ফুটবল এবং শৈশব

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:২০

রিমঝিম শব্দে ঘুম ভাংলো। দেয়ালে ঝুলানো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলাম। এতক্ষণ ঘুমিয়েছি আজ?? ঘড়িতে বিকেল ৫টা ছুঁই ছুঁই। সেই তিন্টার দিকে বিছানায় গাঁ লাগিয়েছিলাম হালকা বিশ্রাম নেব বলে। পরক্ষনেই এতক্ষণ ঘুমানোর কারনটা বুঝে আসলো। বাইরে যে বৃষ্টি হচ্ছে! বর্ষা বুঝি এসেই পরলো। সিঁড়ি ঘরের টিনের চালে বৃষ্টি পরার শব্দে একটা তাল খুজে পেলাম। আড়মোড়া ভেংগে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। বৃষ্টির বেগ খুব একটা বেশি না। অনেক লম্বা পথ ভ্রমন শেষে ঘাসের কোলে আশ্রয় নিচ্ছে বৃষ্টির ফোটাগুলো। ঘাসের কচি ডগাগুলো মাতৃস্নেহে আগলে নিচ্ছে অদের পরম মমতায়। মাঝে মাঝে দুয়েকটা কাক উড়ে যাচ্ছে আশ্রয়ের সন্ধানে।

গাছের পাতায় বৃষ্টির ফোটার আছড়ে পড়া দেখতে দেখতে চোখ আটকে গেলো মাঠের দিকে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বেশ কাদা জমেছে মাঠে। তার মাঝে কয়েকজন ছোট ছোট ছেলে উদোম গায়ে একটা ফুটবল নিয়ে দাপাদাপি করছে। তাদের চোখে-মুখে উচ্ছাসের ঢেউ আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। বল রেখে বৃষ্টির ফোটার স্পর্শ অনুভব করাই তাদের কাছে অনেক আনন্দের মনে হচ্ছে। ইতিমধ্যেই একজন আরেকজনের গায়ে কাদামাটি লাগিয়া দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আমি দেখছি আর হাসছি । চোখের সামনে দৃশ্যপট বদলে যেতে লাগলো।



"বিশাল মাঠ । একপাশ দিয়ে গ্রামের মেঠোপথ অপর পাশে সুরমা নদী । আর দুইপাশে যতদুর চোখ যায় ফসলী জমি । পড়ন্ত বিকেলে ডুবন্ত সূর্যের রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে আকাশে । এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল একটু আগেই । কাদাপানি জমে থাকা মাঠে ফুটবল খেলা হচ্ছে । ঐ যে ছেলেটা বল নিয়ে দৌড়াচ্ছে ওটাই আমি । কাদার মধ্যে বল নিয়ে দৌড়ানো খুব কষ্টকর । তারপরেও আমি দৌড়াচ্ছি । সাদা গেঞ্জিটা কখন যে কালো হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি । পায়ে এতো কাদা লেগে আছে যে পায়ের আঙ্গুলগুলোও দেখা যাচ্ছেনা । বলটা পা থেকে নিয়ে গেলো একজন । মাথায় হাত দিতেই ঝুর ঝুর করে মাটি পড়লো । বুঝলাম যে পুরো শরীরেই কাদা লেগে আছে ।"



নিত্যদিনই এরকম হতো । আকাশে লালের বন্যা ছড়িয়ে কখন যে সূর্যটা ডুবে যেতো টেরই পাইনি কোনওদিন । কাদায় মাখামাখি হয়ে সবাই মিলে পুকুরে ঝাপ দিয়ে গোসল করে বাড়িতে ফেরার সময় মনে যে প্রশান্তি আসতো পৃথিবীর কোনো যন্ত্র দিয়ে তা পরিমাপ করা সম্ভব নয় ।



সবাই বলত আমি নাকি খুব ভাল ফুটবল খেলি । আমারও কেমন যেন একটা নেশা হয়ে গিয়েছিলো । বাড়িতে সবসময় ফুটবল নিয়ে থাকতাম । বুঝতে পারিনি কখন যেন ফুটবলের প্রতি অনেক অব্যক্ত ভালবাসা জন্ম নিয়েছিল । যা আমি আজো বলতে পারিনি । পড়াশুনায় ভালো হওয়ার সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শহরে চলে এলাম । যান্ত্রিক জীবনের চলমান প্রক্রিয়ায় আমার ভালোবাসার উপর কখন যে ধুলোর আবরণ গেলো টেরই পেলামনা । এভাবেই বুঝি দিন চলে যায়, মানুষও ভুলে যায় তার ফেলে আসা দিনগুলোর কথা । তার শৈশবের কথা ।



একটি ফুটবল, কিছু ছোট ছোট ছেলে, একটি কর্দমাক্ত মাঠ......হ্যাঁ, দৃশ্যটা আবার পরিষ্কার হতে লাগলো চোখের সামনে । দু ফোটা বৃষ্টির ছোয়ায় শিহরিত হয়ে উঠলো সারা শরীর । ইতিমধ্যে বৃষ্টির বেগ বেড়ে গেছে অনেক । শৈশবের দুরন্তপনা বুঝি পেয়ে বসলো আমাকে । চোখে কিসের যেন ঝলকানি দেখতে পেলাম । বৃষ্টির ফোটাগুলি বুঝি হাতছানি দিয়ে ডাকছে আমাকে । সেই আহবানে সাড়া দেয়না এমন সাধ্য আছে কার?? দৌড়ে ছাদে চলে এলাম । চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে দু হাত প্রসারিত করে নিজেকে সপে দিলাম বৃষ্টির কাছে ।

০ টি +০/-০