মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় তারা UY Scuti

২৯ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৪৩

আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় কি আছে? সুর্য? আমাদের খালি চোখে তাই দেখা যায়। যদি বলি এই সুর্যও একটি জিনিসের কাছে তুচ্ছ? কি অবাক হচ্ছেন? হ্যা অবাক হবারই কথা। সুর্য আমাদের কাছে অনেক বড় মনে হয় কারন এটি আমাদের অনেক কাছে অবস্থান করে। আমরা বৃহস্পতি গ্রহ সম্পর্কে জানি, এইটিও আমাদের সুর্যের থেকে ১০ গুন বড়। কিন্তু তা আমাদের দৃষ্টিসীমা থেকে অনেক দূরে। রাতের সৈন্দর্যমন্ডিত আকাশের তারাগুলোও আমাদের সূর্যের থেকে অনেক গুন বড়। এমনই একটি তারা UY Scuti যা মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় তারা নামেই পরিচিত। আজ আমরা এই তারা সম্পর্কে জানবো।

UY scuti Constellation Scutum এবং মিল্কিওয়ে galaxy এর মাঝে অবস্থান করে। আপনি যদি মেঘমুক্ত আকাশে একটি ৪ ইঞ্চি টেলিস্কোপের সাহায্যে Eagle Nebula র উত্তর-পূর্বে লক্ষ্য করেন তাহলে একটি ঊজ্জ্বল তারা দেখতে পাবেন। এটিই UY scuti । ১৮৬০ সালে জার্মানির মহাকাশবিদরা Bonn Observatory তে এটিকে প্রথম আবিষ্কার করেন। কিন্তু এতো আগে আবিষ্কার হলেও তা নথিভুক্ত হয় ২০১২ সালে। এটি আমদের সূর্যের থেকে ৭-১০ গুন ভারী এবং এর ব্যাসার্ধ ১.১৮৮৩ বিলিয়ন কিলোমিটার যা আমাদের সূর্যের চেয়ে ১৭০০ গুন বেশি। এর বিস্তৃতৃতির পরিমাণ ২.৩৭৬৫ বিলিয়ন কিলোমিটার। যদি কোন বস্তু আলোর গতিতে অর্থাৎ ৩ লক্ষ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ডে আমাদের সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিন করতে চায় তাহলে তার সময় লাগবে ১৪.৫ সেকেন্ড কিন্তু যদি তা UY Scuti এর চারিদিকে প্রদক্ষিন করে তাহলে ৭ ঘন্টা সময় লাগবে । যদি পৃথিবীর নিজস্ব গতিতে UY scuti র চারিদিকে একবার প্রদক্ষিন করে তাহলে ১০০০০ বছর সময় লেগে যাবে। এটি আমাদের পৃথিবী থেকে ৯৫০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এটি তার উজ্জ্বলতা পরিবর্তন করে, তবে সামান্য একটি বাইনোকুলারের সাহায্যে এটি পৃথিবী থেকে দেখা যায় কারণ এটি একটি স্পন্দনকারী তারা। যদি এর উজ্জ্বলতার পরিমাপ করি তাহলে তা আমাদের সূর্যের তুলনায় ৪ লক্ষ গুন বেশি উজ্জ্বল। এর উজ্জ্বলতা অনেক বেশি হলেও এটি সব তারার মধ্যে ৯ম উজ্জ্বল তারা। এর কারন এটি আমাদের পৃথিবী থেকে অনেক বেশি দূরত্বে অবস্থান করছে। এই তারাকে কেন্দ্র করে কোন গ্রহ প্রদক্ষীন করছে কিনা তা জানা যায়নি। তবে যদি কোন গ্রহ প্রদক্ষিন করে তাহলে তা প্রচন্ড তাপমাত্রার জন্য বসবাসের অযোগ্য হবে । এই স্পন্দনকারী তারার স্পন্দনের সময়কাল ৭৪০ দিন। এই সময় পর তার স্পন্দন থেমে যায় এবং নতুনভাবে আগের চেয়ে সম্পুর্নরুপে অন্যভাবে শুরু হয়। এই স্পন্দনের জন্য তার আসল আকারের সম্পূর্ন ধারনা পাওয়া যায় না। আবিষ্কারের সময় তার আকার ধারনা করতে পারেনি মহকাশবিদরা। ২০১২ সালে চিলির Atacama মরুভূমিতে একটি টেলিষ্কোপ স্থাপন করে তার দ্বারা এর আকার নির্ধারন করা হয়। এর আকার নির্ধারন করার পর তা আগের আবিষ্কৃত সব তারা যেমন Betelgeuse, VY Canis Major, and NML Cygni এদের রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়। মহাকাশবিদদের ধারনা অনুযায়ী এর কাছাকাছি কোন গ্রহে প্রান থাকা সম্ভব না। কারন এর তাপমাত্রা ৩৩৬৫ কেলভিন বা ৩০৯১.৮৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

