নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছবি - guardian.ng
যাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে এ লেখা এবং তাদের সহ সকল চিন্তাশীল মানুষদের উদ্দেশ্য উৎসর্গকৃত যাদের জানার ইচছা আছে বা জানতে চায়
১। রাজীব নুর ভাই বলেছেন - আমি ভাই বিজ্ঞানের সাথে থাকবো। তাদের কথা মানবো।
কারন ধর্মের রুপকথা আমার পক্ষে মানা সম্ভব নয়।
২। নতুন ভাই বলেছেন - পৃথিবিতে মানুষ কিভাবে এসেছে এ নিয়ে অনেক তত্ব আছে। এর মাঝে দুইটা বেশি জনপ্রিয়।
১) বিবর্তন ( যেটা বিজ্ঞান সমর্থন করে, এটা মোটামুটি প্রমানিত)
২) মানুষ ভীন গ্রহ থেকে এসেছে। ( যেটা ধর্মের বইতে লিখা আছে) । আপনি কোনটাতে বিশ্বাস করেন?
৩। অনল চৌধুরী ভাই বলেছেন - ভালো করে পড়ে দেখেন। Introduction to Human Evolution
এখানে তো আমি বাইবেলে বর্ণিত সৃষ্টিতত্বের কিছু্ পেলাম না !!!! কোনোকিছু বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করার অধিকার আপনার কিন্ত গোজামিল দেয়ার কোনো অধিকার আপনার নাই। - লিংক - বাংলাদেশের স্কুল, কলেজের শিক্ষাক্রমে "ডারউইনের বিবর্তনবাদ বা মানব জাতির উৎপত্তি তত্ত্ব "- Click This Link ,
প্রারম্ভিকা - এ পৃথিবীতে কিভাবে মানুষের সৃষ্টি হয়েছে বা প্রথম কখন-কিভাবে প্রাণের স্পন্দনের শুরু হয়েছে এ এক বিরাট প্রশ্ন চিন্তাশীল মানুষের জন্য এবং তা এক রহস্যও বটে। যে রহস্য জানার জন্য যুগে যুগে বিজ্ঞানী/চিন্তাশীল মানুষেরা চেষ্টা চালিয়েছেন এবং এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচছেন। মহান আল্লাহপাক আল কোরআনে সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে স্পষ্টভাবে আল কোরআনের একাধিক আয়াতে ঘোষণা করেছেন, পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দনের মূল রহস্য ও মানব সৃষ্টির ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে। তবে, জ্ঞানী ও চিন্তাশীল অনেক মানুষই আল কোরআনের সাথে একমত পোষন না করে কিংবা ভিন্নমতের কারনে জানতে চেষ্টা করেছেন আল কোরআনের মতবাদের বাইরেও আরো কিছু। আর তার ফলেই নিত্য নতুন মতবাদ পাওয়া যায় মানব সৃষ্টি সম্পর্কে। যার সর্বশেষ সংযোজন হলো বিবর্তনবাদ, যার মূল বিষয় হলো মানুষ সরাসরি এ দুনিয়াতে মানুষ হিসাবে জন্মায়নি। সে অন্য কোন প্রাণী থেকে (বানর জাতীয় প্রাণী তবে সরাসরি বানর থেকে নয়) নানা শারীরিক পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ হিসাবে পরিবর্তিত হয়েছে আজকের মানুষ রূপে।
এ ক্ষেত্রে ধর্ম কি বলে -
এ দুনিয়ায় প্রচলিত আব্রাহামিক ধর্ম (ইব্রাহিমীয় ধর্ম বা আব্রাহামিক ধর্ম বা Abrahamic Religion বলতে একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোকে বোঝানো হয়। যেগুলো নবী ইব্রাহিম (আঃ) এর বংশানুক্রমে প্রচারিত করেছে) মতে, হযরত আদম (আঃ) এ দুনিয়ার প্রথম মানব ও নবী এবং যাকে আল্লাহপাক বিশেষ কুদরতে মাটি থেকে তৈরী করেছেন এবং তার থেকেই তার সংগিণী তথা হযরত হাওয়া (আঃ) তৈরী করেছেন এবং তাদের মাধ্যমেই এ দুনিয়ায় মানুষের ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহপাক আল কোরআনে বলছেন -
১। " হে মানুষ! আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে , আর তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অন্যের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে ব্যক্তিই বেশী মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে বেশী তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত"।(সূরা হুজুরাত, আয়াত- ১৩)।
এ আয়াত অনুসারে - একজন নারী ও একজন পুরুষের মিলনের ফলেই দুনিয়াতে মানুষের ব্স্তিার হয়েছে এবং তারপর তা থেকে ক্রমশ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এই মানব জাতি।
২। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহপাক আল কোরআনে আরো বলছেন - " আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে আর একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা ওদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও মায়া-মমতা সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে"। (সুুরা রূম, আয়াত - ২১)।
৩। আল কুরআনের অন্য এক আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন,"তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়। তারপর যখন সে তার সাথে সংগত হয় তখন সে এক হালকা গর্ভধারণ করে এবং এটা নিয়ে সে অনায়াসে চলাফেরা করে। অতঃপর গর্ভ যখন ভারী হয়ে আসে তখন তারা উভয়ে তাদের রব আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, যদি আপনি আমাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দান করেন তাহলে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব"।(সূরা আল-আরাফ,আয়াত - ১৮৯)।
আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন এই যে, মানুষের মধ্য থেকে আল্লাহ তাআলা নারী জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। তারা পুরুষের সংগিনী হয়েছে।হযরত হাওয়াকে আদম থেকে সৃষ্টি করার কারণ হচ্ছে, তার কাছে গেলে মন প্রশান্ত হবে।তার সাথে সহজ সম্পর্ক তৈরী হবে, সন্তুষ্টি আসবে।যদি পুরুষ ও নারী আলাদা আলাদা বস্তু হতে সৃষ্টি হত, যেমন যদি নারী জ্বিন অথবা চতুষ্পদ জন্তু থেকে সৃষ্টি হত, তাহলে এখন তাদের উভয়ের একই বস্তু হতে সৃষ্টি হওয়াতে যে সুখ-শান্তি পাওয়া যায় তা কখনই পাওয়া সম্ভব হত না। বরং এক অপরকে অপছন্দ করত ও জন্তু জানোয়ারের ন্যায় ব্যবহার করত। সুতরাং মানুষের প্রতি আল্লাহর অশেষ দয়া যে, তিনি মানুষের জুড়ি ও সঙ্গিনী মানুষকেই বানিয়েছেন।
এ সকল আয়াতের প্রেক্ষাপটে এ কথা বলা যায় - তা হলো আল কোরআনে অনুসারে এ দুনিয়াতে আল্লাহপাক প্রথম একজন মানব তৈরী করেছেন (হযরত আদম আঃ) কে। যে কোন নর-নারীর মিলন ছাড়া তৈরী হয়েছেন এবং তার থেকে তার সংগিণী তৈরী করেছেন এবং তারপর তাদের থেকে ক্রমশ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এই মানব জাতি।উপরোক্ত আয়াত অনুসারে আরো বলা যায় - দুনিয়ার মানব সকল তৈরী হয়েছে এক পুরুষ (হযরত আদম আঃ) ও এক নারী (হযরত হাওয়া আঃ) হতে ।
তাহলে আদম (আঃ) কিভাবে তৈরী হলেন -
এখানে কৌতুহলী মানুষের মনে যে প্রশ্ন জাগে," আদম (আঃ) যদি প্রথম মানুষ হবে, তাহলে তাঁর কি পিতা-মাতা নেই, অথবা পৃথিবীতে তাঁর উদ্ভব কিভাবে হলো"? মূল প্রশ্ন হলো - পৃথিবীতে প্রথম মানুষের পদযাত্রা শুরু হলো কিভাবে? মানব জন্মের স্বাভাবিক নিয়ম হলে তো আদমেরও পিতামাতা থাকা উচিত ছিল?
