাশে আসেনি, সবাই তাকে ভালুকের সামনে একা রেখে কেটে পড়েছেন আর তারা একাই লড়ছেন ভালুকের (রাশিয়ার) বিরুদ্ধে। ন্যাটো- আমেরিকার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ মারাত্মক।


ছবি - cbs58.com

জেলেনস্কির অভিযোগের পরদিনই বাইডেনের মুখপাত্র জেন সাকি পরিষ্কার করে বলে দেন যে,"আমেরিকা ইউক্রেনের পক্ষে কোনো যুদ্ধেই যাবে না,সেটা রাশিয়ার সাথে সরাসরি কোনো যুদ্ধে তো নয়ই, এমনকি ইউক্রেনের মাটিতেও আমেরিকা কোনো যুদ্ধে যাবে না"।
আমেরিকা-ইউরোপ কেউ সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবেনা এটা তারা সবাই জানত তবে তা ইউক্রেনকে জানানো হয়নি। কারণ - বাইডেনের পরিকল্পনা ছিল, রাশিয়ার সাথে তিনি লড়বেন বিনা-অস্ত্রে ও বিনাযুদ্ধে এবং তা কেবল অবরোধ ও মানবাধিকার এ দুই হাতিয়ার দিয়ে। কিন্তু এসবের চেয়েও সবচেয়ে অনৈতিক কথাটা হলো, এ দিকটা জেলেনস্কিকে কখনো জানানো হয়নি বা পশ্চিমের কেউ-ই জানাতেই চায়নি। শুধু তা-ই না, তাকে ন্যাটোর সদস্যপদের লোভ দেখিয়ে যুদ্ধে টেনে আনা হয়েছে। সরাসরি বললে, এটা শ্রেফ একটা প্রতারণা যা করা হয়েছে জেলেনস্কির সাথে । আর জেলেনস্কি ভূত-ভবিষ্যত না ভেবে তাদের প্রতারণার ফাদে পা দিয়েছেন লোভের বশে।


আর এ কাজ করে জেলেনস্কি তার ভাগ্যকে বেঁধে ফেলেছেন রাশিয়া এবং ইউক্রেনীয় জনগণের হাতে । কারণ জেলেনস্কিও তো তার ইউক্রেনীয় নাগরিকদের ভুল ও মিথ্যা বুঝিয়েছেন, যুদ্ধে টেনে নিয়ে গেছেন। দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটি তার অযোগ্যতা । তিনি বুঝতেও পারেননি যে , আমেরিকা-ইউরোপ যুদ্ধে তাদের পাশে আসবেই না, যা তারা বলেছিল। আসলে এসবই ছিল মিথ্যা প্রতিশ্রুতি অর্থাৎ জনগণকে প্রতারণার মুখে ফেলে দেয়া। এটিই জেলেনস্কির সবচেয়ে বড় অপরাধ এবং এটা তার অযোগ্যতাও যে তিনি বুঝতেই পারেননি, পশ্চিমারা প্রতারক।

আমেরিকা- ইউরোপ যে শুধু সরাসরি যুদ্ধে জড়ায়নি এমন ও নয়। এমনকি তারা জেলেনস্কির কোন চাওয়াকেই আমলে নিচছেন না যেমন নেয়নি রাশিয়ার (ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য না করা ) চাওয়াকে। আর তাই জেলেনস্কির চাওয়া ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর ওপর দিয়ে রাশিয়ার জন্য চলাচলে নো ফ্লাই জোন ঘোষণা না দেয়া কিংবা যুদ্ধ বিমান দিয়ে সাহায্য করার। তাই জেলেনস্কি এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, " ন্যাটোর প্রশ্নে আমি নিজেকে ঠাণ্ডা করে নিয়েছি বেশ আগেই। যখন আমি বুঝে গেছি, ন্যাটো ইউক্রেনকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়"। এটিই আসলে পরিষ্কার করে বলা যে, মিথ্যা আশ্বাসে পশ্চিম (আমেরিকা ও ইইউ) ইউক্রেনের সাথে প্রতারণা করেছে। এ কারণে নিজেই নিজের আকাংক্ষাকে দমন করতে হয়েছে, মেরে ফেলতে হয়েছে যদিও এখন এভাবে বলার কারণে ইউক্রেনবাসী কাকে মাফ করবেন, কাকে ছুড়ে ফেলবেন আমরা কেউ জানি না।

