![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সব সময় নিজের ইচ্ছা কে প্রাধান্য দেই। আমি স্বাধীনতা চাই, স্বাধীন ভাবে বাঁচতে চাই। স্বাধীন ভাবে উড়তে চাই, স্বাধীন ভাবে ঘুরতে চাই। হোঁচট খেয়ে পড়তে চাই, সেখান থেকে শিখতে চাই।
চন্দ্রদ্বীপ। বরিশালের পূর্বনাম। এটি ছিল তৎকালীন বঙ্গ প্রদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল। বরিশাল কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত। উত্তরে শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ, পশ্চিমে গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি, দক্ষিণে বরগুনা ও পটুয়াখালী এবং পূর্বে ভোলা ও লক্ষীপুর।
অগ্নিযুগের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন-সংগ্রামে বরিশালের অবদান নানাদিক দিয়ে শ্রেষ্টতম। এখানে জন্ম হয়েছে অসংখ্য জগৎ বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও রাজনীতিবিদের। এই অঞ্চলের কবিদের মধ্যে রূপসী বাংলার কবি জীবনান্দ দাশের পরে যার নাম চলে আসে তিনি হলেন “কবি কামিনী রায়”।
পাছে লোকে কিছু বলে
কামিনী রায়
করিতে পারিনা কাজ, সদা ভয়, সদা লাজ,
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
আড়ালে আড়ালে থাকি, নীরবে আপনা ঢাকি
সম্মুখে চরণ নাহি চলে ,
পাছে লোকে কিছু বলে।
কাঁদে প্রাণ যবে, আঁখি সযতনে শুষ্ক রাখি
নির্মল নয়নের জলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
একটি স্নেহের কথা প্রশমিত পারে ব্যথা
চলে যায় উপেক্ষার ছলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
মহৎ উদ্দেশ্য যবে একসাথে মিলে সবে,
পারিনা মিলিতে সেই দরে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
বিধাতা দিয়েছে প্রাণ, থাকি সদা ম্রিয়মান,
শক্তি মরে ভীতির কবলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
কবি কামিনী রায় জন্মেছিলেন সিপাহী বিপ্লবের সাত বছর পরে। ১৮৬৪ সালের ১২ অক্টোবর। পূর্ববঙ্গের বাকেরগঞ্জের বাসান্ডা গ্রামে (বর্তমানের বরিশাল)। বাবা চন্ডীচরণ সেন। তিনি ছিলেন একজন খ্যতিমান গ্রন্থকার। মা বামাসুন্দরী দেবী।
কামিনী রায়ের পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। বিশেষ করে মা-বাবার কাছে। মায়ের কাছে তিনি বর্ণপরিচয় ১ম ভাগ ও দ্বিতীয় ভাগ শিশুশিক্ষা শেষ করেন। স্কুলে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরে “আপার প্রাইমারী” পরীক্ষা দিয়ে তিনি প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। ১৪ বছর বয়সে মাইনর পরীক্ষা দিয়ে তিনি প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। মাত্র ৮ বছর বয়স থেকে তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন। তিনি ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বেথুন স্কুল হতে এন্ট্রান্স (মাধ্যমিক) পরীক্ষা ও ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে ফার্স্ট আর্টস (উচ্চ মাধ্যমিক সমমানের) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বেথুন কলেজ হতে তিনি ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রথম নারী হিসেবে সংস্কৃত ভাষায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি বেথুন কলেজেই শিক্ষকতা শুরু করেন।
১৮৯৪ সালে কেদারনাথ রায়ের সাথে কামিনী রায়ের বিয়ে হয়। তাদের পরিবারে ৩ টি সন্তানের জন্ম হয়। ১৯০০ সালে তাদের প্রথম সন্তানটি মারা যায়। তার নাম জানা যায়নি। ১৯০৩ সালে কামিনী রায়ের বোন প্রম কুসুম মারা যায়। ১৯০৬ সালে তার ভাই ও বাবা মারা যায়। ১৯০৮ সালে তার স্বামী কেদারনাথ রায় ঘোড়ায় গাড়ী উল্টে গিয়ে আঘাত পেয় মারা যান। এরপর তার সন্তান লীলা ও অশোকের মৃত্যু হয়। অবশেষে সবাইকে হারিয়ে তিনি একেবারে নি:স্ব হয়ে পড়েন। ভেঙে পড়েন তিনি। সব হারানোর ব্যথা তার রচনায় ফুটে ওঠে।
তৎকালীন সময়ে মেয়েদের শিক্ষাও বিরল ঘটনা ছিল, সেই সময়ে কামিনী রায় নারীবাদে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন। লিখেছিলেন সকল অসঙ্গতির বিরুদ্ধে ও নারী জাগরণের পক্ষে। তিনি ব্যক্তিগত বেদনা, দেশ প্রেম, জীবন চিন্তার নানাভাব বিভিন্ন রূপকল্পনা ও প্রতিমার মধ্য দিয়ে তাঁর কাব্যে নতুন রূপে প্রকাশ করেছেন। মানবতাবোধ এবং নৈতিকতা নিয়েও তিনি লিখেছেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সংস্কৃত সাহিত্য দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।
কামিনী রায়ের প্রথম কাব্য গ্রন্থ "আলো ও ছায়া"। ১৮৯৯ সালে প্রকাশিত হয়। এই কবিতার বই প্রকাশের সাথে সাথেই তা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ ছাড়া “মহাশ্বেতা, দ্বীপ ও ধূপ "মাল্য ও নির্মাল্য"-১৯১৩,"অশোক সংগীত"-১৯১৪," জীবন পথে"-১৯৩০, শিশুদের জন্য লিখিত কবিতা "পৌরাণিকী"-১৮৯৭ প্রকাশিত হয়।
তাঁর "চন্দ্রাতীরের জাগরণ" নাট্যকাব্যটি বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছিল।
কামিনী রায় সব সময় শিক্ষাধ্যানীদের ভালবাসতেন। উৎসাহ দিতেন, সহযোগীতা করতেন অন্য সাহিত্যিকদের। ১৯২৩ সালে কবি সুফিয়া কামালকে লেখালেখিতে উৎসাহ দেন এবং মনোনিবেশ করতে বলেন। তিনি নারী শ্রম তদন্ত কমিশনের সদস্য (১৯২২-২৩) ছিলেন। তিনি ১৯৩০ সালে বঙ্গীয় লিটারারি কনফারেন্সের সভাপতি ও ১৯৩২-৩৩ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। কবি কামিনী রায়ের স্মরণে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় “জগত্তারিনী পুরস্কার” প্রবর্তন করেছে।
প্রখ্যাত বাঙালি কবি কামিনী রায় ১৯৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের হাজারীবাগে মৃত্যুবরণ করেন। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ করে নারী কল্যাণে তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। কামিনী রায় ভারতের প্রথম মহিলা অনার্স গ্র্যাজুয়েট।
সূত্র: শেখ রফিক (বিপ্লবীদের কথা)।
©somewhere in net ltd.