এই প্রশ্নের জবাব আল কুরআন দিচ্ছে এভাবে -
১। " যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। (আস সাজদাহ,আয়াত - ৭)।
অর্থাৎ,তিনি যেভাবে সৃষ্টি করেছেন সেটাই উত্তম ও সুন্দর এবং সর্বপ্রথম মানুষ আদম (আঃ) কে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন যাঁর নিকট থেকে মানব জন্মের সূচনা হয়েছে।( তাবারী)।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহপাক আল কোরআনে আরো বলছেন -
২। " আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুস্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি।(সুরা হিজর, আয়াত - ২৬)।
৩। " আপনি তাদেরকে (অবিশ্বাসীদেরকে) জিজ্ঞেস করুন, তাদেরকে সৃষ্টি করা কঠিনতর, না আমি অন্য যা সৃষ্টি করেছি? আমিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এঁটেল মাটি থেকে"। (সুরা সফফাত,আয়াত - ১১) ।
৪।" মানুষকে (আদমকে) তিনি সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির মত শুষ্ক মাটি থেকে"। (সুরা আর রাহমান, আয়াত - ১৪)।
আমাদের মাঝে অনেকেই বলে থাকেন যে," আল কুরআনের অনেক জায়গায় বলা হয়েছে মানুষ মাটির তৈরী, তাই সকল মানুষ মাটির তৈরী" - তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। হযরত আদম (আঃ ) একাই কেবল মাটি থেকে সৃষ্টি। বাকি সবাই ‘নুতফাহ’ (পিতা-মাতার) মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে।
আদম (আঃ) মাটি থেকে সৃষ্টি হলে হযরত হাওয়া (আঃ) কিভাবে সৃষ্টি হয়েছেন -
মহান আল্লাহপাক হযরত আদম (আঃ ) কে বিশেষ ব্যবস্থায় মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার বামপার্শ্বের অস্থি থেকে তার সংগিণী হযরত হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করেছেন। তার পর থেকে তাদের দুই জন থেকে একে একে দুনিয়ার জনসংখ্যা ধারাবাহিক ভাবে ‘নুতফাহ’ (পিতা-মাতার যৌন মিলনের) মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে।
মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া বা মানব জাতির সৃষ্টি ও তার জীবনের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে মহান আল্লাহপাক আল কোরআনে বলছেন -
১। "তিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি তা হতে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন। তিনি তোমাদের জন্য আট প্রকার পশু অবতীর্ণ করেছেন। তিনি তোমাদের মাতৃগর্ভের তিন প্রকার অন্ধকারে পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আল্লাহ তোমাদের প্রতিপালক, সার্বভৌমত্ব তাঁরই, তিনি ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। অতএব তোমরা মুখ ফিরিয়ে কোথায় চলেছ"? (সুরা আয-যুমার,আয়াত - ৬)।
অর্থাৎ, মানুষের শুরু হয়েছে হযরত আদম (আঃ) থেকে, যাকে আল্লাহ তাআলা তার বিশেষ কুদরতের সাহায্যে মাটি থেকে তৈরী করেছিলেন এবং তাঁর মধ্যে রূহ ফুঁকেছিলেন।তার পর তার সংগিণী হযরত হাওয়াকে আদম (আঃ)-এর বামপার্শ্বের অস্থি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং এটাও তাঁর কুদরতের বড় কৃতিত্ব। কারণ হাওয়া ছাড়া কোন নারীর সৃষ্টি কোন পুরুষের অস্থি থেকে হয়নি। ফলে হাওয়ার সৃষ্টি সাধারণ নিয়ম-বহির্ভূত এবং আল্লাহর মহাশক্তির একটি নিদর্শন। এ আয়াতে আল-আন’আম বলতে গবাদি পশু বুঝানো হয়েছে। বলা হয়েছে যে আট জোড়া, কারণ- গবাদি পশু অর্থ উট, গরু, ভেড়া, বকরী। এ চারটি নর ও চারটি মাদি মিলে মোট আটটি নর ও মাদি হয়। (তাবারী, কুরতুবী)।
২। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহপাক আল কোরআনে আরো বলছেন - "হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন কর। যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন; আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর যার নামে তোমরা একে অপরের কাছে নিজ নিজ হক দাবী কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারেও । নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন"।(সুরা নিসা, আয়াত - ১)।
এ আয়াতে এক ব্যক্তি বলতে মানবকুলের পিতা আদম (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, আদম (আঃ) থেকেই তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন। আদম (আঃ) থেকে হাওয়াকে কিভাবে সৃষ্টি করা হয়, এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হাওয়া পুরুষ অর্থাৎ, আদম (আঃ) থেকে সৃষ্টি হয়েছেন। অর্থাৎ, তাঁর পাঁজরের হাড় থেকে। অপর একটি হাদীসে বলা হয়েছে যে, "নারীদেরকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের মধ্যে উপরের হাড়টি অধিক বাঁকা। যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তুমি তার দ্বারা উপকৃত হতে চাও, তবে তার মধ্যে বক্রতা অবশিষ্ট থাকা অবস্থাতেই উপকৃত হতে পারবে"। (সহীহ বুখারী শরীফ,হাদীস নং- ৩৩৩১, মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ১৪৬৮ )।
৩। মানব জাতির সৃষ্টি ও তার জীবনের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে মহান আল্লাহপাক আল কোরআনে আরো বলছেন, " তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর শুক্রবিন্দু থেকে, অতঃপর জমাট বাঁধা রক্ত থেকে, অতঃপর তোমাদেরকে বের করে এনেছেন শিশুরূপে, অতঃপর তিনি তোমাদের বৃদ্ধি দান করেন যাতে তোমরা তোমাদের পূর্ণ শক্তির বয়সে পৌঁছতে পার, অতঃপর আরো বৃদ্ধি দেন যাতে তোমরা বৃদ্ধ হও। তোমাদের মধ্যে কারো কারো আগেই মৃত্যু ঘটান যাতে তোমরা তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে যাও আর যাতে তোমরা (আল্লাহর সৃষ্টি কুশলতা) অনুধাবন কর"।(সুরা আল মু'মিন, আয়াত - ৬৭)।
অর্থাৎ,আমাদের আদি পিতা ও প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ)-কে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপর মানব বংশের ধারা এবং তার স্থায়িত্ব ও বিদ্যমানতার জন্য মানুষের সৃষ্টিকে বীর্যের সাথে জুড়ে দিয়েছেন। এখন প্রত্যেক মানুষ সেই বীর্য বা শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি হয়, যা বাপের পৃষ্ঠদেশ থেকে বের হয়ে মায়ের গর্ভাশয়ে গিয়ে স্থির হয়। মায়ের গর্ভাশয়ে বিভিন্ন দশা ও অবস্থাকে অতিক্রম করে (পেট থেকে) বের হয়ে আসার পূর্বেই কেউ মায়ের পেটে, কেউ শিশুকালে, কেউ যৌবনকালে এবং কেউ বার্ধক্যের শুরুতেই মারা যায়। আমরা এই পর্যায়সমূহ ও স্তরগুলোর ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করলে দেখব যে, বীর্য থেকে জমাট রক্ত, অতঃপর তা হতে গোশতপিন্ড, তারপর শৈশব, তারপর যৌবন, তারপর বার্ধক্যের প্রারম্ভিক এবং পরে সম্পূর্ণ বার্ধক্য, তখন আমরা বুঝতে চাইলে বুঝতে পারব যে যে, আমাদের প্রতিপালক এক ও একক এবং আমাদের উপাস্যও একক, তাঁর কোন শরীক নেই। এ ছাড়া আরও জেনে যাব যে, যে আল্লাহ মানুষ সহ এ দুনিয়ার সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর জন্য কিয়ামতের দিন মানুষদেরকে পুনরায় জীবিত করাও কোন জটিল ব্যাপার নয় এবং তিনি অবশ্যই সকলকে পুনর্জীবিত করবেন।
৪। মানব প্রজাতির শুরু হয়েছে হযরত আদম (আঃ) থেকে এবং তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। তারপর থেকে পরবর্তী পর্যায়ে শুক্র থেকেই মানব বংশের ধারাবাহিকতা চলতে থাকে এবং চলে আসছে।এ ব্যাপারে যারা সন্দেহ পোষণ করন তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহপাক আল কোরআনে বলছেন, " হে লোকসকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হও, তবে (ভেবে দেখ-) আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিন্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করি; তারপর যাতে তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌছানো হয়, যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান থাকে না। তুমি ভূমিকে পতিত দেখতে পাও, অতঃপর আমি যখন তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন তা সতেজ ও স্ফীত হয়ে যায় এবং সর্বপ্রকার সুদৃশ্য উদ্ভিদ উৎপন্ন করে"। (সূরা হজ্জ, আয়াত - ৫)।
এ আয়াতটিকে আল্লাহ তা'আলা তার সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের উপর প্রথম প্রমাণ হিসেবে পেশ করেছেন। প্রথম সৃষ্টি যার পক্ষে করা সম্ভব তাঁর পক্ষে দ্বিতীয় সৃষ্টি কিভাবে কঠিন হবে? প্রথম সৃষ্টিই প্রমাণ করছে যে, তিনি দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে সক্ষম।(ইবন কাসীর)।
৫। মানব জাতির সৃষ্টি ও তার জীবনের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে মহান আল্লাহপাক আল কোরআনে আরো বলছেন,"আমরা মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমরা তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে (জরায়ুতে) স্থাপন করেছি। পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি রক্তপিন্ডে, অতঃপর রক্তপিন্ডকে পরিণত করি গোশতপিন্ডে এবং গোশতপিন্ডকে পরিণত করি অস্থিপঞ্জরে; অতঃপর অস্থি-পঞ্জরকে ঢেকে দিই গোশত দ্বারা , অবশেষে ওকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে। অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান"! (সুরা মুমিনুন,আয়াত- ১২-১৪)।
আলোচ্য আয়াতসমূহে মানব সৃষ্টির সাতটি স্তর উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বপ্রথম স্তর - মৃত্তিকার সারাংশ, দ্বিতীয় - বীর্য, তৃতীয় - জমাট রক্ত, চতুর্থ - মাংসপিণ্ড, পঞ্চম - অস্থি-পিঞ্জর, ষষ্ঠ - অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃতকরণ ও সপ্তম - সৃষ্টিটির পূর্ণত্ব অর্থাৎ রূহ সঞ্চারকরণ। আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনে এ শেষোক্ত স্তরকে এক বিশেষ ও স্বতন্ত্র ভঙ্গিতে বর্ণনা করে বলেছেন,"তারপর আমরা তাকে এক বিশেষ ধরনের সৃষ্টি দান করেছি"।এই বিশেষ বর্ণনার কারণ এই যে, প্রথমোক্ত ছয় স্তরে সে পূর্ণত্ব লাভ করেনি। শেষ স্তরে এসে সে সম্পূর্ণ এক মানুষে পরিণত হয়েছে। এ কথাই বিভিন্ন তাফসীরকারকগণ বলেছেন। তারা বলেন, এ স্তরে এসে তার মধ্যে আল্লাহ তা'আলা রূহ সঞ্চার করিয়েছেন। (ইবন কাসীর)। কোন কোন মুফাস্সির বলেন,"তারপর আমরা তাকে এক বিশেষ ধরনের সৃষ্টি দান করেছি"।এর অর্থ তাকে এক স্তর থেকে অন্য স্তরে নিয়ে গেছি। প্রথমে শিশু, তারপর ছোট, তারপর কৈশোর, তারপর যুবক, তারপর পূর্ণবয়স্ক, তারপর বৃদ্ধ, তারপর অতি বয়স্ক। বস্তুত দুটি অর্থের মধ্যে বিরোধ নেই। কারণ, রূহ ফুঁকে দেয়ার পর এসবই সংঘটিত হয়।(ইবন কাসীর)
হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ) বাদে বাকী সব মানুষের সৃষ্টি হয়েছে নুতবা তথা শুক্র/বীর্য থেকে।আল কুরআনের কমপক্ষে ১১টি স্থানে মানুষকে 'নুতফাহ' (শুক্র) থেকে সৃষ্টির কথা বলেছে । এ সম্পর্কে মহান আল্লাহপাক আল কোরআনে বলেছেন -
১। " নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু হতে, যাতে আমি তাকে পরীক্ষা করি, এই জন্য আমি তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। (সুরা আল-ইনসান (আদ-দাহর),আয়াত - ২) ।
এখানে মানব সৃষ্টির সূচনা এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, আমি মানুষকে মিশ্র বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছি। বলাবাহুল্য এখানে নর ও নারীর মিশ্র বীর্য বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের সৃষ্টি পুরুষ ও নারীর দুটি আলাদা বীর্য দ্বারা হয়নি। বরং দুটি বীর্য সংমিশ্রিত হয়ে যখন একটি হয়ে গিয়েছে তখন সে সংমিশ্রিত বীর্য থেকে মাতৃ গর্ভে সন্তান (মানুষ) সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ আল কোরআনের তফসীরবিদ তাই বলেছেন। (বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর)।
ছবি - vectorstock.com
মাতৃ গর্ভে সন্তান গঠনের ধারাবাহিকতা
মাতৃ গর্ভে সন্তান গঠনের চক্র সাধারণত দীর্ঘ ২৮০ দিন যাবৎ চলতে থাকে। যা ৪০ দিন অন্তর সুনির্দিষ্ট ৭ টি চক্রে বিভক্ত। নারী-পুরুষের যৌন মিলনের সময় নারীর ডিম্বনালীর ফানেলের মত অংশে ডিম্বাণু নেমে আসে এবং ঐ সময় পুরুষের নিক্ষিপ্ত বীর্যের শুক্রাণু জরায়ু বেয়ে উপরে উঠে আসে ও তা ডিম্বনালীতে প্রবেশ করে। প্রথমে একটি শক্তিশালী শুক্রাণু ডিম্বাণুটির দেহে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে অন্য কোন শুক্রাণু প্রবেশ করতে পারে না। এভাবে নারীর ডিম্বাণুটি নিষিক্ত (Fertilization) হয় এবং নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুতে নেমে প্রোথিত (Embedded) হয়। তাছাড়া নারীর ডিম্বাণুর বহিরাবরণে প্রচুর সিয়ালাইল-লুইস-এক্সসিকোয়েন্স নামের চিনির অণুর আঠালো শিকল শুক্রাণুকে যুক্ত করে পরস্পর মিলিত হয়। আর এই শুক্রাণু দেখতে ঠিক মাথা মোটা ঝুলে থাকা জোঁকের মত।জোঁক যেমন মানুষের রক্ত চুষে খায়, শুক্রাণু ঠিক তেমনি ডিম্বাণুর মধ্যে প্রবেশ করে মায়ের রক্তে থাকা প্রোটিন চুষে বেড়ে উঠে। নিষিক্ত ডিম্বাণুটি সন্তান জন্মের রূপ নিলে সাধারণত নিম্নে ২১০ দিন ও উর্ধ্বে ২৮০ দিন জরায়ুতে অবস্থান করে এবং ঐ সময়ের মধ্যে ডিম্বাশয়ে নতুন করে আর কোন ডিম্বাণু প্রস্তুত হয় না। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন -
২। "আমরা মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমরা তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে (জরায়ুতে) স্থাপন করেছি। এরপর শুক্র বিন্দুকে জমাট রক্ত রূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে গোশতপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর গোশতপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে গোশত দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করেছি"। (সুরা মুমিনুন,আয়াত - ১২-১৪)।
এ প্রসংগে মহান আল্লাহপাক আল কোরআনে আরো বলেছেন -
৩। " আমরা কি তোমাদেরকে তুচ্ছ পানি হতে সৃষ্টি করিনি? তারপর আমরা তা রেখেছি নিরাপদ আধারে।এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত,আমি একে গঠন করেছি পরিমিতভাবে, আমি কত সুনিপুণ স্রষ্টা! (সুরা মুরসালাত,আয়াত - ২০-২৩)
আলোচ্য আয়াতসমূহে মানব সৃষ্টি সম্পর্কে বলা হয়েছে, মানুষকে তৈরী করা হয়েছে তুচ্ছ পানি (বীর্য) হতে এবং তাকে স্থাপন করেছেন নিরাপদ আধারে বা মায়ের গর্ভাশয়ে এবং সেখানে রাখেন গর্ভের নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত - ছয় থেকে নয় মাস।আল্লাহ তা'আলার এ আয়াতের অর্থ হলো, যখন আমি নগণ্য এক ফোটা বীর্য থেকে সূচনা করে তোমাকে পূর্ণাঙ্গ একজন মানুষ বানাতে সক্ষম হয়েছি তখন পুনরায় তোমাদের অন্য কোনভাবে সৃষ্টি করতে সক্ষম হবো না কেন? আমার যে সৃষ্টি কর্মের ফলশ্রুতিতে তুমি আজ জীবিত ও বর্তমান তা একথা প্রমাণ করে যে, আমি অসীম ক্ষমতার অধিকারী। আমি এমন অক্ষম নই যে, একবার সৃষ্টি করার পর তোমাদেরকে পুনরায় আর সৃষ্টি করতে পারবো না।(আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর)।
৪। "পড়ুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে"। (সূরা আলাক,আয়াত - ১ - ২)।
প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, " সৃষ্টি করেছে" তবে কাকে সৃষ্টি করেছেন তা আলাদা করে বলা হয়নি। এ থেকে আপনা-আপনিই এ অর্থ বের হয়ে আসে, সেই রবের নাম নিয়ে পড় যিনি স্রষ্টা সমগ্র বিশ্ব-জাহানের, সমগ্র সৃষ্টিজগতের।(আদওয়াউল বায়ান)।
২য় আয়াতে, সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে বিশেষ করে মানুষের জন্মের কথা উল্লেখ হয়েছে; যাতে মানুষের মর্যাদা স্পষ্ট। আল্লাহ বলেছেন, মানুষকে ‘আলাক’ থেকে সৃষ্টি করেছেন। ‘আলাক’ হচ্ছে ‘আলাকাহ’ শব্দের বহুবচন। এর মানে জমাট বাঁধা রক্ত। সাধারণভাবে বিশ্ব-জাহানের সৃষ্টির কথা বলার পর বিশেষ করে মানুষের কথা বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ কেমন হীন অবস্থা থেকে তার সৃষ্টিপর্ব শুরু করে তাকে পূর্ণাংগ মানুষে রূপান্তরিত করেছেন। (কুরতুবী)।
৫। " আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, তবে কেন তোমরা বিশ্বাস করছ না? তোমরা কি ভেবে দেখেছ, তোমাদের বীর্যপাত সম্বন্ধে?ওটা কি তোমরা সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি?আমি তোমাদের জন্য মৃত্যু নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই । (সুরা আল-ওয়াকিয়া , আয়াত - ৫৭-৬০)।
আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা জান যে, তোমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহই। তবুও তোমরা তাঁকে মানছ না কেন? অথবা মৃত্যুর পর পুনর্জীবনের উপর বিশ্বাস করছ না কেন? আলোচ্য এ আয়াতে মানুষের সামনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন রাখা হয়েছে। মানুষের জন্ম পদ্ধতি তো এছাড়া আর কিছুই নয় যে, পুরুষ তার শুক্র নারীর গর্ভাশয়ে পৌছে দেয় মাত্র। কিন্তু ঐ শুক্রের মধ্যে কি সন্তান সৃষ্টি করার এবং নিশ্চিত রূপে মানুষের সন্তান সৃষ্টি করার যোগ্যতা আপনা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে? অথবা মানুষ নিজে সৃষ্টি করেছে? না আল্লাহ সৃষ্টি করেছে? এ যুক্তির সঙ্গত জওয়াব একটিই। তা হচ্ছে, মানুষ পুরোপুরি আল্লাহর সৃষ্টি।(তাবারী, আদওয়াউল-বায়ান)।
৬। "যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সৃজন করেছেন উত্তমরূপে এবং কাদা হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।তারপর তিনি তার বংশ উৎপন্ন করেন তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস থেকে। অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন এবং তাতে রূহ সঞ্চার করেন। পরে তিনি সেটাকে করেছেন সুঠাম এবং তাতে ফুঁকে দিয়েছেন তাঁর রূহ থেকে। আর তোমাদেরকে দিয়েছেন কান, চোখ ও অন্তঃকরণ, তোমরা খুব সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর"। (সুরা সাজদাহ,আয়াত - ৭ - ৯)।
অর্থাৎ আদম (আঃ) তৈরী হয়েছে মাটি থেকে এবং তার বংশধরেরা তৈরী হয়েছে বীর্য হতে। এর উদ্দেশ্য হল এই যে, মানুষের জোড়া তৈরী করার পর তার বংশ বৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহ এই নিয়ম নির্ধারণ করেছেন যে, পুরুষ ও নারী উভয়ে বিবাহ করবে, অতঃপর তাদের মিলনের ফলে পুরুষের বীর্যের যে ফোঁটা নারীর গর্ভাশয়ে প্রবেশ করবে এবং মায়ের পেটে ভ্রূণকে বড় করে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরী করে, অতঃপর তাতে রূহ দান করেন।তার দ্বারা তিনি সুন্দর অবয়বে মানুষ সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠাতে থাকবেন।
৭। " আর এই যে, তিনিই সৃষ্টি করেন জোড়ায় জোড়ায় পুরুষ ও নারী- শুক্রবিন্দু হতে যখন তা স্খলিত হয়।আর এই যে, পুনরুত্থান ঘটাবার দায়িত্ব তাঁরই"। (সুরা আন নাজম,আয়াত - আয়াত - ৪৫-৪৭)
অর্থাৎ যিনি (মহান আল্লাহ) মানুষকে প্রথমবার শুক্রবিন্দু হতে সৃষ্টি করেছেন, তার জন্য মানুষকে পুনরায় সৃষ্টি করা কোন কঠিন কাজ নয়। সেদিন হচ্ছে কিয়ামতের দিন।(ইবন কাসীর)।
৮। " তিনি মানুষকে বীর্য হতে সৃষ্টি করেছেন; পরে সে প্রকাশ্য বিতন্ডাকারী হয়ে বসল!"। (সুরা আন নাহল, আয়াত - ৩)।
অর্থাৎ, মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে এক জড়পদার্থ হতে যা জীবন্ত দেহ থেকে নির্গত হয়, যাকে বীর্য বলা হয়। তাকে বিভিন্ন পর্যায়ে পার করার পর এক পূর্ণ আকার দান করা হয়। তারপর তাতে (রূহ, বিশেষ) জীবন দান করা হয়। এরপর মায়ের পেট হতে পৃথিবীতে আনা হয়। পৃথিবীতে সে জীবন যাপন করতে করতে যখন জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়, তখন সে তার প্রতিপালক আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্ক করে, তাঁকে অস্বীকার করে বা তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে।
৯। "তদুত্তরে তার বন্ধু বিতর্কমূলকভাবে তাকে বলল, তুমি কি তাঁর সাথে কুফরী করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি ও পরে বীর্য থেকে এবং তারপর পূর্ণাংগ করেছেন পুরুষ আকৃতিতে"? (সুরা আল কাহফ, আয়াত - ৩৭)
যে ব্যক্তি মনে করলো, আমিই সব, আমার ধন-সম্পদ ও শান শওকত কারোর দান নয় বরং আমার শক্তি ও যোগ্যতার ফল এবং আমার সম্পদের ক্ষয় নেই, আমার কাছ থেকে তা ছিনিয়ে নেওয়ার কেউ নেই এবং কারোর কাছে আমাকে হিসেব দিতেও হবে না, সে আল্লাহকে মূলতঃ অস্বীকারই করল। যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন তাকে সে অস্বীকার করল। শুধু তাকে নয়, তিনি প্রথম মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন আর তিনি হচ্ছেন আদম। তারপর নিকৃষ্ট পানি হতে তাদের বংশধারা বজায় রেখেছেন। (ইবন কাসীর)।
