নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন শিক্ষক, লেখালেখি, সম্পাদনা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করি। বাংলাদেশ কে ভালবাসি। দেশের জন্য, মানুষের জন্য সামান্য হলেও কিছু করতে চাই।

মা, মাটি ও মানুষকে ভালবাসি। ভালবাসতে চাই।

বিএইচ মাহিনী

I am a social worker.

বিএইচ মাহিনী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মের উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব

০৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:০৩

মানব সমাজে বিশৃঙ্খলা, মারামারি, রাহাজানি, হানাহানি, খুনোখুনি ও অস্থিতিশীলতা চিরতরে দূরীকরণের জন্যে পৃথিবীর প্রতিটি ধর্ম সম্য ও শান্তির বানী নিয়ে এসেছে। যদিও আধুনিক সমাজে ধর্মের অপচর্চা ও ধর্মান্ধতায় বিশ্বে কিছু সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উত্থান লক্ষ্যনীয়। তথাপি, প্রকৃতপক্ষে ধর্ম মানুষকে মনুষত্ব সম্পন্ন ও সৃষ্টির প্রতি সহানুভূতিশীল করে তোলে। ধর্মকে আরবিতে দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা, ইংরেজিতে জবষরমরড়হ বলা হয়ে থাকে। মানুষের জীবন পরিক্রমায় সবচেয়ে পুরনো ও অনিবার্য বিষয় হলো ধর্ম। এ কারনেই প্রাগৈতিহাসিক, ঐতিহাসিক, প্রাচীন ও অধুনিক সমাজ জীবনে কোন-না-কোনভাবে ধর্মের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ধর্মের উৎপত্তি ও উদ্ভব নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ থাকলেও ধর্ম যে সব মানুষেরই হৃদয় তথা আত্মার আহ্বান বা উপলব্ধি সেটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। এখনো পর্যন্ত ধর্মের উৎপত্তি ও উৎস নিয়ে ধর্মতাত্ত্বিক, দার্শনিক, নৃ-তত্ত্ববিদ ও সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতৈক্য হয়নি। ধর্মের উৎপত্তি ও উৎসের মধ্যে রয়েছে ঈশ্বর প্রত্যাদেশবাদ, নৃতাত্ত্বিক ও মনস্তাত্ত্বিক মতবাদ। তুলনামূলক ধর্ম ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ নিয়েও প্রচুর বিতর্ক রয়েছে। নি¤œালোচনায় আমরা ধর্ম, ধর্মের উৎপত্তি-ক্রমবিকাশ ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে সাম্যক আলোচনার প্রয়াস পাব। ইন-শা-আল্লাহ।
ধর্মের পরিচয়-পরিচিতি :
দ্বীন শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে ধর্মের ব্যবহার লক্ষণীয় হলেও বুৎপত্তিগত বিবেচনায় ধর্ম হল ঈশ্বরোপাসনা, বিধি-বিধান, পদ্ধতি, আচার-আচরণ বিষয়ক নির্দেশ ও তত্ত্ব, শাস্ত্র, সুনীতি, সাধনার পথ, স্বভাব ও গুণ। সংস্কৃত ‘ধৃ’ ধাতুর সাথে ‘মন’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ধর্ম শব্দটির উৎপত্তি। ধৃ ধাতুর অর্থ ধারণ করা। তাই ধর্ম বলতে বোঝায় যা কোন কিছুর অস্তিত্বকে ধারণ করে।
