নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালো লাগে বই মিথ, রহস্য,নতুন নতুন অস্ত্র, মিলিটারি আর বিজ্ঞান।\nবই পড়তে আর নতুন কিছু জানতে প্রচুর আগ্রহ।\nএইতো এইটুকুতেই বন্দী আমি..

ব্ল্যান্ক স্পেইস

ব্ল্যান্ক স্পেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

থ্রিলারঃ ফাঁদ

০৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:০৬


আজ চাঁদটা অনেক বড়,আকাশের কোন এক দিকে যেনো অনেকটা হেলে পরেছে তাই আলোটা বোধ হয় একটু বেশিই ছড়াচ্ছে । মনে আজ হয় পূর্ণিমা কিন্তু এখন এতো কিছু ভাবার সময় নেই ইফতির। সে যাচ্ছে বিশেষ একটা কাজে , তবে কাজটা শুধু বিশেষ না অতি বিশেষ।
রাত খুব বেশি হয়নি সবে মাত্র আটটা বাজতে চলেছে। আগের দিনের বৃষ্টিতে রাস্তা পরিস্কার হয়ে আছে, চাঁদের আলো আর স্ট্রীট লাইটের আলো একসাথে মিলেমিশে এক অদ্ভূত পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। ইংলিশ প্রাইভেটটা শেষ হলো কিছুক্ষণ আগে। দেরি হয়ে গেছে, স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি জোড়েই হেঁটে চলছে সে। হৃদ স্পন্দনের গতিটা যে অন্য সময়ের চেয়ে যে বেশি সেটা টের পাওয়া যাচ্ছে। গন্তব্যটা বেশি দূরে না হেঁটে যেতে দশ মিনিটের পথ কিন্তু সব দোষটা তো ইংলিশ স্যার এর তার জন্যই তো এই দেরিটা হলো। রাস্তাটা খালি মানুষ জন খুববেশি একটা নেই, শুধু অনেকটা দূরে একটা রিক্সা দেখা যাচ্ছে।
হেঁটে হেঁটে ওই গলিটার মুখে চলে এসেছে ইফতি, গলির ভেতরটা অন্ধকার। গলি থেকে কিছুটা দূরে পাশাপাশি দুটো কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং রয়েছে। একটার কাজ প্রায় শেষ দশতলা কমপ্লিড তবে আর একটার কাজ কিছুটা শুরু হয়ে আটকে আছে অনেকদিন ধরে কাজ বন্ধ। তাই এদিকটাই মানুষের আনাগোনা বেশি একটা নেই।
ইফতির গন্তব্য পাশের বিল্ডংয়ে কারণ কেউ একজন ওখানে আজ তার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। এটা ভাবতেই অন্য রকম একটা শিহরণ বয়ে গেল তার উপর দিয়ে।
কি বলবে সে এখন , একটু দেরি হয়ে গেল তো?
সাবধানে ফোনের টর্চ ধরে লোহার রড ও অন্যান্য জিনিস এড়িয়ে চলে এলো কথা দেওয়া জায়গায়।
কিন্তু একি, কেউ নেই এখানে!
নিশি কি এখনো আসেনি এমন তো হওয়ার কথা না ? একপাশে উঁচু বালির স্তুপ অপরপাশে পাইলিং এর অনেক গভীর গর্ত, পানি জমে ভরে আছে। অন্ধকার গর্তের নীচ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
তাহলে কি নিশি তার সাথে......!

এটা ভাবতেই হঠাৎ মাথার পেছন থেকে তীব্র ব্যাথা অনুভব করলো সে, দুই চোখ বন্ধ হয়ে এলো ইফতির। সে সরাসরি বালির স্তুপে পড়েছে। একটা লাল তরল খুব দ্রুত গড়িয়ে পড়ছে মাথার পেছন দিক থেকে। কেউ ঘাড়ে পা দিয়ে তার মুখটা নরম ভিজা বালিতে চেপে ধরলো জোরে। বেশ কিছুক্ষণ পা নাড়িয়ে ছটফট করছিলো সে, তখন কারো কাছে চিৎকার দিয়ে সাহায্য চাওয়া বা কোন কিছুই করার অবস্থা ছিলো না তার । কয়েক সেকেন্ডর পর নাড়াচাড়া বন্ধ হয়ে গেল ইফতির। শুধু নিস্তব্ধ দেহটাই পরে আছে তার, পাশে মোবাইল ফোনটাও।
এতো সহজে যে কাজটা শেষ হবে তা কখনো ভাবতেও পারেনি শুভ। পা দিয়ে ঠেলে ইফতির স্তব্দ দেহটা পাশের পানি ভর্তি গর্তে ফেলে দিলো।
পানিতে লাশ পড়ার দুমম করা শব্দটা খুব বেশি
দূরে যায়নি আর গেলেও কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। ইফতির ফোনটা হাতে তুলে সুইচ্ট অফ করে ব্যাগে রাখলো সে। লোহার পাইপটা ঠিক জায়গায় রেখে হাতের গ্লাভস্ খুলো ব্যাগে ভরতে ভরতে ওখান বেরিয়ে আসলো শুভ।