১০। " সে কি স্খলিত শুক্রবিন্দু ছিল না? অতঃপর সে রক্তপিন্ডে পরিণত হয়। তারপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেন এবং সুঠাম বানান। অতঃপর তিনি তা হতে সৃষ্টি করেন জোড়া জোড়া নর ও নারী।সেই স্রষ্টা কি মৃতকে পুনর্জীবিত করতে সক্ষম নন"? (সুরা আল-ক্বিয়ামাহ , আয়াত - ৩৭-৪০)
অর্থাৎ, যে আল্লাহ মানুষকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন অবস্থার উপর অতিক্রম করিয়ে তাকে সুন্দর সুবিন্যস্ত করে পূর্ণ আকৃতি দিয়ে তার মধ্যে আত্মা দান করেছেন,সৃষ্টি করেছেন - তিনি কি মৃত্যুর পর পুনরায় তাকে জীবিত করতে সক্ষম নন? উক্ত আয়াত পাঠ করে বলতে হয় - তুমি পবিত্র, অবশ্যই (তুমি সক্ষম)। (আবূ দাঊদ ৮৮৩, ৮৮৪নং, বাইহাক্বী)
১১। "তিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি তা হতে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন। তিনি তোমাদের জন্য আট প্রকার পশু অবতীর্ণ করেছেন। তিনি তোমাদের মাতৃগর্ভের তিন প্রকার অন্ধকারে পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি করেন। তিনিই আল্লাহ তোমাদের প্রতিপালক, সার্বভৌমত্ব তাঁরই, তিনি ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। অতএব তোমরা মুখ ফিরিয়ে কোথায় চলেছ"?(সূরা যুমার,আয়াত - ৬)।
আল কুরআনে শিশুকে সংরক্ষণের জন্য মাতৃ জঠরের তিনটি পর্দা বা স্তরের কথা বলা হয়েছে।
১। পেট বা গর্ভ,
২। রেহেম বা জরায়ু এবং
৩। ভ্রূণের আবরণ বা গর্ভফুল (Placenta) ।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে পবিত্র কুরআনে যে, ‘ত্রিবিধ অন্ধকারের’ কথা বলা হয়েছে তা হল- ২। রেহেম, ২। গর্ভফুল এবং ৩। মায়ের পেট। রেহেমে রক্তপিন্ড ব্যতীত সন্তানের আকার-আকৃতি কিছুই তৈরী হয় না। আর গর্ভফুল (Placenta) ভ্রূণ বৃদ্ধি, সংরক্ষণ, প্রতিরোধ ইত্যাদি কাজে অন্যতম ভূমিকা রাখে। গর্ভফুল মায়ের শরীর থেকে রক্তের মাধ্যমে নানা পুষ্টি ভ্রূণের দেহে বহন করে, খুব ধীর গতিতে রেচন পদার্থ মায়ের দেহের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। গর্ভফুলের সাহায্যে ভ্রূণ অক্সিজেন (O2) গ্রহণ ও কার্বনডাই অক্সাইড (CO2) ত্যাগ করে মায়ের ফুসফুসের মাধ্যমে, জীবাণু (Infection) থেকে ভ্রূণকে রক্ষা করে। এছাড়া ভ্রূণটি ঠিকমত জরায়ুতে আটকে রাখা, পুষ্টি সঞ্চয়, সম্পর্ক রক্ষা, হর্মোন সৃষ্টি ইত্যাদি কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এভাবে ভ্রূণটি জরায়ুতে বেড়ে উঠতে থাকে ও ১২০ দিন অতিবাহিত হলে শিশুর রূহ ফুঁকে দেয়া হয়। আর শিশু নড়েচড়ে উঠে ও আঙ্গুল চুষতে থাকে । এর পর সন্তানটির যখন ভূমিষ্ঠ হবার উপযুক্ত সময় হয়ে যায়, তখন Overy-Placenta থেকে এক প্রকার গ্রন্থিরস নিঃসৃত হয়, যা প্রসব পথ পিচ্ছিল ও জরায়ুর মুখ ঢিলা করে দেয়। আর মানব সন্তান ঐ সময় বিভিন্নভাবে নড়াচড়া করতে থাকে এবং প্রসব পথ পিচ্ছিল থাকায় বাচ্চা অনায়াসে বেরিয়ে আসে। সবচেয়ে মজার কথা হ’ল মানবশিশুর যে অঙ্গ সর্বপ্রথম গঠিত হয় তা হ’ল কর্ণ। আর সন্তান গর্ভে ধারণের ২১০ দিন পর চক্ষু গঠিত হয় এবং একটি পূর্ণাঙ্গ মানব শিশুতে পরিণত হয়।
১২। মাতৃগর্ভে মানব ভ্রূণ পূর্ণাঙ্গ মানব শিশুতে পরিণত হওয়ার পর সেখান থেকে তাকে বাইরে ঠেলে (সন্তান যখন ভূমিষ্ঠ হয় ) দেওয়া হয়। এ প্রসংগে আল কুরআনে বলা হয়েছে, " মানুষ ধ্বংস হোক! সে কত অকৃতজ্ঞ! তিনি তাকে কোন বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছেন? শুক্রবিন্দু হতে তাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাকে সুপরিমিত করেছেন। অতঃপর তার জন্য তার পথ সহজ করে দিয়েছেন"। (সুরা আবাসা,আয়াত - ১৭-২০)।
মাতৃগর্ভে মানব ভ্রূণকে মহান আল্লাহ নানা পর্যায়ে তার গঠন-প্রকৃতি, আকার-আকৃতি সুপরিমিতভাবে সৃষ্টি করেছেন।আল্লাহপাক স্বীয় ক্ষমতা-বলে মাতৃগর্ভে মানুষকে সৃষ্টি করেন যেখানে ২১০ দিন পর একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হবার উপযুক্ত হয়। । তারপর তিনিই তার অপার শক্তির মাধ্যমে মাতৃগর্ভ থেকে জীবিত ও পুর্নাঙ্গ মানুষের বাইরে আসার পথ সহজ করে দেয়। ফলে দেহটি সহী-সালামতে বাইরে চলে আসে এবং মায়েরও এতে তেমন কোন দৈহিক ক্ষতি হয় না।
সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ বা কিভাবে ছেলে কিংবা মেয়ে হয় -
নারীর গর্ভ সঞ্চার হওয়ার পর ২৮০ দিনের মধ্যে ১২০ দিন অতিবাহিত হলে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যায়, সন্তানের লিঙ্গ কী হবে অর্থাৎ সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে!
ছেলে-মেয়ে সৃষ্টি সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক আল কুরআনে বলেন - " আসমানসমূহ ও যমীনের আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছে তা-ই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছে কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছে পুত্র সন্তান দান করেন,অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছে তাকে করে দেন বন্ধ্যা; নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাবান"। (সুরা শুআরা,আয়াত- ৪৯-৫০)
এ পুরো বিশ্বজগত কেবল আল্লাহরই ইচ্ছা এবং তাঁরই নিয়ন্ত্রণ চলে। তিনি যা চান, তা-ই হয় এবং যা চান না, তা হয় না। অন্য কেউ এতে হস্তক্ষেপ করার শক্তি ও এখতিয়ার রাখে না। অর্থাৎ, আল্লাহ যাকে চান পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন। এখানে মহান আল্লাহ চার প্রকার মানুষের কথা উল্লেখ করেছেন। (ক) যারা কেবল পুত্র সন্তান লাভ করে। (খ) যারা কেবল কন্যা সন্তান লাভ করে। (গ) যারা পুত্র ও কন্যা উভয় সন্তান লাভ করে। (ঘ) বন্ধ্যা; যারা না পুত্র সন্তান পায়, আর না কন্যা সন্তান। মানুষের মাঝে এই পার্থক্য ও তফাৎ আল্লাহ তাআলার মহাশক্তির নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ কর্তৃক জারী এই তফাৎকে পৃথিবীর কোন শক্তি পরিবর্তন করার সামর্থ্য রাখে না।(ইবনে কাসীর)।
তাহলে মানুষ কি অন্য প্রাণী থেকে পরিবর্তীত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে না আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ?
মহান আল্লাহপাক এ দুনিয়ার সকল বস্তুর স্রষ্টা। আর তিনি এক, মহা প্রতাপশালী।
এ ব্যাপারে আল্লাহপাক আল কুরআনে বলেন -
১। " সমস্ত প্রশংসা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। আল্লাহরই -- যিনি ফিরিশতাদেরকে বাণীবাহক (দূত) করেন; যারা দুই-দুই, তিন-তিন অথবা চার-চার ডানাবিশিষ্ট। তিনি তাঁর সৃষ্টিতে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করে থাকেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতির,আয়াত - ১) । তিনি আরো বলেন -
২।"হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর। আল্লাহ ছাড়া কি কোন স্রষ্টা আছে, যে তোমাদেরকে আসমানসমূহ ও যমীন থেকে রিযিক দান করে? আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। কাজেই তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে? (সূরা ফাতির,আয়াত - ৩)। অন্য আয়াতেও আল্লাহ্পাক বলেছেন,
৩।"তোমরা কিরূপে আল্লাহকে অস্বীকার কর? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদেরকে প্রাণ দান করেছেন, আবার তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং পুনরায় তোমাদেরকে জীবন্ত করবেন, পরিণামে তোমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে "। (সূরা আল-বাকারাহ,আয়াত - ২৮)
উক্ত আয়াতে দু’টি মরণ ও দু’টি জীবনের কথা উল্লেখ হয়েছে। প্রথম মরণের অর্থ, অস্তিত্বহীনতা (কিছুই না থাকা)। আর প্রথম জীবনের অর্থ, মায়ের পেট থেকে বের হয়ে মৃত্যুবরণ করা পর্যন্ত জীবন। অতঃপর মৃত্যু আসবে এবং তখন থেকে আখেরাতের যে জীবন শুরু হবে সেটা হবে দ্বিতীয় জীবন। কাফেরগণ এবং কিয়ামতকে অস্বীকারকারিগণ এ জীবনকে অস্বীকার ক’রে থাকে। ইমাম শাওকানী কোন কোন আলেমের অভিমত উল্লেখ করেছেন যে, (মৃত্যুর পর হতে কিয়ামত পর্যন্ত) কবরের জীবন দুনিয়ার জীবনেরই শামিল। (ফাতহুল ক্বাদীর) তবে সঠিক কথা হল, বারযাখী (কবরের) জীবন আখেরাতের জীবনের প্রারম্ভ এবং তার শিরোনাম, কাজেই তার সম্পর্ক আখেরাতের জীবনের সাথেই।(তাফসীরে আহসানুল বায়ান) ।
অন্য আয়াতেও আল্লাহ্পাক বলেছেন,
৪।" আমি মাটি হতে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, তাতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেব এবং তা হতে পুনর্বার বের করব"।(সুরা ত্ব-হা ,আয়াত - ৫৫)।
এ আয়াতের অর্থ এই যে, আমি তোমাদেরকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি। কারণ মানুষের মূল এবং সবার পিতা হলেন আদম (আঃ) তিনি মাটি থেকে সৃষ্টি হয়েছেন।(ইবন কাসীর)।
প্রত্যেক ব্যক্তিকে অনিবার্যভাবে তিনটি পর্যায় অতিক্রম করতে হবে। একটি পর্যায় হচ্ছে, বর্তমান জগতে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, দ্বিতীয় পর্যয়টি মৃত্যু থেকে কেয়ামত পর্যন্ত এবং তৃতীয়টি হচ্ছে কিয়ামতের দিন পুনর্বার জীবিত হবার পরের পর্যায়। এই আয়াতের দৃষ্টিতে এ তিনটি পর্যায়ই অতিক্রান্ত হবে এ যমীনের উপর। যমীন থেকে তাদের শুরু। তারপর মৃত্যুর পর যমীনেই তাদের ঠাঁই। আর যখন সময় হবে তখন এখান থেকেই তাদেরকে পুনরুত্থান ঘটানো হবে। ( ইবন কাসীর)।
এ ব্যাপারে আল্লাহ্পাক আরো বলেছেন,
৫।"তিনি বললেন, ‘সেখানেই তোমরা জীবন যাপন করবে, সেখানেই তোমাদের মৃত্যু হবে এবং সেখান হতেই তোমাদের বের করে আনা হবে"। (সূরা আল-আ’রাফ,আয়াত - ২৫)।
অর্থ্যাৎ, যমীন থেকেই মানুষের শুরু। তারপর মৃত্যুর পর যমীনেই তাদের ঠাঁই। আর যখন সময় হবে তখন এখান থেকেই তাদেরকে পুনরুত্থান ঘটানো হবে।
আল কুরআনের এ সকল আয়াত থেকে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, মহান আল্লাহপাক এ দুনিয়ার সকল বস্তুর স্রষ্টা।
আল্লাহপাক এ দুনিয়ায় মানুষকে কেন সৃষ্টি করেছেন?
