নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন শিক্ষক, লেখালেখি, সম্পাদনা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করি। বাংলাদেশ কে ভালবাসি। দেশের জন্য, মানুষের জন্য সামান্য হলেও কিছু করতে চাই।

মা, মাটি ও মানুষকে ভালবাসি। ভালবাসতে চাই।

বিএইচ মাহিনী

I am a social worker.

বিএইচ মাহিনী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশে ইসলামের আগমনের ইতিহাস : রাসুল (সা) এর জীবদ্দশায় ইসলাম এদেশে আসে-মাওলানা বি.এইচ.মাহিনী

১৭ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:২৮

ইসলামের আবির্ভাবের বহু পূর্ব থেকেই আরব বণিকগণ বাণিজ্যের জন্য ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী বন্দরগুলোতে যাতায়াত করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এমনকি এ উপমহাদেশের আদি নাম সিন্দ ও হিন্দ পর্যন্ত আরবদের দেওয়া। আরব বণিকরা মালাবার হয়ে চীনের পথে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করতেন। চট্টগ্রাম ও মেঘনা তীরের চাঁদপুর ছিল নদীবন্দর। এখান থেকে তারা চন্দন কাঠ, মসলা, সূতী কাপড় ইত্যাদি ক্রয় করে নিয়ে যেতেন। ইতিহাসে এসেছে হজরত ঈসার (আ.) জন্মের কয়েক হাজার বছর আগেও দক্ষিণ আরবের সাবা কওমের ব্যবসায়ীরা পালতোলা জাহাজে করে এদেশে আসত। ওই সাবা কওমের নামানুসারে নামকরণকৃত শহর সাবাউর (উর অর্থ শহর) সাবাউর অর্থাত্ সাবাদের শহর আজও ঢাকার অদূরে সাভার নামে পরিচিত হয়ে এদেশে সাবা কওমের আগমন স্মৃতি বহন করছে।এছাড়া বাররুল হিন্দ (ইন্ডিয়ার ভূখন্ড) বা বরেন্দ্র ভূমির কথা তো সর্বজনবিদিত। ঈসায়ী ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে পাক-ভারত ও বাংলাদেশ উপমহাদেশের ব্যাপকভাবে প্রথম ইতিহাস লেখন মওলানা মিনহাজুদ্দীন সিরাজ উত্তর বাংলাদেশকে ‘বাররিন্দ’ বলেছেন। যা পরে ‘বরেন্দ্র’ নামে পরিচিত হয়েছে। এ অঞ্চলকে ‘বাররিন্দ্র’ বলার কারণ ছিল এই যে, আরবরা বিশাল সমুদ্র, সাগর, মহাসাগর পাড়ি দিয়ে জহাজে ভেসে ভেসে বহুদিন পর বঙ্গদেশে তদানীন্তন হিন্দের মাটি বা স্থল দেখে অনন্দে নেচে উঠে চিত্কার করে বলত ‘বাররি হিন্দ’ অর্থাত্ হিন্দের মাটি, যা পরবর্তীকাল বাররিন্দ বা বরেন্দ্রতে পরিবর্তিত হয়ে যায়। খৃষ্টপূর্ব ষষ্ট শতাব্দীতে ইরানের সম্রাট সাইরাস (যুলকারনাইন) উপমহাদেশে আর্যদের অন্যতম রাজ্য গান্ধারা জয় করেন। এ সময় তার তাওহীদী জীবন দর্শনের ছটা এ অঞ্চলব্যাপী পরিবাহিত হয়েছিল। যার পরোক্ষ প্রভাব পরবর্তীকালে সংঘটিত ব্রাক্ষণ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছিল বলে ধারণা করা হয়।