২০১৯ সালের একটি গবেষনায় দেখা যায় এই তারা তার তাপমাত্রার পরিবর্তনের জন্য তার নিজস্ব আকার থেকে কিছুটা ছোট হয়ে গেছে এবং এর ব্যাসার্ধ্যও অনেকটা ছোট হয়ে গেছে। তার পরেও এটী বিশালাকার কিন্তু সবচেয়ে বড় তারা নেই। V450 Persei, KW Sagittarrii, U Lacertae, HV 2331 এই তারাগুলোর ব্যাসার্ধ্য UY scuti এর সমান এবং এর ভর হ্রাস পাওয়ার জন্য এটি এখন R136a1 এর সমান। যদি আমরা UY Scuti কে আমাদের সৌরজগতের সূর্যের স্থানে স্থাপন করি তাহলে তা শনি গ্রহ পর্যন্ত প্রসারিত হবে। আমাদের পৃথিবির সাথে যদি তুলনা করি তাহলে ৪৮৯ ট্রিলিয়ন পৃথিবী এর মধ্যে স্থাপন করা যাবে। এর অবস্থান বিবেচনা করে বলা যায় যে যেহেতু এটি Milky way Galaxy এর অনেকতা গভীরে অবস্থান করে তাই এটি Metal rich Star । অর্থাৎ এর মধ্যে লৌহজাত দ্রব্যের প্রাচুর্যতা আছে। Stellar Evolution Theory অনুযায়ী UY Scuti এখন Helium গলানো শুরু করেছে এবং তার কেন্দ্রে Hydrogen গলাচ্ছে। এভাবে ভারী দ্রব্য গলানো শেষে তা Iron তৈরী করা শুরু করবে এবং এভাবে এটী একটি SuperNova তে রূপান্তরিত হবে। অনেকসময় এসব তারার তাপমাত্রা আগের মতে হয়ে যায় এবং এরা Yellow Hypergiant বা Wolf-Rayet Star এ রূপান্তরিত হয়ে যায়। যদি এই তারা SuperNova তে রূপান্তরিত হয় তাহলেও আমাদের ভয়ের কিছু নেই কারন একটি SuperNova তার চারিদিকের ৫০ আলোকবর্ষ পর্যন্ত তার ব্যাসার্ধ্য ছড়াতে পারে। আর UY Scuti আমাদের চেয়ে ৯৫০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। ধারনা করা হয় যে এই তারার যখন মৃত্যু হবে তখন যে বিশালাকার বিস্ফোরনের সৃষ্টি করবে তা ১০০ Supernova র সমান।

সম্পূর্ণ পোষ্টটি পড়ার জন্য, ধন্যবাদ

এই সম্পর্কে ভিডিও দেখতে চাইলে আমাদের YOUTUBE চ্যানেল থেকে ঘুরে আসতে পারেন।

ইউটিউব লিংকঃ মহাকাশের সবচেয়ে বড় তারা UY SCUTI

০ টি +০/-০