মহান আল্লাহপাক এ দুনিয়ায় মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলার জন্য। এ ব্যাপারে আল কুরআনে বলা হয়েছে -"আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন ও মানুষকে কেবল এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে"।(সুরা যারিয়াত, আয়াত - ৫৬)।
এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর বিধিগত (শরয়ী) ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেছেন, যা তিনি ভালবাসেন ও চান। আর তা হল, সমস্ত মানুষ ও জ্বিন কেবল এক আল্লাহর ইবাদত করবে এবং আনুগত্যও শুধু তাঁরই করবে। এর সম্পর্ক যদি তাঁর সৃষ্টিগত ইচ্ছার সাথে হত, তবে কোন মানুষ ও জ্বিন আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিমুখতা অবলম্বন করার কোন ক্ষমতাই রাখত না। অর্থাৎ, এই আয়াতে সকল মানুষ ও জ্বিনকে জীবনের সেই উদ্দেশ্যের কথা স্মরণ করানো হয়েছে, যেটাকে তারা ভুলে গেলে পরকালে কঠোরভাবে জিজ্ঞাসিত হবে এবং এই পরীক্ষায় তারা অসফল গণ্য হবে, যাতে মহান আল্লাহ তাদেরকে ইচ্ছা ও এখতিয়ারের স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন।আর তাই আল্লাহ মানুষকে তৈরী করে তাকে নবী-রাসুল ও ঐশী কিতাবে মাধ্যমে ন্যায়-অন্যায়ের পথ দেখিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের বিবেক- বুদ্ধি দিয়েছেন এ দুয়ের মাঝে যাতে তারা প্রভেদ করতে পারে । দিয়েছেন মানুষকে সিদ্ধান্ত গ্রহনের (ভাল-খারাপ বেছে নেয়ার) স্বাধীনতা।
যারা আল্লাহকে বা তার আদেশ নিষেধ মানে কিংবা মানেনা তাদের ব্যাপারে আল্লাহ কি বলেন -
যারা এক আল্লাহকে ও তার সৃষ্টি-শ্রেষ্ঠত্মকে অস্বীকার করে তাদের জন্য রয়েছে শাস্তির ব্যবস্থা আর তার আদেশ নিষেধ মেনে চলবে তাদের জন্য রয়েছে পুরষ্কার। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহপাক আল কুরআনে বলেন,
১। "যারা অবিশ্বাস করে, তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি এবং যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে, তাদের জন্য আছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।(সূরা ফাতির,আয়াত - ৭ )।
২।"কাউকে যদি তার মন্দকাজ শোভন করে দেখানো হয়। ফলে সে এটাকে উত্তম মনে করে, (সে ব্যক্তি কি তার সমান যে সৎকাজ করে?)। তবে আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছে হিদায়াত করেন। অতএব তাদের জন্য আক্ষেপ করে আপনার প্রাণ যেন ধ্বংস না হয়। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাত"। (সূরা ফাতির,আয়াত - ৮ )।
অর্থ্যাৎ,আল্লাহ তাআলা নিজ ইনসাফ, ন্যায়পরায়ণতা ও নিয়ম-নীতি অনুযায়ী ঐ ব্যক্তিকে পথভ্রষ্ট করেন, যে নিরন্তরভাবে আপন কর্ম দ্বারা নিজেকে তার উপযুক্ত বানিয়ে নেয়। পক্ষান্তরে নিজ দয়া ও অনুগ্রহে ঐ ব্যক্তিকে সৎপথ প্রদর্শন করেন, যে সৎপথ অন্বেষণকারী হয়। এ দুনিয়ার যার যার কাজের কর্ম ফল সেই ভোগ করবে(পাপ-পূণ্য যাই হোক না কেন)। এ ব্যাপারে আল্লাহপাক বলেন,
৩।"কোন বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না; কারও পাপের বোঝা গুরুভার হলে সে যদি অন্যকে তা বহন করতে আহবান করে, তবুও কেউ তা বহন করবে না; যদিও সে নিকট আত্মীয় হয়। তুমি কেবল তাদেরকেই সতর্ক করতে পার, যারা তাদের প্রতিপালককে না দেখে ভয় করে এবং যথাযথভাবে নামায পড়ে। যে কেউ পরিশুদ্ধ হয়, সে তো পরিশুদ্ধ হয় নিজেরই কল্যাণের জন্য। আর প্রত্যাবর্তন আল্লাহরই নিকট"।(সূরা ফাতির,আয়াত - ১৮ )।
৪। 'যে ব্যক্তি কোন মন্দ কাজ করবে, তাকে কেবল তার কর্মের অনুরূপ শাস্তিই দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি সৎকর্ম করবে, তা সে নর হোক বা নারী, যদি সে মুমিন হয়ে থাকে, তবে এরূপ লোকই প্রবেশ করবে জান্নাতে, সেখানে তাদেরকে রিযক দেওয়া হবে অপরিমিত"।(সুরা আল মু'মিন, আয়াত - ৪০)।
৫। " নিশ্চয় আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি; হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।নিশ্চয় আমি অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি শৃঙ্খল, বেড়ি ও লেলিহান অগ্নি"। (সুরা আল-ইনসান (আদ-দাহর),আয়াত - ৩-৪)
বর্ণিত আয়াতে জীবন শেষে মানুষের কি অবস্থা হবে তা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, আমি রাসূল ও আসমানী গ্রন্থের মাধ্যমে তাকে পথ বলে দিয়েছি যে, এই পথ জান্নাতের দিকে এবং ঐ পথ জাহান্নামের দিকে যায়। এরপর তাকে ক্ষমতা দিয়েছি যে কোন পথ অবলম্বন করার। সুতরাং আমি তাকে শুধু জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি দিয়েই ছেড়ে দেইনি বরং এগুলো দেয়ার সাথে সাথে তাকে পথও দেখিয়েছি। যাতে সে জানতে পারে শোকরিয়ার পথ কোনটি এবং কুফরীর পথ কোনটি। এরপর যে পথই সে অবলম্বন করুক না কেন তার জন্য সে নিজেই দায়ী এবং সে অনুযায়ীই সে কৃতজ্ঞ বান্দা হিসাবে গণ্য হতে পারে অথবা তাঁর অবাধ্যতার জন্য অকৃতজ্ঞ বান্দা হিসাবে বিবেচিত হবে।
৬। যারা এ দুনিয়ায় আল্লাহর আদেশ মেনে চলবে তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, "তারা প্রবেশ করবে স্থায়ী জান্নাতে, যেখানে তাদের স্বর্ণ নির্মিত কঙ্কণ ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে এবং যেখানে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের। তারা বলবে, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর; যিনি আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূরীভূত করেছেন; নিশ্চয়ই আমাদের প্রতিপালক বড় ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী। যিনি নিজ অনুগ্রহে, আমাদেরকে স্থায়ী আবাস দান করেছেন; যেখানে আমাদেরকে কোন প্রকার ক্লেশ স্পর্শ করে না এবং স্পর্শ করে না কোন প্রকার ক্লান্তি"।(সূরা ফাতির,আয়াত - ৩৩-৩৫ )।
৭। অন্যদিকে , যারা এ দুনিয়ায় আল্লাহর আদেশ মেনে চলবেনা তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, " পক্ষান্তরে যারা অবিশ্বাস করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। ওদের মৃত্যুর আদেশ দেওয়া হবে না যে ওরা মরবে এবং ওদের জন্য জাহান্নামের শাস্তিও লাঘব করা হবে না। এভাবে আমি প্রত্যেক অবিশ্বাসীকে শাস্তি দিয়ে থাকি।সেখানে তারা আর্তনাদ করে বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে (এখান হতে) বের কর, আমরা সৎকাজ করব; পূর্বে যা করতাম তা করব না। আল্লাহ বলবেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এত আয়ু দান করিনি যে, তখন কেউ উপদেশ গ্রহণ করতে চাইলে উপদেশ গ্রহণ করতে পারত? তোমাদের নিকট তো সতর্ককারীও এসেছিল। সুতরাং শাস্তি আস্বাদন কর; সীমালংঘনকারীদের কোন সাহায্যকারী নেই"। (সূরা ফাতির,আয়াত - ৩৬-৩৭ )।
পরিশেষে, মহান আল্লাহপাক আমাদের সকলকে সত্য-সঠিক জিনিষ জানার-বুঝার তওফিক দান করুন ও সঠিক পথে পরিচালিত করুন। সুযোগ দিন ন্যায়-অন্যায়ের মাঝ থেকে ন্যায়কে আকড়ে ধরার এবং অন্যায়কে পরিহার করার, যার মাঝে আমাদের জন্য নিহিত রয়েছে দুনিয়ার কল্যাণের সাথে সাথে আখেরাতের মুক্তি।
