![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হেলায় হেলায় দিন বয়ে যায়, ঘিরে নিলো কালে। আর কি হবে মানব জনম, বসব সাধু মেলে ।
কয়েকদিন ধরে যখন ই ঘুমাতে যাই খাটের ভেতরে কুরকুর টাইপ শব্দ হয়।যেন কেউ দাঁত দিয়ে খাট কেটে কেটে খাচ্ছে।সারাদিন কোন শব্দ নেই ঘুমাতে গেলেই কুরকুর কুরকুর।প্রথম কয়দিন অসহ্য লাগতো,মনে হতো খাট কেটে দুখন্ড করে শালার বেটাকে এক থাপ্পড় দিয়ে অজ্ঞান করে দিয়ে সামনে বসে থাকি।জ্ঞান ফিরলেই আরেক থাপ্পড়। আবার জ্ঞান ফিরলে আবার থাপ্পড়। যতক্ষণ ব্যাটা কান ধরে না বলে, "ভাই ভুল হয়ে গেছে।আজকের পর থেকে আপনার ঘুমের সময় কোন কাঠ খাওয়া খাওয়ি চলবে না।আপনি ঘুমানোর আগেই আমি খেয়ে শুয়ে পড়বো।ও ভাই আপনাকে একটা কথা তো বলা ই হয় নি।আপনার খাটের ভেতর না আমি একটা ড্রয়িংরুম করেছি।দোস্ত বন্ধু রা মিলে চা বিড়ি খাই আর কি।আপনি কিছু মনে করেন নি তো?" ততক্ষণ চড় থেরাপি চলতে থাকবে।
কোন ঝামেলা যখন অবিরাম চলতে থাকে মানুষ তার সাথে খাপখাইয়ে নেয়।একে সায়েন্স এর ভাষায় বলে অভিযোজন ক্ষমতা। আর ম্যাসে থাকা ছেলেমেয়েদের অভিযোজন ক্ষমতা প্রায় ইনফিনিটি পর্যায়ের।এদের যদি বলা হয় কাল থেকে ম্যাসে খাওয়া বন্ধ এরা একটা হাই তুলে যেয়ে আবার শুয়ে পড়বে।যেন এটা কোন ব্যাপার ই না।তেমনি আমার ও এখন সয়ে গেছে।যেন পোকার কুরকুরানি না শুনলে ঘুমই হয় না।
ঘুম থেকে উঠলাম বিকাল ৫ টায়।মেস লাইফের এই একটাই সুবিধে সারাদিন কেন ২/৩ দিন একটানা না ঘুমিয়ে থাকলেও কেউ কিছু মনে করবে না আবার ঘুমালেও কেউ কিছু মনে করবে না।বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ব্রাশ করছি আর ইলিয়াস সাহেবের কথা মনে করছি লোকটার বৃষ্টি সম্পর্কে প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে ।শনিতে সাত মঙ্গলে তিন আর সব দিন দিন। মানে শনিবার শুরু হলে হবে ৭ দিন আর মঙ্গলে শুরু হলে ৩ দিন অন্য দিন গুলোতে শুরু হলে দিনের দিন শেষ হয়ে যাবে।আচ্ছা আজকে কি বার? বহুদিন দিন তারিখের হিসেব রাখা হয় না।আজ যদি শনিবার হয়ে থাকে তাহলে তো খবর আছে। জুম্মার আগ পর্যন্ত বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।আমার ঐতিহাসিক আমলের ছাতাটা কয়েকদিন হলো খুঁজে পাচ্ছি না।এ ছাতায় প্রায় গোটা ২৫ ছোট আর ৩ টা বড় বড় ছিদ্র আছে।এই বস্তু মাথায় দিয়ে বাইরে যাওয়া ও লজ্জাজনক ব্যাপার।তবুও স্বান্তনা নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো।এই কথা একবার রাফিদকে বলে বিপদে পড়েছিলাম।আমরা তখন ফার্স্ট ইয়ার এর স্টুডেন্ট। সবাই কম বেশি নতুন নতুন প্রেম করছে।সাধারণত ফার্স্ট ইয়ার মাস খানেক যেতে না যেতেই বর্ষাকাল চলে আসে।কলেজের ক্লাস শেষ করে সবাই বের হবো হবো ভাব এমন সময় তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।রাফিদ বললো এখন বাসায় যাবি কিভাবে?
