নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন শিক্ষক, লেখালেখি, সম্পাদনা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করি। বাংলাদেশ কে ভালবাসি। দেশের জন্য, মানুষের জন্য সামান্য হলেও কিছু করতে চাই।

মা, মাটি ও মানুষকে ভালবাসি। ভালবাসতে চাই।

বিএইচ মাহিনী

I am a social worker.

বিএইচ মাহিনী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কৃষি বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনে মুসলিম উম্মাহ

২২ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩৩

আমরা বাংলাদেশের জনগণ কৃষি নির্ভর। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান হওয়া সত্ত্বেও এবং আমাদের পর্যাপ্ত কৃষি জমি ও জনশক্তি থাকার পরও আজও আমাদের খাদ্য আমদানি করে চলতে হচেছ। তাই কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন আবশ্যক। কৃষি বিজ্ঞানের উন্নয়নে মুসলিমদের ইতিহাস স্বর্ণোজ্জ্বল। যুগে যুগে মুসলিম খলিফারা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কৃষির প্রতি যথেষ্ট মনোযোগী ছিলেন। সাহাবায়ে কেরাম চাষাবাদ করেছেন। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ স. নিজে কৃষি কাজ করেছেন। কৃষিকজের প্রশংসাও করেছেন তিনি (স.)। পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াতে কৃষিপ্রসঙ্গ এসেছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘তোমরা যে বীজ বপন করো, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তাকে উৎপন্ন করো না আমি উৎপন্নকারী?’ (সূরা ওয়াকিয়া : ৬৩-৬৪)।
কৃষি কাজের জন্য পানি একটি অপরিহার্য উপাদান। পানি ব্যতীত এ জমিনে কোনো কিছু উৎপন্ন করা সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে তিনি (আল্লাহ) বলেন, ‘তিনিই (আল্লাহ) আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। অতঃপর আমি এর দ্বারা সব ধরনের উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি। অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙুরের বাগান, জয়তুন ও আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যবিহীন (উৎপন্ন করি)। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ করো যখন সেগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্বতার প্রতি লক্ষ করো। নিশ্চয়ই এগুলোতে নিদর্শন রয়েছে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য।’ (সূরা আনআম : ৯৯)।
অন্য আয়াতে বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি আকাশ-জমিন সৃজন করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য বিভিন্ন ফলফলাদি রিজিক হিসেবে উৎপন্ন করেছেন।’ (সূরা ইবরাহিম : ৩৩)।
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে কৃষিজ উৎপন্ন করে জীবিকা নির্বাহে উৎসাহ প্রদান করেছেন। এরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই তোমাদের জন্য জমিনকে নরম করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা তাঁর কাঁধে বিচরণ করো এবং তাঁর দেয়া রিজিক ভক্ষণ করো।’ (সূরা মূলক : ১৫)। হাদিসে জমি চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। ভূমি যেন পতিত অবস্থায় না থাকে, সেজন্য নবীজি (সা.) বলেন, ‘যার কোনো জমি আছে সে যেন তা চাষাবাদ করে। অথবা অন্য ভাইকে দান করে দেয়। (তবুও যেন অনাবাদি না থাকে)।’ (বোখারি : ২৪৯৩)।
সালফে সালেহিন ও খলিফাদের কৃষির প্রতি গুরুত্ব