তথ্য সূত্র : আল কোরআন।
=========================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -
মানব জীবন - ২৫ - " পুরুষ " - Click This Link
মানব জীবন - ২৪ - " নারীর প্রতি সদ্ব্যবহার / ভাল আচরন ও শিষ্টাচার " Click This Link
মানব জীবন - ২৩ - " নারী " Click This Link
মানব জীবন - ২২ -" স্ত্রী / সংগী অদল-বদল করে যৌনসহবাস" Click This Link
মানব জীবন - ২১ -"পরকীয়া ও লিভ টুগেদার " Click This Link
মানব জীবন - ২০ -"সমকামীতা বা সমকামী বিয়ে" Click This Link
মানব জীবন - ১৯ - " আত্মসম্মান-নীতি-নৈতিকতা " Click This Link
মানব জীবন - ১৮ - " ধর্মহীনতা " Click This Link
মানব জীবন - ১৭ - " ধৈর্য " Click This Link
মানব জীবন - ১৬ -" সততা " Click This Link
মানব জীবন - ১৫ - " লজ্জা " Click This Link
মানব জীবন - ১৪ - "পর্দা " Click This Link
মানব জীবন - ১৩ - "ধর্ম " Click This Link
মানব জীবন - ১২ " সহ শিক্ষা " Click This Link
মানব জীবন - ১১ " শিক্ষা " - Click This Link
মানব জীবন - ১০ "পরিবার " - Click This Link
মানব জীবন - ৯ "বিবাহের পরে" - Click This Link
মানব জীবন - ৮ " মানব জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য " - Click This Link
মানব জীবন - ৭ " তালাক " - Click This Link
মানব জীবন - ৬ "দেনমোহর - স্ত্রীর হক" - Click This Link
মানব জীবন - ৫ "বিবাহ" - Click This Link
মানব জীবন - ৪ " মাতৃত্ব " - Click This Link
মানব জীবন - ৩ Click This Link
"নারী স্বাধীনতা বনাম নারী(জরায়ু)'র পবিত্রতা "
মানব জীবন - ২ " মাতৃগর্ভ (জরায়ু)"- Click This Link
মানব জীবন - ১ "মানুষের জন্ম প্রক্রিয়ার ইতিকথা"- Click This Link
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:২১
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ কিরকুট ভাই,
আপনার প্রথম মন্তব্যের জন্য এবং সাদর সম্ভাষণ আমার ব্লগ বাড়ীতে।
আপনার পরিশ্রম স্বার্থক হোক।
- শুকরিয়া ভাই।
মহান আল্লাহপাক আপনাকে-আমাকে-আমাদের সকলকে ন্যায় ও সত্যের সাথে থাকার তওফিক দান করুন এবং আমাদের সকলের প্রতি তার রহমত-বরকত-মাগফেরাত নসিব করুন ।
২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:১৯
জটিল ভাই বলেছেন:
সুবিশাল জ্ঞাণগর্ভ লিখার জন্যে জাযাকাল্লাহ্। জানিনা কে কতোটা পড়বে, বুঝবে, কিংবা উপলব্ধি করবে। তবে আমাকে কষ্ট করে বুঝানতো এই চলমান বিবর্তন বাদ এখন কই? এতো বছর ধরে মানুষে এসে আটকে আছে কেনো? মানুষ এতোদিনে বিবর্তিত হয়ে আরো কয়েকটা নতুন প্রাণীর উদ্ভাবন ঘটলো না কেন? নাকি বিবর্তনের যে সিলিন্ডার, তার গ্যাস শেষ?
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:০৩
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ জটিল ভাই , আপনার মন্তব্যের জন্য ।
সুবিশাল জ্ঞাণগর্ভ লিখার জন্যে জাযাকাল্লাহ্।
- শুকরিয়া ভাই।
জানিনা কে কতোটা পড়বে, বুঝবে, কিংবা উপলব্ধি করবে। তবে আমাকে কষ্ট করে বুঝানতো এই চলমান বিবর্তন বাদ এখন কই? এতো বছর ধরে মানুষে এসে আটকে আছে কেনো? মানুষ এতোদিনে বিবর্তিত হয়ে আরো কয়েকটা নতুন প্রাণীর উদ্ভাবন ঘটলো না কেন? নাকি বিবর্তনের যে সিলিন্ডার, তার গ্যাস শেষ?
- আমি কিতা কইতাম ভাই, আপনি বলেন।
কেউ যদি জেনে-বুঝে শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে অস্বীকার করার জন্য নিজেকে মানুষ থেকে নীচে নামিয়ে কোন প্রাণীর সাথে তুলনা করে আনন্দ পায়,তাহলে আর কিইবা বলার থাকে।
আল্লাহপাক আমাদেরকে সঠিক জিনিষ জানার-বুঝার তওফিক দিন।
৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:২২
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: প্রথম প্রাণের সৃষ্টি ঠিক কিভাবে হলো এবং বিগ ব্যং এর পূর্বে কি ছিলো এ বিষয় হয়তো মানুষ কখনোই জানতে পারবে না, তবে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:১৯
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ জ্যাক স্মিথ ভাই,
আপনার ব্লগে আপনার প্রথম মন্তব্যের জন্য এবং সাদর সম্ভাষণ আমার ব্লগ বাড়ীতে।
প্রথম প্রাণের সৃষ্টি ঠিক কিভাবে হলো এবং বিগ ব্যং এর পূর্বে কি ছিলো এ বিষয় হয়তো মানুষ কখনোই জানতে পারবে না, তবে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
- মানুষ কৌতুহলী। আর এই কৌতুহলই মানুষকে নতুন নতুন জিনিষ জানতে,অনুসন্ধান করতে ও আবিষ্কার করতে সাহায্য করে।আর তাইতো সমাজ-সভ্যতা প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচছে।
বিজ্ঞান যতই উন্নত হউক এবং মনুষ যতই আধুনিক থেকে অত্যাধুনিকই হোক না কেন , কিছু কিছু জিনিষ কখনোই মানুষ বিজ্ঞানের সাহায্যে প্রমাণ করতে পারবেনা । এ মনে হয় এমনই একটি বিষয়।
তবে, সময়ের সাথে সাথে আমরা হয়ত কিছুটা হলেও জানতে পারব কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা।
আবারো ধন্যবাদ ভাই।
৪| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৪
নতুন বলেছেন: এই সব আলোচনা কিন্তু শুধুই ১৪০০ বছর আগে কোরান থেকেই শুরু হয়েছে এমন না।
প্রাচীন মিশর, গ্রীক দার্শনিকেরাও মানুষের জীবন, গঠন, নিয়ে চিন্তা করেছে।
আর ধর্মগ্রন্হে সব কথাই একটু ধোয়াশা করে বলা হয়েছে যেখানে পরিস্কার করে কোন দাবি করা হয়নাই যেটা প্রমান করে খন্ডন করা যাবে, এই চালাকির জন্য সময়ের সাথে সাথে তফরিস পাল্টে যায়।
তাহলে আপনি মানুষ যে ভীন গ্রহের প্রানী পৃথিবিতে এসেছে সেই তত্বেই বিশ্বাসী।
০৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১১:৩৪
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নতুন ভাই, আপনার আপনার মন্তব্যের জন্য।
এই সব আলোচনা কিন্তু শুধুই ১৪০০ বছর আগে কোরান থেকেই শুরু হয়েছে এমন না। প্রাচীন মিশর, গ্রীক দার্শনিকেরাও মানুষের জীবন, গঠন, নিয়ে চিন্তা করেছে।
- মানুষের ভ্রূণ তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে চিন্তাশীলরা নানা ধরনের ধারণা পোষণ করত প্রাচীনকাল থেকেই। এরিস্টটল মনে করতেন, মাসিকের রক্তের সঙ্গে পুরুষের বীর্যের মিলন হলে ভ্রূণ তৈরি হয়। অনেকে আবার মনে করতেন, মানুষের ভ্রূণ কেবল পুরুষের বীর্য থেকে তৈরি হয়।
এ দুটি ধারণা যে ভুল, তা প্রমাণ করেন ইতালিয়ান বিজ্ঞানী স্পিলিজার ১৭৭৫ সালে। ব্রাভি ১৮৮৮-১৯০৯ সালের মধ্যে প্রমাণ করেন ক্রোমোজম বিভিন্ন ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ঠিক করে। মরগান ১৯১২ সালে মানুষের ভ্রূণ তৈরিতে জীবের ভূমিকা প্রমাণ করেন। মূল কথা হচ্ছে, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আঠারশ শতকের আগে ভ্রূণ তৈরি সম্পর্কে কোনো ধারণাই লাভ করতে পারেনি।
আর ধর্মগ্রন্হে সব কথাই একটু ধোয়াশা করে বলা হয়েছে যেখানে পরিস্কার করে কোন দাবি করা হয়নাই যেটা প্রমান করে খন্ডন করা যাবে, এই চালাকির জন্য সময়ের সাথে সাথে তফরিস পাল্টে যায়।
- এ ব্যাপারে কি বলব ভাই,বুঝতে পারছিনা!!!!!!!