ভিজতে ভিজতে।
তুই না প্রতিদিন ছাতা আনিস।আজ আনিস নাই কেন?
কে বললো আনি নাই?
উফ বেঁচে গেছি চল তুই আমি আর ও যাবো নে একসাথে।
ও টা কে?
রাফিদ চোরের মত গলায় বললো আছে।
চল।
বারান্দা পর্যন্ত আসতেই বললো, একটা উপকার করতে পারবি?
কি?
ছাতাটা আজকের দিনের জন্য একটু দেনা ও আর আমি বেরিয়ে যাই।রাস্তায় কেউ থাকবে বলে মনে হয় না।এরকম সুযোগ আর কবে পাবো ঠিক নেই।
ভাইজান বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়ায় দাঁড়ায় কি ভাবেন?
তাকিয়ে দেখি রউফ ভাই আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।ইচ্ছা করতেছে হালার ব্যাটারে বারান্দা থেকে লত্থি দিয়ে ফালায় দেই।কিন্তু পারলাম না।এমনিতে রউফ ভাই অত্যন্ত মাই ডিয়ার টাইপ লোক।কিন্তু সময়ে অসময়ে হুটহাট করে কথা বলার অভ্যাসটা খুব খারাপ।
ভাইজান
হুঁ
কি ভাবতেছিলেন?
কিছুই না।
চুপচাপ ছিলেন যে।
এমনি।
ভাইজানের কি মন খারাপ?
না।
শরীর টরীর ভালো ভাইজান?
হুঁ
ভাইজান একটা দরকারে পড়ে আসছিলাম।
বলেন।
আপনার কাছে শ দুই টাকা হবে ভাইজান।খুবই উপকৃত হতাম।পরশুর মাঝে ফেরত দিয়ে দেবো।আমার ছেলে টাকা পাঠাবে কাল।তবুও একদিন বেশি সময় নিয়ে নিলাম যদি লেট হয়ে যায়।দিনকাল তো ভালো না ভাইজান।কি বলেন?
রউফ ভাই এই পর্যন্ত আমার কাছ থেকে কয়েক হাজার টাকা ধার নিয়েছেন পরশু দিন ছেলে টাকা পাঠাবে বলে।ছেলে টাকা ও পাঠায় না,তিনি আর আমার টাকা ও দেন না।উনার ছেলে ঢাকায় কি একটা কোম্পানিতে চাকরী করে।প্রচুর টাকা পয়সা বাড়িও নাকি আছে ওখানে,কিন্তু বাবাকে নিয়ে যায় না বাসায়।কি কারণে কে জানে।লোকটা কোথাকার যেন ক্যাশিয়ার ছিলেন।চুরির দায়ে তার চাকরী চলে যায়। এ ব্যাপারে কখনো তিনি কোন কথা বলেন না।
টেবলের ড্রয়ারে আছে দেখেন।
রউফ ভাই টাকাটা এনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন।ভাইজান।
জ্বি
আপনার ড্রয়ার থেকে একটা সিগারেট নিয়েছি কিন্তু।
ঠিক আছে।
রউফ ভাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন।প্রতিবার ই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন টাকা নেওয়ার পর।
রউফ সাহেব
জ্বি ভাইজান।
আজকে কি বার?
শনিবার ভাইজান।
আর তারিখ?
৯।কেন ভাইজান?
