নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার প্রবাস জীবনের প্রতিটিদিন আমি আমার সোনার বাংলাকে মিস করছি
আমি বেলাল তামজীদ।চীনের হুবেই প্রদেশের একটি ইউনিভার্সিটিতে MBBS পড়তেছি।আমাদের ইউনিভার্সিটিতে প্রায় ৫০ জন বাঙালী ছাত্র-ছাত্রী আছে।এখানে ভারত,নেপাল,জর্ডান,পাকিস্তান থেকেও ছাত্র-ছাত্রীরা পড়তে আসে।চীনে এসেছি প্রায় ৫ মাস।বাড়ির বাইরে কোনদিন ঈদ পালন করিনি।এবারই প্রথম বাড়ি তথা দেশের বাইরে ঈদ পালন করেছি।বাংলাদেশে ঈদের চাঁদ দেখলে মন খুশি হয়ে উঠত কিন্তু এখানে ঈদের চাঁদ দেখার পর আমাদের সব বন্ধুরা মনমরা হয়ে বসে ছিল।আসলে মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন ছাড়া ঈদ কেমন কাটবে তা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন ছিল।বন্ধুদের শুকনো মুখ দেখে চিন্তা করলাম দূরে কোথাও থেকে ঘুরে আসলে ঈদের আনন্দ হয়ত কিছু পাওয়া যাবে।তাই সব বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম ঈদের দিন “চায়না থ্রি গরজেস ডেম” এ যাব।এটা একটি জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র যা ইয়াংজি নদীর উপর বাঁধ দিয়ে তৈরী করা হয়েছে।ঈদের দিন দুপুর ২ টায় আমাদের যাত্রার সময় ঠিক করা হয়।
চীনে ঈদ হয়েছে বাংলাদেশের এক দিন আগে অর্থাৎ ৮ তারিখ।ঈদের দিন সকালে হালকা নাস্তা করে ছুটলাম মসজিদে।এখানে পুরো শহরে রয়েছে একটি মাত্র মসজিদ তাও প্রায় ৭-৮ কি.মি দূরে।মসজিদ থেকে ফিরে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে সবাই একজায়গায় মিলিত হয়,সব মিলিয়ে ১০ জন।সবার কাঁধে ব্যাগ।ঈদের দিন সবাই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যায় আর আমরা বেরিয়েছিলাম অচেনা পথে।
এবার যাত্রা শুরুর পালা।“চায়না থ্রি গরজেস ডেম” এই জায়াগাটাতে আমরা ১০ জনের কেউ কোন দিন যায়নি।তাই আগের দিন রাতে গুগল ম্যাপ থেকে রাস্তার নির্দেশনা নোট করে নিয়েছিলাম।এখানে অবশ্য গুগল ম্যাপ বেশ উন্নত।কোন জায়গা, কত নাম্বার বাস ,ঐ জায়গার ছবি সব দেওয়া আছে,তাই পথ চিনতে তেমন অসুবিধা হয়না। যাওয়ার সময় তিনটা বাস পরিবর্তন করতে হয়েছে।প্রথম বাসটি একটি জায়গায় নামিয়ে দেয়,সেখান থেকে অন্য আর একটি বাসে করে চলে যায় শহরের শেষ প্রান্তে।আর শেষ বাসটি পৌছে দেয় গন্তব্যে।
শেষ বাসে উঠার পর থেকে দেখতে থাকি রাস্তার দুপাশের নয়নাবিরাম দৃশ্য।রাস্তার একপাশে পাহাড় আর অন্য পাশ ঘেঁষে বয়ে চলেছে ইয়াংজি নদী।ইয়াংজি নদী চীনের সবচেয়ে বড় নদী।৬৪১৮ কি.মি দীর্ঘ এ নদী ১১ টি প্রদেশ আর ১৬ টি শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলছে,আর সমৃদ্ধ করে চলেছে চীনের অর্থনীতিকে।চীনের বাণিজ্যিক এবং সবচেয়ে উন্নত প্রদেশ সাংহাই ও এ নদীর তীরে অবস্থিত।নদীর পাশের সুউচ্চ পাহাড়গুলো দেখলে মনে হয় যেন মেঘ ছুঁয়েছে।তবে একটি জিনিস খেয়াল করলাম আমাদের দেশের মত এখানে নির্বিচারে পাহাড় কাটা হয়নি।পাহাড়ের ভিতর সুড়ঙ্গ করে রাস্তা তৈরী করা হয়েছে।এতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়নি বরং পর্যটকদের আকর্ষণ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।এখানে বেড়াতে এসে “মরীচিকা” জিনিসটার সাথে নতুনভাবে পরিচয় হল।পিচডালা রাস্তা সূর্যের প্রচন্ড তাপে উত্তপ্ত হয়ে সৃষ্টি হয় মরীচিকা।বাসের সামনে মনে হয় কে যেন পানি দিয়ে রাস্তা ভিজিয়ে রেখেছে কিন্তু কাছে গেলে দেখা যায় রাস্তা শুকনো বরং দূরের রাস্তা ভিজা মনে হয়।পাহাড়ের চূড়ায় ছোট ছোট বাড়ি দেখা যায়।দূর থেকে দেখলে মনে হয় নদী-পাহাড়-আকাশে সাদা মেঘের সারি এইসব কেউ যেন তুলি দিয়ে অনেক যত্ন করে এঁকেছে।