ধর্মের ইংরেজি পরিভাষা জবষরমরড়হ. এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘নবষরবভ রহ ধ যরমযবৎ ঁহংববহ পড়হঃৎড়ষষরহম ঢ়ড়বিৎ বংঢ়বপরধষষু রহ ধ ঢ়বৎংড়হধষ এড়ফ. অর্থাৎ ‘অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক শক্তির বিশেষত ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস।’
ধর্মের পারিভাষিক সংজ্ঞায় হিন্দু পন্ডিতেরা বলেছেন, অন্তর ও বাহির মিলে মানুষের জীবনের যে পূর্ণ সামঞ্জস্য তার মধ্যে যা মানুষের জীবনকে ধরে রাখে, সামজিক জীবনের বৃহত্তর ঐক্যের মধ্যে যা মানুষের জীবনকে ধরে রাখে তাকেই ধর্ম বলা যেতে পারে।
পাশ্চাত্য পন্ডিতদের মতে, আত্মিক জীবে বিশ্বাস। আবার কেউ বলেন, পবিত্র বস্তু সম্পর্কিত কতগুলো বিশ্বাস ও প্রথার সমষ্টি।
রিলিজিয়ান বা ধর্ম হচ্ছে, বিশ্বাস ও আচার-আচরণ যা কোন অতি-প্রাকৃতিক সত্তা এবং ক্ষমতার সাথে সম্পৃক্ত।
ধর্ম হলো কোন অতিপ্রাকৃত সত্তায় বিশ্বাস, যে বিশ্বাস মানুষের জীবনের সব অনুভূতি ও ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রন করে।
ধর্মের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ :
আর্থ-সামাজিক অবনতির অনেকগুলো কারণের মধ্যে প্রধান ও অন্যতম কারণ হচ্ছে ‘ধর্ম’(জবষরমরড়হ)। সমাজবিজ্ঞান আর নৃবিজ্ঞানের আধুনিক গবেষণা থেকে জানা যায় আদিম-অসহায় মানুষদের অজ্ঞতা, কল্পনা আর ভয়ভীতি থেকে একদা ধর্মের উৎপত্তি; এবং এর যাত্রা শুরু প্রায় চল্লিশ হাজার বছর আগের মানুষের আরেক পূর্বপ্রজাতি নিয়ান্ডার্থাল প্রজাতি থেকে। ধীরে ধীরে সময়ের পরিক্রমায় মানুষের যেমন ক্রমবিকাশ ঘটেছে, চিন্তাচেতনার নানা স্বরূপ প্রস্ফুটিত হয়েছে বিভিন্ন আঙ্গিকে, বিভিন্ন দর্শনে, তেমনি ধর্মীয় চেতনারও বিস্তৃতি ঘটেছে ভিন্ন ভিন্নরূপে। বিছিন্ন মানুষ বনে-জঙ্গলে হিংস্র পশুর আক্রমণ, বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য সংগ্রহের সুবিধার্থে আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ (বন্যা, ক্ষরা, অধিক বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, দাবানল ইত্যাদি) থেকে রক্ষা পেতে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়েছে, গোষ্ঠীবদ্ধ থেকে সমাজবদ্ধ হয়েছে, সমাজ থেকে রাষ্ট্রীয় কাঠামো তৈরি করেছে; এই সমাজ কাঠামো টিকিয়ে রাখার জন্য নিজেদের মতো করে কিছু নিয়ম-কানুন, রীতি-নীতি তৈরি করেছিল, পরবর্তিতে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রাক-ধর্মীয় চেতনা বিস্তার লাভ করে। দীর্ঘ সময়ে প্রাক-ধর্মীয় চেতনা যেমন আত্মার ধারণা থেকে টোটেমবাদ, টোটেমবাদ থেকে সর্বপ্রাণবাদ, সর্বপ্রাণবাদ থেকে সর্বেশ্বরবাদ, সর্বেশ্বরবাদ থেকে বহুঈশ্বরবাদ-এ মোড় নিয়েছে; তবে এগুলো সবসময় সবজায়গায় কখনো একরৈখিক ছিল না। স্থান-কাল ভেদে পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে পরিবর্তিত হয়েছে, সমন্বিত হয়েছে। ধীরে ধীরে মানুষ বহুঈশ্বরবাদ থেকে আবার একেশ্বরবাদে পৌঁছেছে। মানুষের এই সাংস্কৃতিক বিকাশের ধারা নৃবিজ্ঞান, প্রতœতত্ত্ব, মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণা দ্বারা ইতিমধ্যে প্রমাণিত। প্রতিটি প্রাকৃতিক ঘটনার পেছনে প্রাচীন মানুষ এক বা একাধিক দেবদেবী-ঈশ্বরের উপস্থিতি কেন কল্পনা করতেন, গবেষকরা আজ তার কারণ উদ্ঘাটন করেছেন। সভ্যতার প্রতিটি যুগেই কিছু মানুষ ‘ঈশ্বরে’র অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, মানুষের মনে ‘দেবদেবী-ঈশ্বর’ সৃষ্টির যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং প্রাকৃতিক ঘটনাবলীকে প্রকৃতির নিয়ম দ্বারা ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন; যেমন গ্রিক মনীষী ডেমোক্রিটাস উবসড়পৎরঃঁং (খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০-৩৭০) ‘দেবদেবী-ঈশ্বরের’ অস্তিত্ব সম্পর্কে বলেন : ডযবহ ঃযব সধহ ড়ভ ড়ষফ ঃরসব নবযবষফ ঃযব ফরংধংঃবৎং রহ ঃযব যবধাবহং, ংঁপয ধং ঃযঁহফবৎরহম ধহফ ষরমযঃহরহম, ধহফ ঃযঁহফবৎনড়ষঃং ধহফ পড়ষষরংরড়হ নবঃবিবহ ংঃধৎং, ধহফ বপষরঢ়ংবং ড়ভ ংঁহ ধহফ সড়ড়হ, ঃযবু বিৎব ভৎরমযঃবহবফ, রসধমরহরহম ঃযব মড়ফং ঃড় নব ঃযব পধঁংব ড়ভ ঃযবংব ঃযরহমং. (সেক্টসটাস এমপিরিকাস ঝবীঃঁং ঊসঢ়রৎরপঁং অফা. সধঃয ওঢ.২৪)। তিনি এও বলেন : গধহ যধাব ভধংযরড়হবফ ধহ রসধমব ড়ভ পযধহপব ধং ধহ বীপঁংব ভড়ৎ ঃযবরৎ ড়হি ংঃঁঢ়রফরঃু. ঋড়ৎ পযধহপব ৎধৎবষু পড়হভষরপঃং রিঃয রহঃবষষরমবহঃ, ধহফ সড়ংঃ ঃযরহমং রহ ষরভব পধহ নব ংবঃ রহ ড়ৎফবৎ নু ধহ রহঃবষষরমবহঃ ংযধৎঢ় ংরমযঃবফহবংং. (ডায়োজেনিস লেয়ারটিয়াস ৩২ উরড়মবহবং খধবৎঃরঁং)।
প্রখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ ড. মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ দারায তাঁর ‘আদ-দীন’ গ্রন্থে ৬টি দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্মের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদগুলোকে বিন্যস্ত করেছেন। যেমন-
১. প্রাকৃতিক মতবাদ সমূহ
২. আধ্যাত্মিক মতবাদসমূহ
৩. মনস্তাত্ত্বিক মতবাদসমূহ
৪. চারিত্রিক মতবাদসমূহ
৫. সমাজিক মতবাদ সমূহ
৬. ঐশী মতবাদ সমূহ
মৌলিকভাবে এ মতবাদগুলো দু’ভাগে বিভক্ত :
এক. বিভিন্ন দার্শনিক মতবাদ। এতে রয়েছে-
১. বুদ্ধিবৃত্তিক মতবাদ
২. প্রকৃতিবাদী মতবাদসমূহ
*প্রাকৃতিক স্বাভাবিক উপাদান
*প্রাকৃতিক ভীতিপ্রদ উপাদান
৩. আধ্যাত্মিক মতবাদসমূহ
*সর্বপ্রাণবাদ
*মহাপ্রাণবাদ
*প্রেতাত্মাবাদ
৪. মনস্তাত্বিক মতবাদসমূহ
৫. চারিত্রিক মতবাদ
৬. সামাজিক মতবাদসমূহ
*ট্যাবুবাদ
*টোটেমবাদ
*ইন্দ্রজালবাদ
৭. রাজনৈতিক
দুই. প্রচলিত ধর্মে বিশ্বাসীদের মতবাদ :
১. ইসলাম
২. ইয়াহুদী
৩. খ্রীস্টান
এছাড়াও ধর্মের উৎপত্তি হিশেবে কয়েকটি তত্ত্ব আছে। যেমন-
ক. সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত মতবাদ
খ. মানবীয় বিচার-বুদ্ধি ভিত্তিক মতবাদ
গ. নৃ-তাত্তিক মতবাদ
ঘ. মনস্তাত্ত্বিক মতবাদ
পূর্বেই বলে রাখি-ধর্মের উৎপত্তি হিশেবে ৩ নং তত্ত্বটি অধিক গ্রহণযোগ্য। কেননা-
