নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্তর মাশঊদ

সুখের পিছনে ছুটতে ছুটতে মানুষ অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে। সেখানে আমি সত্যের সন্ধানে ছুটছি

অন্তর মাশঊদ

সুখের আশায় ছুটতে ছুটতে মানুষ অসুখে পড়ছে। আর আমি তখন সত্যের সন্ধানে ছুটছি।

অন্তর মাশঊদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুরনো ক্ষত

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:৫৭

লোকাল বাসে চড়ার এই একটাই সমস্যা। বাসের ভিতর সারাক্ষন চিল্লাচিল্লি,ভাড়া নিয়ে হেল্পারের সাথে মারামারি। তবে আজকের বিষয়টা আলাদা। আমার পিছনের সিটের ভদ্রলোক জানালা দিয়ে বাহিরে থুতু ফেলেছে আর সেই থুতু দুই সিট পিছনে আরেকজনের গাঁয়ে পড়েছে। প্রথমে তর্ক, তারপর তুই তুকারি পর্যন্ত গড়ালো বিষয়টা। অথচ দুইজনই চাকুরীজীবি; দেখতে অত্যন্ত ভদ্রলোক। কিন্তু ছোটলোকের মত ঝগড়া করছিলো।
একটা চাকুরীর ইন্টারভিউ দিতে মতিঝিল যাচ্ছি।
বাসটা কাওরান বাজার পার হতেই বুকটা ধুক ধুক করে উঠলো। কোন এক লুকানো বিষাদে ছটফট করতে শুরু করলো এই মন। কতই না স্মৃতি জুড়ে আছে এই এলাকার পুরো পথ জুড়ে। ফার্মগেট টু শাহবাগের পুরো পথ জুড়ে ছিলো তাঁর আর আমার পদছাপ। উঠতি বয়স, নতুন প্রেম। সারারাত জেগে জেগে ফোনে কথা বলেও মন জুড়াতো না। প্রতিদিন ছুটে আসতাম তাঁকে দেখার জন্য, তাঁর সাথে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য।

হেলপারের বাংলামোটর! বাংলামোটর! বলে ডাকাডাকিতে ঘোর কেটে গেলো। জানালা দিয়ে বাম দিকে তাকাতেই, সাথে সাথে ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেলো। দ্রুত গেটের দিকে দৌড়াতে লাগলাম। ড্রাইভারকে বেশ জোরে ধমক দিয়ে স্টপেজ নয় এমন জায়গায় বাস থামিয়ে খুব হন্তদন্ত দরজায় ধাক্কা খেয়ে নেমে গেলাম। হেলপার আর ড্রাইভারসহ বাসযাত্রীদের অশ্লীল গালি কানে এলেও কর্নপাত করলাম না।
ফুটপাত ধরে পিছন দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি। হুম। ভুল দেখিনি। এই সেই! সেই মানুষটি! যাকে কোন এক কালে জীবনের চেয়েও বেশী ভালোবেসেছিলাম। যার জন্য ছুটে আসতাম এই পথে বারবার। সেই মানুষটি! রাস্তা পার হয়ে ওপারে যাবার চেষ্টা করছে। প্রায় মিনিট দুই, খুব মনোযোগ দিয়ে তাঁকে লক্ষ্য করছিলাম।
দেখছিলাম! ভালোবাসার রাস্তায়, আমার হাতটি বিশ্বাসঘাতকের মত ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যাওয়া সেই মেয়েটি কি আমি চলে যাওয়ার পর নিজে নিজে রাস্তা পার হওয়া শিখে নিয়েছে? নাকি এখনও সেই আগের মতই রাস্তা একা পার হতে পারে না।
নাহ! আজও শিখে উঠেনি! অন্তত! এই অবস্থায় তো নয়ই। দ্রুতচালিত যানবাহনময় এই ব্যস্ত রাস্তায় তাঁর পা সেখানেই আঁটকে আছে।
কিছুক্ষন চিন্তাভাবনা করে! বেহায়ার মত এগিয়ে গেলাম তাঁর দিকে। তাঁকে কিছু না বলেই, পিছন দিক দিয়ে তাঁর ডান হাতটা ধরে এগিয়ে যাবো, এমন সময় তাঁর হাতের শক্ত টান অনুভব করলাম। তাঁর দিকে ফিরে তাকাতেই তাঁর হাতটা যতটা দ্রুত শক্ত হয়ে গিয়েছিলো ঠিক ততটা দ্রুতই নরম হয়ে যায়। গাড়িওয়ালাদের হাত দেখিয়ে স্লো করবার অনুরোধ জানিয়ে আমরা দুজনেই এগুতে থাকি ওপারের উদ্দেশ্যে।
এক পর্যায়ে রাস্তার ওপারে যাওয়ার পর একটা রিক্সা ডেকে তাঁর সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। এমন সময় পিছন দিক দিয়ে আমার হাতটা খপ করে সে ধরে ফেললো। তাঁর চোখের দিকে আমি তাকাতে পারিনি। কারন এই চোখের দিকে তাকিয়ে সেই প্রথমদিন ফেঁসেছিলাম। সে কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
"একজন প্রেগন্যান্ট মহিলাকে রাস্তা পার করে দেওয়া, একজন পথচারী হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিলো।"
বলেই অমানুষের মত হাঁটা শুরু করলাম রাস্তার ওপারে যাওয়ার জন্য। কিন্তু নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে দেখি সাদা শার্টটা রক্তে লেপ্টে আছে। বুঝলাম, বাস থেকে দ্রুত নামার সময় দরজার সাথে বেশ জোরে আঘাত পাওয়ার জন্য কেটে গিয়েছে। এই শার্ট পরে আর ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া যাবে না। তাই সামনেই পাওয়া একটা বাসে লাফ দিয়ে চড়ে বসলাম বাসার উদ্দেশ্যে।

বাসে উঠার পর, মনটা কেন যেন বারবার চাচ্ছিলো ফিরে দেখতে! সে কি ওখানে এখনও দাঁড়িয়ে আছে আমার জন্য? নাহ! তা থাকবে কেন? আমি তাঁর কিবা হই এখন?
ধুরুধুরু বুকে বাসের পিছনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম, সে তখনও দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে এই বাসের দিকে। বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। নিয়তিকে হাজারবার ধিক্কার দিচ্ছিলাম। কেন? কেন আবার আমাদের দেখা হলো? ভালোই তো চলছিলো। জমাট বাঁধা ক্ষত কেন আবার জাগিয়ে দিলে হে বিধাতা?
আমি আর সে খুব দ্রুত গতিতে একজন আরেকজনের থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি। একসময় অন্যান্য বাসের আড়ালে সে মিলিয়ে গেলো। আমি বসে পড়লাম। চোখ মুছছি।
নাহ! আমি কাঁদছি না। চোখে ধূলিকণা পড়েছে তো তাই।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:১১

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: :( :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.