![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/ জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন। [email protected]
পল্লীকবি জসীমউদ্দীন। একটা সময় ছিল যখন- পশ্চিম বাংলায় কাঁথাকে শুধু কাঁথাই বলা হত। ১৯২৯ সালে কবি জসীমউদ্দীন লিখলেন ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ (The Field of the Embroidered Quilt )। তারপর থেকে পশ্চিম বাংলায় কাঁথাকে বলা হয় নকশী কাঁথা। এই হল বাংলার অবিস্মরণীয় এক দিক। এভাবেই যুগে যুগে বাংলার কবিকূল বাংলার লোকজজীবনে দান করেন ভাব, ভাষা ও নৈকট্য।
পল্লীকবি জসীমউদ্দীন-এর জন্ম ফরিদপুরের তাম্বুলখানা গ্রামে। ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি। কবির কাব্যশক্তি কৈশরকাল থেকেই লক্ষিত হয়েছে। কলেজ জীবনে ‘কবর’ কবিতাটি রচনা করে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৩১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে এম এ পাস করেন। পল্লীসাহিত্যের সংগ্রাহক হিসেবে কর্মজীবন শুরু। ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে লেকচারার পদে যোগ দান করেন। পরে অবশ্য সরকারী চাকরি করেন।
কবির মৃত্যু ১৯৭৬ সালে ।
২
সম্প্রতি, জসীমউদ্দীন-এর একটি কবিতা পাঠ করে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।
কবিতাটি ছেলেবেলায় পড়েছিলাম-তখন কবিতাটির ভিতরের মানে ততটা বুঝতে পারিনি-আজ বুঝতে পেরে হতবাক হয়ে গেলাম। কবিতার নাম:‘প্রতিদান’। কবিতার ভাব এমন মহৎ - এমন মানবিক -যে তার অনিবার্য অভিঘাতে অভিভূত হয়ে যেতেই হয়। অসাধারন ছন্দে কবিতাটি রচনা করেছেন কবি।
যে মোরে করিল পথের বিবাগী;-
পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি;
যেন ভিতর থেকে ওহির মতন নাজিল হয়েছে।
কবিতাটি পাঠ করা যাক।
আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।
যে মোরে করিল পথের বিবাগী;-
পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি;
দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হয়েছে মোর;
আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর,
আমার এ কূল ভাঙিয়াছে যেবা আমি তার কূল বাঁধি,
যে গেছে বুকে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি;
সে মোরে দিয়েছে বিষে ভরা বাণ,
আমি দেই তারে বুক ভরা গান;
কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম ভর,-
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।
মোর বুকে যেবা কবর বেঁধেছে আমি তার বুক ভরি
রঙিন ফুলের সোহাগ-জড়ানো ফুল-মালঞ্চ ধরি
যে মুখে সে কহে নিঠুরিয়া বাণী,
আমি লয়ে সখি, তারি মুখখানি,
কত ঠাঁই হতে কত কি যে আনি, সাজাই নিরন্তর
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।
এমন মহৎ ভাবনা কী করে একজন মানুষ ভাবতে পারেন?
যে মুখে সে কহে নিঠুরিয়া বাণী,
আমি লয়ে সখি, তারি মুখখানি,
কত ঠাঁই হতে কত কি যে আনি, সাজাই নিরন্তর
ভাবতে উদবুদ্ধ হই-প্রতিদানের সমতূল্য কোনও কবিতা কি বিশ্বসাহিত্যে রয়েছে। যদি বলেন-কবিতায় নীতিবাক্য ছড়ানো অনুচিত-প্রতিদান তা হলে কি? এ কি কবিতা না স্বর্গীয় শ্লোক? যে শ্লোকের বাস্তবায়নের জন্য রচিত হয়েছে জগৎ।
কবি জসীমউদ্দীনের শুভবোধের উৎস কি? আবহমান বাংলা? দক্ষিণ বাংলায় তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে ...আমরা বলি বাংলা মানবিক। তার বারো মাসে তেরো পার্বণ-যে পার্বণে অনাহূত কেউই নয়-এমন কী পথের কুকুরও! কিন্তু, কবির এমনতরো গভীর শুভবোধের উৎস কি? আমি ভাবি আর ভাবি। আর, এলোমেলো হয়ে যাই। প্রাচীন বাংলার কত ছবি যে ভাসে মনে। মনে ভাসে পদ্মার মাঝিদের গান। লালনের গান। আমি ভাবি আর ভাবি। আর, এলোমেলো হয়ে যাই।
আমার এ কূল ভাঙিয়াছে যেবা আমি তার কূল বাঁধি,
যে গেছে বুকে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি;
সে মোরে দিয়েছে বিষে ভরা বাণ,
আমি দেই তারে বুক ভরা গান;
কী আশ্চর্য!