ক. সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত মতবাদ ঃ এটি মানুষকে বিশ্বাস করতে বলে যে-পৃথিবী সৃষ্টির আদিকাল থেকেই একজন ঈশ্বর আছেন এবং তিনিই ধর্মের প্রবক্তা। তাহলে ধর্মের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ' নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন পড়ে না।
খ. মানবীয় বিচার-বুদ্ধি ভিত্তিক মতবাদ ঃ এ মতবাদ বিশ্বাস করে যে-পৃথিবীর সকল ধর্মের উৎপত্তি হল পুরোহিতদের মাধ্যমে। তাহলেও 'ধর্মের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ'-এর কাঠামো টিকে থাকে না।
গ. মনস্তাত্ত্বিক মতবাদঃ এটি মূলতঃ নৃ-তাত্ত্বিক মতবাদের অন্তর্ভূক্ত।
# নৃ-তাত্তিক মতবাদের ব্যাখ্যা ঃ

ধর্মের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ একদিনে ঘটে নি। 'ক্রমবিকাশ' শব্দটি থেকেই তা বোঝা যায়। ক্রমবিকাশ বলতে বোঝায়- ক্রমশ বিকাশ, ক্রমোন্নতি, একটু একটু করে উন্নতি, অভিব্যক্তি, বিবর্তন, বাড়ষঁঃরড়হ। সুতরাং এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কোন অলৌকিক শক্তির প্রভাবে এটি একদিনে দেখা দেয় নি। বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও ঘটনার মধ্যদিয়ে উদ্ভূত হয়েছে 'ধর্ম' শব্দটির।
# সমাজের বিকাশ ও ধর্মের উৎপত্তি ঃ
প্রাণিজগতের বিবর্তন থেকে সৃষ্টি হয় মানব সভ্যতার। যেটিকে আমরা 'আদিম কাল' বলে থাকি। আদিমকালে মানুষের কোন সমাজ (আধুনিক সমাজ)ছিল না। গোষ্ঠী বা দল (টোটেম) ছিল তাদের সমাজ। এ থেকেই সৃষ্টি হয় প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থার। সমাজে যোগাযোগের মাধ্যমের জন্য কোন নির্দিষ্ট ভাষা ছিল না। বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি ও আওয়াজ ছিল তাদের ভাষা। ভাষার পরবর্তী আবিষ্কার হল ধর্ম।
ক্রমবিকাশ ঃ
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাক্তন অধ্যাপক শৈলেন্দ্র ‘স্বভাব, শক্তি, গুণ’ অর্থাৎ বস্তুর অভ্যন্তরস্থ সেই নীতি যা সে মেনে চলতে বাধ্য থাকে। যেমন আগুনের ধর্ম হলো পোড়ানো, পানির ধর্ম ভেজানো বিশ্বাস এম. এ প্রণীত সংসদ্ বাঙ্গালা অভিধানে ধর্ম শব্দের অর্থ করা হয়েছে- ইত্যাদি। আগুন ও পানির এই গুণ চিরন্তন সত্য। লক্ষ বছর আগেও আগুন পোড়াতো, লক্ষ বছর পরও পোড়াবে। এটাই তার ধর্ম।
তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব ঃ
তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব হলো ধর্ম নিয়ে গবেষণার বিভিন্ন শাখার অন্যতম শাখা। এটা পৃথিবীর ধর্মগুলোর বিভিন্ন আইন-কানুন ও বিধি-বিধানের তুলনামূলক আলোচনা করে। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা ব্যক্তিকে বিভিন্ন ধর্মের অভ্যন্তরীণ মৌলিক দর্শন যথা নৈতিকতা, অধিবিদ্যা ও চিরমুক্তির ধারণা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান দান করে। এটা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান একজন মানুষকে আধ্যাত্মিকতা, ধর্ম ও বিশ্বাস সম্পর্কে গভীর জ্ঞান দান করে।