জেলেনস্কি আরো বলেন,"ন্যাটো জোট রাশিয়ার সাথে সঙ্ঘাতে যেতে বা বিতর্কে জড়াতে ভয় পায়, ভীত। আর আমিও অন্যের কাছ থেকে ভিক্ষা করে পায়ের নিচে গড়াগড়ি খাওয়ার বিনিময়ে কিছু আনব, এমন প্রেসিডেন্ট হতে চাই না"। জেলেনস্কির এসব করার পিছনের কারন দেশবসাীর সামনে নিজ ইজ্জত বাঁচানোর চেষ্টা। তবে তার এসব চেষ্টা বৃথা যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী কারণ,তাহলে ইউক্রেনের জনগণকে ন্যাটোর কাছে নিয়ে গিয়েছিল কে? কিসের ভরসায়? কে দিয়েছিল সেই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি - এসব প্রশ্নে জেলেনস্কি লা-জবাব থাকতে পারবেন না এবং ভবিষ্যতে এসবের জবাব তার দেশের জনগণকে তাকে দিতেই হবে ।

যুদ্ধে জেলেনস্কি হারবেন এটা নিশ্চিত । আবার রাশিয়া বার বার বলছে ইউক্রেন দখলের কোন ইচছা রাশিয়ার নেই। রাশিয়া শুধু কিছু জিনিষের নিশ্চয়তা চাচছে ইউক্রেন থেকে । যখনই ইউক্রেন তার শর্ত মানবে তখন থেকেই পুতিন যুদ্ধ বন্ধ করে দিবেন। আর তাইতো ক্রেমলিনের মুখপাত্র বলেছেন,"ইউক্রেনকে দেয়া শর্ত পূরণ হলেই মুহূর্তের মধ্যে রাশিয়া থেমে যাবে"।

রাশিয়া যুদ্ধ থামানোর জন্য ৩ টি শর্তের কথা বলেছেন যেগুলো আগেও রাশিয়া-ফ্রান্স আলোচনায় পুতিন স্পষ্ট করে বলেছিলেন।পুতিনের শর্ত তিনটা হলো-

১। ইউক্রেন নিরেপেক্ষ হয়ে যাবে । এ জন্য তার কনস্টিটিউশন সংশোধন করে এ কথাগুলো সেখানে ঢুকাবে। অন্য ভাষায় রাশিয়ার নিরাপত্তাবোধে অভাব সৃষ্টি করবে না, ন্যাটোর সদস্য হতেও আর চেষ্টা করবে না।
২। রাশিয়া ইউক্রেনকে অসামরিকীকরণের কাজ শেষ করবে।
৩। বিচ্ছিন্ন দুই প্রদেশ যার বাসিন্দারা এথনিক রাশিয়ান, সে দুই আবাসভূমিকে স্বাধীন দেশ বলে ইউক্রেন মানবে এবং ক্রাইমিয়ার বিচ্ছিন্ন হয়ে রাশিয়ার সাথে যুক্ত হওয়াকেও মেনে নেবে।


জেলেনস্কি রয়টার্সের সংগে সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে বলছেন, "তিনি রাশিয়ার আলোচনায় আপস করতে প্রস্তুত এবং রাশিয়া প্রভাবিত ইউক্রেনের দুই প্রদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতেও তিনি প্রস্তুত"। কিন্তু এখানে যে প্রশ্ন , " এত সহজে কেন জেলেনস্কির এই উদারতা"? উত্তর আসলে খুব সোজা। কারণ,পুতিনও আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, জেলেনস্কিকে ক্ষমতাচ্যুত করা বা কোনো রেজিম চেঞ্জ রাশিয়ার আক্রমণের লক্ষ্য নয়। কেবল ওই তিন দফাই তার যুদ্ধ বন্ধের মূল শর্ত। তাই জেলেনস্কি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন এমন আশার কথা শোনার পরেই জেলেনস্কি জান হাতে ফিরে পেয়ে রাশিয়ার সাথে আপসে রাজি হয়েছেন। আর তাই, এখন ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে যে আলোচনা চলছে তাকে অনেকটা যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা বলা চলে।ভবিষ্যতে রাশিয়া-ইউক্রেন কী কী ব্যাপারে আপস করবে এসবই রাশিয়া-ইউক্রেন উভয়ে বসে ফাইনাল খুঁটিনাটি চুক্তিপত্র ঠিক করে নেবে আলোচনার মাধ্যমে। অতএব আশা করা যায় যুদ্ধ থামার পথে।

তাহলে কি রাশিয়ার উপর আরোপিত বাইডেনের অবরোধ এখন উঠে যাবে?

রাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তি হলে কি রাশিয়ার উপর আরোপিত বাইডেনের অবরোধ এখন উঠে যাবে ? এক কথায়, তা মনে হয় না । ইউক্রেন রাশিয়ার সাথে কোনো চুক্তি করে রাশিয়ার ভিতর চলে যাবে বা রাশিয়ার কর্তৃত্ব মেনে নিবে কিনা সেদিকে বাইডেনের কোনো আগ্রহ নেই। বাইডেন চেয়েছিলেন রাশিয়ার ওপর অবরোধ জারি করতে , তাই তিনি সেখানেই মনোযোগ দিতে চান। কিন্তু অন্তত এখানে কি বাইডেনের আশা পূরণ হবে যেমনটা আমেরিকা করেছেন ইরান,সিরিয়া,আফগানিস্তান, লিবিয়ায় ? রাশিয়ার বিরুদ্ধে বাইডেনের এই চাওয়ার সাথে কি তার ইউরোপীয় সাগরেদরা একমত হবেন যেমনটা হয়েছিলেন বাকী সবার ক্ষেত্রে?

রাশিয়ার বিরুদ্ধে বাইডেনের এ চাওয়ার সাথে মনে হয় ইউরোপ একমত নাও হতে পারে। ইইউর প্রভাবশালী নীতিনির্ধারক হিসাবে ধরা হয় ফ্রান্স ও জার্মানিকে। এরই মধ্যে জার্মানি, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডস পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছে, রাশিয়ান তেল ও গ্যাস ছাড়া তারা চলতে পারবে না। জার্মান ডয়েচে ভেলের বরাতে ঢাকার এক বাংলা পত্রিকা রিপোর্টের শিরোনাম," রাশিয়ার তেল-গ্যাসে নিষেধাজ্ঞা চায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের অসম্মতি"। রাশিয়ান তেল-গ্যাসে এমনিতেই জার্মানির নির্ভরশীলতা প্রায় ৪৫ ভাগ। অন্য সবাইও কমবেশি নির্ভরশীল। এ দিকে ডাচ ও ফরাসি সরকারপ্রধানরাও যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, রাশিয়ার জ্বালানি ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য তা আনসাসটেইনেবল যার মানে টেকা অসম্ভব। সোজা ভাষায়, রাশিয়ান জ্বালানি ইস্যুতে আমেরিকা-ইইউ আলাদা আলাদা রাস্তা ধরে ফেলেছে এরই মধ্যে । অর্থাৎ পুতিনের হুমকিটাই যেন কার্যকর যে, তিনি বলেছিলেন, আমাদের তেল না নিলে " এক ব্যারেল তিন শ ডলারে কিনতে প্রস্তুত হও"।


ছবি - dailyindia.net

বাইডেন আসলে কি চেয়েছেন বা কি আশা করেছিলেন ?

বাইডেন আশায় ছিলেন এবং ধরে নিয়েছিলেন যে, রাশিয়া যদি তেল-গ্যাস বেচতে না পারে এবং তার ট্রিলিয়ন ডলার সম্পদ আটকে গেলে রাশিয়ার কিছুই করার থাকবে না, সব স্তব্ধ হয়ে যাবে। অথচ আমেরিকার মত দেশের একজন প্রেসিডেন্ট এসব মনগড়া অনুমানে কি করে চলতে পারেন? বাইডেনের অনুমান অবশ্য কিছুটা সত্য, এতে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু তিনি শুধু ঘটনার একটি দিক নিয়ে ভেবেছেন অন্য দিকের খবর তিনি নেননি বা ভাবেন নি । দুনিয়ার সব বেচা-বিক্রি মানেই যে একপক্ষীয় এমন নয়। কারণ যেটা বেঁচা সেটিই আরেক দিক থেকে কেনা। এখানে দুটি পক্ষই জড়িত থাকে । কাজেই রাশিয়া বেঁচতে না পারলে যেমন রাশিয়ার বিপদ, তেমনি বিপদ জ্বালানি ক্রেতারও। বাইডেন এ দিকটা ভেবে দেখতেই চাননি। যার ফলে বাস্তবতা হলো, ক্রেতা ইইউর সব সদস্যের জন্যই এটি বিক্রেতা রাশিয়ার মতোই সমান সঙ্কটের। যদি ইউরোপ রাশিয়ান তেল-গ্যাস না কিনে কাতার বা অন্য কোথাও থেকে কিনতে চায় তা হলে সেই বিকল্প জ্বালানি যদি পাওয়াও যায় তবু সেটি তাদের জন্য বিপদেরই হবে। কারণ তার জন্য অবকাঠামো কোথায়?