রাস্তায় বেরিয়ে সবার আগে সে নিশিকে " mission completed " লিখা একটা মেসেজ্ সেন্ড করলো।
অপর প্রান্তে শুধু তৃপ্তিময় রহস্যের একটা হাসি হাসলো একজন, যেন এমনটি হওয়ারই কথা। শুধু এই মেসেজটার জন্যই কেউ একজন অপেক্ষা করছিলো।


ওই ঘটনার পর দেখতে দেখতে আরো সাত থেকে আট দিন কেটে গেল শুভর। বলতে গেলে এ কয়দিন বাইরের জগতের সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগবিহীন অবস্থায় ছিলো শুভ । এমন কি নিশির সাথেও আর কোন ধরনের কথা হয়নি তার । তেমন কোন সমস্যার মাঝেও পরতে হয়নি শুভকে। ইফতি অতি বড়লোকের একটা বিগড়ে যাওয়া সন্তান। এসকল মা-বাবার টাকা পয়সার অভাব না থাকলেও টাকা পয়সাকেই তাদের দুনিয়ার সব বানিয়ে নিয়েছে। টাকাই তাদের সব সন্তানের দিকে নজর দেওয়ার সময়টা পর্যন্ত নেই। আর ইফতিরও মাঝে মাঝে টাকা নিয়ে এমন অথবা এর চেয়েও আরও বেশি সময় নিয়ে মিসিং হওয়ার অতীত ইতিহাস অনেক আছে। সে যে মাঝে মধ্যেই এমন ভাবে হারিয়ে গিয়ে আবার কিছুদিন পরই ফিরে আসে এটা সবারই জানা । তাই এটা কারো কাছে মাথা ব্যাথার মতো কোন বিষয় না । অতএব এ ঘটনার জন্য থানায় সাধারণ ডায়রি করা আর দু'চারজন বন্ধু-বান্ধবের বাসায় খোঁজ নেওয়া ছাড়া তেমন কিছুই নজরে পড়লো না। সব গুলো জিনিস যেনো তাদের সাজানো গুছানো পরিকল্পনা মতোই হচ্ছিলো।

দুই সপ্তাহ পর ফোনে শুভর সাথে নিশির প্রথম কথা-
হ্যালো..নিশি?
-হুম।
ভালো আছো?
-..........।
কথা বলছো না যে?
-ভালো।
তাহোলে এখন কি আমরা দেখা করতে পারি?
-না।
না..! কেন?
-আর একবার কাজটা করতে হবে।
মানে.....!
-করবে না তুমি?
...........
- কি হলো?
......
-তাহলে করছো না?
হুম। নাম বলো।
-গুড বয়। আই লাইক ইট।
নাম বলো?
-দাঁড়াও এতো তাড়া কিসের?
প্লিজ নামটা বলো?
-দীপণ.
দীপণণ!!
-হুম, দীপণ।
........
-..........
ওকে হয়ে যাবে। বাই রাখছি।

মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে শুভর। দীপণ আর শুভ বেষ্ট ফ্রেন্ড। এর চেয়েও বড় কথা দীপণ হিন্দু কিন্তু নিশির সাথে কি এমন হতে পারে যার জন্য….?
এক দিকে তার দুনিয়া নিশি আর অন্য দিকে প্রিয় বন্ধু কাকে বেঁছে নিবে শুভ?
প্রত্যেক মানুষের জীবনে এমন বিশেষ কেউ থাকে। যার কোন কথায় না করা যায় না তার হাসির দিকে তাকিয়ে সব কষ্ট হাসি মুখে মেনে নেয়া যায়। তবে নিশি শুভর কাছে শুধু বিশেষ না অতি বিশেষ কেউ।
আজ পর্যন্ত সে নিশির কোন কথায় না বলেনি তাই এটাও না করবে না আর কখনো করতে চায়য়ো না।
তবে এবারের কাজটা বেশ জটিল শুভর জন্য। নিশির নিষিদ্ধ নিমন্ত্রণে যে দীপণ ইফতির মতো সাড়া দেবে না সেটা নিশ্চিত। তাই এই কাজটা একটু বুঝে শুনেই করতে হবে শুভকে।