না এমনি।
রুমুর পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ৫ তারিখে আর আমার যাওয়ার কথা ছিলো ৬ তারিখে।মেয়েটার বাবা মা আমাকে মোটেও পচ্ছন্দ করে বলে মনে হয় না।নিজের মেয়ের জন্য দুহাজার টাকা দিয়ে মাস্টার রেখে সেই মাস্টার যদি মেয়েকে পড়ানো বাদ দিয়ে দঁড়ির ম্যাজিক শেখায়,কোন বাবা মা ই তা পচ্ছন্দ করবে না।মেয়ের ভালো লাগে কিন্তু মায়ের না।মেয়ের ঠিক যতটা ভালো লাগে মায়ের ততটাই খারাপ লাগে।থিউরি অফ ইকুয়ালিটি।একজন যতটা কষ্ট পাবে অন্যজন ঠিক ততটাই আনন্দ পাবে।এই কষ্টের জন্যই হয়ত গত মাসের টাকাটা ও দেয় নি।
প্রতি মাসের শুরুতে এসে মুখ শুকনো করে বলে
বাবা তোমার আঙ্কেল তো এখনো বেতন পায় নি।তুমি কয়দিন পর নাও টাকাটা।৯/১০ তারিখের মধ্যে টাকাটা দিয়ে দেয় কিন্তু গত মাসে দেয় নি।আজ যেয়ে একসাথে দুই মাসের টাকা নিতে হবে।কিন্তু বৃষ্টির যা বেগ,কে জানে কখন থামবে।ইলিয়াস সাহেবের থিউরি অনুসারে শুক্রবার থামার কথা।কিন্তু থেমে গেলো ২ ঘন্টা পর।আস্তে আস্তে রুমুর বাড়ি যেয়ে দেখলাম তাকে চশমা পরা এক ছেলে পড়াচ্ছে।রুমুর আম্মু এসে বললো বাবা ছেলেটা ওর মামা হয়।মেয়েটার খুব শখ ওর মামার কাছে পড়ার।তাই আর কি।তোমার তো ফোন ও নেই যে তোমাকে জানাবো।বাবা বোসো চা খাও।
আন্টি গত মাসের টাকাটা।
দাঁড়াও দেখছি।
আমি না দাঁড়িয়ে বসে আছি।তিনি মিথ্যা বলছেন, ছেলেটা রুমুর মামা না।মামা হলে বলতেন আমার ভাই।ছেলেটা বা ওর মামা টাইপ শব্দ কখনো কেউ নিজের ভাই সম্পর্কে ব্যাবহার করে না। কিছুক্ষণ পর এসে ১০০০ টাকা দিয়ে বললেন বাবা তোমার আঙ্কেলের হাত এ মাসে একদম ফাঁকা যাচ্ছে তুমি কিছু মনে করো না।চা খাবে?
হুঁ।
বোসো আমি নিয়ে আসছি।
উনি চা বানাতে গেলেই আমি বেরিয়ে এলাম।বাইরে মেঘ গুড় গুড় করছে।মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকে চারিপাশ আলোকিত করছে।হঠাত সব বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গেলো।কোন গাছের পাতাও নড়ছে না।আমি টাকা টা হাতের মধ্যে ভাঁজ করে ধরে আছি।চোখের পলকেই বৃষ্টি নেমে গেলো।আর সাথে ঝড়ো বাতাস।যেন উড়িয়ে নিয়ে ফেলবে।বিদ্যুৎ চমকাতেই আছে।আমি কাক ভেজা ভিজে মেসে এসে হাজির হলাম।কিন্তু এত কসরত করার পরও টাকাটা বাঁচাতে পারলাম না।নোট টা ৩/৪ খন্ড হয়ে গেছে। টাকাটা কাল বাড়িতে পাঠাতে হতো।মায়ের অসুখ।অনেক দিন হলো বাড়ি যাওয়া হয় না।বাড়ি যেতে গেলে প্রচুর খরচ।ওর থেকে না যেয়ে টাকাটা পাঠিয়ে দিলে কাজে লাগবে। বৃষ্টিটা আবার থেমে গেছে।মেসের বারান্দায় বসে আছি।ভুলেই গেছিলাম আজ জোঁছনা।জোঁছনা রাতে ঘরে থাকতে নেই।আমি বেরিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।অপলাদের বাসা থেকে একবার ঘুরে আসতে হবে।আজ ওর বিয়ে।আমি গেলে ও আমার সাথে পালিয়ে আসবে বলেছিল,আর না গেলে সাদে উঠে নায়িকাদের মতো লাফ দিবে ।এখন রাত ১১ টা।ওদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সত্যি কি মেয়েটা লাফ দিয়েছে সাদ থেকে? দিলে তাকে কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে? সে কি এখন আইসিইউতে? নাকি নরমাল কেবিনে? নাকি ব্যাগ গুছিয়ে এখনো বসে আছে পালিয়ে যাবে বলে? কে জানে।এতসব জটিল বিষয় নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করছে না।আমি আবার রাস্তায় ফিরে এলাম।রাস্তা ই আমার জন্য বেস্ট।
০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:১১
ভুল বানান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই কষ্ট করে পড়ার জন্য ।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৫৮
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: মজার হহেও কিন্তু বাস্তবই।।