কাতার বা ভেনিজুয়েলা থেকে গ্যাস-তেলের জন্য এখন নতুন করে বিকল্প পাইপলাইন বসাতেও তো কয়েক বছর লাগবে। এ সময় কিভাবে চলবে ইউরোপ বা আমেরিকা ? এসব প্রশ্নের জবাব মনে হয়না বাইডেন কিংবা ইউরোপের নেতাদের কাছে আছে। এ ছাড়া কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগের খরচ তোলার ব্যাপার আছে। যে তেলের দাম এত দিন আশি ডলারে ছিল সারা বিশ্বে, কয়েক দিনের যুদ্ধে এরই মাঝে এটি চলে গেছে ১১২ ডলারে । অনুমানে আরো বলা হয়, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে তা ১৫০ ডলার পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। বাইডেনের চাওয়া পূরণ করতে চাইলে তেলের দাম পুরনো ৮০ ডলারে ফিরে যাওয়া দূরে থাক এটি মনে হয় সত্যি সত্যিই ৩০০ ডলারের দিকে যাত্রা শুরু করবে যা বলেছেন পুতিন। করোনার ধাক্কা সামলাতে যেখানে সারা দুনিয়া মন্দা আর মুদ্রাস্ফীতির কবলে, সেখানে এই নতুন তেলের দামের বোঝা কয়টা দেশ সামলাতে পারবে? বাছ-বিচারহীন ভাবে বাইডেনের এমন অবরোধের পদক্ষেপের বলি কি শুধু রাশিয়া হবে না সারা পৃথিবী?

কে নিবে বা নিতে চাইবে বাইডেনের অপরিণামদর্শী কাজের বিষময় ফলের দায় কিংবা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির হিরোগিরী ও অতি লোভের দায় ?

কি পেল ইউক্রেন তার অপরিণামদর্শী প্রেসিডেন্টের কাজের ফলে ?
কে হারল বা হারাচ্ছে সব কিছু - রাশিয়া ? ইউক্রেন ?


এ যুদ্ধের পরে বিশ্বে কে শক্তিশালী নেতা হিসাবে আর্বিভূত হবেন ?

- বাইডেন ?
- জেলেনস্কি ?
- পুতিন ?

কিংবা ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ?

এসব প্রশ্নের জবাব হয়ত ভবিষ্যতে মিলবে তবে তার জন্য মূল্য দিয়ে জানতে হবে সারা দুনিয়াবাসীকে। কারন, এ দুনিয়ায় কোন কিছুই বিনামূল্যে মিলেনা। তা সে সম্পদ কিংবা প্রশ্নের জবাব যাই হোক না কেন।

তথ্যসূত্র - আল-জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স, ডয়চে ভেলে।

=====================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -

"রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধ" - (২য় পর্ব) Click This Link
"রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধ" - (১ ম পর্ব) Click This Link
এবং
" ইউক্রেন সংকট " - (শেষ পর্ব) - Click This Link
" ইউক্রেন সংকট " - ২ য় পর্বের লিংক - Click This Link
" ইউক্রেন সংকট " - ১ ম পর্বের লিংক - Click This Link

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:৩৯

জ্যাকেল বলেছেন: খুব উত্তেজনা নিয়ে পড়তে হইল ভাইসাহেব।

১৩ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:৫৪

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ জ্যাকেল ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য।

খুব উত্তেজনা নিয়ে পড়তে হইল ভাইসাহেব।

- আসলে ভাইজান যুদ্ধ মানেই উত্তেজনা । তবে এই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সেই রকম উত্তেজনা নেই যেটা ছিল আমেরিকার ইরাক কিংবা আফগান আক্রমণে । তবে এখানে অন্যরকম উত্তেজনা কাজ করছে তা হলো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি জনিত (উচ্চ্ রক্তচাপ) উত্তেজনা।
আর এই উত্তেজনায় ছ্যাড়া-বেড়া হয়ে যাচছে সারা দুনিয়ার আমজনতা রাশিয়া-ইউক্রেন থেকেও বেশী।

২| ১৩ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:৪৩

জুল ভার্ন বলেছেন: এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নাই।

১৩ ই মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০০

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ জুল ভার্ন ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য।

এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নাই।

- ভাইজান , যুদ্ধ আসলে এমন এক বিষয় যে কেউই তা পছন্দ করেনা তবে অস্ত্র বিক্রেতা ও স্বৈরশাসক ব্যতীত ।

সাধারন মানুষের আগ্রহ বা বিবেচ্য বিষয় যেখানে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে জীবন যাপন সেখানে তাদের (অস্ত্র বিক্রেতা ও স্বৈরশাসক ) আগ্রহ থাকে যুদ্ধের মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার কামানোের সাথে সাথে তাদের স্বার্থ হাসিলের।

৩| ১৩ ই মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫২

সোবুজ বলেছেন: আমাদের কথাও একটু ভাববেন।কিছি কিছু বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করে লেখাটাকে অনেক লম্বা করে ফেলেছেন।ব্লগে অতবড় লেখা খুব কম পাঠক পড়ে।বাকি সবার লেখাতে ঢুমারতে হয়।ভাল লিখেছে কষ্ট করে হলেও পুরাটা পড়লাম।