কিছু দিন পর,
আবার সেই আগের মতোই একটা রাত কিন্তু পরিবর্তন বলতে শুধু আজ আকাশে চাঁদ নেই আর রাস্তায় স্ট্রীট লাইটের আলোও তেমন নেই রাস্তা-ঘাটেও মানুষের আনাগোনা এবং পরিবেশ সম্পূর্ণ ওই দিনের বিপরীত। শুভ অনেকটা আগেই চলে এসেছে আজ। প্ল্যান অনুযায়ী আটটা ত্রিশ মিনিটে দীপণের আসার কথা। তবে শুভ পাশের বিল্ডিং এর ছাদের এক কোণে বসে আছে কারণ এখান থেকে দীপণের আসা এবং ওই জায়গার উপর নজর খুব ভালো করেই রাখা যাবে। দশতলা ভবনের ছাদটা বিশাল বড়। আর অনেক অন্ধকারের মাঝে এতো বড় ছাদে কেউ থাকলেও বুঝা যাবে না। আটটা ত্রিশ মিনিটে দীপণের নিচে এসে শুভকে ফোন দেওয়ার কথা।
দীপণ আসবে ঠিক সময়েই আসবে সে কখনো শুভকে অপেক্ষা করায়নি আজও করাবে না। সেই কলেজ দিনের শুরু থেকে আজ প্রায় দুই বছর তাদের বন্ধুত্ব। দীপণ মাঝেমাঝেই তাকে বলতো " জানিস শুভ তোর জন্য আমি জীবন দিতে পারি" আর শুভ তা শুনে হাসতো কিন্তু আজ যেনো সত্যি প্রিয় বন্ধুর জীবনটা নেয়ার সময় চলে এসেছে। ছাদের কোণে বসে অনেক কিছু ভাবছে সে। এরপর কখনো সুযোগ পেলে নিশি কে নিয়ে এখানে আসবে। একসাথে বসে আকাশ দেখবে তার চোখে।
নিশির চোখে দেখবে মানে তার অবাক হওয়া চোখ গুলো দেখবে কারণ এখান থেকে দেখা আকাশটা বিশাল না অনেক বিশাল।

আটটা পঁচিশ মিনিট নিশিকে একটা ফোন দেওয়া দরকার। এতো দিনের মাঝে আজকের প্ল্যান জানানো ছাড়া তার সাথে নিশির আর কোন কথা অথবা যোগাযোগ হয়নি। কিন্ত এই মুহূর্তে কেন জানি খুব মনে পড়ছে নিশির কথা। ফোন দেওয়ার পর.. প্রথমবার রিং হলো কেউ ধরলো না দ্বিতীয় বারও একই রকম কিন্তু তৃতীয়......
হঠাৎ একটা পরিচিত কন্ঠে চমকে উঠলো শুভ। তার আগেই কেউ এসে এই ছাদে লুকিয়ে ছিলো যেটা সে টের পায়নি। পেছনে তাকিয়ে দীপণ, হৃদয় আর আবিরের হাতে তিনটি লোহার পাইপ হাতে দেখতে পেলো শুভ।
দীপণের হাতের পাইপটা খুব চেনা চেনা লাগছে...আরে এটাই তো!
যা বুঝার অনেক আগেই বুঝে নিয়ছে শুভ, সে তার নিজের পাতা ফাঁদেই আটকা পড়েছে এখন। শুভরো আজ করার মতো কিছুই নেই, ওদিনের নির্মম ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটলো আরএকবার তবে আজকের ঘটনাটার মাঝে একটু ব্যাতিক্রম কিছুও আছে হয়তো।
অনেকদিন পর আবার বন্ধ হয়ে যাওয়া কনস্ট্রাকশন কাজ শুরু হলো পুরোদমে । পাইলিং করা গর্ত গুলো বালি দিয়ে পূর্ণ করা দেওয়া হয় তার অনেক আগেই লাশ তিনটে মনে হয় গলে যাওয়ায় অথবা অন্য কোন কারণে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।


আজ এই জায়গাটিতে আজ পাশাপাশি দুটো বহুতল ভবন। অবাক দুনিয়া অবাক সব কিছু। মুখে সেই রহস্যময় হাসিটা নিয়ে ছাদের এক কোণে বসে আছে নিশি আর তার চোখে আকাশ দেখছে আবির......!