ঐতিহাসিকদের মতে উপরোক্ত প্রেক্ষিতে ইসলামের শুরুর দিকেই আরব মুসলিম বণিকদের মাধ্যমেই এদেশে প্রথম ইসলামের আগমন ঘটে। বাণিজ্যের পাশাপাশি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তীর্ণ উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে তারা ইসলাম প্রচার করেছিলেন। যার মধ্যে বাংলাদেশও ছিল। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সঃ এর জীবদ্দশায় হজরতের চাচাত মামা হজরত আবু ওক্কাস উহাইদ বিন মালেকসহ ৪জন সাহাবা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মিয়ানমারের আরাকান এলাকায় ইসলাম প্রচারের জন্য এসেছিলেন। তাঁরা এখান থেকে চীন পর্যন্ত ইসলাম প্রচার করেছিলেন। চীনের ক্যান্টন সমুদ্রতীরে অবস্থিত সাহাবী আবু ওয়াক্কাস মালিক বিন ওহাইবের মসজিদ ও কবর সে সাক্ষ্যই দেয়। অষ্টম-নবম শতাব্দীতে সন্দীপ, রামুসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বণিক ও মুবাল্লিগরা ইসলাম প্রচার করেছিলেন বলে ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায়। তৎকালীন আরব লেখকদের বর্ণনায় সামরূপ (কামরূপ-আসাম) ও রাহমি রাজ্যের কথা এসেছে, যা ৮ম-১২শ শতাব্দীর পাল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজশাহী পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ও কুমিল্লার ময়নামতিতে প্রাথমিক আববাসীয় যুগের মুদ্রা পাওয়া গেছে। সম্প্রতি লালমণিরহাটে (সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের মজদের আড়া গ্রামে) ৬৯ হিজরীতে নির্মিত একটি প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। উপকূলীয় চট্টগ্রাম ( شاطئ الغنغ-গঙ্গা উপকূল) ও নোয়াখালীর বিভিন্ন স্থানের নাম ও ভাষায় আরবী অপভ্রংশের প্রচুর উপস্থিতি এসব নিদর্শনকে আরো সপ্রমাণিত করে। ইসলাম প্রচারের কাজে এদেশে প্রচুরসংখ্যক আরব, ইরানি ও তুর্কি মুসলমান ও সুফি দরবেশের আবির্ভাব ঘটে। তাঁরা ব্যাপকভাবে এদেশে বসতি স্থাপন করেন। তাদের বংশ বৃদ্ধির মাধ্যমেই পরবর্তীকালে বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়। সুতরাং এ কথা পরিষ্কারভাবে বলা যায় যে, এদেশের মুসলমানরা সবাই তফসিলি হিন্দু বংশধর নয়। হিন্দুদের মধ্য থেকে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, তাদেরও অনেকইে ছিলেন রাজ পরিবারের সদস্য। অন্যদিকে, আরবরা এদেশে এসেছেন ব্যবসায়ী হিসেবে আর সে সময় ব্যবসায়ী অর্থাত্ সাওদাগররা ছিলেন সমাজের শ্রেষ্ঠ সম্মানিত ব্যক্তি। চট্টগ্রামে ঐ সময় একটি মুসলিম রাজ্যও স্থাপিত হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। এদিকে ভারত থেকে বাবা রতন আল-হিন্দ অথবা রতন আবদুল্লাহ আল-হিন্দ মদিনায় গিয়ে রাসুল সা. এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করে সাহাবা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন বলে জানা যায়। শুধু তাই নয়, মালাবারের অনুগত চেরদেশের রাজা চেরম রাসুল সাঃ এর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন বলেও জানা যায়।

সুতরাং বলা যায় যে, হিজরী প্রথম দিকেই বাংলায় ইসলামের আগমন ঘটেছিল। তবে ঐ সময় ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এতদঞ্চলে যারা আগমন করেন তাদের বিস্তারিত বর্ননার ক্ষেত্রে ইতিহাস নীরব। পরবর্তীকালে আগতদের মাত্র কয়েকজনের নাম জানা যায় যারা মূলতঃ মধ্যএশিয়া ও পারস্য থেকে এ দেশে আগমন করেন। শাহ মুহাম্মাদ সুলতান বলখী (১০৪৭খৃ.-বগুড়ার মহাস্থান), শাহ মুহাম্মাদ সুলতান রূমী (১০৫৩ খৃ-নেত্রকোনা), বাবা আদম শহীদ (১১১৯খৃ-মুন্সীগঞ্জ), শাহ মখদুম রুপোশ (১২৮৯খৃ.-রাজশাহী), শাহ নিয়ামত উল্লাহ বুতশিকন (১১২০ খৃ. ঢাকা), জালালুদ্দীন তাবরীযী (১২০৫খৃঃ), তাকীউদ্দীন আল-আরাবী (১২৫০খৃঃ-ধামুরাইরহাট,নওগাঁ), শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা (১৩০০ খৃঃ- সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ), শাহজালাল (১৩০৩-সিলেট) প্রমুখ মুবাল্লিগের নাম ইতিহাসে এসেছে যাদের দা‘ওয়াতী তৎপরতায় বর্ণবৈষম্যে অত্যাচারিত ও শাসক নিপীড়নে বিপর্যস্ত হিন্দু ও বৌদ্ধরা ব্যাপকহারে দলে দলে ইসলামের শান্তি ও ন্যাবোর্তা গ্রহণ করেছিল। শুধু তাই নয় এ সময় অনেক শাসক ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ইসলাম প্রচারে ব্যাপক সহযোগিতা করেন। আবার অনেকে ইসলামের বিরুদ্ধাচারণ করে মুবাল্লিগদের বিতাড়িত করার জন্য অস্ত্রধারণ করেন। অনেক মুবাল্লিগ এ সময় তাদের হাতে প্রাণ হারান, যাদের মধ্যে বাবা আদম শহীদের নাম উল্লেখযোগ্য। অনেক সময় মুবাল্লিগ ও নওমুসলিমরাও সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে এসব রাজাদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন। ১৩০৩ সালে বিখ্যাত শাহজালাল ইয়েমেনী (রহঃ) ৩৬০ জন সঙ্গীসহ রণপ্রস্ত্ততি নিয়েই দিল্লি থেকে সিলেটে আগমন করেছিলেন এবং অত্যাচারী রাজা গৌরগোবিন্দকে পরাজিত করেন। তাঁর উন্নত চরিত্র মাধুর্যে মুগ্ধ হয়ে বাংলার হাজার হাজার হিন্দু-বৌদ্ধ ইসলাম গ্রহণ করেছিল।