১৩ ই মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৫

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ সোবুজ ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য ।

আমাদের কথাও একটু ভাববেন।কিছি কিছু বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করে লেখাটাকে অনেক লম্বা করে ফেলেছেন।

- ভাইজান, :( । যারা আমাদের কথা ভাবার কথা তারাই ভাবেন না :P , আর আমিত এক নাদান আম পাবলিক । আমি কেন ভাবব ;) সবার কথা বলেন? আসলে কি বলব ভাইজান, লিখতে গেলে খালি হাত নিশ-পিশ করে আর মেন হয় কি বাদ পড়ে গেল । আর এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে -------------------------- বুঝবার পারিনা।

ব্লগে অতবড় লেখা খুব কম পাঠক পড়ে।বাকি সবার লেখাতে ঢুমারতে হয়।ভাল লিখেছে কষ্ট করে হলেও পুরাটা পড়লাম।

- এত সব প্যারা-হ্যাপা সামলে কষ্ট করে যে আপনি পুরো লেখা পড়েছেন তার জন্য আপনার প্রশংসা করতেই হয় এবং একটা ধন্যবাদ ও প্রাপ্য। আর তাই অন্তর থেকে রইলো ধন্যবাদ আপনার প্রতি।

৪| ১৩ ই মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৩

জগতারন বলেছেন:
ইউক্রেনের রুপালী পর্দার হিরো প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি [/sb।
হইলো ইহূদী'র বাচ্চা ইহূদী পশ্চিমের ওর বাবা'রা ও ইজরাইল
আকাশে চাঁদ পাওয়াইয়া দেবে। তাই নিজ দেশের গরীব জনগনের
ভাগ্য-উন্নয়ন না করিয়া আজ চরমভাবে মাইর খাইতেতেছে।

১৪ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:৫৪

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ জগতারন ভাই, আপনার চমতকার মন্তব্যের জন্য ।

আসলেই ভাই,রুপালী পর্দার হিরো যেভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করে সেভাবে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বাস্তব জীবনকেও তাই ভেবেছেন এবং তা করতে চেয়েছেন। এখানে আরো কিছু কারন হলো আমেরিকা-ইউরোপ এবং তাদের পরিচালিত মিডিয়ার পুরো সমর্থন। এ জন্য সে ভেবেছে তার যা খুশী তাই করতে পারবে এবং সবাই তাকে সমর্থন করবে । তবে সে এটা ভাবেনি মুখের কথা আর কাজের মাঝে অনেক প্রার্থক্য থাকে এবং সবাই তাকে গাছে তুলে দিয়ে মই নিয়ে সরে পড়বে।

তবে আবার এটাও ঠিক , যেভাবে সবাই ভেবেছিল সে লেজ গুটিয়ে পালাবে তা করেনি এবং এখনো যুদ্ধের মাঠে সে যে টিকে আছে এটাও তার কারিশমাই বলা যায়।

সে অনেকটা জুয়া খেলেছে যেখানে জিতলে ভাল । সে হয়ে যাবে হিরো আর না জিতলে কি হবে তা ভবিষ্যতই বলে দিবে।

৫| ১৩ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১০:২৫

নূর আলম হিরণ বলেছেন: জেলেনস্কি নিজের বেকুবি যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনই বুঝতে পেরেছে, লজ্জ্বায় সরাসরি বলতে পারেনি।

১৪ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:১৩

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নূর আলম হিরণ ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য ।

জেলেনস্কি নিজের বেকুবি যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনই বুঝতে পেরেছে, লজ্জ্বায় সরাসরি বলতে পারেনি।

- আপনি যা বলেছেন একদম সঠিক। জেলেনস্কি যখন নিজের ভূল বুঝতে পেরেছে তখন আসলে তার হাতের ধুনক থেকে তীর বের হয়ে গেছে। আর যারা তাকে নানা রকম প্রলোভন দিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিয়ে গেছে তারা যে এভাবে পিছুটান দিবে এটাই সে ভাবতে পারেনি । সমস্যা হয়েছে এখানেই।

আর এখনত "ছেড়ে দে কেঁদে বাঁচি" অবস্থা তবে সাহস করে এখনো যুদ্ধের মাঠে যে টিকে আছে এটাও তার কারিশমাই বলা যায়।

৬| ১৩ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১১:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: রয়টার টিভি চ্যানেলে বোম্বিং এর নারকীয় দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি।মর্মান্তিক সে দৃশ্য।দেখা যায় না।