বিকেল ৫ টায় আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌছালাম।যদিও বাস ডেম থেকে প্রায় আধা কি.মি দূরে নামিয়ে দেয়।এইখানে একটি হোটেল বাড়া করে বের হতে হতে প্রায় ৭ টা বেজে যায়,তাই সিদ্ধান্ত নিলাম পরদিন সকালে ডেমে যাওয়া হবে।চীনে একটি বিষয় আমার অস্বস্তি লাগে,তা হল রাত ৮-৯ টার মধ্যে সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।তাই বাধ্য হয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম।প্রথম প্রথম চাইনিজ খাবার অসহ্য লাগলেও এখন দিব্যি খেতে পারি।
পরদিন সকাল সকাল সবার ঘুম ভেঙ্গে গেল,হয়ত নতুন জায়গায় এসেছি অথবা নতুন আরো কিছু দেখব বলে।তবে সকালের খাবার খেয়ে হোটেল ছাড়তে ছাড়তে প্রায় ১১ টা বেজে গেল।হোটেল থেকে ডেম এ যাওয়ার জন্য বাস পাওয়া যায়।এই বাসগুলো সারাদিন ধরে ঘুরে বিভিন্ন জায়াগায় নিয়ে যায়।বাসের বাড়া ১০০ ইয়ান হলেও ছাত্রদের জন্য ৫৫ ইয়ান।চীনে প্রায় সব জায়গাই ছাত্রদের জন্য আলাদা সুবিধা থাকে।তবে আমরা বাসে না উঠে দুইটা কার বাড়া করলাম সারাদিনের জন্য।কার বাড়া নেয়ার পিছনে দুইটা কারণ ছিল।কারণগুলো হল যেখানে ইচ্ছা সেখানে নামা যাবে আর অন্যটি হল কারের চালক আমাদের গাইড হিসেবে কাজে লাগবে।
আধ ঘন্টার মধ্যেই আমরা ডেমে পৌছে গেলাম যদিও পথে কিছু সময়ের জন্য নদীর উপর ব্রীজে নেমেছি।আমার ভাবতেই ভালো লাগছিল যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হাইড়্রোইলেক্ট্রিক ডেমের সামনে দাড়িয়ে আছি।
এবার এই ডেম সম্পর্কে কিছু তথ্য বলি।এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড়্রোইলেক্ট্রিক ডেম।এই ডেম নির্মাণের উদ্দেশ্য হল বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রন।নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৯৪ সালে আর পুরোপুরি শেষ হয় ২০১২ সালে।বার্ষিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২২৫০০ মেগা ওয়াট।এর নির্মাণ ব্যয় প্রায় ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।২৩৩৫ মিটার দীর্ঘ ডেমটির উচ্চতা প্রায় ১৮১ মিটার।ডেমের ভিতর দিয়ে জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে।ডেমটি তৈরী করতে ব্যবহৃত হয়েছে কনক্রিট এবং প্রায় ৪,৬৩,০০০ টন স্টিল,যা দিয়ে প্রায় তিনটি আইফেল টাওয়ার নির্মাণ করা সম্ভব।এটি চীনে মহাপ্রাচীরের পর সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র।ডেমটি তৈরী করতে প্রায় ৪০,০০০ শ্রমিক কাজ করেছে।ডেমটিতে করা হয়েছে ৩২ টি জেনেরেটর।চীনের ৫ ইয়ান এর নোটের পিছনে এই ডেমের আশেপাশের পাহাড়ের ছবি দেয়া আছে।
চীনের অর্থনীতিতে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।প্রতি বছর হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।এই এলাকাটি এখন চীনের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র।তাছাড়া ডেমটিকে ঘিরে এই এলাকায় হোটেল ব্যবসা ও বেশ জমে উঠেছে(আমার বিশ্বাস আমাদের দেশের কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সকলের জন্য উম্মুক্ত করে দিলে কাপ্তায়ের পর্যটক সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে)।ডেমের কারণে ইয়াংজি নদীতে জাহাজ ধারণ ক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে অন্য অনেক প্রকল্পের মত এটার ও কিছু খারাপ প্রভাব রয়েছে।ডেমটি নির্মাণের ফলে ঐ এলাকায় পানির স্তর দিন দিন কমতেছে তাছাড়া আশেপাশের অনেক বাড়িতে ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে।ডেমের আশেপাশে ভূমিকম্পের সম্ভবনা বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।