ধর্মতত্ত্ব ঃ
ধর্মতত্ত্ব শব্দটি দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। ধর্ম ও তত্ত্ব। ধর্ম হল ঈশ্বরোপাসনা, বিধি-বিধান, পদ্ধতি, আচার-আচরণ বিষয়ক নির্দেশ ও তত্ত্ব, শাস্ত্র, সুনীতি, সাধনার পথ, স্বভাব ও গুণ। সংস্কৃত ‘ধৃ’ ধাতুর সাথে ‘মন’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ধর্ম শব্দটির উৎপত্তি। ধৃ ধাতুর অর্থ ধারণ করা। তাই ধর্ম বলতে বোঝায় যা কোন কিছুর অস্তিত্বকে ধারণ করে।
অন্যদিকে তত্ত্ব শব্দটির অর্থ, স্বরূপ বা যথার্থ, বস্তুস্বরূপ, ভাব বা তাৎপর্য, সংবাদ বা খবর, অনুসন্ধান, খোঁজ বা বার্তা, অধ্যয়ন জ্ঞান ইত্যাদি।
সুতরাং ধর্মতত্ত্ব হলো, ইতিহাস স্বীকৃত কোনো ধর্ম থেকে উৎপন্ন ধর্ম-সম্পর্কিত বিশ্বাস বা মতবাদের সুসংহত পদ্ধতি।
ইংরেজিতে ধর্মতত্ত্বের প্রতিশব্দ হচ্ছে, ঞযবড়ষড়মু। যা গ্রীক শব্দ ঞযবড়ং অর্থাৎ ঈশ্বর এবং ষড়মড়ং অর্থাৎ তত্ত্ব শব্দ থেকে উদ্ভুত। সুতরাং ঞযবড়ষড়মু শব্দের অর্থ ঈশ্বরতত্ত্ব। কিন্তু আমরা ঞযবড়ষড়মু বলতে ধর্মতত্ত্বকে বুঝব।
ধর্মতত্ত্ব বলতে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিবর্গের তরফ থেকে ধর্মের স্বরূপ ও আচার অনুষ্ঠানাদিকে বুদ্ধির আলোকে অনুধাবন ও উপলব্ধি করার প্রচেষ্টাকে বুঝায়। ধর্মের স্বরূপ, ক্রিয়া, জীবনে ধর্মীয় চেতনার ভুমিকা ও উপযোগিতা প্রভৃতির আলোচনা ও পর্যালোচনাই ধর্মতত্ত্বের কাজ।
ঐতিহাসিক দিক দিয়ে ধর্মতত্ত্বকে দু শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়।
এক. অপ্রত্যাদেশ মূলক
দুই. প্রত্যাদেশমূলক
তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের আরবি পরিভাষা হলো ‘মুকারানাতুল-আদইয়ান’ এবং ইংরেজিতে ‘কম্পারেটিভ রিলিজিওন’ (ঈড়সঢ়ধৎধঃরাব জবষরমরড়হ).
তুলনামূলক ধর্ম হল প্রচলিত ধর্মগুলোর মধ্যে নিরপেক্ষ ও পর্যাপ্ত তুলনা যার দ্বারা তাদের পারস্পারিক সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য সম্পর্কে তাদের সংযোগ ও সম্বন্ধের বিষয়ে অবগত হওয়া যায়।
মোট কথা, তুলনামূলক ধর্ম হল বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় উৎস, কাঠামো, বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি, মূল্যবোধ, দর্শন অনুসন্ধান করে উদার ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করা এবং ধর্মগুলোকে পাশাপাশি স্থাপন করে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, আচার ও উপাদানের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য বিষয়গুলোকে সুচিন্তিতভাবে চিহ্নিত করে তার যৌক্তিকতা, দাবি ও মূল্যবোধকে যথার্থভাবে তুলো দরে পারস্পারিক সমন্বয় সাধনের প্রয়াস চালোনো।
চার্লস জোশেস অ্যাডামস এর মতানুসারে, বিশ্ব ধর্মগুলোর বিভাজনের ক্ষেত্রে পৃথিবীর ভৌগোলিক বিভাজনের রয়েছে একটি লক্ষ্যণীয় ভূমিকা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.