সালফে সালেহিন তথা সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈন কৃষি উন্নয়নে খুব মনোযোগী ছিলেন। হজরত ওসমান (রা.) কে একবার জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি বৃদ্ধ বয়সে বৃক্ষরোপণ করছেন কেন? তিনি উত্তর দিলেন, সৎকর্মরত অবস্থায় আমার মৃত্যু হওয়া ফাসাদরত অবস্থা থেকে উত্তম। একবার আবু দারদা (রা.) আখরোট গাছ রোপণ করছিলেন। তখন তাকে বলা হলো, আপনি বৃদ্ধ বয়সে এটা কেন লাগাচ্ছেন? অথচ এর ফল পেতে ২০ বছর (অর্থাৎ অনেক) সময় লাগবে। তিনি উত্তর দিলেন, আজর তথা প্রতিদান ব্যতীত আমার অন্য কোনো চাহিদা নেই। (নুজহাতুল আনাম, পৃ : ১৮৫)।
আবদুুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) ধনী হওয়া সত্ত্বেও মাঠে কোদাল নিয়ে নিজ হাতে পানি সেচনের ব্যবস্থা করে দিতেন। তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রা.) সর্বপ্রথম মদিনার জমিতে গম চাষ করেন। এত বিশাল এলাকাজুড়ে চাষাবাদ করেন যে, উৎপন্ন শস্য মদিনাবাসীর এক বছরের খোরাকি হয়ে যেত। ফলে সিরিয়া থেকে খাদ্যশস্য আমদানি নিষ্প্রয়োজন হয়ে পড়ে। (তারিখে দিমাশক : ২৫/১০২)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) চাষাবাদকে আত্মমর্যাদার কর্ম হিসেবে গণ্য করতেন। (আততারাতিব ইদরাকিয়্যাহ : ২/৫১)।
অথচ পরিতাপের বিষয়, আজকের নতুন প্রজন্ম কৃষিকে নিম্নমানের পেশা হিসেবে গণ্য করে। যে কর্মের ওপর ভিত্তি করে মানবসভ্যতা টিকে আছে তাকে অবজ্ঞা করে। ফলে মুসলিম দেশগুলোর ভূমি চাষাবাদের জন্য সবচেয়ে উর্বর হওয়া সত্ত্বেও খাদ্যপণ্যে আমাদের অন্যদের ঘরে হাত পাততে হয়। তাদের থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হচ্ছে। এ পরনির্ভরতা কবে শেষ হবে?
কৃষি উন্নয়নে খলিফা-আমিরদের অবদান
হিজরি প্রথম শতকে ইসলামী সাম্রাজ্য অর্ধজাহানে বিস্তৃত হয়। এরপর থেকে সুদীর্ঘকাল ধরে উমাইয়া, আব্বাসিয়া, উসমানিয়া খলিফারা পৃথিবী শাসন করেছেন। এসব খেলাফতের আমির সর্বদা কৃষি উন্নয়নে সুনজর দিয়েছেন। কীভাবে মুসলিমদের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি করা যায়, সে চিন্তায় বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। কৃষক ও চাষাবাদের সুবিধাকল্পে বহুমুখী প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। খালবিল খনন, সাঁকো ও বাঁধ নির্মাণ, মাজরা তথা পানি নিষ্কাশন পথ পরিষ্কারকরণ, ভূগর্ভ থেকে সহজে পানি উত্তোলন মেশিন স্থাপনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। শুধু বসরা নগরীতেই নাকি ১ লাখ ছোটবড় নালা ছিল। যেগুলো দিয়ে সহজে পানি প্রবাহিত হতো। অনেক নালা খননকারীর নামে নামকরণ করা হতো। খলিফা হারুনুর রশীদের স্ত্রী কর্তৃক খননকৃত ‘নহরে যুবাইদা’ ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে।
এসব কাজে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়। কৃষক-বণিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হজরত সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস (রা.) ‘নহরে সাদ’ খননের প্রস্তুতি নেন। এজন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা হয়। খননকার্য কিছুদূর এগুনোর পর বিশাল এক পাহাড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তখন খননকার্য বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী হাজ্জাজ বিন ইউসুফ আস সাকাফি (তার যুগে) আবার খননকার্য শুরু করেন। তিনি এবার তত্ত্বাবধায়কদের নির্দেশ দিলেন যে, তোমরা দেখো খননকর্মীদের দৈনিক খাবারের মূল্য কত? যদি খাদ্যের ওজন একজন শ্রমিকের খননকৃত পাথরের ওজনের সমপরিমাণও হয় তবুও তোমরা খননকার্য বন্ধ করবে না। (সেই পরিমাণ মূল্য আমি দেব) পরবর্তী সময় বিশাল অর্থ ব্যয় করে নহরটি খনন করা হয়। (মুজামুল বুলদান : ৫/৩২১)।
