![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a social worker.
সভ্য সমাজে ‘নাম’ মানুষের একটি পরিচয় বহন করে। শিশুর জন্মের পর তার জন্য একটি সুন্দর ইসলামী ধারার নাম রাখা প্রত্যেক মুসলিম পিতা-মাতার অবশ্য কর্তব্য। এ কারণে তারা নবজাতকের নাম নির্বাচনে পরিচিত আলেম-ওলামাদের বা ইসলামি স্কলারদের শরণাপন্ন হন। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় আমাদের ইসলামি জ্ঞান ও ইসলামি নাম বিষয়ে পড়ালেখা নগন্য হওয়ায় ইসলামি নাম রাখার আগ্রহ থাকার পরও অজ্ঞতাবশত আমরা এমনসব নাম নির্বাচন করে ফেলি যেগুলো প্রকৃত পক্ষে ইসলামি নামের আওতাভুক্ত নয়। শব্দটি আরবী অথবা কুরআনের শব্দ হলেই নামটি ইসলামী হবে এমনটি নাও হতে পারে। কুরআন ও হাদিসে তো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম কাফেরদের নামও উল্লেখ আছে। ইবলিস, ফেরাউন, হামান, কারুন, আবু লাহাব ইত্যাদি নাম তো কুরআনে উল্লেখ আছে, তাই বলে কী এসব নামে নাম বা উপনাম রাখা কখনোই উচিৎ হবে?
ব্যক্তির নাম তার স্বভাব চরিত্রের উপর ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে। প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শাইখ বকর আবু যায়েদ বলেন, ঘটনাক্রমে দেখা যায় ব্যক্তির নামের সাথে তার স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের মিল থাকে। এটাই আল্লাহ তা‘আলার হেকমতের দাবী। যে ব্যক্তির নামের অর্থে চপলতা বা কপটতা রয়েছে তার চরিত্রেও চপলতা ও কপটতা পাওয়া যায়। যার নামের মধ্যে গাম্ভীর্যতা আছে তার চরিত্রে গাম্ভীর্যতা পাওয়া যায়। কুৎসিত নামের অধিকারী লোকের চরিত্রও জঘন্য প্রকৃতির হয়ে থাকে। ভাল নামের অধিকারী ব্যক্তির চরিত্রও ভাল হয়ে থাকে। এটাই স্বাভাবিক।
শিশুর নামের ক্ষেত্রে কিছু ইসলামি নীতিমালা ঃ
নবজাতকের নাম রাখার সময়কালের ব্যাপারে রাসূল স. থেকে তিনটি বর্ণনা রয়েছে। শিশুর জন্মের পরপরই তার নাম রাখা। শিশুর জন্মের তৃতীয় দিন তার নাম রাখা। শিশুর জন্মের সপ্তম দিন তার নাম রাখা। এর থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম এ বিষয়ে মুসলিমদেরকে অবকাশ দিয়েছে। যে কোনোটির উপর আমল করা যেতে পারে। এমনকি কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা কোনো কোনো নবীর নাম তাঁদের জন্মের পূর্বে রেখেছেন মর্মে উল্লেখ আছে। আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে রাসূল স. বলেছেন, ‘তোমাদের নামসমূহের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে, আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) ও আব্দুর রহমান (রহমানের বান্দা)।’ এ নামদ্বয় আল্লাহর প্রিয় হওয়ার কারণ হল, এ নামদ্বয়ে আল্লাহর দাসত্বের স্বীকৃতি রয়েছে। তাছাড়া আল্লাহর সবচেয়ে সুন্দর দুটি নাম এ নামদ্বয়ের সাথে সম্বন্ধিত আছে। একই কারণে আল্লাহর অন্যান্য নামের সাথে আরবী ‘আব্দ’ (বান্দা বা দাস) শব্দটিকে সমন্ধিত করে নাম রাখাও উত্তম।
নবী রাসূলদের নামে নাম রাখাও ভাল। যেহেতু তাঁরা আল্লাহর মনোনীত বান্দা। হাদিসে এসেছে নবী স. বলেছেন-‘তোমরা আমার নামে নাম রাখ। আমার কুনিয়াতে (উপনামে) নাম রেখো না। নবী স. এর কুনিয়ত ছিল আবুল কাসেম। নবী স. তাঁর নিজের সন্তানের নাম রেখেছিলেন ইব্রাহিম। কুরআনে ২৫ জন নবি-রাসুলের নাম বর্ণিত আছে। এর থেকে পছন্দমত যে কোনো নাম শিশুর জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে।
ইসলামে যেসব নাম রাখা হারাম
এক. আল্লাহর নাম নয় এমন কোনো নামের সাথে গোলাম বা আব্দ (বান্দা) শব্দটিকে সম্বন্ধ করে নাম রাখা হারাম। যেমন-আব্দুল ওজ্জা (ওজ্জার উপাসক), আব্দুশ শামস (সূর্যের উপাসক), আব্দুল কামার (চন্দ্রের উপাসক), আব্দুল মোত্তালিব (মোত্তালিবের দাস), আব্দুল কালাম (কথার দাস), আব্দুল কাবা (কাবাগৃহের দাস), আব্দুন নবী (নবীর দাস), গোলাম রসূল (রসূলের দাস), গোলাম নবী (নবীর দাস), আব্দুস শামছ (সূর্যের দাস), আব্দুল কামার (চন্দের দাস), আব্দুল আলী (আলীর দাস), আব্দুল হুসাইন (হোসাইনের দাস), আব্দুল আমির (গর্ভনরের দাস), গোলাম মুহাম্মদ (মুহাম্মদের দাস), গোলাম আবদুল কাদের (আবদুল কাদেরের দাস) গোলাম মহিউদ্দীন (মহিউদ্দীন এর দাস) ইত্যাদি। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় নামের মধ্যে ‘আব্দ’ শব্দটা থাকলেও ডাকার সময় ‘আব্দ’ শব্দটা ছাড়া ব্যক্তিকে ডাকা হয়। যেমন আব্দুর রহমানকে ডাকা হয় রহমান বলে। আব্দুর রহিমকে ডাকা হয় রহিম বলে। এটি ঠিক নয়। আর যদি দ্বৈত শব্দে গঠিত নাম ডাকা ভাষাভাষীদের কাছে কষ্টকর হয় সেক্ষেত্রে অন্য নাম নির্বাচন করাটাই শ্রেয়। এমনকি অনেক সময় আল্লাহর নামকে বিকৃত করে ডাকার প্রবণতাও দেখা যায়। এ বিকৃতির উদ্দেশ্য যদি হয় আল্লাহকে হেয় করা তাহলে ব্যক্তির ঈমান থাকবে না। আর এই উদ্দেশ্য না থাকলেও এটি করা অনুচিত।
দুই: অনুরূপভাবে যেসব নামকে কেউ কেউ আল্লাহর নাম মনে করে ভুল করেন অথচ সেগুলো আল্লাহর নাম নয় সেসব নামের সাথে আব্দ বা দাস শব্দকে সম্বন্ধিত করে নাম রাখাও হারাম। যেমন-আব্দুল মাবুদ (মাবুদ শব্দটি আল্লাহর নাম হিসেবে কুরআন ও হাদীছে আসেনি, বরং আল্লাহর বিশেষণ হিসেবে এসেছে), আব্দুল মাওজুদ (মাওজুদ শব্দটি আল্লাহর নাম হিসেবে কুরআন ও হাদীছে আসেনি)।
তিন: মানুষ যে উপাধির উপযুক্ত নয় অথবা যে নামের মধ্যে মিথ্যাচার রয়েছে অথবা অসার দাবী রয়েছে এমন নাম রাখা হারাম। যেমন-শাহেনশাহ (জগতের বাদশাহ) বা মালিকুল মুলক (রাজাধিরাজ) নাম বা উপাধি হিসেবে নির্বাচন করা। সাইয়্যেদুন নাস (মানবজাতির নেতা) নাম রাখা। একই অর্থবোধক হওয়ার কারণে ‘মহারাজ’ নাম রাখাকেও হারাম বলা হয়েছে।
চার: যে নামগুলো আল্লাহর জন্য ‘খাস’ সেসব নামে কোন মাখলুকের নাম রাখা বা কুনিয়ত রাখা হারাম। যেমন-আল্লাহ, আর-রহমান, আল-হাকাম, আল-খালেক ইত্যাদি। তাই এসব নামে কোন মানুষের নাম রাখা সমীচীন নয়। পক্ষান্তরে আল্লাহর নামসমূহের মধ্যে যেগুলো শুধু আল্লাহর জন্য খাস নয়, বরং সেগুলো আল্লাহর নাম হিসেবেও কুরআন হাদিসে এসেছে এবং মাখলুকের নাম হিসেবেও এসেছে সেসব নাম দিয়ে মাখলুকের নাম রাখা যেতে পারে। যেসব নামের মধ্যে আত্মস্ততি আছে সেসব নাম রাখা মাকরুহ। যেমন, মুবারক (বরকতময়) যেন সে ব্যক্তি নিজে দাবী করছেন যে তিনি বরকতময়, হতে পারে প্রকৃত অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো। অনুরূপভাবে, রাসূল স. এক মহিলা সাহাবীর নাম বারা (পূন্যবতী) থেকে পরিবর্তন করে তার নাম দেন ‘যয়নব’। এবং বলেন, তোমরা আত্মস্তুতি করো না। আল্লাহই জানেন কে পূন্যবান।
দাম্ভিক ও অহংকারী শাসকদের নামে নাম রাখা। যেমন- ফেরাউন, হামান, কারুন, ওয়ালিদ। শয়তানের নামে নাম রাখা। যেমন- ইবলিস, ওয়ালহান, আজদা, খিনজিব, হাব্বাব ইত্যাদি। যে সকল নামের অর্থ মন্দ। মানুষের স্বাভাবিক রুচিবোধ যেসব শব্দকে নাম হিসেবে ঘৃণা করে; ভদ্রতা ও শালীনতার পরিপন্থী কোন শব্দকে নাম বা কুনিয়ত হিসেবে গ্রহণ করা। যেমন, কালব (কুকুর) মুররা (তিক্ত) হারব (যুদ্ধ)। নেককার ব্যক্তিদের নামে নাম রাখাও উত্তম। এর ফলে সংশ্লিষ্ট নামের অধিকারী ব্যক্তির স্বভাবচরিত্র নবজাতকের মাঝে প্রভাব ফেলার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যায়। এ ধরনের আশাবাদ ইসলামে বৈধ। এটাকে ‘তাফাউল’ বলা হয়। নেককার ব্যক্তিদের শীর্ষস্থানে রয়েছেন রাসূল স. এর সাহাবায়ে কেরাম। তারপর তাবেয়িন। তারপর তাবে-তাবেয়িন। এরপর আলেম সমাজ।
আমাদের দেশে শিশুর জন্মের পর নাম রাখা নিয়ে আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা দেখা যায়। দাদা এক নাম রাখলে নানা অন্য একটা নাম পছন্দ করেন। বাবা-মা শিশুকে এক নামে ডাকে। খালারা বা ফুফুরা আবার ভিন্ন নামে ডাকে। এভাবে একটা বিড়ম্বনা প্রায়ই দেখা যায়। এ ব্যাপারে প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শাইখ বাকর আবু যায়দ বলেন, নাম রাখা নিয়ে পিতা-মাতার মাঝে বিরোধ দেখা দিলে শিশুর পিতাই নাম রাখার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।” [সূরা আহযাব ৩৩:৫]
বি.এইচ.মাহিনী
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক-আঞ্চলিক গণ-গ্রন্থাগার, সিংগাড়ী।
অভয়নগর, যশোর।
©somewhere in net ltd.