নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন ব্রিলিয়ান্ট পাগল

আমি একজন সাধারণ পাঠক মাত্র। কোন একদিন লেখক হতে চাই। সেইজন্য এখন পাঠকরাতে মনোযোগী হয়েছি। কারণ ভালো লেখক হতে চাইলে আগে ভালো পাঠক হতে হয়।

আমি দিহান

বৃত্তান্তবিহীন

আমি দিহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালো বাসা চাই!! দিবেন নাকি কেউ??

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪৩

অনেকদিন হলো ভালো বাসা খুঁজছি। মনে এবার বেধেছি আশা, খুঁজে পাবোই ভালো বাসা। তবে বর্তমানে আমি যে বাসাতে আছি সেটা খুব খারাপ না। কিন্তু বাড়ির মালিক কিঞ্চিত বেয়াড়া।
তার নাম দিহানুর রহমান জিদান(ডি.জে)। আমার নাম মঈনুদ্দিন নান্নু ওরফে মদন। নামটি অবশ্য বাড়ির মালিকেরই দেয়া। যদিও তিনি আমার ছোট চাচ্চুর বন্ধু তবুও তিনি আমার কাছে বন্দুকের মতোই অপ্রিয়।

আজ প্রায় ছয় মাস হচ্ছে আমি এই বাসাতে আছি। প্রথম যেদিন বাড়িতে আসি সেদিনই তুলকালাম। আমাকে ডেকে ডি জে আঙ্কেল বললেন, ‘বাড়িতে থাকতে হলে অবশ্যই তোমাকে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। প্রথমেই বলে দিচ্ছি রাত দশটায় বন্ধ হয় গেট, বাড়ি ফিরতে কখনো কোরো না লেট।’ এরকম আরো অনেক নিয়মকানুন শোনানোর পরে তিনি আমাকে একটি রুমে নিয়ে গেলেন। ছোট একটি রুমে একটি টেবিল, একটি চেয়ার আর একটি বেড।

নতুন বাসাতে দিন যায় আর আমার মাথার চুল আর নখও বড় হয়। একদিন আমি ডিম ভাজার জন্য রান্নাঘরের চুলা জ্বালিয়েছি, হঠাৎ করেই আংকেল প্রবেশ করলেন। আমাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললেন, ‘এ কি করছো মদন, তুমি চুলা জবালিয়ে দিয়েছ?’

‘আংকেল, চুলাই তো জ্বালিয়েছি, বাড়ি তো আর জ্বালাইনি’ আমি বললাম।
‘তুমি হয়ত জানো, সাত বছর অনেকগুলো টাকা খরচ করে আমি বাড়িটিকে রঙ করেছি। চুলোর কালিতে সব নষ্ট হয়ে যাবে যে!’ আমি চুলা নিভিয়ে দিলাম, ডিম আর খাওয়া হলো না।

আংকেলের ছেলের নাম রিটা। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। বাপের মতই বজ্জাত। কথায় বলে না, ‘বাপ কা বেটা আর ও হচ্ছে ডি জে কা রিটা।’ সামনেই কোরবাণীর ঈদ। কলেজ ছুটি দিয়ে দিয়েছে। ডি জে আংকেল কোরবাণির পশু কেনার জন্য আমাকে হাটে নিয়ে যেতে চাইলেন।

আমি তো ভেবেছিলাম প্রতিবেশীদের সাথে পাল্লা দিয়ে তিনি ইয়া বড় একটা গরু কিনবেন। কিন্তু তিনি কিনবেন ছাগল! ব্যাটা কিপটার হাড্ডি। তাকে জিজ্ঞাসা করাতে তিনি বললেন, ‘মদন আমারো ইচ্ছা করে একটা মোটা সাইজের গরু কিনতে কিন্তু বামার সংসারে লোক বলতে আমি আর রিটা’।
কথামতো আংকেলের সাথে হাটে গেলাম ছাগল কিনতে। বাংলাদেশের জন্যসংখ্যা যে কত না হাটে না গেলে বোঝা সম্ভব নয়। অনেকগুলো দেখতে দেখতে আংকেলের ভুড়ি তিন ঈঞ্চি কমে গেলো তখন তার চোখে পড়ল জমকালো একটা ছাগল।
চেহারা দেখেই বোঝা যায় ছাগলটি শিক্ষিত, কিন্তু শিং ইয়া বড়। আমি শিং দেখে বললাম, ‘সর্বনাশ, মারে নাতো ঢুসটাস’। ছাগলওয়ালা বললো, ‘স্যারে যে কি কন। আমার এই ছাগল শিক্ষিত স্বভাবের’।
‘শিক্ষিত ছাগল!সেটা আবার কিভাবে?’ আংকেল আধ হাত লাফিয়ে উঠে জিজ্ঞেস করলেন।
‘আজ্ঞে জনাব, কাউয়ার চরে চরতে চরতে দু-একটা ইংরেজী শিখে ফেলেছে’।
‘একটু স্যাম্পল দেখাও তো দেখি?’
‘অফ কোর্স দেখাচ্ছি স্যার, এই ছাগল বলতো এপ্রিলের পরে কি হয়?’
‘ম্যা এ এ এ’ ছাগলের উত্তর’।
‘ছাগল বলতো জুনের আগে কি হয়?’
‘ম্যা এ এ এ’
আংকেল ছাগলের জ্ঞান গরিমা দেখে একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম , ‘দেখুন আংকেল ব্যাটা যখন ছাগলকে প্রশ্ন করছে তখন কেমন করে যেন গুতোচ্ছে’।