আজ চাঁদটা অনেক বড়,আকাশের কোন এক দিকে যেনো অনেকটা হেলে পরেছে তাই আলোটা বোধ হয় একটু বেশিই ছড়াচ্ছে । মনে আজ হয় পূর্ণিমা কিন্তু এখন এতো কিছু ভাবার সময় নেই ইফতির। সে যাচ্ছে বিশেষ একটা কাজে , তবে কাজটা শুধু বিশেষ না অতি বিশেষ।
রাত খুব বেশি হয়নি সবে মাত্র আটটা বাজতে চলেছে। আগের দিনের বৃষ্টিতে রাস্তা পরিস্কার হয়ে আছে, চাঁদের আলো আর স্ট্রীট লাইটের আলো একসাথে মিলেমিশে এক অদ্ভূত পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। ইংলিশ প্রাইভেটটা শেষ হলো কিছুক্ষণ আগে। দেরি হয়ে গেছে, স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি জোড়েই হেঁটে চলছে সে। হৃদ স্পন্দনের গতিটা যে অন্য সময়ের চেয়ে যে বেশি সেটা টের পাওয়া যাচ্ছে। গন্তব্যটা বেশি দূরে না হেঁটে যেতে দশ মিনিটের পথ কিন্তু সব দোষটা তো ইংলিশ স্যার এর তার জন্যই তো এই দেরিটা হলো। রাস্তাটা খালি মানুষ জন খুববেশি একটা নেই, শুধু অনেকটা দূরে একটা রিক্সা দেখা যাচ্ছে।
হেঁটে হেঁটে ওই গলিটার মুখে চলে এসেছে ইফতি, গলির ভেতরটা অন্ধকার। গলি থেকে কিছুটা দূরে পাশাপাশি দুটো কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং রয়েছে। একটার কাজ প্রায় শেষ দশতলা কমপ্লিড তবে আর একটার কাজ কিছুটা শুরু হয়ে আটকে আছে অনেকদিন ধরে কাজ বন্ধ। তাই এদিকটাই মানুষের আনাগোনা বেশি একটা নেই।
ইফতির গন্তব্য পাশের বিল্ডংয়ে কারণ কেউ একজন ওখানে আজ তার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। এটা ভাবতেই অন্য রকম একটা শিহরণ বয়ে গেল তার উপর দিয়ে।
কি বলবে সে এখন , একটু দেরি হয়ে গেল তো?
সাবধানে ফোনের টর্চ ধরে লোহার রড ও অন্যান্য জিনিস এড়িয়ে চলে এলো কথা দেওয়া জায়গায়।
কিন্তু একি, কেউ নেই এখানে!
নিশি কি এখনো আসেনি এমন তো হওয়ার কথা না ? একপাশে উঁচু বালির স্তুপ অপরপাশে পাইলিং এর অনেক গভীর গর্ত, পানি জমে ভরে আছে। অন্ধকার গর্তের নীচ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
তাহলে কি নিশি তার সাথে......!

এটা ভাবতেই হঠাৎ মাথার পেছন থেকে তীব্র ব্যাথা অনুভব করলো সে, দুই চোখ বন্ধ হয়ে এলো ইফতির। সে সরাসরি বালির স্তুপে পড়েছে। একটা লাল তরল খুব দ্রুত গড়িয়ে পড়ছে মাথার পেছন দিক থেকে। কেউ ঘাড়ে পা দিয়ে তার মুখটা নরম ভিজা বালিতে চেপে ধরলো জোরে। বেশ কিছুক্ষণ পা নাড়িয়ে ছটফট করছিলো সে, তখন কারো কাছে চিৎকার দিয়ে সাহায্য চাওয়া বা কোন কিছুই করার অবস্থা ছিলো না তার । কয়েক সেকেন্ডর পর নাড়াচাড়া বন্ধ হয়ে গেল ইফতির। শুধু নিস্তব্ধ দেহটাই পরে আছে তার, পাশে মোবাইল ফোনটাও।
এতো সহজে যে কাজটা শেষ হবে তা কখনো ভাবতেও পারেনি শুভ। পা দিয়ে ঠেলে ইফতির স্তব্দ দেহটা পাশের পানি ভর্তি গর্তে ফেলে দিলো।
পানিতে লাশ পড়ার দুমম করা শব্দটা খুব বেশি
দূরে যায়নি আর গেলেও কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। ইফতির ফোনটা হাতে তুলে সুইচ্ট অফ করে ব্যাগে রাখলো সে। লোহার পাইপটা ঠিক জায়গায় রেখে হাতের গ্লাভস্ খুলো ব্যাগে ভরতে ভরতে ওখান বেরিয়ে আসলো শুভ।