ডেম দেখা শেষ করে বিকাল ৪ টা নাগাত আমরা গেলাম “bamboo sea” নামক একটি জায়গায়।এটি ২০ কি.মি দীর্ঘ একটি পিকনিক স্পট।এখানে হাজার রকমের বাঁশ পাওয়া যায় তাই এর নাম রাখা হয়েছে “bamboo sea” বা বাঁশের সাগর।চীনে এইরকম জায়গা বেশ কয়েকটি আছে। এখানে প্রবেশ করতে হলে টিকিট কাটতে হয় যার মূল্য ১০০ ইয়ান।তবে ছাত্র হওয়াতে আমাদের কাছ থেকে নিল ৪৪ ইয়ান করে।এই এলাকাটির প্রায় ৬ কি.মি গভীরে আমাদের গন্তব্য।ওখানে আছে পাহাড়ি ঝর্না আর প্রাকৃতিক লেক।টিকিট কাটার পর আমরা আবার যাত্রা শুরু করলাম,এই যেন স্বপ্নপুরি।আঁকাবাঁকা রাস্তার দুপাশে আকাশ ছোঁয়া পাহাড়।আর রাস্তার পাশে পাহাড় ধরে ঘেঁষে চলেছে পাহাড়ি ঝর্না।এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশে বন্ধুদের কেউ কেউ বেশ উচ্চস্বরে গান ধরেছে “রাঙ্গামাটি পাহাড়ে দুপুর বেলা আহারে......”।দেশের বাইরে বাংলা গান গাইতে গেলে অন্য রকম এক অনুভূতি কাজ করে।প্রায় ৪৫ মিনিট পর আমরা লেকের কাছে এসে পৌছালাম।তিনদিকে পাহাড়ের মাঝে লেক।সারারাস্তা তেমন মানুষ দেখা না গেলেও এখানে পর্যটক প্রায় গিছগিছ করছে।লেকের উপর রাখা ছোট সাম্পান আর বাঁশ দিয়ে বানানো ভেলা এই দুইটি জিনিস বাড়তি আকর্ষণ যোগ করেছে।অনেককে দেখলাম লেকের পানিতে সাঁতার কাটতে,তাই দেরি না করে আমরাও নেমে পড়লাম।বিদেশী হওয়ায় চাইনিজরা ও আমাদের সাথে এসে বেশ মজা করেছে।ভাষা ভিন্ন,সংস্কৃতি ভিন্ন,কিন্তু আনন্দ করছি সবাই এক সাথে।সন্ধ্যা হওয়ার আগ মুহূর্তে ওইখান থেকে ফিরার জন্য গাড়িতে উঠলাম কিন্তু এমন জায়গা ছেড়ে যেতে বেশ খারাপ লাগছিল।তাড়াতাড়ি ফিরতে হয়েছিল কারণ ঐখানে থাকার মত ব্যবস্তা নাই।রাতে থাকার জন্য ডেমের আশেপাশে আসতে হয়।
ওইদিন রাতে থাকার জন্য ডেমের পাশে হোটেল নিলাম,হোটেলের কাছেই নদী।সবাই মিলে সারা রাত হোটেলের বারান্ধায় আড্ডা,গান,গল্প-গুজবে কাটিয়ে দিলাম।সকালবেলা ঘুমাতে গিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম ২টায়।এবার হোটেল ছাড়ার পালা। হোটেল থেকে বের হয়ে একটি মাইক্রোবাস বাড়া করলাম আমাদের ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত।গাড়িতে উঠে সবাই বার বার পিছু ফিরে তাকাচ্ছিল।যেন সবাই মনে মনে বলছিল “ধন্যবাদ চায়না থ্রি গরজেস ডেম মা-বাবার কাছ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে বাস করা আমাদেরকে ঈদে কিছু ভাল সময় উপহার দেয়ার জন্য”।
মা-বাবাকে ছাড়া প্রথম ঈদ মনে থাকবে অনেক দিন।বন্ধু তোদের অনেক ধন্যবাদ দেশে ঈদ না করতে পারার কষ্ট কিছু সময়ের জন্য ভুলিয়ে রাখার জন্য।
২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮
বেলাল তামজীদ বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৭
েবনিটগ বলেছেন: সুন্দর, চিনে ডাক্তারি পড়ার মান কেরক ম , খরচাপাতিই বা কেরক ম? অখান থেকে পড়ে আসলে দেশে কি স্বীকৃতি পাওয়া যাবে?
২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:০২
বেলাল তামজীদ বলেছেন: বলেছেন: চীনে MBBS এর মান ভাল।খরচ প্রায় ২৫-৩০ লাখ।অবশ্যই স্বীকৃতি পাওয়া যাবে তবে BMDC এর একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হবে.
৩| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:১৩
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: “রাঙ্গামাটি পাহাড়ে দুপুর বেলা আহারে......”।
ঈদের মজা ভ্রমনে আর বিহারে
++
২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:১৬
বেলাল তামজীদ বলেছেন: মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
৪| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:০৮
লজিক মানুষ বলেছেন: লেখা তো সুন্দর হয়েছে। কিন্তু কিছু ছবি না দিলে অনেকটা ঝোলে লবন না দেওয়ার মতো লাগছে।
ছবি যোগ করেন।
২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:০৭
বেলাল তামজীদ বলেছেন: পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৩
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: