![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a social worker.
আমরা পৃথিবীর মুখ দেখেছি মা-বাবার মাধ্যমেই। মা-বাবা ছোট শব্দ, কিন্তু এ দুটি শব্দের সাথে কত যে আদর, স্নেহ, ভালোবাসা রয়েছে তা পৃথিবীর কোনো মাপযন্ত্র দিয়ে নির্ণয় করা যাবে না। মা-বাবা কত না কষ্ট করেছেন, না খেয়ে থেকেছেন, অনেক সময় ভালো পোশাকও পরিধান করতে পারেননি, কত না সময় বসে থাকতেন সন্তানের অপোয়। সেই মা বাবা যাদের চলে গিয়েছেন, তারাই বোঝেন মা বাবা কত বড় সম্পদ। যেদিন থেকে মা বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন সেদিন থেকে মনে হয় কী যেন হারিয়ে গেল, তখন বুক কেঁপে ওঠে, চোখ থেকে বৃষ্টির মতো পানি ঝরে, কী শান্তনাই বা তাদেরকে দেয়া যায়। সেই মা বাবা যাদের চলে গিয়েছে তারা কি মা-বাবার জন্য কিছুই করবে না?। এত কষ্ট করে আমাদের কে যে মা-বাবা লালন পালন করেছেন তাদের জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই? অবশ্যই আছে। আলোচ্য প্রবন্ধে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মৃত মা-বাবা জন্য কী ধরনের আমল করা যাবে এবং যে আমলের সওয়াব তাদের নিকট পৌঁছবে তা উল্লেখ করার প্রয়াস পাব। ইন-শা-আল্লাহ।
১. মা বাবার জন্য বেশি বেশি দোয়া করা : মা-বাবা দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর সন্তান মা-বাবার জন্য বেশি বেশি দু’আ করবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দু‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কী দু’আ করবো তাও শিক্ষা দিয়েছেন। আল কুরআনে এসেছে, ‘রাব্বির হামহুমা কামা রব্বায়ানি ছগিরা’ অর্থাৎ “হে আমার রব, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন’’ (সূরা বানি ইসরাঈল : ২৪) পবিত্র কুরআনে আরো বর্ণিত হয়েছে, ‘হে আমাদের রব, রোজ কিয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে মা করে দিন’ (সুরা ইবরাহীম : ৪১)। এছাড়া আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পিতা-মাতার জন্য দু’আ করার বিশেষ নিয়ম শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেন- ‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে মাফ করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি জালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না’ (সূরা নূহ :২৮)। তবে মা-বাবাকেও এমন সন্তান রেখে যেতে হবে যারা তা পিতা-মাতার জন্য দোয়া করতে পারবে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদীসের মধ্যে রাসুল স. বলেছেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩টি আমল বন্ধ হয় না- ১. সদকায়ে জারিয়া ২. এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ৩. এমন নেক সন্তান, যে তার জন্য দু‘আ করে (সহিহ মুসলিম : ৪৩১০)
২. সাদাকায়ে জারিয়াহ প্রদান করা : মা-বাবা বেঁচে থাকতে দান-সাদকাহ করে যেতে পারেননি বা বেঁচে থাকলে আরো দান-সদকাহ করতেন, সেজন্য তাদের পক্ষ থেকে সন্তান দান-সদকাহ করতে পারে। হাদীসে এসেছে, আয়েশা রা. বলেন- ‘জনৈক ব্যক্তি রা. এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমার মা হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেছেন। তাই কোনো অছিয়ত করতে পারেননি। আমার ধারণা তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন তাহলে দান-ছাদকা করতেন। আমি তাঁর পক্ষ থেকে ছাদকা করলে তিনি কি এর ছাওয়াব পাবেন? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন।” (সহীহ মুসলিম : ২৩৭৩) তবে উত্তম হবে, সাদাকায়ে জারিয়া বা প্রবহমান ও চলমান সাদাকা প্রদান করা। যেমন পানির কূপ খনন করা, নলকূপ বসানো, দ্বীনী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, কুরআন শিক্ষার জন্য মক্তব ও প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, স্থায়ী জনকল্যাণমূলক কাজ করা ইত্যাদি।
৩. তাদের পক্ষে সিয়াম পালন : মা-বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় যদি তাদের কোনো মানতের সিয়াম কাযা থাকে, সন্তান তাদের পক্ষ থেকে সিয়াম পালন করলে তাদের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। আয়েশা রা. হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল এমতাবস্থায় যে তার উপর রোজা ওয়াজিব ছিল। তবে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিশগণ রোজা রাখবে’ (সহীহ বুখারী : ১৯৫২)