রাস্তায় বেরিয়ে সবার আগে সে নিশিকে " mission completed " লিখা একটা মেসেজ্ সেন্ড করলো।
অপর প্রান্তে শুধু তৃপ্তিময় রহস্যের একটা হাসি হাসলো একজন, যেন এমনটি হওয়ারই কথা। শুধু এই মেসেজটার জন্যই কেউ একজন অপেক্ষা করছিলো।


ওই ঘটনার পর দেখতে দেখতে আরো সাত থেকে আট দিন কেটে গেল শুভর। বলতে গেলে এ কয়দিন বাইরের জগতের সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগবিহীন অবস্থায় ছিলো শুভ । এমন কি নিশির সাথেও আর কোন ধরনের কথা হয়নি তার । তেমন কোন সমস্যার মাঝেও পরতে হয়নি শুভকে। ইফতি অতি বড়লোকের একটা বিগড়ে যাওয়া সন্তান। এসকল মা-বাবার টাকা পয়সার অভাব না থাকলেও টাকা পয়সাকেই তাদের দুনিয়ার সব বানিয়ে নিয়েছে। টাকাই তাদের সব সন্তানের দিকে নজর দেওয়ার সময়টা পর্যন্ত নেই। আর ইফতিরও মাঝে মাঝে টাকা নিয়ে এমন অথবা এর চেয়েও আরও বেশি সময় নিয়ে মিসিং হওয়ার অতীত ইতিহাস অনেক আছে। সে যে মাঝে মধ্যেই এমন ভাবে হারিয়ে গিয়ে আবার কিছুদিন পরই ফিরে আসে এটা সবারই জানা । তাই এটা কারো কাছে মাথা ব্যাথার মতো কোন বিষয় না । অতএব এ ঘটনার জন্য থানায় সাধারণ ডায়রি করা আর দু'চারজন বন্ধু-বান্ধবের বাসায় খোঁজ নেওয়া ছাড়া তেমন কিছুই নজরে পড়লো না। সব গুলো জিনিস যেনো তাদের সাজানো গুছানো পরিকল্পনা মতোই হচ্ছিলো।

দুই সপ্তাহ পর ফোনে শুভর সাথে নিশির প্রথম কথা-
হ্যালো..নিশি?
-হুম।
ভালো আছো?
-..........।
কথা বলছো না যে?
-ভালো।
তাহোলে এখন কি আমরা দেখা করতে পারি?
-না।
না..! কেন?
-আর একবার কাজটা করতে হবে।
মানে.....!
-করবে না তুমি?
...........
- কি হলো?
......
-তাহলে করছো না?
হুম। নাম বলো।
-গুড বয়। আই লাইক ইট।
নাম বলো?
-দাঁড়াও এতো তাড়া কিসের?
প্লিজ নামটা বলো?
-দীপণ.
দীপণণ!!
-হুম, দীপণ।
........
-..........
ওকে হয়ে যাবে। বাই রাখছি।

মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে শুভর। দীপণ আর শুভ বেষ্ট ফ্রেন্ড। এর চেয়েও বড় কথা দীপণ হিন্দু কিন্তু নিশির সাথে কি এমন হতে পারে যার জন্য….?
এক দিকে তার দুনিয়া নিশি আর অন্য দিকে প্রিয় বন্ধু কাকে বেঁছে নিবে শুভ?
প্রত্যেক মানুষের জীবনে এমন বিশেষ কেউ থাকে। যার কোন কথায় না করা যায় না তার হাসির দিকে তাকিয়ে সব কষ্ট হাসি মুখে মেনে নেয়া যায়। তবে নিশি শুভর কাছে শুধু বিশেষ না অতি বিশেষ কেউ।
আজ পর্যন্ত সে নিশির কোন কথায় না বলেনি তাই এটাও না করবে না আর কখনো করতে চায়য়ো না।
তবে এবারের কাজটা বেশ জটিল শুভর জন্য। নিশির নিষিদ্ধ নিমন্ত্রণে যে দীপণ ইফতির মতো সাড়া দেবে না সেটা নিশ্চিত। তাই এই কাজটা একটু বুঝে শুনেই করতে হবে শুভকে।