সবদিক মিলিয়ে ইউক্রেন রাশিয়া সমঝোতা করাতে পারলে আর্থিক দিক থেকে তুরস্কের লাভের সম্ভাবনা সবথেকে বেশি। এবং সেই লাভের সুযোগ তুরস্ক কোন মতেই হাতছাড়া করতে চায়না। তাই সবদিক বুঝে-শুনে তুরস্ক মধ্যস্থতা করতে চাইছে।

১৪ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:২৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই, আপনার চমতকার মন্তব্যের জন্য ।

রয়টার টিভি চ্যানেলে বোম্বিং এর নারকীয় দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি। মর্মান্তিক সে দৃশ্য।দেখা যায় না।

যুদ্ধ কখনো ভাল কিছু বয়ে নিয়ে আসেনা। যুদ্ধ মানেই সম্পদের ধ্বংস , প্রাণের বিনাশ। তবে এখন রাশিয়া যা করছে তা আমেরিকা-ব্রিটিশরা ইরাক-লিবিয়া-সিরিয়া-আফগানে যা করেছে তার তুলনায় কিছুই নয়। তবে সেগুলো ভিন্ন কারনে এতটা মিডিয়া কভারেজ পায়নি যেটা এখন পাচছে ইউক্রেন।

সবদিক মিলিয়ে ইউক্রেন রাশিয়া সমঝোতা করাতে পারলে আর্থিক দিক থেকে তুরস্কের লাভের সম্ভাবনা সবথেকে বেশি। এবং সেই লাভের সুযোগ তুরস্ক কোন মতেই হাতছাড়া করতে চায়না। তাই সবদিক বুঝে-শুনে তুরস্ক মধ্যস্থতা করতে চাইছে।

- এই মধ্যস্থতা বা সমঝোতার জন্য যদিও ইসরাইল- তুরস্ক সহ আরো অনেকেই আগ্রহী তবে এখানে উভয়ে উভয়ের নিজ নিজ স্বার্থকে সামনে রেখেই এগিয়ে যেতে চাচছে।

৭| ১৪ ই মার্চ, ২০২২ রাত ৩:৩৭

গরল বলেছেন: জিলেনস্কি প্রতারিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না, ইউক্রেন এখন পর্যন্ত ৪৯ টি ফাইটার প্লেন, ৮৩ টি হেলিকপ্টার, প্রায় হাযারের উপর ট্যাংক, সাজোঁয়া যান ও ট্রাক, তেলের সাপ্লাই ট্যাংক ধ্বংস করেছে ন্যাটো দেশ গুলোর দেওয়া জ্যাভলিন অ্যান্টি ট্যাংক মিসাইল ও স্টিঙ্গার সারফেস টু এয়ার মিসাইল এর মাধ্যমেই। ধরে নিলাম এগুলো পশ্চিমের প্রপাগান্ডা, তবে পুতিন যে নিজের একেবারে থাবার নিচে থাকা ইউক্রেনেকে তিন সপ্তাহেও দখল করতে পারল না বা এয়ার সুপিরিরিওরিটি নিতে পারল না ইউক্রেনের আকাশে এটা কিভাবে সম্ভব হল। রাশিয়া তার বিশাল বহর ইউক্রেনে পাঠাবে তবে ফিরে আসতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে।

১৪ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:৪৪

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ গড়ল ভাই, আপনার চমতকার বিশ্লেষণাত্মক মন্তব্যের জন্য ।

জিলেনস্কি প্রতারিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না,

- হয়ত প্রতারিত হননি তবে যতটা আশা সে ইউরোপ-আমেরিকা বা ন্যাটোর কাছে করেছিলেন - এটা যে পাননি তা নিশ্চিত ।


ইউক্রেন এখন পর্যন্ত ৪৯ টি ফাইটার প্লেন, ৮৩ টি হেলিকপ্টার, প্রায় হাযারের উপর ট্যাংক, সাজোঁয়া যান ও ট্রাক, তেলের সাপ্লাই ট্যাংক ধ্বংস করেছে ন্যাটো দেশ গুলোর দেওয়া জ্যাভলিন অ্যান্টি ট্যাংক মিসাইল ও স্টিঙ্গার সারফেস টু এয়ার মিসাইল এর মাধ্যমেই। ধরে নিলাম এগুলো পশ্চিমের প্রপাগান্ডা, তবে পুতিন যে নিজের একেবারে থাবার নিচে থাকা ইউক্রেনেকে তিন সপ্তাহেও দখল করতে পারল না বা এয়ার সুপিরিরিওরিটি নিতে পারল না ইউক্রেনের আকাশে এটা কিভাবে সম্ভব হল।