আংকেল আমার কথায় কান না দিয়ে বললেন, ‘তুমি চুপ করো মদন কোথাকার। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে ভালো জাতের একটা ছাগল পেয়েছি, সেটা আর হারাতে চাইনা’।

আমি আর কোন কথা বললাম না। যার জিনিস সেই বুঝুক। এমন সময় ছাগলওয়ালা বলে উঠলেন, ‘আপনার পছন্দ আছে জনাব। তবে ঐ ছোকরাকে আনা ঠিক হয়নি। গুণী লোকই গুণী জিনিস চিনবে। কথায় আছে না রতনে রতন চেনে’। আমি সুযোগ পেয়েই আংকেলকে বলে উঠলাম, ‘রতনে রতন চেনে, ছাগলে চিনে ছাগল’। কথাটি বলে যেন আগুনে ঘি ঢেলে দিলাম। অবশ্য তার উপযুক্ত শাস্তিই পেলাম। গোবরে পা পিছলে পড়ে গেলাম। আমার সারা শরীর গোবর মেখে গেলো। আমার অবস্থা দেখে আংকেল বিকট শব্দে হেসে উঠলেন। লেজে গোবরে অবস্থা নিয়েই আমাকে চলা শুরু করতে হলো।

ছাগলটির কি নাম রাখা যায় তা নিয়ে আংকেল ভাবছিলেন। আমি প্রস্তাব করলাম ওর নাম কালু খাঁ রাখা হোক। আংকেল বাঁধা দিয়ে বললেন, ‘তুমি একটা ইংরেজী নাম রাখো’। অনেক ভেবে আমি একটা জুতসই নাম ঠিক করলাম, ‘জনি ব্লেজ’। নামটা আংকেলের পছন্দ হয়ে গেলো। আমরা বাড়ি ফিরতে শুরু করলাম।

হঠাৎ বাড়ির গেটে এসে আংকেল আমাকে বললেন, ‘মদন, এই অবস্থাতে তো তুমি বাসার ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। আমার টাইলস মোড়ানো ফ্লোর নোংরা হয়ে যাবে যে!” আমি আংকেলকে দাঁতভাঙা জবাব দিয়ে বললাম, ‘আংকেল গরুর হাটেইতো গিয়েছি, গোবর লাগবে নাতো রসগোল্লা লাগবে নাকি?”আংকেল ক্ষেপে গিয়ে বললেন, ‘তুমি একটা উল্লুক। তুমি জানো না আমার ডায়াবেটিস, তুমি রসগোল্লার নাম কিভাবে মুখে আনো’।

অনেক ক্লায়কেশে ঘরে প্রবেশ করলাম। মনে মনে বললাম ‘ছাগল না তাহলে আমাকেই কুরবানী দিয়ে দিন।

জনি ব্লেজ অনেক বাড় বেড়েছে। ওকে সারাদিন বেঁধে রাখতে হবে। এদিকে ঈদের আর মাত্র দুই দিন বাকি। তারপরই জনি ব্লেজের কেচ্ছা খতম হয়ে যাবে। সেইসাথে রিটাতো ছাগলের সাথে পাগল হয়ে গেছে। ও তো আর জানেনা কুরবানী কি। জানলে হয়ত কেঁদে চোখের জল নাকের জল এক করে ফেলত। এই রকম দুর্দিনের মধ্যে আমাকে দিন পার করতে হচ্ছে। এখানে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ব্যাটা হৃদয়হীন ডি জে আমার হৃদয় জ্বালিয়ে খেলি।

অনেকদিন ভেবেছি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাবো। বাইরে থেকে লেখাপড়া শিখে কাজ নেই। আব্বাকে অনেকবার বলেছি আমি এখনো শিশু, বাইরে থাকার বয়স এখনো হয়নি। কে শোনে কার কথা। স্কুল পালালেই যেমন রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায়না তেমনি বাড়ি পালিয়েও আমি সক্রেটিস হতে পারবো না। লেখাপড়া শিখতে হলে একটু আধটু কষ্ট করতেই হয়। তাই এখন ভালো বাসা খোঁজার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছি। ভালো না হলেও এই বাসায় সই। আর তো মাত্র কটা দিন!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.