রাজনৈতিক বিজয় (১২০৪-১৭৫৭): ৭১২ খৃষ্টাব্দে বীরযোদ্ধা মুহাম্মাদ বিন কাসিম কর্তৃক সিন্ধু বিজয় ভারতবর্ষে ইসলামের নবযাত্রা শুরু করে। মুলতানকে কেন্দ্র করে তিনি সিন্ধুতে ইসলামী শাসনব্যবস্থার গোড়াপত্তন করেন। এর সুদীর্ঘ ৩০০ বছর পর মুসলমানরা দ্বিতীয় পর্যায়ে অভিযান শুরু করে। গজনীর সুলতান মাহমূদ ১০০০ খৃ. থেকে শুরু করে ১০২৭ খৃ. পর্যন্ত খাইবার গিরিপথ অতিক্রম করে মোট ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেন এবং প্রত্যেকবারই বিজয় লাভ করেন। তন্মধ্যে ১০২৫-২৭ সালের বিখ্যাত সোমনাথ মন্দির বিজয় ছিল এক দুঃসাহসিক ঘটনা, যা ভারতবর্ষে হিন্দুত্ববাদের প্রতিপত্তি হ্রাস করে দেয় এবং উপমহাদেশে ইসলামের দুয়ার অবারিত করে দেয়। তারপর অতিক্রান্ত হয় আরো ১৫০ বছর। গজনীর ঘোরী বংশের অসম সাহসী বীরপুরুষ মুহাম্মাদ ঘোরী ১১৭৫ সালে ভারতবর্ষে আবার ব্যাপক অভিযান শুরু করেন। অসাধারণ রণকৌশল প্রদর্শন করে একে একে পাঞ্জাব, সিন্ধু জয় করে তিনি ১১৯২ সালে এক বিরাট যুদ্ধের পর উত্তর ভারতের দিল্লী পর্যন্ত বিজয় সম্পন্ন করেন। অতঃপর কুতুবুদ্দীন আইবেক দিল্লীতে প্রায় শতবর্ষ ব্যাপী তুর্কী রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। ১২০৪ সালে বখতিয়ার খিলজী বিহার ও বাংলা জয় করেন।এরপর থেকে এদেশে ৫৬৫ বছরেরও অধিককাল অর্থাত্ ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশে মুসলিম শাসন বহাল থাকে। এ সময়ে প্রায় ৭৬ জন গভর্নর অথবা সুলতান অথবা নাযিম বাংলা শাসন করেন।

ওআইসির ১৪তম সদস্য বাংলাদেশ জনসংখ্যার বিচারে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ৩য় বৃহত্তম এবং আয়তনের দিক থেকে ৩৭তম স্থানে অবস্থান করছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত এই দেশটি স্থলে ৪,২৪৬ কি. মি. সীমান্ত অঞ্চল জুড়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম এবং মায়ানমার দ্বারা পরিবেষ্টিত। দক্ষিণে ৭১৪ কি. মি. দীর্ঘ উপকূল জুড়ে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ৮৯.৭% মুসলিম, হিন্দু ৯.৩%, বৌদ্ধ ০.৭%, খৃষ্টান ০.৩%। এছাড়া পাহাড়ী অঞ্চলে কিছু প্রকৃতিপূজারী রয়েছে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:২৯

বিএইচ মাহিনী বলেছেন: চলবে...

২| ২৮ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:৪৮

ইলিয়াস বিডি বলেছেন: এ উপ মহাদেশে ইসলাম কিভাবে আসল জানতে পড়ুন হযরত তাজউদ্দীন চেরামান পেরুমল (রাজিঃ)-প্রথম ভারতীয় সাহাবী

৩| ১৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৩৯

ইহসান আকসার মাহমুদ বলেছেন: https://www.alislam.org/
http://www.ahmadiyyabangla.org/
সকল মুসলমানের কাছে অনুরোধ, শুধু একবার ঘুরে আসুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.