৪. হজ বা উমরাহ করা : মা-বাবার পক্ষ থেকে হজ বা উমরাহ করলে তা আদায় হবে এবং তারা উপকৃত হবে। ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, ‘জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে আগমণ করে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার মা হজ করার মানত করেছিলেন কিন্তু তিনি হজ সম্পাদন না করেই মারা গেছেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ আদায় করতে পারি? রাসূলুল্লাহ স. বললেন, “তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে হজ কর। তোমার কি ধারণা যদি তোমার মার ওপর ঋণ থাকত তবে কি তুমি তা পরিশোধ করতে না? সুতরাং আল্লাহর জন্য তা আদায় কর। কেননা তুমিই আল্লাহর দাবি পরিশোধ করার অধিক উপযোগী’’ (সহীহ বুখারি : ১৮৫২) তবে মা-বাবার পক্ষ থেকে যে লোক হজ বা ওমরাহ করতে চায় তার জন্য শর্ত হলো আগে নিজের হজ্জ-ওমরাহ করতে হবে।
৫. মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানি করা : মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানি করলে তার ছাওয়াব দ্বারা তারা উপকৃত হবে। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে, আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ স. এমন একটি শিংযুক্ত দুম্বা উপস্থিত করতে নির্দেশ দিলেন, যার পা কালো, চোখের চতুর্দিক কালো এবং পেট কালো। অতঃপর তা কুরবানির জন্য আনা হলো। তখন রাসূলুল্লাহ স. আয়েশাকে রা. বললেন, হে আয়েশা! ছুরি নিয়ে আস, তারপর বললেন, তুমি একটি পাথর নিয়ে তা দ্বারা এটাকে ধারালো কর। তিনি তাই করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ স. ছুরি হাতে নিয়ে দুম্বাটিকে শুইয়ে দিলেন। পশুটি জবেহ্ করার সময় বললেন, বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ তুমি এটি মুহাম্মাদ, তাঁর বংশধর এবং সকল উম্মাতে মুহাম্মাদীর পক্ষ থেকে কবুল কর”। ( সহীহ মুসলিম:৫২০৩)
৬. ওসিয়ত পূর্ণ করা : মা-বাবা শরীয়াহ সম্মত কোনো ওসিয়ত করে গেলে তা পূর্ণ করা সন্তানদের ওপর দায়িত্ব। রাশীদ ইবন সুয়াইদ আসসাকাফী রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ স. কে বললাম হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা একজন দাসমুক্ত করার জন্য ওসিয়ত করে গেছেন। আর আমার নিকট কালো একজন দাসী আছে। রাসূলুল্লাহ স. বললেন, তাকে ডাকো, সে আসল, রাসুল স. তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার রব কে? উত্তরে সে বলল, আমার রব আল্লাহ। আবার প্রশ্ন করলেন আমি কে? উত্তরে সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসূল। তখন রাসূল স. বললেন, তাকে মুক্ত করে দাও, কেন না সে মু’মিনা। (সহীহ ইবন হিববান :১৮৯
৭. মা-বাবার বন্ধুদের সম্মান করা : মা-বাবার বন্ধুদের সাথে ভালো ব্যবহার করা, সম্মান করা, তাদেরকে দেখতে যাওয়া, তাদেরকে হাদিয়া দেয়া। এ বিষয়ে হাদীসে উল্লেখ আছে, আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার রা. আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণনা করেন, একবার মক্কার পথে চলার সময় আব্দুল্লাহ রা. এর এক বেদুঈন এর সাথে দেখা হলে তিনি তাকে সালাম দিলেন এবং তাকে সে গাধায় চড়ালেন যে গাধায় আব্দুল্লাহ রা. উপবিষ্ট ছিলেন এবং তাঁর (আব্দুল্লাহ) মাথায় যে পাগড়িটি পরা ছিল তা তাকে প্রদান করলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার রা. বললেন, তখন আমরা আব্দুল্লাহকে বললাম, আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক! এরা গ্রাম্য মানুষ, সামান্য কিছু পেলেই এরা সন্তুষ্ট হয়ে যায় (এতসব করার কি প্রয়োজন ছিলো?) উত্তরে আব্দুল্লাহ রা. বললেন, তার পিতা, (আমার পিতা) উমার ইবনে খাত্তাব রা. এর বন্ধু ছিলেন। আমি রাসূল স. বলতে শুনেছি “পুত্রের জন্য পিতার বন্ধু-বান্ধবের সাথে ভালো ব্যবহার করা সবচেয়ে বড় কাজ? সওয়াবের কাজ’’ (সহীহ মুসলিম : ৬৬৭৭)। মৃতদের বন্ধুদের সাথে রাসূল স. এর আমলও আমাদেরকে উৎসাহিত করে। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূল স. যখনই কোনো বকরী যবেহ করতেন, তখনই তিনি বলতেন, এর কিছু অংশ খাদীজার বান্ধবীদের নিকট পাঠিয়ে দাও (সহীহ মুসলিম : ৬৪৩১)
©somewhere in net ltd.