কারন - আপনি হয়ত যা বলেছেন তা ঠিকই বলেছেন ,আপনার দৃষ্টিতে।
আবার - কুরআনে যা বলা হয়েছে তা একদম পরিষ্কার-সহজবোধ্য ভাবে বলা হয়েছে,অনেকের মতে।
এখন এটা হলো শুধু দৃষ্টিভংগীর ব্যাপার। যদি মানতে-বুঝতে চাই তাহলে সবই সহজ। আর মানতে বুঝতে না চাইলে নিজের জন্ম প্রক্রিয়া নিয়েও সন্দেহ পোষণ করা যায়।
আর - অনেক সময় আল কুরআনের তাফসীরে কিছুটা প্রার্থক্য পরিলক্ষিত হয় বিশদ ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ,এটা ঠিক তবে মূলভাব বা বিষয় কখনো পরিবর্তন হয়না ।তা আপনি আমি খেয়াল করলেই দেখতে পাব।
তাহলে আপনি মানুষ যে ভীন গ্রহের প্রানী পৃথিবিতে এসেছে সেই তত্বেই বিশ্বাসী।
- ভাই, আমি আদম কা ছাওয়াল ।
সেই তাই সঠিক যা আপনি বলেছেন-ভেবেছেন।
৫| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০৫
কামাল১৮ বলেছেন: আমরা সৃষ্টি করেছি বলতে কি বুঝায়।আল্লাহর সাথে অন্য কেউ ছিলো।
০৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:১১
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ কামাল১৮ভাই, আপনার আপনার মন্তব্যের জন্য।
আমরা সৃষ্টি করেছি বলতে কি বুঝায়। আল্লাহর সাথে অন্য কেউ ছিলো।
- মহান আল্লাহপাক আল কুরআনের বহু জায়গায় নিজের ক্ষেত্রে বহু বচনে আমরা শব্দটি কেন ব্যবহার করেছেন এই বিষয়টি নিয়ে শুধু অমুসলিম নয়, অনেক মুসলিমের কাছেও স্পষ্ট নয়। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সবার মানা উচিত -
১। আমাদের জানা ও মানা উচিত যে, ইসলামী শরীআতের কোন বিধানের কারণ তালাশ করা অন্যায় বরং নির্বিবাদে মেনে নেওয়ার মধ্যেই বান্দার কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ ব্যাপারে আল্লাহপাক আল কুরআনে বলেন, " রাসূল তার প্রভুর পক্ষ থেকে যা তার কাছে নাযিল করা হয়েছে তার উপর ঈমান এনেছেন এবং মুমিনগণও। প্রত্যেকেই ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তার ফেরেশতাগণ, তার কিতাবসমূহ এবং তার রাসূলগণের উপর। আমরা তাঁর রাসূলগনের কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলেঃ আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। হে আমাদের রব। আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল"।(সূরা বাকারা,আয়াত - ২৮৫)।
এই আয়াতে এমন কিছু বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে, যার উপর ঈমানদারদেরকে ঈমান আনতে বলা হয়েছে কোন প্রশ্ন নয়।
২। তাছাড়া প্রত্যেক মুমিনকে এটা বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ তাআলার প্রত্যেকটি কাজে বিরাট হিকমত এবং প্রশংসনীয় উদ্দেশ্য রয়েছে। আর প্রত্যেক মানুষের জন্য তা স্পষ্ট হওয়া জরূরী নয়। এটি এক প্রকার পরীক্ষা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, " যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য - কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম? তিনি পর্যক্রমশালী, ক্ষমাশীল"। (সূরা মূলক,আয়াত - ২)।
তারপরেও - শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃত: ৭২৮ হি.) মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে আমরা শব্দের ব্যাখ্যয় বলেছেন, “আরবি সাহিত্যের একটি বৈশিষ্ট্য হল, কোন ব্যক্তি নিজের সম্মান বা গৌরব বুঝাতে নিজেকে নাহনু (আমরা) সর্বনাম দিয়ে প্রকাশ করতে পারেন। আবার তিনি একত্ব বুঝাতে আনা (আমি) অথবা তৃতীয় পুরুষ হুয়া (সে) সর্বনামগুলোও ব্যবহার করতে পারেন। আল্লাহ আরবদের যখন তাদের ভাষাতেই সম্বোধন করছেন, তিনি কুরআনে এই তিন ধরনের স্টাইলই ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ তায়ালা নিজেকে কিংবা নিজের নাম এবং গুণসমূহ প্রকাশ করার জন্য কখনো একবচন আবার কখনো বহুবচন ব্যবহার করেছেন।
যেমন-
১। "নিশ্চয় আমরা আপনাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়"।(সূরা ফাতহ, আয়াত - ১)
২। "নিশ্চয় আমরাই কুরআন নাযিল করেছি এবং আমরা অবশ্যই তার সংরক্ষক। " (সূরা হিজর,আয়াত - ৯)।
আল কুরআনে এধরনের আরো অনেক আয়াত আছে। কিন্তু আল্লাহ কখনোই দ্বৈত বা দ্বিবচন ব্যবহার করেননি। কারণ বহুবচন যেখানে আল্লাহর মর্যাদা, তাঁর নাম এবং গুণসমূহের মাহাত্ম্যকে প্রকাশ করে, দ্বিবচনাত্মক শব্দ সেখানে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাকেই (দুই) নির্দেশ করে, যা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে। (আল আকিদাহ আল তাদমুরিয়্যা, পৃষ্ঠা ৭৫) । লিংক - https://tawheedmedia.com/
তবে আমাদের একটি বিষয় স্মরণ রাখতে হবে। তাহল, বিভিন্ন উপযোগিতার বিবেচনায় যদিও নানান আয়াতে আল্লাহর জন্য বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা হয়, কিন্তু এর আগে-পরে সাধারণত এমন কোন কিছু থাকে, যা আল্লাহর একক হওয়ার প্রমাণ বহন করে। যেমন সূরা কাউসারে আল্লাহ তাআলা বলছেন- "নিশ্চয়ই আমরা (আমি) আপনাকে কাউসার দান করেছি। সুতরাং আপনি আপনার রবের জন্য সালাত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন"। (সূরা কাউসার,আয়াত - ১-২) এই আয়াতে প্রথমে বহুবচনে দান করার কথা বলা হলেও পরক্ষণেই এক বচনে ‘রব’ শব্দ আনা হয়েছে। যার দ্বারা আগের আয়াতে আলোচিত দাতাকেই উদ্দেশ্য নেওয়া হচ্ছে। ফলে আর কোন সংশয় থাকে না যে, উক্ত দাতা একক সত্তা, একাধিকজন নন।
৬| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৯:৪৫
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: খুব ভালো লাগলো লেখাটা।
সূরা তারিকের আয়াত ৬ ও ৭ এর ব্যাখ্যা কি?
আয়াত ৬ঃ
তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে
আয়াত ৭ঃ
যা বের হয় মেরুদন্ড ও বুকের হাঁড়ের মধ্য থেকে।
কোরআনের ভুল ধরার জন্য এই আয়াত দুটি ব্যবহার করা হয়। সবাই বলার চেষ্টা করে বীর্য তৈরি হয় শুক্রাশয়ে। শুক্রাশয় মেরুদণ্ড ও বুকের হারের মধ্যে অবস্থিত না।
ব্যাখ্যা জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন। আমি এটার ব্যাখ্যা সম্পর্কে ভালো করে জানি না। আরও জানার চেষ্টা করছি। কিছু ব্যাখ্যা পড়েছি যেখানে অ্যানাটমি সহ ব্যাখ্যা দেয়া আছে। হতে পারে সেটাই সঠিক ব্যাখ্যা। প্রাণীবিজ্ঞানে যারা ভালো তারা ব্যাপারটা ভালো বুঝবেন।
০৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৯
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ সাড়ে চুয়াত্তর ভাই, আপনার আপনার চমতকার মন্তব্যের ও প্রশ্নের জন্য।
"তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে, যা বের হয় মেরুদন্ড ও বুকের হাঁড়ের মধ্য থেকে"।(সুরা আত-তারিক,আয়াত - ৬-৭) ।
কোরআনের ভুল ধরার জন্য এই আয়াত দুটি ব্যবহার করা হয়। সবাই বলার চেষ্টা করে বীর্য তৈরি হয় শুক্রাশয়ে। শুক্রাশয় মেরুদণ্ড ও বুকের হারের মধ্যে অবস্থিত না।
এটা সত্যি যে,আল কুরআনের ৭ নং আয়াতটি বড় বৈজ্ঞানিক ভুল হিসেবে সমালোচিত। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে আল কুরআনের সমালোচনায় নয় বরং আল কুরআনের প্রতিটা আয়াতে বিশ্বাসী।তবে মনে যে কিছুটা হলেও কৌতুহল নেই তা নয় , তবে - ----------------------
ব্যাখ্যা জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন। আমি এটার ব্যাখ্যা সম্পর্কে ভালো করে জানি না। আরও জানার চেষ্টা করছি। কিছু ব্যাখ্যা পড়েছি যেখানে অ্যানাটমি সহ ব্যাখ্যা দেয়া আছে। হতে পারে সেটাই সঠিক ব্যাখ্যা। প্রাণীবিজ্ঞানে যারা ভালো তারা ব্যাপারটা ভালো বুঝবেন।
-- আপনার মত আমিও জানতে বুঝতে চাই তবে নানা রকম সীমাবদ্ধতার কারনে -----------------------------
তবে আমার মত আপনিও এটা পড়ে দেখতে পারেন।
কোরআন এবং বীর্যের উৎস - লিংক - https://www.shongshoy.com/
৭| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:০৫
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার জন্য রবীন্দ্রনাথের কয়েকটা লাইন;
মৃত্যুর পরে।
চিরকাল এই সব
রহস্য আছে নীরব
রুদ্ধ ওষ্ঠাধর,
জন্মান্তের নব প্রাতে
সে হয় ত আপনাতে
পেয়েছে উত্তর!
০৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:১৭
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই, আপনার আপনার চমতকার কবিতার জন্য।
মৃত্যুর পরে।
চিরকাল এই সব
রহস্য আছে নীরব
রুদ্ধ ওষ্ঠাধর,
জন্মান্তের নব প্রাতে
সে হয় ত আপনাতে
পেয়েছে উত্তর!
- - এ দুনিয়ার অনেক কিছুরই হিসাব মিলবেনা কিংবা পাওয়া যাবেনা যথাযথ উত্তর। অনেক কিছুই রয়ে যাবে সমাধানের বাইরে রহস্য হয়ে ।
এটাই জীবন।
মানব জীবন।
৮| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৩:২৯
এভো বলেছেন: আল্লাহ একেক বার একেক ধরনের মাটি দিয়ে মানুষকে বানাবার কথা বলছে কেন? কাদা মাটি ঠনঠনে৷ মাটি, আবার এটেল মাটি আবার পোড়া মাটি ইত্যাদি। একই বিষয়ে এত রকম এস্টেটমেন্ট কেন?
০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৩৬
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ এভো ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য।
আল্লাহ একেক বার একেক ধরনের মাটি দিয়ে মানুষকে বানাবার কথা বলছে কেন? কাদা মাটি ঠনঠনে৷ মাটি, আবার এটেল মাটি আবার পোড়া মাটি ইত্যাদি। একই বিষয়ে এত রকম এস্টেটমেন্ট কেন?