প্রাকৃতিক নালার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে কৃত্রিম নালা ছিল। যেগুলোর মাধ্যমে কৃষক সহজে ক্ষেত সিঞ্চন করতে পারতেন। মধ্যযুগে খলিফাদের এসব কর্ম আধুনিক পানি-বিশেষজ্ঞদের বিস্ময়ান্বিত করেছে।
কৃষককে সম্মান প্রদান
খলিফারা কৃষককে আর্থিক সচ্ছলতার জন্য অনুদান দিতেন। কৃষি উৎপাদন করতে গিয়ে যেন অর্থ সংকটে না পড়তে হয় এজন্য কর মওকুফ করে দিতেন। অনেক স্থানে শস্য ঘরে তোলার পর কর আদায় করা হতো। হজরত ওমর (রা.) বলতেন, তোমরা কৃষকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। (অর্থাৎ তাদের প্রতি জুলুম করো না)। হজরত আলী (রা.) কর্মচারীদের প্রতি নির্দেশনা প্রেরণ করেন যে, তোমরা এক দিরহাম করের জন্য কৃষককে প্রহার করো না। খলিফা জিয়াদ বিন আবিহ কর্মচারীদের বলেন, তোমরা কৃষকের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। কেননা তারা যতদিন মোটাতাজা থাকবে তোমরাও ততদিন মোটাতাজা থাকতে পারবে। (অর্থাৎ সুখে থাকবে)। (তাসহিলুন নজর, পৃ. ১৫৯)।
অনেক খলিফা কৃষকের ফসল উৎপাদনের আগেই অগ্রিম আর্থিক অনুদান দিতেন। যেন তারা সহজে চাষাবাদ করতে পারে। (মুজামুল বুলদান : ২/২৭৪)। যুদ্ধকালীন মুসলিম সেনাপতি সৈন্যদের কঠোরভাবে নিষেধ করতেন যেন তারা কোনো ফসলি জমিন নষ্ট না করে। ক্ষেতখামারে অগ্নিসংযোগ না করে। একজন কৃষক যে ধর্মেরই হোক না কেন, তাকে যেন আক্রমণ না করা হয়।
খলিফা-আমিরদের এমন সহযোগিতায় কৃষক আনন্দচিত্তে চাষাবাদ করত। খলিফারা অনুভব করতে পেরেছিলেন যে, কৃষকের উৎপাদন যত বৃদ্ধি পাবে দেশের অর্থনীতি তত চাঙ্গা হবে। বায়তুল মালে বেশি অর্থভা-ার সঞ্চয় হবে। পূর্বসূরিদের কৃষিকর্মে এত মনোযোগিতার ফলশ্রুতিতে আমরা দেখতে পাই, তাদের দৈনন্দিন খাবারের জোগান নিজেরাই উৎপাদন করতেন। মুসলিম বিশ্বের খাদ্যচাহিদা নিজেদের ভূমিতেই যথেষ্ট ছিল। জনৈক ইতিহাসবিদ বলেন, ‘তদানীন্তন মুসলিম বিশ্ব বাইরে থেকে খাদ্যসামগ্রী আমদানি করেছিল, এ তথ্য আমি কোথায় খুঁজে পাইনি।’ (আহমদ আমিন, জহরুল ইসলাম : ২/২৪৬)।
এছাড়াও ততকালীন মুসলিম প-িতরা চাষাবাদ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই লিপিবদ্ধ করেছেন। মানুষের আগ্রহের কারণে এটি একটি স্বতন্ত্র বিদ্যায় পরিণত হয়, যা ‘ইলমুজ জিরাআহ’ (কৃষিবিদ্যা) নামে পরিচিতি লাভ করে। মাটির প্রকারভেদ, শস্যবীজ উৎপাদন পদ্ধতি, ভূগর্ভস্থ থেকে পানি উৎসারণ পদ্ধতি, বিভিন্ন শস্য, শাকসবজি ও ভেষজ ফলের পরিচয়সহ চাষাবাদের নিয়মকানুন নিয়ে প্রচুর গ্রন্থ রচিত হয়। উমাইয়া-আব্বাসি যুগের গ্রন্থভা-ার এর সাক্ষী।
এই ছিল আমাদের পূর্বসূরিদের সোনালি যুগে সোনালি ফসল উৎপাদনে অবিস্মরণীয় অবদান। আল্লাহর দেয়া জমিন থেকে নিজেরাই নিজেদের খাদ্যসামগ্রী উৎপাদন করতেন। অমসুলিমদের ঘরে হাত পাততে হতো না। কিন্তু আমরা সেসব ভুলে গেছি। আধুনিক প্রযুক্তি যত মহাকাশে পৌঁছুক, শিল্পকারখানা যত উন্নত হোক, আবাসন ব্যবস্থা ও ঘরের আসবাবপত্র যতই সুন্দর হোক না কেন, দৈনিক তিনবেলা পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য কিন্তু ঠিকই একমুঠো ভাতের প্রয়োজন হবে। জমিনের উৎপন্ন খোরাকেই কিন্তু আমাদের জীবন টিকে আছে। তাই চাষাবাদকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে তো অতি জরুরি বিষয়।
সুতরাং এ দাবি অতিরঞ্জন নয় যে, আজকের পশ্চিমারা আধুনিক কৃষিবিদ্যাকে মধ্যযুগের মুসলিম প-িতদের লিখিত বই থেকেই ধার করে নব আকৃতিতে প্রকাশ করেছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.