- এখানে কিছুটা হলেও ধাধা আছে। যেখানে আমেরিকা-ইউরোপের ধারনা ছিল যুদ্ধ শুরুর ৪ দিনের মাঝেই রাশিয়া কিয়েভে পৌছে যাবে সেখানে যুদ্ধ কেন ২ সপ্তাহে গড়াল এবং যেখানে রাশিয়া চাইলেই কিয়েভ দখল করে নিতে পারে সেখানে তারা কেন কিয়েভের নিকটে এসে বসে আছে এ এক বড় রকমের ধাধা।

আর যুদ্ধে দুপক্ষেরই ক্ষয়ক্ষতি হবে এটা ঠিক তবে মিডিয়া যেভাবে শুধু রাশিয়ার ক্ষতির কথা বলে এবং ইউক্রেনের কোন ক্ষতির কথা বলেনা , বিষয়টা হয়ত এমন নয়।

আবার এটাও ঠিক যে , যেভাবে সবাই ভেবেছিল জেলেনস্কি লেজ গুটিয়ে পালাবে তা করেনি এবং এখনো যুদ্ধের মাঠে সে যে টিকে আছে এটাও তার কারিশমাই বলা যায়।

আর রাশিয়াও যত সহজ ভেবেছিল ব্যাপারটা তত সহজ ভাবে এখন ব্যাপারটা আর নেই। রাশিয়ার অবস্থা এখন অনেকটা হাতির কাদায় আটকে যাওয়ার মত হয়ে গেছে। সে কিভাবে এ কাদা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে তাই দেখার বিষয়।

৮| ১৪ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ৯:২৫

শেরজা তপন বলেছেন: বড় লেখা হলেও দারুন বর্ণনায় বিরক্তি আসে না।
কিছু বিষয়ে দ্বীমত থাকলেও- চমৎকার বিশ্লেষনের জন্য ধন্যবাদ।

১৪ ই মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০১

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ শেরজা তপন ভাই, আপনার ছোট তবে সাবলীল মন্তব্যের জন্য ।

বড় লেখা হলেও দারুন বর্ণনায় বিরক্তি আসে না।

- ভাই , আপনার রাশিয়া এত গুলি বাচচা (স্বাধীন দেশ) পয়দা করার পরও এখনও বিশ্বে সবচেয়ে বড় দেশ । আর তাই তার
সম্পর্কে ছোট করে কিছু লিখলে তারই অপমান :(( নয় কি ? তার জন্য লেখা কিছুটা বড় হয়ে গেছে।

কিছু বিষয়ে দ্বীমত থাকলেও- চমৎকার বিশ্লেষনের জন্য ধন্যবাদ।

- ভাইজান, আপনি জীবনের অনেকটা সময় জার সাম্রাজ্যে কাটিয়েছেন। কাজেই আপনি খুব ভালভাবে রাশিয়াকে দেখেছেন এবং জেনেছেন। আর আমরা বাইরে থেকে টিভি কিংবা খবরের কাগজের বদৌলতে কিছুটা জেনেছি। আপনি যে আমার সাথে কিছু বিষয়ে দ্বীমত করবেন বা আপনার দ্বিমত আছে সেটা একদম সঠিক হবে আমি জানি যেখানে আমার জানার সীমাবদ্ধতাকেই নির্দেশ করবে । তারপরেও আপনি যে পড়েছেন এবং ধন্যবাদ দিয়েছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন।

৯| ১৪ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ৯:৫৮

নীল আকাশ বলেছেন: গতকাল রাতেই পড়েছিলাম। বেশ ভাল লেগেছে বিশ্লেষন।
জিলেনস্কি যে কত বড় প্রতারিত হয়েছে সেটা তার ভাষা শুনলেই বুঝা যায় । রাশিওয়া তাকে বিচার না করলেও ইউক্রেনের জনগন তাকে বিচার করে ফাসিতে ঝুলাবে।
জিলেনস্কি = ইউক্রেনে মীরজাফর

১৫ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:৩০

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নীল আকাশ ভাই, আপনার চমতকার মন্তব্যের জন্য ।

গতকাল রাতেই পড়েছিলাম। বেশ ভাল লেগেছে বিশ্লেষন।

- শুকরিয়া ভাই । আপনার কাছে ভাল লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগল।


জিলেনস্কি যে কত বড় প্রতারিত হয়েছে সেটা তার ভাষা শুনলেই বুঝা যায় । রাশিওয়া তাকে বিচার না করলেও ইউক্রেনের জনগন তাকে বিচার করে ফাসিতে ঝুলাবে।জিলেনস্কি = ইউক্রেনে মীরজাফর।