কিছু দিন পর,
আবার সেই আগের মতোই একটা রাত কিন্তু পরিবর্তন বলতে শুধু আজ আকাশে চাঁদ নেই আর রাস্তায় স্ট্রীট লাইটের আলোও তেমন নেই রাস্তা-ঘাটেও মানুষের আনাগোনা এবং পরিবেশ সম্পূর্ণ ওই দিনের বিপরীত। শুভ অনেকটা আগেই চলে এসেছে আজ। প্ল্যান অনুযায়ী আটটা ত্রিশ মিনিটে দীপণের আসার কথা। তবে শুভ পাশের বিল্ডিং এর ছাদের এক কোণে বসে আছে কারণ এখান থেকে দীপণের আসা এবং ওই জায়গার উপর নজর খুব ভালো করেই রাখা যাবে। দশতলা ভবনের ছাদটা বিশাল বড়। আর অনেক অন্ধকারের মাঝে এতো বড় ছাদে কেউ থাকলেও বুঝা যাবে না। আটটা ত্রিশ মিনিটে দীপণের নিচে এসে শুভকে ফোন দেওয়ার কথা।
দীপণ আসবে ঠিক সময়েই আসবে সে কখনো শুভকে অপেক্ষা করায়নি আজও করাবে না। সেই কলেজ দিনের শুরু থেকে আজ প্রায় দুই বছর তাদের বন্ধুত্ব। দীপণ মাঝেমাঝেই তাকে বলতো " জানিস শুভ তোর জন্য আমি জীবন দিতে পারি" আর শুভ তা শুনে হাসতো কিন্তু আজ যেনো সত্যি প্রিয় বন্ধুর জীবনটা নেয়ার সময় চলে এসেছে। ছাদের কোণে বসে অনেক কিছু ভাবছে সে। এরপর কখনো সুযোগ পেলে নিশি কে নিয়ে এখানে আসবে। একসাথে বসে আকাশ দেখবে তার চোখে।
নিশির চোখে দেখবে মানে তার অবাক হওয়া চোখ গুলো দেখবে কারণ এখান থেকে দেখা আকাশটা বিশাল না অনেক বিশাল।

আটটা পঁচিশ মিনিট নিশিকে একটা ফোন দেওয়া দরকার। এতো দিনের মাঝে আজকের প্ল্যান জানানো ছাড়া তার সাথে নিশির আর কোন কথা অথবা যোগাযোগ হয়নি। কিন্ত এই মুহূর্তে কেন জানি খুব মনে পড়ছে নিশির কথা। ফোন দেওয়ার পর.. প্রথমবার রিং হলো কেউ ধরলো না দ্বিতীয় বারও একই রকম কিন্তু তৃতীয়......
হঠাৎ একটা পরিচিত কন্ঠে চমকে উঠলো শুভ। তার আগেই কেউ এসে এই ছাদে লুকিয়ে ছিলো যেটা সে টের পায়নি। পেছনে তাকিয়ে দীপণ, হৃদয় আর আবিরের হাতে তিনটি লোহার পাইপ হাতে দেখতে পেলো শুভ।
দীপণের হাতের পাইপটা খুব চেনা চেনা লাগছে...আরে এটাই তো!
যা বুঝার অনেক আগেই বুঝে নিয়ছে শুভ, সে তার নিজের পাতা ফাঁদেই আটকা পড়েছে এখন। শুভরো আজ করার মতো কিছুই নেই, ওদিনের নির্মম ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটলো আরএকবার তবে আজকের ঘটনাটার মাঝে একটু ব্যাতিক্রম কিছুও আছে হয়তো।
অনেকদিন পর আবার বন্ধ হয়ে যাওয়া কনস্ট্রাকশন কাজ শুরু হলো পুরোদমে । পাইলিং করা গর্ত গুলো বালি দিয়ে পূর্ণ করা দেওয়া হয় তার অনেক আগেই লাশ তিনটে মনে হয় গলে যাওয়ায় অথবা অন্য কোন কারণে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।


আজ এই জায়গাটিতে আজ পাশাপাশি দুটো বহুতল ভবন। অবাক দুনিয়া অবাক সব কিছু। মুখে সেই রহস্যময় হাসিটা নিয়ে ছাদের এক কোণে বসে আছে নিশি আর তার চোখে আকাশ দেখছে আবির......!


মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.