ভাবতে উদবুদ্ধ হই-প্রতিদানের সমতূল্য কোনও কবিতা কি বিশ্বসাহিত্যে রয়েছে।
কবির এমনতরো গভীর শুভবোধের উৎস কি?
তখন বলছিলাম: যুগে যুগে বাংলার কবি লোকজীবনে দান করেন ভাব, ভাষা ও নৈকট্য। যা ভিন দেশিয়রা ঠিক বুঝবেন না। যেমন, আমরা বলি: নকশী কাঁথা মাঠ। অন্যরা বলে:The Field of the Embroidered Quilt . কী এর মানে? ফ্রান্সে বসে কেউ এই লাইনটি পড়লে তার তো কোনও প্রকার ঝিমঝিম আবেগ বোধ করার কথা নয়। অবশ্য, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের কোনও বাঙালি 'নকশী কাঁথা মাঠ' -এই কথায় কেঁপে ওঠার কথা। তখন বলছিলাম: একটা সময় ছিল যখন- পশ্চিম বাংলায় কাঁথাকে শুধু কাঁথাই বলা হত। ১৯২৯ সালে কবি জসীমউদ্দীন লিখলেন ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ । তারপর থেকে পশ্চিম বাংলায় কাঁথাকে বলা হয় নকশী কাঁথা। এই হল বাংলার অবিস্মরণীয় এক দিক। যা ভিন্ দেশিয়রা ঠিক বুঝবেন না। পল্লীকবি জসীমউদ্দীন যে প্রতিদানের মতন কবিতা লিখছেন তা কত জনে জানে?
সে মোরে দিয়েছে বিষে ভরা বাণ,
আমি দেই তারে বুক ভরা গান;
ভাবা যায়!
এ কবিতা না স্বর্গীয় শ্লোক? যে শ্লোকের বাস্তবায়নের জন্য রচিত হয়েছে জগৎ।
ভেবে ভেবে কূলকিনারা পাওয়া যায় না।
কবির ছবি: বাংলাপিডিয়ার সৌজন্যে।
০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩০
ইমন জুবায়ের বলেছেন: আশ্চর্য!
২| ০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩২
শান্তির দেবদূত বলেছেন: অনেক কিছু জানতে পারছি আপনার এই ধরনের পোষ্টগুলো থেকে ..... অনেক ধন্যবাদ ........ আরও লিখতে থাকুন
০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩৫
ইমন জুবায়ের বলেছেন: লিখব; ধন্যবাদ।
৩| ০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৫২
পজিটিভ২৯ বলেছেন: উনারা এক একটা জিনিস!! মহমুল্যবান এক একটা এনটিক্ কালেকশন রেখে গেছেন!!আর কি পাবোনা এমন জিনিস!!!
কি কবিতা!!! পড়ে মনে হয় কবির হাতে একখানা চুমা খাইতে পারতাম!!!
০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৫৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন: আমারও অবস্থা অনেকটাই আপনার মতোই।
৪| ০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৪
জামশাদ যামেরী বলেছেন: খুবই ভালো লাগলো। আপনি কি আহসান হাবীবের কবিতা নিয়ে
একটা পোষ্ট দেবেন ?