- রাশিয়ার শক্তি-ক্ষমতা বিচার করলে এই যুদ্ধ ৪-৫ দিনের মাঝেই শেষ হওয়ার কথা । আবার যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি অন্যরকম মেসেজ দেয় দুনিয়া বাসীর সামনে। জিলেনস্কি যে কত বড় প্রতারিত হয়েছেন সত্যি তবে তাকে সামনে রেখে আমেরিকা-ইউরোপ এক জটিল ভূ-রাজনৈতিক খেলা খেলছে।আবার এদিকে রাশিয়া বলছে তার ইউক্রেন দখল করবে না শুধু কিছু ম্যাকানিজম বাস্তবায়ন করবে যাতে করে জিলেনস্কি ফোস ফোস করবে তবে কামড়াতে না পারে। তবে , রাশিয়া আসলেই কি করতে চাচছে তা নিয়ে অনেকটাই ধোয়াশা রয়ে গেছে। হয়ত আগামী কয়েক দিনে এর পরিষ্কার ছবি পাওয়া যাবে। তবে জিলেনস্কি যে বড় রকমের এক জুয়া খেলেছেন তার দেশবাসীর সাথে এ বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। ইতিহাস অবশ্যই তার বিচার করবে,তবে কেমন হবে সে বিচার তা এখনো বোধগম্য নয়।

১০| ১৪ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১০:১০

আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: খুব ই চমৎকার বিশ্লেষণধর্মী লেখা। পড়ে ভালো লাগলো।

১৫ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:৩২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ আমি ব্লগার হইছি! ভাইজান, আপনার মন্তব্যের জন্য ।

খুব ই চমৎকার বিশ্লেষণধর্মী লেখা। পড়ে ভালো লাগলো।

- শুকরিয়া ভাইজান ।লেখা আপনার কাছে ভাল লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগল।

১১| ১৪ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১০:৫৪

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ই্উক্রেনের যুদ্ধে নিহত মানুষের গনকবর দেয়ার দৃশ্য ফেবুতে দেখে রাতে মন খারাপ ছিল।

একটি যুদ্ধ কি পরিমাণ ক্ষতি ও ধ্বংস নিয়ে আসে। একটা সুন্দর সমাধান হওয়া উচিৎ।

১৫ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:৩৮

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ মোঃ মাইদুল সরকার ভাই , আপনার মন্তব্যের জন্য ।

ই্উক্রেনের যুদ্ধে নিহত মানুষের গনকবর দেয়ার দৃশ্য ফেবুতে দেখে রাতে মন খারাপ ছিল। একটি যুদ্ধ কি পরিমাণ ক্ষতি ও ধ্বংস নিয়ে আসে। একটা সুন্দর সমাধান হওয়া উচিৎ।

- যুদ্ধ কখনোই ভাল কিছু বয়ে নিয়ে আসেনা। যুদ্ধ মানেই সম্পদের ধ্বংস , প্রাণের বিনাশ। তারপেও যুগে যুগে,কালে-কালে যুদ্ধ হয়েছে কারনে কিংবা অকারনেও । তবে যাই কিছু হোক না কেন যুদ্ধ কখনোই সমস্যার শেষ সমাধান হতে পারেনি বা পারবেও না। সমাধান শেষ পর্যন্ত আলোচনাতেই আসে এবং এখনো তাই করা উচিত।

১২| ১৪ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১১:৩৯

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: অত্যন্ত চমৎকার বিশ্লেষন।

১৫ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:৪২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ দেশ প্রেমিক বাঙালী ভাই , আপনার মন্তব্যের জন্য ।

অত্যন্ত চমৎকার বিশ্লেষন।

- শুকরিয়া ভাই।

১৩| ১৪ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: আমি চাই এক দেশের বিপদে আরেক দেশ ঝাঁপিয়ে পড়ুক। অথচ বিশ্বের সব দেশ চুপ। মানুষ আসলে নিজের দেশকেই ''দেশ' ভাবে। পুরো বিশ্বকে নিজের বলে ভাবতে শিখেনি।

১৫ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:৪৬

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: আবারো ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই, আপনার প্রতি-মন্তব্যের জন্য ।

আমি চাই এক দেশের বিপদে আরেক দেশ ঝাঁপিয়ে পড়ুক। অথচ বিশ্বের সব দেশ চুপ। মানুষ আসলে নিজের দেশকেই ''দেশ' ভাবে। পুরো বিশ্বকে নিজের বলে ভাবতে শিখেনি।

- আপনার চাওয়া যথার্থ ভাই তবে একের বিপদে অন্যের যাওয়া যার যার স্বার্থের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় , সমস্যা এখানেই। পুরো বিশ্বই এ নিয়মের মাঝেই চলে এবনফ এর বাইরে কেউ নিরপেক্ষভাবে চিন্তাও করেনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.