- আমি যতটুকু বুঝি এখানে একই মাটির ভিন্ন-ভিন্ন অবস্থা প্রকাশ পেয়েছে। যেমন - মানবের মাঝে প্রথমে শিশু,তারপরে কিশোর । এভাবে যুবক-প্রৌঢ়- বৃদ্ধ ইত্যাদি।
যেমন - ঠনঠনে কাদামাটি / এটেল মাটি - মাটি যখন শুকিয়ে যায় তা পোড়ামাটির ন্যায় শুকিয়ে ঠনঠনে হয়ে যায়। আবার তাতে যখন পানি মিশানো হয় তখন আঠালো কাদামাটিতে পরিণত হয়।আবার সেই কাদামাটি অনেকদিন ফেলে রাখলে কাদার মধ্যে গন্ধ সৃষ্টি হয়ে যায়।
আবার , পচা কাদা যা শুকিয়ে যাওয়ার পরে মাটির শুকনো ঢিলার মত হয়ে যায়। এদিকে আঠালো কাদামাটি অর্থ্যাৎ এমন কাদা, দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে যার মধ্যে আঠা সৃষ্ট হয়ে যায়।
৯| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ ভোর ৬:৩৭
আমি পরাজিত যোদ্ধা বলেছেন: আমি কেন আপনার লেখা আগে পড়ি নাই কারণ খুজে বের করতে পারলাম না, অনেক ডিটেইলস লেখা, সময় নিয়ে ভেলিডেট করে সব গুলো পড়ব।
অনেক শুভ কামনা, অনেক পরিশ্রম করেছেন।
০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:২১
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ আমি পরাজিত যোদ্ধা ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য।
আমি কেন আপনার লেখা আগে পড়ি নাই কারণ খুজে বের করতে পারলাম না, অনেক ডিটেইলস লেখা, সময় নিয়ে ভেলিডেট করে সব গুলো পড়ব।
- আবারো ধন্যবাদ ভাই । কি বলব বুঝতেছিনা। শুধু বলব শুকরিয়া।
যদি আমার লেখার কোন একটি শব্দও আপনার ভাল লাগে এবং জীবনের চলার পথে কাজে লাগে তাহলে আমার পরিশ্রম যথাযথ বলে মনে হবে।
অনেক শুভ কামনা, অনেক পরিশ্রম করেছেন।
- আপনার জন্যও শুভ কামনা রইলো ভাই। ভালোর সাথে ,আলোর পথে চলার জন্য এবং জীবন যুদ্ধে পরাজিত নয় সফল যোদ্ধা হবার জন্য।
১০| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৫:২৭
নয়া পাঠক বলেছেন: অসামান্য, অমূল্য, সময়োপযোগী নাস্তিকদের অসার যুক্তি/ সীমিত জ্ঞানের ব্যবহার/একপেশে বক্তব্যগুলো কি সুন্দর ব্যাখ্যামূলক ভাবে উপযুক্ত প্রমাণ সহ সাবলিল ভাবে আপনি বর্ণনা করেছেন। ২০২৩ এর রমযানের এই আসর ওয়াক্তে আপনার লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গভীর মনোযোগ সহকারে, এর অর্থ উপলব্ধি করে হৃদয়ঙ্গম করে নিয়ে পড়লাম। সত্যিই অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আপনাকে, এই সুন্দর একটি লেখা আমাদের জন্য। জাজাকাল্লাহ। আল্লাহ আপনার জ্ঞান উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি করুন। আমিন।
তবে নাস্তিকদের / শেরেককারীদের জন্য আমার কেবলই আফসোস হয়, আরে মুর্খের দল 'যেখানে সামান্য একটি জামা/কাপড় তৈরি করতে কারিগর লাগে' সেখানে এত নিঁখুত, এত মেকানিজম, এত রাসায়নিক বিক্রিয়ার আধার, এত ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স শক্তি ব্যবহারকারী, এত সুনিপুন একটি মানবদেহ বিনা কারিগরেই তৈরি হয়ে গেল কেবলমাত্র বিবর্তনের মাধ্যমেই/ এমনি এমনিই। এমনটা ভাবা কতইনা শিশুসুলভ, অপরিণত। আল্লাহ তাদের জ্ঞান দান করুন। আমিন। তাদের জন্য আমার এই প্রার্থনা ছাড়া আর কোন কিছু বলার নেই।
এ জন্যই মনে হয় বলা হয়, তুমি কে এটা আগে খুঁজে বের কর। যদি তুমি এটা বুঝতে পার, তবে দুনিয়ার অনেক জ্ঞানই তোমার নিকট সহজেই ধরা দেবে। তুমি বুঝতে পারবে কত সুনিপূনতা আর জটিলতার মাধ্যমে আমাদের এই নশ্বর দেহটি তৈরি।
এখন জ্ঞান অর্জন করা বা শিক্ষালাভ করার জন্য তাবৎ পৃথিবীর জ্ঞানভান্ডার আমাদের হাতের মুঠোয়। নাস্তিকদের / অবিশ্বাসীদের বলব 'এনাটমীর একটি বই ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে নিজের ভেতরের কলকব্জা, শিরা উপশিরা, স্নায়ুতন্ত্র, মস্তিষ্ক, অস্থি, মজ্জা, চর্ম, অর্থাৎ যা কিছু দিয়ে মানুষ তৈরি, যেসব ইলেকট্রো-ম্যাকানিজম মাুনষের মধ্যে বিদ্যমান সেই ব্লুপ্রিন্টটি একটু মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করুন। আর চিন্তা করুন, এত জটিল একটি কোয়ান্টাম-ইলেকট্রো-ম্যাকানিক্যাল এই দেহের কোন কারিগর নেই এটা যে বলে, তাকে কি বলে, বা কার সঙ্গে তুলনা করব তেমন কিছু খুঁজে পাচ্ছি না।
০৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৩
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নয়া পাঠক ভাই, আপনার চমতকার তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যের জন্য।
অসামান্য, অমূল্য, সময়োপযোগী নাস্তিকদের অসার যুক্তি/ সীমিত জ্ঞানের ব্যবহার/একপেশে বক্তব্যগুলো কি সুন্দর ব্যাখ্যামূলক ভাবে উপযুক্ত প্রমাণ সহ সাবলিল ভাবে আপনি বর্ণনা করেছেন। ২০২৩ এর রমযানের এই আসর ওয়াক্তে আপনার লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গভীর মনোযোগ সহকারে, এর অর্থ উপলব্ধি করে হৃদয়ঙ্গম করে নিয়ে পড়লাম। সত্যিই অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আপনাকে, এই সুন্দর একটি লেখা আমাদের জন্য। জাজাকাল্লাহ। আল্লাহ আপনার জ্ঞান উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি করুন। আমিন।
- কি বলব ভাই , বুঝতে পারছিনা। তবে এটুকুই বলব - আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা রইলো লেখা পড়া ও জানার চেষ্টা করার জন্য। মহান আল্লাহপাক আমাদের সকলকে যা সঠিক তা জানার এবং ভালোর সাথে থাকার ও খারাপকে পরিহার করার সুযোগ দিন। এইই চাওয়া।
আল্লাহপাক আপনার পরিশ্রম ও সময়কে কবুল করে নিন - এই চাওয়াই রইলো দয়াময়ের নিকট।
তবে নাস্তিকদের / শেরেককারীদের জন্য আমার কেবলই আফসোস হয়, আরে মুর্খের দল 'যেখানে সামান্য একটি জামা/কাপড় তৈরি করতে কারিগর লাগে' সেখানে এত নিঁখুত, এত মেকানিজম, এত রাসায়নিক বিক্রিয়ার আধার, এত ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স শক্তি ব্যবহারকারী, এত সুনিপুন একটি মানবদেহ বিনা কারিগরেই তৈরি হয়ে গেল কেবলমাত্র বিবর্তনের মাধ্যমেই/ এমনি এমনিই। এমনটা ভাবা কতইনা শিশুসুলভ, অপরিণত। আল্লাহ তাদের জ্ঞান দান করুন। আমিন। তাদের জন্য আমার এই প্রার্থনা ছাড়া আর কোন কিছু বলার নেই।
- ভাই , যে ঘুমিয়ে থাকে তাকে জাগানো যায় তবে তবে যে জেগে থেকেও ঘুমের ভান করে থাকে তাকে কখনো জাগানো যায়না। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটছে। আল্লাহকে অস্বীকার করতে গিয়ে আমরা নিজেরা সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক ঘোষিত আশারাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরাত্ম থেকে নিজেকে পশুর পর্যায়ে নামিয়ে নিয়ে আসছে , সে ব্যাপারে আমাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। কি আর করা ।
এটাই জীবন ,মানব জীবন।
এ জন্যই জীবনে এত জটিলতা ও বৈচিত্রময়।
এ জন্যই মনে হয় বলা হয়, তুমি কে এটা আগে খুঁজে বের কর। যদি তুমি এটা বুঝতে পার, তবে দুনিয়ার অনেক জ্ঞানই তোমার নিকট সহজেই ধরা দেবে। তুমি বুঝতে পারবে কত সুনিপূনতা আর জটিলতার মাধ্যমে আমাদের এই নশ্বর দেহটি তৈরি।
এখন জ্ঞান অর্জন করা বা শিক্ষালাভ করার জন্য তাবৎ পৃথিবীর জ্ঞানভান্ডার আমাদের হাতের মুঠোয়। নাস্তিকদের / অবিশ্বাসীদের বলব 'এনাটমীর একটি বই ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে নিজের ভেতরের কলকব্জা, শিরা উপশিরা, স্নায়ুতন্ত্র, মস্তিষ্ক, অস্থি, মজ্জা, চর্ম, অর্থাৎ যা কিছু দিয়ে মানুষ তৈরি, যেসব ইলেকট্রো-ম্যাকানিজম মাুনষের মধ্যে বিদ্যমান সেই ব্লুপ্রিন্টটি একটু মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করুন। আর চিন্তা করুন, এত জটিল একটি কোয়ান্টাম-ইলেকট্রো-ম্যাকানিক্যাল এই দেহের কোন কারিগর নেই এটা যে বলে, তাকে কি বলে, বা কার সঙ্গে তুলনা করব তেমন কিছু খুঁজে পাচ্ছি না।
- সবার মাঝেই সঠিক-বেঠিক জানার বোধোদয় হউক।
মহান আল্লাহপাক সবাইকে ভালোর সাথে থাকার , খারাপকে পরিহার এবং সঠিক জিনিষ জানার-বুঝার তওফিক দান করুন ।
এটাই চাওয়া।
আমিন।
১১| ০৮ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৪:৫২
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: অনেক ডিটেইল লিখেছেন। অনেক পরিশ্রম করেছেন। প্রিয়তে রেখে দিলাম।
০৮ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৩
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ বোন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা , আপনার লেখা পড়া ও মন্তব্যের জন্য।
অনেক ডিটেইল লিখেছেন। অনেক পরিশ্রম করেছেন। প্রিয়তে রেখে দিলাম।
- বোন - জানার জন্য পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই এটা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি পরিশ্রম ব্যতীত ভাল কোন জিনিষ অর্জন করাও সম্ভব নয়।বিশেষ ধর্মীয় ব্যাপারে (আমরা যে যেই ধর্মেরই অনুসারী হইনা কেন) সহজ কোন পথ আছে বলে মনে হয়না।আর, তাইতো ইসলাম ধর্মে জানার জন্য সুদুর চীন ( আমার মনে হয় সেখানে চীন দেশ বলতে তাই বুঝানো হয়েছে যে , জানার জন্য যে কোন ত্যাগ/ পরিশ্রম করতে হবে তা যতই কষ্ঠেরই হোক না কেন) দেশেও যেতে বলেছেন।
মহান আল্লাহপাক আমাদের সকলকে সঠিক জিনিষ জানার-বুঝার ও তার নির্দেশিত পথে জীবন অতিবাহিত করার তওফিক দান করুন।
প্রিয়তে রাখার জন্য এবং পড়ার জন্য আবারো ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:১০
কিরকুট বলেছেন: আপনার পরিশ্রম স্বার্থক হোক।