শুভকামনা ।
০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৭
ইমন জুবায়ের বলেছেন: হ্যাঁ, সেরকম ইচ্ছেও রয়েছে। অনেক ধন্যবাদ।
৫| ০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১৭
তায়েফ আহমাদ বলেছেন: আমার খুব-খুব-খুব প্রিয় একটা কবিতা।
এর প্রথম কয়েকটা পংক্তি মাঝে মাঝে আমার ফাইসবুক স্ট্যাটাসে দেয়া থাকে!
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৭:০২
ইমন জুবায়ের বলেছেন: শুভেচ্ছা রইল।
৬| ০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১৮
অলস ছেলে বলেছেন: সম্ভবত শিমুল মোস্তফার আবৃত্তি শুনেছিলাম, জানতাম না এটা জসীম উদ্দিনের লেখা। নকশী কাঁথার মাঠ পড়া থেকেই আমি তাঁর ভক্ত। এখন আরো ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ জানানোর জন্য। আর আপনার বিশ্লেষণ সুন্দর হয়েছে। ভেতর থেকে অনুভব করতে চেয়েছেন বুঝা যায়।
০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২০
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ভেতর থেকে অনুভব করতে কবিই বাধ্য করেন। আমাদের কী সৌভাগ্য -আমরা জসীমউদদীনকে পেয়েছি ...
অনেক ধন্যবাদ।
৭| ০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১০:২৩
অপ্সরা বলেছেন: আমার প্রিয় একটা কবিতা।
০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১০:২৪
ইমন জুবায়ের বলেছেন: আমারও। এখন অনেক বেশি; কারণ এখন বুঝতে পারি।
৮| ০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১১:৪৮
নাজনীন খলিল বলেছেন:
এই কবিতাটি আমার অনেক প্রিয় একটি কবিতা। ধন্যবাদ তোমাকে।
অনেক শুভেচ্ছা।
০৩ রা এপ্রিল, ২০০৯ ভোর ৬:২৭
ইমন জুবায়ের বলেছেন: আপনাকেও শুভেচ্ছা।
৯| ০৩ রা এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৯
প্রণব আচার্য্য বলেছেন: আপনার ব্লগে এসে হিমশিম খেয়ে যাই, কোনটা আগে পড়বো... সবগুলোই পড়ছি একে একে
০৩ রা এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১:০৪
ইমন জুবায়ের বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ
১০| ০৩ রা এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১:৪০
অদৃশ্য বলেছেন: সুন্দর
শুভকামনা।
ভালো থাকুন।
০৩ রা এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১:৪৩
ইমন জুবায়ের বলেছেন: আপনার জন্যও শুভকামনা রইল ।
১১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:২১
নতুন রাজা বলেছেন: হঠাৎ করে এই কবিতাটা খুজছিলাম... একটা সাময়িক পোষ্ট দিয়েছিলাম কবিতাটার সন্ধানে। রাতমজুর ভাইয়ের দেয়া লিংক ধরে এসে দেখি এটা আপনার পোষ্ট... আপনি আবার আমাকে অবাক করলেন...
ইমন ভাই, আমার খুব প্রিয় এই কবিতাটার জন্য আপনাকে কি করে ধন্যবাদ দেই বলেন তো???
ভালো থাকবেন ভাই...
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৭:০২
ইমন জুবায়ের বলেছেন: শুভেচ্ছা রইল।
১২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:২৪
সায়েম মুন বলেছেন: প্রিয় একটি কবিতা। নতুন রাজার পিছুপিছু এসে পেয়ে গেলাম। ধন্যবাদ ইমন জুবায়ের ভাই।
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৭:০২
ইমন জুবায়ের বলেছেন: শুভেচ্ছা রইল।
১৩| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১০:৫৫
মামুনুর রহমান খাঁন বলেছেন: ছোটবেলায় পড়েছি। যেদিন প্রথম পড়লাম পড়ে এত অভিভূত হয়ে গেছি যে অনেকবার, বারবার পড়েছি। আজ হঠাৎ করে কেন যানি কবিতাটা মনে পড়ছিল। খুঁজতে খুঁজতে এখানে পেয়ে গেলাম। ধন্যবাদ আপনাকে
১৫ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:৪৩
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২৬
জটিল বলেছেন: ছোটবেলার বইয়ে ছিল ... মাসখানেক আগে একবার পড়েছিলাম ...